সিডনী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

নির্মোকে মোড়া অনুর জীবন : অমিতা মজুমদার


প্রকাশিত:
২৩ আগস্ট ২০২০ ০০:২৫

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ১৮:৫৩

 

বদলে যাওয়া সময়টাকে কিছুতেই ছুঁতে পারছেনা অনুপমা। নদীতে নৌকাডুবির পরে যেমন খড়কুটো আঁকড়ে হলেও তীরে পৌঁছুতে চায় ডুবে যাওয়া কোন মানুষ,তেমন করেই অনু সময়কে ধরতে চায়। সময়ের সাথে চলতে চায়। প্রতি পদে হোঁচট খায় ,মুখ থুবড়ে পড়েও যায় কিন্তু আবার উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করে। আবার ছুটতে শুরু করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হলেও। এই নিয়ে নিজের সমবয়েসীদের কাছে অনেক ঠাট্টা বিদ্রুপও শুনতে হয়। কেউ কেউ বলে কাক কি আর ময়ূর পুচ্ছ লাগালেই ময়ূর হতে পারে ? তবুও অনু থেমে থাকতে চায়না। কিন্তু সময় যে কিছুতেই তাকে রেয়াত করেনা। সে বারে বারে তাকে বুঝিয়ে দিতে চায় তুমি অচল পয়সা। তোমার কানাকড়িও মূল্য নেই। যদিও অতীতের উপরেই দাঁড়ায় বর্তমান, আবার বর্তমানের গর্ভেই লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যৎ। কিন্তু এই আপ্ত বাক্য সকলের জন্য নয়। সময়ের সাথে একপা একপা মিলিয়ে যে চলতে পারে সেই টিকে থাকতে পারে সেই পারে উত্তর প্রজন্মের সাথে চলতে। নইলে পিছু হটতে হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। 

অনুর ভেতরে অনুক্ষণ চলে এক টানাপোড়েন। অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যতের গাঁটছড়াটা কিছুতেই শক্ত করে বাঁধতে পারেনা।

অনু আজকাল তাই বিষণ্ণতায় ভোগে। নিজেকে খুঁজে পায় এক শূন্য খাঁচায়।

 অধিকার বোধ আর আত্মসম্মান বোধ এর দ্বন্দ্ব অনুকে ক্ষত বিক্ষত করে ।

অনুর সংস্কার অনুকে পীড়িত করে যখন দেখে তার উচ্চশিক্ষিত মেয়ে সংসার ভেঙে বোহেমিয়ান জীবন যাপন করছে। তার সু শিক্ষিত বিবেচক ছেলে কেমন পালটে যাচ্ছে দিনকে দিন। মায়ের প্রতি সামান্য দায়বদ্ধতা অনুভব করছেনা। স্বামী বলে জেনে যার হাত ধরে এই সংসারে এসে এতটা বছর এই সংসারকেই দিল নিজের সংসার মেনে, সেই স্বামী এখনো কথায় কথায় বলে সে পরজীবি । তাকে যে এতকাল ধরে সহ্য করছে এইতো ঢের।

বেশিরভাগ সাজানো গুছানো ,পরিপাটি জীবনের গল্পগুলো এমনই। 

কিন্তু এমন গল্প কে পড়বে ? গল্প হবে মনে মনে অনুরা যেমনটা চায় তেমন। তাই গল্পে থাকে ঝা চকচকে গাড়ি চড়ে হাসিখুশী আনন্দে হৈ হৈ করতে করতে অনুরা ছেলে মেয়ে স্বামী নিয়ে বেড়াতে যায়। সংসারে অনুরা মহারানীর মতো থাকে। ছেলে মাকে মাথায় করে রাখে। মেয়েও স্বামী সন্তান নিয়ে আনন্দে সংসার করে,চাকুরি করে। স্বামী তাকে এখনো সেই অষ্টাদশী অনুই ভাবে। ভালোবাসায় আবেগে আলহাদে জড়িয়ে রাখে ।

কিন্তু সময়ের আঁচড়ে কাটা ছেড়া হতে হতে বেশিরভাগ অনুরাই বাঁচে এক দ্বৈত জীবনের নির্মোকে নিজেকে পুরে রেখে।

 

ছবি স্বত্ত্বঃ আনিসুল কবীর

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top