সিডনী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

মাতৃত্ব : অমিতা মজুমদার


প্রকাশিত:
১২ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:১৬

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ১৭:৩৮

 

কড়াইয়ের গরম তেলে দুটো শুকনো লংকা আর পাঁচফোড়ন ফেলে দিয়ে,মুসুর ডালে সম্বার দেয় পারমিতা। এদিকে টেবিলে গরম ধোঁয়া ওঠা ভাতের থালা রাখে, চামচ দিয়ে গরম করলা সেদ্ধটা ভেঙে, তার মধ্যে একটা কাঁচা লংকা, একটু লবণ দেয়। খানিকটা সর্ষের তেল ঢেলে দেয় তার উপর, পাশে রাখে এক টুকরো ইলিশ মাছ ভাজা। অখিলেশ ভিজা মাথায়, লুঙ্গি পরনে, গায়ে স্যান্ডো হাতার গেঞ্জি, বসে পড়ে চেয়ারে। করলা সিদ্ধ মাখাতে মাখাতে বলে, আর একটু সকালে উঠতে যদি, নয়টা’র লোকাল ট্রেনটা মিস করতে হতো না। ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে বলে ভাজা মাছের তেল নেই? থাকলে একটু দাও তো--ইলিশের তেল দিয়ে গরম ভাত মেখে খেতে খুব ভালো লাগে। পারমিতা খানিকটা তেল দেয় অখিলেশের পাতে, এখন যেন অখিলেশের আর দেরি হচ্ছে না। ধোঁয়া ওঠা ডাল নিয়ে এসে হাজির হয় পারমিতা, দুই চামচ ভাত দিয়ে তার উপরে ডাল ঢেলে দেয়। খাওয়া শেষে উঠে পড়ে অখিলেশ, ততক্ষণে অখিলেশের দুপুরের খাবার গুছিয়ে দিয়েছে পারমিতা। আসি বলে ব্যাগ হাতে বেরিয়ে পড়ে অখিলেশ।

এবার পারমিতার কিছুটা সময় বিরতি। মুঠোফোন, পানের ডালা, এক মগ ঘন দুধের চা, দু-খানা লাল করে ভাজা পরোটা নিয়ে বসে পারমিতা। মুখবইয়ে চোখ বোলাতে বোলাতে, আয়েশ করে চায়ে চুবিয়ে পরোটা মুখে দেয়। চা, পরোটা শেষে, খয়ের, জর্দা আর কাঁচা সুপারি দিয়ে একটা গোটা পান মুখে গুজে দেয়। আঃ শান্তি---চোখ বুজে আসে তার।

পারমিতা অখিলেশের সংসার তা প্রায় বছর কুড়ি হবে। পারমিতার বয়েসটা বোঝা যায় না, দেখলে ত্রিশ বলেই ধরে নেবে সবাই। আর অখিলেশ! পঞ্চাশ পেরিয়েছে বছর দুই আগে। সুঠাম, সুস্বাস্থ্যের জন্য তাকেও পঁয়তাল্লিশ বলে অনায়াসে চালিয়ে দেয়া যায়।  

আজ শাশ্বতী অখিলেশের টিফিন বক্স খোলার পর, খুশিতে কেমন কলকলিয়ে উঠবে, তা যেন ঘরে বসেই দেখতে পায় পারমিতা। শাশ্বতী অখিলেশের অফিসের সেই অল্প বয়েসি মেয়েটা, পারমিতা কোনদিন জানতে চায়নি অখিলেশের সাথে তার সম্পর্কটা কি? ওই একরত্তি মেয়েটাকে নিয়ে অন্য কোনরকম ভাবনা ভাবতে পারমিতার রুচিতে বাঁধে। শুনেছে ওর বাড়ি জেলা শহর শেরপুর থেকেও অনেক দূরে গ্রামে। পরিবারের সবাই সেখানে থাকে। নিজে এখানে অন্য সব মেয়েদের সাথে মিলে বাসা নিয়ে থাকে। পরিবারের প্রয়োজনেই এতদূরে সবাইকে ছেড়ে কাজ করছে সে। অফিসের কিছু লোক নানা কথা বলে, কিন্তু পারমিতার মনে হয় এই যে মেয়েটা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারকে সাহায্য করছে, নিজে স্বাবলম্বী হয়েছে কিছু পুরুষ মানুষ সেটাকে ভালোভাবে নেয়নি। তারা হয়তো ওকে অবলা, অসহায় ভেবে অনুগ্রহ করার উছিলায় বাড়তি অন্যায় সুযোগ নিতে চায় ওর কাছ থেকে। যা শাশ্বতী দেয় না বলেই তারা এসব বলে। অখিলেশের কাছে হয়তো সেই ভরসাটা পায়, যা তাকে মেয়ে হিসেবে অসম্মানিত না করে মানুষ হিসেবে সম্মান করে। পারমিতা এরকম একটা যক্তি নিজের মতো করে তৈরি করে নিয়েছে, আর অপেক্ষায় আছে সকলের কথা মতো যদি অখিলেশ আর শাশ্বতীর মধ্যে কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তাহলে অখিলেশ নিজেই একদিন তাকে বলবে।

পারমিতা যেন নিজের গরজেই আজ ইলিশ মাছ ভাজা দুখানা বেশি দেয় যেমন কুমড়ো ফুলের বড়া কিংবা সজনে ডাঁটার চচ্চড়ি করলে একটু বেশি-ই দেয়। নিঃসন্তান পারমিতা কী তার  অতৃপ্ত মাতৃত্বের ছোঁয়াটুকু পাঠায় এই ইচ্ছাকৃত ভুলটুকুর আড়ালে !

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top