সিডনী মঙ্গলবার, ১৪ই মে ২০২৪, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরঘুরে : ঋভু চট্টোপাধ্যায়


প্রকাশিত:
৩১ আগস্ট ২০২০ ২১:৩৩

আপডেট:
১৪ মে ২০২৪ ২৩:৫৭

 

পর পর বেশ কয়েকবার ডাকার পর শ্বশুর অবিনাশ বাবু ব্রেকফাস্টের টেবিলে না আসাতে পরমা একটু রেগেও গেল। কিন্তু সব সময় তো রাগ প্রকাশ করা যায় না।খুব শান্ত ভাবেই শাশুড়িকে বলল, ‘মা, একবার বাবাকে দেখো, অনেকবার ডাকলাম, নিচে নামার কোন লক্ষণই নেই। তোমার ছেলেও এখন ওর ঘরে বসে আছে।বলল মিনিট কুড়ি পরে আসছে, কি একটা কনফারেন্স করছে।’

শাশুড়ি সুষমা সেইমাত্র ঠাকুর ঘর থেকে নেমে সারা বাড়ি ধূপ দিচ্ছেন। পরমার কথা শুনে চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে বলে উঠলেন, ‘তোর শ্বশুরকে নিয়ে এবার আমি ক্ষেপে যাবো। ছোট বাচ্চা তো আর নয় যে বকে বা দু চার থাপ্পর মেরে কাজ করাবো। যত বুড়ো হচ্ছে তত আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।কাল রাতে একবার ঘুম ভেঙে গেছিল, দেখি উনি বসে আছেন। আরে বাবা, বয়স কত হল খেয়াল আছে। আগে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, এখন আবার দিনরাত মোবাইল চোখে বসে আছেন।’ তারপরেই অবিনাশবাবুর উদ্দেশ্যে বেশ জোরেই চিৎকার করে বলে উঠলে, ‘কই গো  একবার নিচে নেমে গিলে কুটে আমাকে উদ্ধার কর। না হলে আজ আর জলখাবার পাবে না।’ অবিনাশ বাবুর পরে একবার ছেলে সজলের নাম ধরেও ডেকে বললেন, ‘অপু, তুইও খেয়ে নে।’

পরমার মেয়ে এনা এবারেই ক্লাস টেন পরীক্ষা দিয়েছে। প্রথমে মা তারপর ঠাকুমার গলা শুনে দোতলার নিজের ঘর থেকে বারান্দায় বলে ওঠে, ‘উফঃ, তোমরা সকাল থেকে কি আরম্ভ করলে বলতো? একটু ঘুমোবার উপায় নেই। আস্তে কথা বলতে পারো না।’

‘তোকে আর ঘুমাতে হবে না।’ পরমা বলে উঠল, ‘সাড়ে নটা বাজল।জল খাবারের পর্বটা না চুকলে তো ভাত চাপাতে পারবো না। সব তো জানিস, কাজের মেয়ে, রান্নার মেয়ে কেউ আসতে পারছে না। এত বড় হলি তুই তো একবার ভুলেও রান্না ঘরে ঢুকিস না। শুধু মুখে বড় বড় কথা।’

এনা মায়ের রাগ দেখে কোন কথা না বলে দাদুর ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কয়েকবার ‘দাদু দাদু’ বলে চিৎকার করে নিজের ঘরে ঢুকতেই দাদুর গলা শুনল। ঠাকুমা আবার চেল্লাতে আরম্ভ করেছে। এনা আর বিছানার দিকে না গিয়ে সোজা বাথরুমে ঢুকে গেল। কিছু সময় পর ব্রেকফাস্ট টেবিলে যেতেই দেখল ততক্ষণে বাবাও এসে গেছে। এনাকে দেখে গত রাতের অ্যাসাইনমেন্টের কথা জিজ্ঞেস করতেই এনা বলে উঠল, ‘ফিজিক্সের হিট চ্যাপ্টারটা কিছুই বুঝতে পারিনি, অনলাইন ক্লাস হলেও অসুবিধা হচ্ছে। প্রবলেম গুলো ভালো করে বোঝা যাচ্ছে না। স্যার, বোর্ড ওয়ার্ক  করতে গেলেই ক্যামেরার ফোকাসে প্রবলেম হচ্ছে।’

সজল কোন উত্তর না দিয়ে নিজের ঘরে চলে যাওয়ার আগে মাকে বাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই মা বলে উঠল, ‘এই লোকটা এবার আমাকে খাবে।কয়েক দিন আগেই বাইরে বেরিয়ে চলে যাচ্ছিল। এখন আবার নিজের ঘর থেকেই বেরোচ্ছে না। বিকালে একবার ছাদেও যাচ্ছে না। দিন রাত হাতে ঐ মোবাইল নিয়ে বসে থাকছে।’

সজল কোন উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে নিজের ঘরে গেলেও কাজে মন বসলো না। একটু আগেই একটা কনফারেন্স করেছে, পরের অ্যাসাইনমেন্ট আসতে আসতে বিকাল হয়ে যাবে।কম্পানির ওয়েভে ঢুকে সবার ওয়ার্ক প্রগ্রেস একটু চেক করতেই সোমার কথা মনে হল। সেদিনের পর থেকে ফোন করা হয়নি। অথচ মেয়েটা কত সাহায্য করল বলে বোঝানো যাবে না। না হলে হয়ত অবিনাশবাবুকে সুস্থ রাখা যেত কিনা সন্দেহ।ফোনটা রিসিভ করেই সোমা বলে উঠল, ‘বল্ রে কি খবর? কাকু আর বেরোচ্ছেন না তো?’

–না রে, একদম না। বাড়ির ছাদে পর্যন্ত যাচ্ছে না। কি করছিস বল তো?’

 সোমা একটু হেসে উত্তর দিল,‘এটা বলবো না। তবে কাকু কিন্তু মনের দিক থেকে খুব ইয়ং।কম বয়সে আরো ভালো দেখতে ছিলেন। অনেক মেয়েরই মাথা খারাপ করে দিয়েছিলেন। হ্যাঁরে, কাকিমার সাথে কি লাভ ম্যারেজ না ....’

-তোকে বাবা ছবিও পাঠিয়েছে নাকি?

সোমা একটু অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দিল, ‘ঐ, মানে একটা...।বাদ দে, তোকে যেটা জিজ্ঞেস করলাম সেটা বল।’

-না রে এক্কেবারে দেখাশোনা করেই বিয়ে। তবে বিয়ের পর মায়ের কোন বোন নাকি বাবাকে একটা প্রেমপত্র লিখেছিল। আগে মায়ের সাথে ঝগড়ার সময় মায়ের মুখে কয়েকবার শুনেছি। যাই হোক তোদের হোয়াটর্সঅ্যাপ আর ফেসবুকের কনভারসেশনগুলো আমাকে স্ক্রিন শর্ট করে পাঠাস।

–না, সোনা ঐটি হবে না। এটা এক্কেবারে প্রফেসন্যাল সিক্রেট। তবে যেটা হবে তুইও মনে রাখবি। আমিও তো তোকে এতদিন ধরে মনে রেখেছি। বিয়ে না করে অনেকদিন বসেও ছিলাম। তুই না হয় অন্য মেয়ে পেয়ে আমাকে বিয়ে করলি না, কিন্তু আমি তোকে…..।

–ওসব কথা এখন ছাড় না।কবে সেসব মিটে গেছে।

-মেটেনি, কিছুই মেটেনি।

তারপর সজল আর কথা না বাড়িয়ে ফোন রেখে মেল চেক করতেই দেখল কম্পানি তখনও নতুন অ্যাসাইনমেন্ট পাঠায় নি। তারমানে এখন কোন কাজ নেই। কম্পিউটার সার্ট ডাউন করে বিছানাতে পা দুটো টান করে শুতেই নিচের থেকে মা আর পরমার গলা শুনতে পেল। নিচে গেলেই এক্ষুণি কিছু বলবে। তার থেকে নিজের ঘরেই থাকা ভালো। জানলার সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়ে বাইরে চোখ রাখতেই যত দূর চোখ গেল তত দূর শুধু শূণ্যতাই দেখতে পেল। লোকজন সেরকম নেই। মাঝে মাঝে এক বা দু’জন এদিক থেকে ওদিক চলে যাচ্ছে। বেশির ভাগ জনের বাইক বা সাইকেলে বড় বড় ব্যাগ ঝোলানো রয়েছে।পাড়ার খাবাবের গাড়িটা একবার পেরিয়ে গেল। একটা ক্লাব নাকি গাড়িটা ভাড়া করে বিভিন্ন জায়গায় চাল ডাল আলুর প্যাকেট পৌঁছে দিচ্ছে।সত্যিই, যারা দিন আনে দিন খায় তাদের খুব সমস্যা।সবাই চাল গম দিয়ে দেবে, কিন্তু কাঁচা টাকা কোথায় পাবে? শুধু চাল ডালে তো জীবন চলে না। ওষুধ আছে, বাচ্চা থাকলে তার খাবার আছে। সব কিছু ভাবতেই সজলের কেমন যেন শরীর খারাপ লাগে। কয়েক দিন আগেই ক্লাবের একজনের হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বলেছিল, ‘সবকিছু নর্মাল হোক অফিসের অবস্থা দেখে আরো কিছু দেবো। এখন চাকরি থাকবে কিনা সেটাই তো বুঝতে পারছি না।’

সেদিন ওরা সব কিছু বুঝলেও সজলের মনের ভিতরে একটা চিন্তা আটকে থাকে, কে জানে সব কিছু কিভাবে সামলানো যাবে? তাও যাক বাবার ঝামেলেটা মিটেছে।কয়েক সপ্তাহ আগে পরমা, মা দুজনেই কাজ করতে বসলেই চিৎকার করে এক্কেবারে পাড়া মাথায় তুলে ফেলছিল। ওদের আর কিভাবে বোঝাবে, কম্পানি ওয়ার্ক ফর্ম হোম বলেছে। দু’ এক বার ওদের বারণ করেও এসেছে, কিন্তু কে কার কথা শোনে। সকালের দিকে কাজে বসলেই কিছু মিনিট পরপর নিচ থেকে চিৎকার শুনত, ‘কই রে, অপু তোর বাবা দেখ আবার বাইরে চলে গেছে। আমার কোন কথাই শুনছে না।’ সজল কাজের ফাঁকেই প্রথমদিন নিচে নেমে বাইরে থেকে বাবাকে ঘরে আনতে গিয়ে তো রীতিমত চমকে ওঠে।বাইরে গিয়ে দেখে বাবা দিব্যি একটা চায়ের দোকানে বসে বসে চা, সিগারেট খাচ্ছে আর কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ জুটিয়ে এন্তার গল্প মারছে। রাগে সজলের সারাটা শরীর জ্বলে উঠলেও কোন রকমে বুঝিয়ে বাবাকে সেদিনের মত ভিতরে আনে।তার পরের দিন সেই একই ঘটনা।সকালেও হাঁটতে বেরিয়ে যাচ্ছে, কোন দিন নিজে গিয়ে, কোন দিন মেয়ে এনাকে পাঠিয়ে, কোন দিন বৌ পরমাকে পাঠিয়ে বাবাকে ঘরের ভিতরে আনলে বাবার রাগ দেখে কে।কোন দিন বলছে ‘ওষুধ খাবো না।’ ‘কোনদিন খাবার খাবো না।’ একদিন তো চিৎকার করতে  আরম্ভ করে, ‘তোরা আমাকে বাচ্চা ভাবিস? আমি কখন  কি করতে হয় জানি।’  

সজল একদিন ডাক্তারবাবুকেও ফোন করে ব্যাপারটা জানাতে উনি বলেন, ‘আসলে এই বয়সটা অনেকটা বাচ্চা বয়সের মত। একটু প্লেফুলি ট্রিট করতে হবে।অন্য কিছুতে এনগেজ রাখুন, অ্যাটলিস্ট যতক্ষণ এই পিরিয়ডটা থাকছে।’ কিন্তু কিভাবে করবে সেটাই বোঝা যায় না। টিভি, রেডিও, হোম থিয়েটার, এমনকি মোবাইল, সবের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাই মিলে যতই বোঝানোর চেষ্টা করে ততই নতুন নতুন বায়না আরম্ভ করে। একদিন তো পুলিশের গাড়িতে অবিনাশবাবুকে ঘরে ছেড়ে দিয়ে সুষমা দেবীকে খুব করে অপমান করে বলে, ‘বয়স্ক মানুষকে এরকম ভাবে বাইরে বের করে দিয়েছেন? জানেন না এই রোগটাতে বয়স্করা বেশি করে আক্রান্ত হচ্ছেন।’ মা যে পাল্টা কিছু বলতে যাবে পুলিশ পগারপার।

শুধু পুলিশ, পাড়ার ক্লাবের ছেলেগুলো, এমন কি অবিনাশবাবুর কয়েকটা বন্ধুর বাড়ি থেকেও ফোন করে রীতিমত ঝগড়া করে নিল। অবিনাশবাবুই নাকি তাদের ফোন করে বাড়ির বাইরে বের করছেন। এনাও কত করে বোঝালো। মোবাইল ফেসবুক, হোটাসঅ্যাপ, ইউটিউব সব দেখালো। পুরানো সিনেমা কিভাবে দেখতে হয় তাও দেখিয়ে দিল। কিন্তু কে কার কথা শোনে ? সেই বাইরে যাবার জন্যে অবিনাশবাবুর পা বের করেই থাকতেন। সকালে সবার ঘুম ভাঙার আগেই হাঁটতে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, জলখাবার খেয়ে দ্বিতীয় দফা, তারপর বিকাল দিকে তৃতীয় দফা। বারণ করলে অশান্তি, চিৎকার। এদিকে বাড়ি থেকে কাজ হলেও বাড়ির মধ্যেও কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। সজলের শরীর ও মন দুটোতেই তার ছায়া পড়তে আরম্ভ করল। সেই সময় একদিন সোমা ফোন করে। সোমা এক সময় সজলের সাথে একই কলেজে পড়ত। দুজনের বিয়ের পরেও একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে গেছে। কারণে অকারণে দুজন দুজনের সমস্যাতে পাশে দাঁড়ায়। সোমা অবশ্য এখন ডাইভোর্সী, দিল্লীতে থাকে। পরমা সোমার কথা জানে, দুজনের মধ্যে বেশ কয়েকবার কথাও হয়েছে। তবে সব ব্যাপার পরমার জানার কথাও নয়। যেমন সেদিন সজলের মুখ অবিনাশবাবুর সব কথা শুনে সোমা বলে ওঠে, ‘ঠিক আছে তোর সাথে কিছু হল না, তোর আপত্তি না থাকলে কাকুর কেশটা আমি একটু হ্যাণ্ডেল করতে পারি?’ সজল তারপর সোমার মুখে পুরোটা শুনে এক কথায় রাজি হয়ে যায়। সোমা বলে, ‘কাকুর হোটাসঅ্যাপ আর ফেসবুকে দুটো অ্যাকাউন্ট করে দিতে হবে।’ সজল এনাকে জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারে অনেকদিন আগেই দাদুর জন্য দুটোতেই অ্যাকাউন্ট করে দিয়েছে। সজল একটু শান্তি পায়।

                                             ২

 

দুপুরের দিকে প্রতিদিন সজল নিচে সবার সাথে খেতে আসতে পারে না। পরমা এক ফাঁকে গিয়ে দুতলাতেই খাবার পৌঁছে দিয়ে তারপর নিজেরা খায়। দুপুরের দিকেই নাকি বেশি চাপ থাকে।সবার সাথে  খেতে বসা মানেই আধ ঘন্টা সময় নষ্ট। কেউ ব্যাপারটার গভীরতা বুঝে কেউ কোন মন্তব্যও করেনি। কিন্তু অবিনাশবাবু যেদিন দুপুরে সবার সঙ্গে খেতে না নেমে ওনার ঘরেই দুপুরের খাবার পাঠিয়ে দিতে বললেন সেদিনই সব হিসাব কেমন যেন গোলমাল হতে আরম্ভ করল। শুধু দুপুর নয় রাতেও ঘরে খাবার পাঠিয়ে দিতে বলেন।রাতে সুষমা সজলকে বলে, ‘অপু, আমার কেমন যেন গণ্ডগোল লাগছে। তোর বাবা দিন রাত মুখে মোবাইল দিয়ে বসে থাকছে। রাতে দেরি করে ঘুমাচ্ছে। এরকম করলে তো শরীর খারাপ হয়ে যাবে।’

সজল কোন উত্তর না দিলেও মা একভাবে বলে যেতে লাগল। ‘এর থেকে বাইরে যাওয়াটাই মনে হয় ভালো ছিল। বিকালের দিকে একটু ছাদে বা উঠোনে হাঁটতে বলছি সেটাও শুনছে না।সুগার প্রেসার বেড়ে গেলে এখন ভালো ডাক্তারও পাওয়া যাবে না।শুনলাম হাসপাতালেও নাকি এখন ভর্তি নিচ্ছে না। তুই একটু বুঝিয়ে বল না হলে  নতুন কোন সমস্যা এসে গেলে তোকেই ছোটাছুটি করতে হবে।’ সজল সব শুনে মাকে নিচে যেতে বলে ডাক্তারবাবুকে আরেকবার ফোন করতেই উনি বললেন, ‘দেখুন এটা একটা অবসেসন।আপনাকে অন্যকিছু করে ব্যাপারটাকে রিপ্লেস করাতে হবে।’

সে’রাতেই সোমাকে ফোন করে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করতেই সোমা এবারেও বেশ হেসে হেসেই বলে উঠল, ‘কাকু কিন্তু এক্কেবারে সাইজে এসে গেছেন। ’

-আরে এবার তো ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। কারোর কথা শুনছে না। দিনরাত ফোন নিয়ে বসে থাকছে, এক্কেবারে যা তা অবস্থা।ঘরের সবাই তো রীতিমত চিন্তায় পড়ে গেছে। ঘরটা থেকে একবারের জন্যেও বের হচ্ছে না। সকালে বিকালে একটু হাঁটাহাঁটিও করছে না।

সোমা কোন উত্তর না দিয়ে হো হো করে হেসে উঠে ফোনটা কেটে দেয়। সজল তারপর ফোন করলে সুইচ্ট অফ বলে। এবার সজলেরও মাথাটা গরম হয়ে ওঠে। বুঝতে পারে সোমা কিছু একটা লুকাচ্ছে।কিছু করবারও নেই। এনাকে চিৎকার করে ডেকে  জিজ্ঞেস করে, ‘দাদু কি করছে দেখ তো।’ এনা কিছুক্ষণ পরে এসে বলে ‘দাদু দরজা বন্ধ করে বসে আছে।’

-ঠিক আছে, তুই এক কাজ কর দাদুকে স্নানে যেতে বল আর ঐ সময় দাদুর মোবাইলটা নিয়ে আয়। আচ্ছা দাঁড়া, তুই মোবাইলের পাসওয়ার্ড জানিস তো?

–হ্যাঁ, আমিই তো সেট করে দিয়েছি।

-ঠিক আছে আমাকে মোবাইলটার পাসওয়ার্ডটা বলে তুই যা। দাদুকে কিছু বলতে হবে না। মোবাইলটা খুঁজলে কিছু একটা বলে দিবি।

–কিন্তু কেন বলবে তো।

-এনা, প্লিস, তোকে কিছু বলবার মত অবস্থা নেই। শুধু যা বলছি তাই করে যা।

কিন্তু মোবাইলটা হাতে নিয়ে সব কিছু দেখে সজলের মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। বাবা! এই রকম সব......? নিজের ওপরেই রাগ লাগল। ‘সোমাটা এমন ভাবে আমার সাথে ব্যবহার করল?’ বাবার হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকটা আরো ভালো দেখবার জন্য মোবাইল দেখতে যেতেই এনা সজলের ঘরে এসে বলল, ‘বাবা, নিচে পুলিশ এসেছে, দাদুকে খুঁজছে।’

এবার সজলের হাত পা সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবার মত অবস্থা হল। আস্তে আস্তে নিচে নামতেই পুলিশের এক অফিসার সজলকে দেখেই জিজ্ঞেস করল, ‘অবিনাশ বাবু?’

–আমার বাবা।

-ওনার নামে একটা ওয়ারেন্ট আছে।

-ওয়ারেন্ট! কিসের বলা যেতে পারে?

–নিশ্চয়। এক ভদ্রমহিলাকে উনি হোসাটসঅ্যাপে অবসিন মেসেজ পাঠাতেন।

-কি নাম বলা যাবে?

-সোমা বসু। উনি গতকাল ওখানেই এফ.আই. আর. করেন। ওখানকার পুলিশ আমাদের কাছে ফরোয়ার্ড করে। আমরা ক্রশচেক করে তারপর.....।

সজলের মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেরোল না। ভিতরে ততক্ষণে সুষমাদেবীর কান্না আরম্ভ হয়ে গেছে। পরমা, এনা দুজনায় গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে, কারোর মুখে কোন কথা নেই। সজল মোবাইলটা তুলে হোয়াটসঅ্যাপটা খুলতেই দেখতে পায় সোমা অনেকক্ষণ আগেই দুটো স্মাইলি পাঠিয়েছে।

 

ঋভু চট্টোপাধ্যায়
পশ্চিম বর্ধমান, ভারত

ছবি স্বত্ত্বঃ আনিসুল কবীর

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top