সিডনী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

শ্যামলী : অমিতা মজুমদার


প্রকাশিত:
৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:০১

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ১৭:৪৯

 

এটা ঠিক গল্প নয়। আমার শৈশবে শোনা একটি সত্য ঘটনা......

বাপ মা মরা মেয়ে শ্যামলী। শ্যামলা রঙের  বলেই হয়তো কেউ নাম রেখেছিল শ্যামলী। বিপত্নীক নিঃসন্তান মামার কাছে আশ্রয় পেয়েছে অনাথ শ্যামলী। গ্রামের এক প্রান্তে নির্জন একটা বাড়িতে মামা ভাগ্নীর সংসার। মামার সংসার সামলে এক দুই করে ক্লাস নাইনে উঠে পরে শ্যামলী। স্কুলে তেমন কোন বন্ধু ছিলনা তার। বিমর্ষ বিষণ্ণ  একলা মেয়েটিকে ক্লাসের বা উপরের নীচের ক্লাসের ছেলেরা কেমন যেন অন্য ভাবে দেখত। মেয়েরাও কেন যেন একটু দুরত্ব রেখে চলত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিধ্বস্ত গ্রামগুলো তখনো সেভাবে সামলে উঠতে পারেনি। একধরনের অরাজক পরিস্থিতি চলছিল। বিপত্নীক প্রৌঢ় মামা শ্যামলীর হাতের রান্না খেতে খেতে একসময়  শ্যামলীকেও চাখতে শুরু করলো। আবার নিজের অভাবের সংসারে শ্যামলীকে লক্ষ্মীর ভান্ডার মনে করে দু-চারজন অতিথিকেও বাড়িতে নিমন্ত্রণ করার ঝোঁক চেপে বসলো মামার মাথায়। দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলল । সবকিছু সামলে নির্বিকার শ্যামলী ঠিক সকাল দশটায় বইখাতা বুকের উপর হাতে আগলে নিয়ে স্কুলে পৌঁছে যেত। শোনা যেত স্কুলের শিক্ষক, উঠতি বয়সের ছাত্ররাও শ্যামলীর কাছ থেকে একটু বাড়তি পাওনা আশায় চারপাশে ঘুরঘুর করত। শ্যামলীর উপকার করার নেশাটা কমবেশি অনেকের মধ্যেই দেখা যেত। সেই আশায় হয়তো অসময়ে তার বাড়িতে হাজির হতেন প্রবাসী মাস্টার মশাই। আচানক তিনি মাথাব্যথায় অস্থির হয়ে পড়ত। শিক্ষক বলে কথা, শ্যামলীকে তার মাথাব্যথার উপসমের ব্যবস্থা করতে হতো। গ্রামের এক প্রান্তের এই নির্জন বাড়িটি ক্রমশঃ রহস্যময় হয়ে ওঠে। গৃহস্থ বাড়ির বৌ ঝিরা পারতপক্ষে সেদিকটায় যেতনা। তবে তাদের ঘুসুর ফুসুর হাহা হিহি ঠিকই চলত বারোয়ারী কলতলায় বা পুকুরঘাটে। তারপর হঠাৎ একদিন শোনা গেল শ্যামলী আর বেঁচে নেই। কি হয়েছিল তাও বিশেষ কেউ জানেনা। সপ্তদশী শ্যামলীর আর এস এস সি পরীক্ষা দেয়া হলোনা। বেশকিছুদিন পর জানা গেল শ্যামলী নাকি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। আর সেই সন্তানের বাবা হিসাবে যার নাম উঠে এসেছিল সে গ্রামের গন্যমান্য এক পরিবারের সন্তান। যাকে তড়িঘড়ি করে দূর গ্রামের এক বর্ধিষ্ণু স্বচ্ছল পরিবারের সুন্দরী মেয়ের সাথে ধুমধাম করে বিয়ে দেয়া হয়। শ্যামলী সেই বিয়ের রাতেই আত্মহত্যা করে।

 

আর আজ আমি যখন অর্ধশতাব্দী বয়েস পেরিয়ে এসেছি আমার মনে হয় গ্রামে গঞ্জে শহরে নগরের গলি ঘুপচিতে, সুদৃশ্য ইমারতের গোপন কুঠুরীতে এরকম অনেক শ্যামলীদের কথা লুকিয়ে আছে ।

 

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top