সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

মানুষ কি তাহলে নয় এ গ্রহের'ই জীব? : তন্ময় সিংহ রায়


প্রকাশিত:
৩০ জানুয়ারী ২০২১ ১৮:৫১

আপডেট:
৩০ জানুয়ারী ২০২১ ১৯:২২

 

মানুষ নামক উন্নত শ্রেণীর প্রাণীর জন্ম কি এ পৃথিবীতেই? প্রথম জীবের উৎপত্তি কি আদৌ হয়েছিল এ পৃথিবীতে সৃষ্ট জল বা উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে? জানি হয়তো অনেকেই ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন, এ সব আবার কি ধরণের বোকার মতন প্রশ্ন? অথবা বলবেন, যুগের পর যুগ ধরে পৃথিবী ও তাতে প্রাণ সৃষ্টির বিজ্ঞানভিত্তিক ইতিহাস পড়ে তো এটাই আমরা এতদিন জেনেছি সবাই। সাথে জেনেছি পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান। 
আসলে, আনুমানিক ৪.৫৪ থেকে ৬০ বিলিয়ন বছর বয়স্ক বৃদ্ধ এ পৃথিবী আজ পর্যন্ত মানুষের মনে সৃষ্টি করেছে এমন কিছু রহস্যের সংক্রমণ, যা থেকে সুস্থ হয়ে বের হতে তাঁরা আজও পর্যন্ত বেশ অক্ষম বলাটাই যুক্তিসংগত! আর ঢাকা দেওয়া জিনিসে মানুষের আগ্রহ বরাবরই অনেকটা বেশি, তাইতো অনুসন্ধিৎসু মন ব্যাকুল হয়ে উদ্ভ্রান্তের মতন এখনও ছুটে ছুটে বারেবারেই খুঁজে চলে পিরামিড বা এরিয়া - ৫১ এর মতন গহীন রহস্যের একান্ত সমাধান।
বিশ্বখ্যাত ইংরেজ জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ এবং বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক স্টিফেন উইলিয়াম হকিংকে আমরা কে না জানি? সেই বিজ্ঞানী স্বয়ং কিন্তু অনেক আগেই স্বীকার করেছেন এলিয়েনের অস্তিত্ব।
'Stephen Hawking's Favorite Places,'

নামক এক ডকুমেন্টারিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, 'Intelligent aliens may be rapacious marauders, roaming the cosmos in search of resources to plunder and planets to conquer and colonize.
'One day, we might receive a signal from a planet like this, but we should be wary of answering back. 
Meeting an advanced civilization could be like Native Americans encountering Columbus. That didn't turn out so well.' 

এই তো কিছুদিন আগেই, নাসার গবেষকরা কেপলার টেলিস্কোপের সাহায্যে ২০ টি এমন গ্রহের সন্ধান হাতে পেয়েছেন, যাতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা প্রবল! শুধু কি তাই? 
ডঃ থমাস জুরবিউকেন, অ্যালেন স্টেফান সিলভানো পি কলম্বানোর মতন নাসার প্রথম ক্যাটেগরির বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় বলেছেন 'আমরা কিন্তু আছি এলিয়েনের অত্যন্ত কাছাকাছিই!' কিন্তু এক চাঞ্চল্যকর তথ্যের উপরে ভিত্তি করে আবার এদিকে শুরু হয়েছে প্রায় সমুদ্রমন্থন!
একদল বিজ্ঞানী তো রীতিমতন দাবি করে বসেন যে, 'এ পৃথিবীতেই সৃষ্টি হয়নি কোনো জীবের, হয়েছে মহাকাশে এবং মানুষ'ই এলিয়েন!' আর পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি বা মানবজাতির আবির্ভাব নিয়ে যেহেতু এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি কোনো সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত, তাই এ মতবাদ বেশ কিছু বিজ্ঞানীমহলে যেন নতুন করে জ্বালিয়েছে এক আশার সু-উজ্বল আলো। 'বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থের রাসয়নিক বিক্রিয়া ও পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে নিউক্লিওপ্রোটিনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে এককোষী ক্লোরোফিলযুক্ত জীব, ও বহুকোষী প্রাণীর।' 
এতদিন পর্যন্ত এই ছিল সিংহভাগ বিজ্ঞানীর মতবাদের সারাংশ। কিন্তু, আমেরিকার ইংল্যান্ডের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী কিছুদিন আগে স্ট্র‍্যাটোস্ফিয়ারে পাঠান গুচ্ছখানেক বেলুন, যেখানে বেলুনগুলি ফিরে আসার ঠিক পরেই তাঁরা হয়ে পড়েন অতিমাত্রায় আশ্চর্য ও স্তম্ভিত! ওনারা লক্ষ্য করেন, ফিরে আসার পরেই বেলুনগুলির গায়ে লেগে ছিল কিছু আণুবিক্ষণিক জীব, যাঁদের অস্তিত্ব আদৌ নেই এ পৃথিবীতেই।
পরীক্ষা শেষে ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ওয়েনরাইট মন্তব্য করেন যে, 'কোনো পদ্ধতিকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী থেকে স্ট্র‍্যাটোস্ফিয়ারে সম্ভব নয় এই জীবগুলির পক্ষে যাওয়া, বরং অনন্ত মহাবিশ্ব থেকে প্রায় প্রতিনিয়তই পৃথিবীতে আগমন ঘটছে বিভিন্ন ধরণের জীবের। আমাদের চতুর্পাশে এমন অনেক জীব বর্তমান, যাঁরা এসেছে মহাকাশ থেকেই।'

বলাবাহুল্য, আরো একদল বিজ্ঞানী পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে, প্রাণ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরির উপাদান হিসেবে অ্যামাইনো অ্যাসিড পৃথিবীতে আসতে পারে যেকোনো ধুমকেতুর আঘাতের সাথেই। 
আর এই মতবাদে বিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমাদের সৌরজগতেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে জীবনের অস্তিত্ব। বঁড়শীতে মাছ গেঁথে যাওয়ার মতন, প্রায় সমগ্র বিশ্ব জুড়ে যেখানে মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে এ পৃথিবীতেই হয়েছিল প্রথম প্রাণের সৃষ্টি, সেখানে 'Humans are not from earth: a scientific evaluation of the evidence.' নামক বইটিতে আমেরিকার একজন প্রখ্যাত ইকোলজিস্ট ডঃ এলিস সিলভার রীতিমতো বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে মানুষ একেবারেই পৃথিবীর জীব নয়।
অন্যান্য জীবেদের মত এ পৃথিবীতে মানুষের সৃষ্টি তো হয়ইনি, বরং অন্য কোনো গ্রহ থেকে আগমন ঘটেছে এ পৃথিবীতে মানুষের। 
এর উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে বইটিতে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, 

* মানুষের শরীরের বহু ভুল-ত্রুটি বুঝিয়ে দেয় যে, এ পৃথিবী আদৌ নয় তাঁদের গ্রহ! তিনি জানিয়েছেন, মানুষকে এ পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত প্রাণী বলে মনে করা হলেও, সেই মানুষই কিন্তু এ গ্রহের সবচেয়ে খাপছাড়া ও পৃথিবীর জলবায়ুর অনুপযুক্ত প্রাণী। 
* যেখানে এ বিশ্বের সিংহভাগ প্রাণীই সূর্যালোকে যতক্ষণ ইচ্ছে স্নান করেও টিকে থাকে বেমালুম, সেখানে আমরা কিন্তু তা পারি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।
* প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যায় এমন প্রায় সমস্ত খাদ্য মানুষ সরাসরি খেতে অপছন্দ করে কেন? যেখানে অন্যান্য সমস্ত প্রাণীরাই তা গ্রহণ করে বেঁচে থাকে নির্দ্বিধায়! 
* মানুষের দেহে ২২৩ টি অতিরিক্ত জিন থাকাটা একেবারে স্বাভাবিক লক্ষণ নয়, কারণ পৃথিবীর অন্যান্য প্রজাতির দেহে কিন্তু এমন অতিরিক্ত জিন নেই!
* বিষ্ময়করভাবে মানুষের দেহের মধ্যেই প্রচুর ক্রনিক রোগ দেখা দেয় কেন? 
* পৃথিবীর কোনও মানুষই কিন্তু ১০০% সুস্থ নয়। প্রত্যেকেই ভুগে থাকে এক বা একাধিক রোগে! 
* মানুষ ত্বকই কেন সূর্যরশ্মির প্রভাবে হয়ে যায় কালো? তাহলে কি এটা প্রমাণিত নয় যে, সূর্য রশ্মি আমাদের চামড়ার পক্ষে উপযুক্ত নয়? সান স্ট্রোকও তো হয় এই মানুষেরই!
* মানব শিশুর মাথা বড় হওয়ার জন্যে স্বাভাবিক উপায়ে প্রসব করতে নারীদের অসুবিধা হয়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হয় প্রচুর মা ও শিশুর, কিন্তু এ পৃথিবীর জীববৈচিত্রে অন্য কোনও জীব প্রজাতির কিন্তু এ প্রকারের কোনো সমস্যাই নেই!
* ব্যাক পেইন, অর্থাৎ পিঠ, ঘাড় বা কোমর ব্যাথা অন্য প্রাণীর হয় না। ডঃ সিলভারের মতে, ব্যাক পেইন হল অন্যতম দীর্ঘকাল স্থায়ী (chronic disease) এক বিশেষ রোগ, যাতে ভোগে অধিকাংশ মানুষই। কারণ তাঁরা পৃথিবীর অনান্য প্রাণীদের মতন হাঁটা-চলা ও বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে সাহায্য পায় না মাধ্যাকর্ষণের। আর এই রোগটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রমাণ, যেটা আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে, মানুষের দেহটা সৃষ্টি হয়েছিল অন্য কোনও গ্রহে বসবাসের উপযুক্ত হয়ে, যেখানে মাধ্যাকর্ষণ কম।

 

তন্ময় সিংহ রায়
কোলকাতা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top