সিডনী শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

রাসপুতিন ইতিহাসের কলঙ্কিত এক অধ্যায় : সুদীপ ঘোষাল


প্রকাশিত:
২৯ অক্টোবর ২০২০ ২০:৫৫

আপডেট:
২৯ অক্টোবর ২০২০ ২২:৫৯

ছবিঃ রাসপুতিন

 

১৯১৬ সালের ১৯ নভেম্বর পুরিশকেভিচ ডুমায় এক ক্ষুব্ধ বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, জারের মন্ত্রীরা রূপান্তরিত হয়েছেন পুতুল নাচের পুতুলে। আর এই পুতুলগুলোর সুতা রয়েছে রাসপুতিন ও সম্রাজ্ঞী আলেক্সান্দ্রা ফিয়োদরোভনার হাতে। ফেলিক্স ইউসুপভ পার্লামেন্টে বসে তার এই বক্তব্য শোনেন এবং পুরিশকেভিচের সঙ্গে মিলিত হয়ে রাসপুতিনকে খুন করার উদ্যোগ নেন। পরিকল্পনাটি ছিল খুব সহজ। ফেলিক্স ইউসুপভ রাসপুতিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে তাকে হত্যার জন্য প্রলুব্ধ করে নিয়ে আসবে ইউসুপভের প্রাসাদে। তারপর তাকে খুন করা হবে।

রাসপুতিন যৌনতা পছন্দ করেন। তার এই দুর্বলতাকে ব্যবহার করা হবে তাকে খুন করতে। এ ক্ষেত্রে ফেলিক্স তার সুন্দরী স্ত্রী ইরিনাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করতে রাজি হন। ইরিনা এ কাজে রাজি না হলে ইরিনার মিথ্যা উপস্থিতির কথা বলে তাকে রাসপুতিনের টোপ হিসেবে ব্যবহার করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খুনের এক মাস আগে নভেম্বরের দিকে ফেলিক্স যোগাযোগ করেন রাসপুতিনের সঙ্গে। বুকের ব্যথায় ভুগছেন এই বাহানায় রাসপুতিনের কাছে যান। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এরপর একদিন আসে রাসপুতিনকে হত্যা করার মোক্ষম সুযোগ। ঘটনার দিন যখন রাসপুতিন ইরিনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তখন ফেলিক্স রাসপুতিনকে পেস্ট্রি খেতে বলেন। যা ছিল বিষাক্ত সায়ানাইড মিশ্রিত। রাসপুতিন খেতে অস্বীকৃতি জানান। ফেলিক্স চিন্তায় পড়ে যান। কিছুক্ষণ পর রাসপুতিনের মন কিছুটা পরিবর্তন হয়। তিনি সামান্য পেস্ট্রি খেতে রাজি হন। কিন্তু পেস্ট্রি খাওয়ার পরও কোনো প্রকার পরিবর্তন হচ্ছিল না রাসপুতিনের। তখন তারা মদ খেতে শুরু করেন। মদেও বিষ মিশানো হয়েছিল। কিন্তু এতেও কোনো প্রকার পরিবর্তন হচ্ছিল না। মনে করা হয়েছিল সায়োনাইডের বিষক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু তেমন কিছু ঘটছিল না।

ফেলিক্স অপেক্ষা করতে করতেই এক পর্যায়ে ফেলিক্স গ্র্যান্ড ডিউক দিমিত্রি প্যাভলোভিচের কাছ থেকে একটি পিস্তল নিয়ে আসেন। পিস্তল তাক করে রাসপুতিনকে বললেন, ‘গ্রেগরি এফিমোভিচ, আপনি বরং যিশুখ্রিস্টের ক্রুশের মডেলটির দিকে তাকান এবং প্রার্থনা করুন।’ ফেলিক্স গুলি করেন। নিথর হয়ে পড়ে যান রাসপুতিন। এক ঘণ্টা পর ফেলিক্স লাশটি ধরে নাড়া দিলে কিন্তু কোনো সাড়া পাননি। তবে লক্ষ্য করেন, রাসপুতিনের বাম চোখটা খোলার জন্য স্পন্দিত হচ্ছে। তিনি তখনো বেঁচে ছিলেন। এমন সময় রাসপুতিন হঠাৎ লাফিয়ে উঠে ফেলিক্সের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার কাঁধ ও ঘাড় জড়িয়ে ধরেন। ফেলিক্স আতঙ্কিত অবস্থায় নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে চিত্কার করে বলতে থাকেন, ‘সে এখনো বেঁচে আছে’। পুরিশকেভিচ ওপরতলায়ই ছিলেন। তিনি ফেলিক্সের চিত্কার শুনতে শুনতে নিচে নেমে আসেন। ফেলিক্স ভয়ে তখন কাঁপছেন। তার চেহারা ফ্যাকাশে, চোখ কুঠরি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। এরই মধ্যে রাসপুতিন দেয়ালঘেরা আবাসস্থল পেরিয়ে দৌড়ে পালাতে থাকেন। পুরিশকেভিচ তার পিছে পিছে ছুটতে শুরু করেন।

তিনি রাসপুতিনকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকেন। লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছিল কিছু গুলি তারপর হঠাৎ ঠিকই গুলি লক্ষ্য ভেদ করেছিল। গুলি রাসপুতিনের পিঠে আঘাত করে। রাসপুতিন  থেমে গেলে পুরিশকেভিচ আবার গুলি চালান। এবার গুলি লাগে রাসপুতিনের মাথায়। মাটিতে পড়ে যান রাসপুতিন। তারপরেও মাথা ঝাঁকাচ্ছিলেন আর হামাগুড়ি দিয়ে চলছিলেন রাসপুতিন। কিন্তু পুরিশকেভিচ তাকে ধরে মাথায় লাথি মারতে থাকেন। উন্মাদের মতো আচরণ করতে থাকেন তিনি। কিছু পুলিশ সদস্য ঘটনা স্থলের কাছাকাছি ডিউটিতে ছিলেন তারা গুলির আওয়াজ পেয়ে বিষয়টি দেখার জন্য এগিয়ে আসেন। তারা প্রিন্স ইউসুপভ ও তার চাকর বুজিনিস্কির কাছে গুলির আওয়াজ সম্পর্ক জানতে চাইলে বুজিনিস্কি জানায় তারা কোনো আওয়াজ শোনেননি।

পরবর্তীতে রাসপুতিনের লাশ ভিতরে নিয়ে আসা হয়েছিল। রাসপুতিনের বিকৃত হয়ে যাওয়া চেহারা দেখে ফেলিক্স ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি ২ পাউন্ড ওজনের একটি ডাম্বেল হাতে নিয়ে এটি দিয়ে রাসপুতিনের দেহে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। ফেলিক্সকে যখন থামানো হলো তার দেহ ততক্ষণে রক্তরঞ্জিত হয়ে পড়েছে। ফেলিক্সের চাকর বুজিনিস্কি তখন পুরিশকেভিচকে পুলিশের সঙ্গে তার কথা হওয়ার বিষয়টি জানায়।

এটি বিস্ময়কর যে এত কিছুর পরও রাসপুতিন কিন্তু মারা যাননি। তিনি আসলেই হয়তো রহস্য পুরুষ! কারণ মাথায় বুকে গুলির পরও তিনি বেঁচে ছিলেন। এরপর তার দেহের ওপর নানা রকম অত্যাচার চালানো হয়। অবশেষে ফেলিক্স ও পুরিশকেভিচ ক্লান্ত হয়ে রাসপুতিনের লাশ বরফ ঢাকা নদীর বরফ কেটে তার ভিতর ঢুকিয়ে দেয়।

 

তথ্য সংগৃহীত

 

সুদীপ ঘোষাল
লেখক, পূর্ববর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top