সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

সমাজের আকাশটা আজও ঢাকা কৃষ্ণ মেঘের অন্ধকারে! : তন্ময় সিংহ রায়


প্রকাশিত:
২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৫৭

আপডেট:
২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৪৪

 

লিখবো লিখবো করে দীর্ঘদিন ধরেই আর হয়ে উঠছিলনা লেখা, ভাবলাম আর দেরি কেন,  
শব্দের বিন্যাসের মাধ্যমে মনের অভিব্যক্তিগুলোকে এবারে যথাসাধ্য দেওয়াই যাক জন্ম।

 

সমাজটা যেন এক রঙিন ও বড় পর্দা, যেখানে বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রতিনিয়ত ভীষণ ব্যস্ত বিভিন্ন চরিত্রে তাঁদের অভিনয় প্রতিযোগিতায়! যিনি পরিচয় দিতে পারবেন যত বেশি দক্ষতার, তিনি টিঁকে থাকবেন তত বেশিদিন।

 

কত রঙের মানুষ ও মানসিক প্রতিক্রিয়া আমাদের আশেপাশেই দিবারাত্র বেড়ায় উড়ে, ক্ষেত্রবিশেষে এমনকি সেকেন্ডে বা মিনিটে তা হয় পরিবর্তিতও! বিশেষত রাতের নিস্তব্ধতায় একান্তে যদি কখনও চিন্তা করা হয় সেগুলোকে গভীরভাবে, ঠিকমতন পড়া-শোনা করা যায় তাঁদেরকে, তবে দুঃখ, কষ্ট, অনুশোচনা, হতাশা, সমবেদনা, যন্ত্রণা ও হাসি প্রভৃতি সব মিলিয়ে এমন এক পাঁচফোড়ন মার্কা প্রতিক্রিয়া মনের গভীরে সৃষ্টি হয়, যে তা কাউকে ব্যক্ত করাও অনেক সময় হয়ে পড়ে দুরূহ, বেদনাদায়ক বা অস্বস্তিকর ইত্যাদি!    

 

কেউ কেউ যেন জন্মায় শুধু নিজে আর নিজের পরিবারের ভালোগুলোকে নিয়েই আ-মৃত্যু ভাবনার অতল গভীরে ডুবে থাকার জন্যে। আর মনের গভীরে লুকিয়ে থাকে, 'ভাঁড় মে গয়া সোসাইটি!', এমনই ধরণের 
এক অবহেলিত বাক্য। আবার কেউ বা এর পাশাপাশি অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে লোক দেখানো কিছু সামাজিকতা অন্তর্ভুক্ত করেন তাঁদের জীবনের সিলেবাসে। কিছুজন আবার, সামাজিকতা করেন স্বার্থসিদ্ধির একান্ত উদ্দ্যেশ্যে, তো কোনো কোনো জন প্রায় সারাটা জীবন আত্মত্যাগ করেন সামাজিকতার স্বার্থে!

 

মৌলিক চাহিদা অনুযায়ী খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে হয় সবাইকেই।  জীবন একটাই, সেখানে প্রশ্ন হল
বাঁচবো বা বাঁচা উচিৎ কিভাবে? এখন এই কিভাবে-এর উত্তরে অল্প কিছু মিল থাকলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একেকজনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হয়ে দাঁড়ায় একেক রকমের।  

 

ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, কিছু মানুষ বাঁচেন যেন শুধু বাঁচার জন্যেই। কিছু মানুষের আত্মসম্মান বা অনুশোচনা বোধগুলো আবার কেমন যেন অস্বাভাবিক, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ সেগুলোই তাঁদের কাছে আবার স্বাভাবিক! 
এই যেমন, কোনো ভুল বা অন্যায় করার পর, মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সেই মানুষটা অন্যায় অথবা ভুলের পরিমাণ বা মাত্রানুযায়ী কষ্ট পেতে বা দগ্ধ হতে থাকেন অনুশোচনার সেই আগুনে! সেখানে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, অনুশোচনা তো দূর কি বাত! নিশ্চিন্তে ও নির্দ্বিধায় তাঁরা জীবনের মূল স্রোতে গতিশীল। যেন কিছুই করেন নি বা হয়নি, এমন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এখন আমার চিন্তাধারায় এটাই বোধ করি এক প্রকারের অস্বাভাবিকত্ব!

 

এদিকে আবার বেশ কিছু ক্ষেত্রে, কোনো ঘটনা ঘটাবার পর প্রথম ব্যক্তি এক-দুদিনের মধ্যেই ধীরে ধীরে হয়ে আসেন স্বাভাবিক, আবার ওই একই ঘটনায় দ্বিতীয়জনের স্বাভাবিক হতে সময় লাগে প্রায় এক সপ্তাহ কিংবা এক মাস। তাহলে এখান থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতেই পারি যে, দ্বিতীয়জনের অনুশোচনা বা আত্মসম্মান বোধটা সিংহভাগ ক্ষেত্রে প্রথমজনের থেকে বেশি। এখন এই আত্মসম্মান বোধকে ঠিক কোথায় ও কতটা পরিমাণে কাজে লাগানো উচিৎ বা আদৌ সেখানে উচিৎ কিনা, তাও বোধকরি অনেকেই জানেন না উপযুক্তভাবে!
শুধু আত্মসম্মান নয়, জেদ, রাগ, হিংসে, অভিমান, স্বার্থ প্রভৃতি জীবনের কোন জায়গায় ঠিক কাজে লাগানো উচিৎ কতটুকু, বা আদৌ সেখানে উচিৎ কিনা, তা হয়তো বোঝেন না অনেকেই। আর যাঁরা বুঝেও করেন, তাঁরা যথার্থ অপব্যবহার ও অপমান করেন নিজেদের চারত্রিক বৈশিষ্ট্যের , সর্বোপরি মনুষ্যত্বের!  

 

পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার দরুণ উঁচু ক্লাসের ছাত্র বা ছাত্রীটিকে বাড়িতে বকাবকি করার পরেই তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত লাগলো এমনভাবে, যে  দুঃখ, কষ্ট, রাগ এবং যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে, সে বাধ্য হয়ে বেছে নিল আত্মহত্যার একমাত্র পথ! আমার মতানুযায়ী, এক্ষেত্রে সে তাঁর আত্মসম্মানকে এখানে কাজে লাগালো প্রবলভাবে। পাশাপাশি, ফেল করলে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ে থাকতে হবে এবং পাশ না করলে তাঁর ও বিশেষত তাঁর বাবা-মায়ের সম্মান নষ্ট হবে হয়তো জেনে-বুঝেও, এ ক্ষেত্রে আত্মসম্মানকে সে মোটেই কাজে লাগায়নি সম্পূর্ণ বছরটাতে! যথেষ্ট অবহেলা ও অসম্মান করেছে আত্মসম্মানকে!

 

নানান কৌশলে, নিজেদের বা নিজেদের পরিবারকে নিয়ে জাহির করতে ভালোবাসেন না, এমন মানুষ আছেন কম। কিন্তু আবেগ ও উত্তেজনাপূর্ণ বেলুনটা কিছুক্ষেত্রে মাত্রা ছাড়িয়ে কখন যে পৌঁছে যায় এক্সোস্ফিয়ারে, তা হয়তো আমরা অনেকসময় বুঝতে পারিনা, অথবা ইন্টেনশনালি তা করে আমরা হয়ে পড়ি সাময়িক আনন্দিত ও গর্বিত! সেক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় বুঝতে পারিনা বা চাইনা যে , যাঁকে অথবা যাঁদেরকে বলা হচ্ছে এগুলো, তাঁরা কেমন অনুভব করছেন, কিংবা অস্বস্তিতে পড়ছেন কিনা?

 

কিছু মানুষ যক্ষের ধনের মতন অর্থকে দু'বাহুতে প্রায় সারাটা জীবন এমনভাবে ধরে রাখেন আঁকড়ে, যে পরবর্তীতে ব্যক্তিগতভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলোই আর ভোগ করা হয়ে ওঠে না তাঁদের কপালে, 
এক্ষেত্রে কাজ করতে পারে দু-তিন রকমের মানসিক প্রতিক্রিয়া, যেমন, 
(i) অত্যাধিক মায়া,

(ii) ভবিষ্যতের কোনো ছোটো অথবা বড় স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দ্যেশ্যে তা প্রাণপণে সঞ্চয়, অথবা

(iii) ব্যয়কুন্ঠতা। 

এক্ষেত্রে অত্যাধিক মিতব্যয়ীতা শব্দদুটো ব্যবহারে আমি অনিচ্ছুক।

যাইহোক, কিছুজন আবার এতটাই অমিতব্যয়ী, যে শেষ বয়েসে অনাহারক্লিষ্ট দেহটাকে নিয়ে চলতে থাকেন টেনে-হিঁচড়ে! একজনের আবেগকে দুর্বলতা বানিয়ে অপরজনকে যথাসম্ভব দাবা খেলতেও আমি দেখেছি সমাজের বেশ কিছু জায়গায়।

এ সমাজের অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভালো ছেলে / মেয়ে বলতে সাধারণত প্রতিষ্ঠিতদেরকেই মনে মনে দেওয়া হয় উঁচু স্থান , আর্থিকভাবে অসচ্ছল যদি বড় মনের অধিকারিও হয়, তো বিশেষ কিছু এসে যায় না এ সমাজের।

 

বাহ্যিক সৌন্দর্যকে বংশপরম্পায় প্রশংসার মাধ্যমে প্রশ্রয় দিতে দিতে এমন এক জায়গায় এসে আমরা পৌঁছেছি, যে ভিতরের আসল সৌন্দর্যের মূল্যায়ন করতেও আমরা ভুলতে চলেছি অনেকেই।

 

উপকার পেতে ভালোবাসি আমরা প্রায় সবাই, কিন্তু করতে কম অথবা নয়। এমনকি এ সমাজ নামক পাত্রটা ধীরে ধীরে যেন কানায় কানায় পূর্ণ হতে চলেছে কৃতঘ্নদের বিন্দু বিন্দু যোগের মাধ্যমে!

কিছু মানুষ আছেন, নানান কৌশলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্যের ক্ষতি করে লাভ করেন পরম পরিতৃপ্তি! 

কিছুজন আবার কারণে-অকারণেই সমাজের বিভিন্ন স্থানে ঢেলে বেড়ান হেমলক!  তো কিছু মানুষের আবার জিভে লেগে থাকে মধু আর বুকে থাকে বিষের থলি!

 

গণতান্ত্রিক সমাজের বুকে দাঁড়িয়ে, যেহেতু আমাদের কথাবার্তা বলার বা মত প্রকাশ করার, চিন্তা-ভাবনা করার, ধর্ম ও রীতিনীতি পালনের, হাসি-মজা ও দুঃখ-বেদনা ইত্যাদি প্রকাশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আছে, তাই আমাদের স্বাধীন চিন্তা-ধারার নির্দেশ অনুযায়ী আমরা অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলোকেই অস্ত্র বানিয়ে অনেক সময়ে লুটতে থাকি সমাজকে অথবা নিজেদেরকে চালাতে থাকি ভুল-ভাল পথে। আর এ ক্ষেত্রে অনুশোচনা খুব একটা বা মোটেই কাজ করেনা আমাদের ভিতরে! উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে , কম-বেশি ধর্মীয় জ্ঞান সংগ্রহের মাধ্যমে , নানান যুক্তি-তর্ক পরিবেশনে কথা বলায় দক্ষ একদল মানুষ , প্রাণপনে চেষ্টা করে চলেছেন তাঁদের নিজেদের ধর্মই শ্রেষ্ঠ , এটা প্রমাণ করার। আর একদল মানুষ , অভুক্ত পেটে অমৃত সেবনের মতন গোগ্রাসে গিলে চলে সমৃদ্ধ হচ্ছেন সেগুলোতেই।

 

কোথাও বা আবার স্ত্রী'র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, সারাজীবনের অপরিশোধযোগ্য ঋণের কথা বেমালুম ভুলে, নির্দ্বিধায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে রাস্তায় বের করে দিচ্ছেন সু-সন্তানের দলেরা, আর বাইরে এসে আদর্শের বীজ পুঁতে , শ্রেষ্ঠত্বের প্রচারে ব্যস্ত হচ্ছেন এই বলে যে, নচিকেতার বৃদ্ধাশ্রম গানটা শুনলে নাকি জল আসে ওনার চোখে! 
অর্থাৎ তাঁদের চিন্তাধারা অনুযায়ী, সেগুলোকেই ঠিক বলে মনে করেছেন তাঁরা। এসব ক্ষেত্রে দিনের পর দিন ধরে তাঁরা নিজেদের বিচার-বিবেচনা , জ্ঞান-বুদ্ধি ,  অনুসন্ধান বা পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে পঙ্গু বা মৃত করে তুলে দিয়ে রেখেছেন সেইসমস্ত মানুষের হাতেই , আর রোবোটিকভাবে চালিত হচ্ছেন অন্যের ব্যাটারিতে!

 

এদিকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে, অন্যের সফলতা অনেক সময়ে হয়ে দাঁড়ায় অনেকের গাত্রদাহের বিশেষ কারণ! 
বিষয়টা তাঁর মনের গভীরে হয়তো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এমন যে, আমি ব্যর্থ, সে কেন পারলো বা পারবে? এটা ঠিক নয়, তাই তীব্র অভিমান বা রাগ, দুঃখ, যন্ত্রণা থেকেই জন্ম নেয় এ ধরণের মানসিকতা! অনেকেই আবার প্রকৃত অন্তর থেকে বেশ খুশিই হন অন্যের সফলতায়! 

 

কিছু মানুষ আছেন এমন যে, তাঁরা আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন মুখে বাঘ মেরেই, আর কিছুজন আছেন যাঁরা বাস্তবেই মারেন, কিন্তু মুখে কিছু বলতে বা দেখাতে ভালোবাসেন না।

 

এ সমাজে বোধ করি তিন প্রকার বৈশিষ্ট্যের মানুষ বিদ্যমান, প্রথম প্রকার বলতে গেলে, যাঁদের কাছে অর্থই শেষ কথা। আত্মসম্মান, বিবেক ও মনুষ্যত্বকে তাঁরা দেন না বিশেষ গুরুত্ব অথবা যতটুকু না থাকলে বা দেখালে নয় এমন ব্যাপার। দ্বিতীয় প্রকারে, আত্মসম্মান, বিবেক ও মনুষ্যত্বের প্রাধান্য আগে, অর্থ এর ঠিক পরের সারিতে এবং তৃতীয়জনেদের ক্ষেত্রে অর্থকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি বিবেক, মনুষ্যত্ব ও আত্মসম্মানকেও গুরুত্ব দেন সমানভাবে।

 

এক শ্রেণীর মানুষ আছেন, যাঁরা আর্থিকভাবে হঠাৎই / ধীরে ধীরে বেশ সমৃদ্ধ হয়ে সমাজের বুকে অহংমিশ্রিত এমন সব ভাবমূর্তি করে বেড়ান, যাতে মনে হয় এমন যে, নানান দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যেন তিনি বারেবারেই বোঝাতে চান, আমার স্ট্যাটাস এখন পরিবর্তিত হয়েছে, আপনারা বুঝুন যে আমি আপনাদের চেয়ে আর্থিকভাবে অনেক বেশি স্বচ্ছল ও তাই বেশি বেশি গুরুত্ব দিন আমায়। সেক্ষেত্রে হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই এনারা বেমালুম ভুলে যান যে, শুধু আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়াটাই প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার পরিচয় নয়, এর সাথে যুক্ত 
থাকে পুঁথিগত ও বিশেষত মানসিক শিক্ষা এবং সংস্কৃতি, পারিবারিক ইতিহাস  ইত্যাদি। 

 

মানুষের বুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত সমাজের কিছু ক্ষেত্রে বহাল তবিয়তে আজও রয়ে গেছে বিচিত্রতার জীবাশ্ম! 
এ সমাজে গাড়ির জীবনের বীমা বাধ্যতামূলক, কিন্তু মানুষকে, শুধু বীমার গুরুত্ব বোঝাবার জন্যে কোম্পানির প্রতিনিধিদের ছুটতে হয় বিভিন্ন দরজায় দরজায়! সরকারী চাকরি করেন এমন মানুষকে আমাদের এ সমাজ গুরুত্ব দেন অপেক্ষাকৃত বেশি, কিন্তু সরকারী হাসপাতাল বা স্কুল শুনলেই মনের গভীরে ধাক্কা দিয়ে যায় কেমন একটা তাচ্ছিল্যপূর্ণ আবহাওয়া!

 

একদল মানুষ আজীবন চিৎকার করে চলেছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে চলার জন্যে, তো অপরদল নানানভাবে চেষ্টা করে চলেছেন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে একতায় ছয় থেকে সাত মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করার! ধর্ম আর রাজনীতির মহাসংক্রমণের দরুন এ সমাজ বোধ করি হবেনা কোনোদিনও ঐক্যবদ্ধ! 

 

কোনো এক স্থানে বসবাসকারী এক্স নামক এক ভদ্রলোক,  যখনই বলে উঠতেন এ সমাজের মনুষ্যত্বের অধঃপতনের কথা, কেউ হেসে উঠতেন, কেউ শুরু করতেন তর্ক-বিতর্ক, তো অল্প কিছুজন আবার পোষণ করতেন সহমত। কিন্তু আর্থিকভাবে সুসমৃদ্ধির পরেই এক্সদা'র মনুষ্যত্বের অধঃপতনের বিশ্লেষণ হঠাৎই তাঁদের কাছে মনে হতে লাগলো কেমন বেদ বাক্যের মতন! এমনকি যাঁরা এতদিন ঘেঁষতেন না এক্সদা'র গায়ের কাছেও , তাঁরাই আজ ছুটে ছুটে আসেন তাঁকে এটা-সেটা খাওয়াতে বা তোষামোদ করতে।

 

অত্যাধিক স্নেহ-ভালোবাসা ও মায়া অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে দাঁড়ায় আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ। কিন্তু তা বুঝেও সিংহভাগ ক্ষেত্রেই আমরা পারিনা সেগুলোকে ঠিকভাবে চালনা করতে।

পুঁথিগত শিক্ষার্জনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সন্তানদের সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নের বীজ বুনি আমরা দিবারাত্র,

কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখাইনা বড় / উপযুক্ত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন! 

 

নিজের মনের একজন দক্ষ ড্রাইভার হয়ে নিজের জীবনকে যথাসম্ভব ঠিকপথে চালিত করতে পারবেন না এমন মানুষ হয়তো হাতে গোনা কয়েকজন, তবুও এ সমাজের প্রতিচ্ছবি  প্রজন্মের পর প্রজন্ম থেকে যাবে গতানুগতিকভাবেই!  

 

জীবনের শিক্ষাব্যবস্থায়, পুঁথিগত বিদ্যার্জনের চেয়ে মানসিকভাবে শিক্ষিত হওয়াটা অনেক বেশি মূল্যবান! 
বড়লোক হওয়ার চেয়ে বড় মানুষ হওয়া অপেক্ষাকৃত বেশি কঠিন। সুযোগ পেলে, আমরা আড্ডা, আনন্দ, সমালোচনা, পরনিন্দা ও পরচর্চার স্রোতে গা ভাসাই, কিন্তু সময় পাইনা নিজেদেরকে পড়ার। প্রত্যেকে যদি ঠিকমতন পড়ে একসময় তা পরিণত করতে পারি অভ্যেসে, এ সমাজের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই বোধহয় আমরা দেখতে পারি দ্বিতীয় কাশ্মীরের সেই অনন্য রূপ!!

 

তন্ময় সিংহ রায়
কোলকাতা, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top