সিডনী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

পরী যখন মানুষ : অমিতা মজুমদার


প্রকাশিত:
১০ মার্চ ২০২১ ১৯:৩১

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ২২:২২

 

বাবা মা আদর করে নাম রেখেছিল পরী। ছোটবেলা থেকে গল্পের কাল্পনিক চরিত্র পরীর যে আদলটা মনে গেঁথে আছে, আয়নায় দাঁড়িয়ে যতবার নিজেকে দেখেছে তার সাথে কোন মিল খুঁজে পায়নি। তবুও বাবা মা জন্মের পর এই নামেই ডাকে। সেই বাংলা প্রবাদ “কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন” এর মতো।

পরী নিজেকে আয়নায় যেভাবে দেখতে পায়---তার গায়ের রঙ কালো না হলেও বেশ ময়লা। বড়ো মাসির ননদের মেয়ে সোমা কিংবা তার নিজের বৌদি শ্রীতমার মতো দুধে আলতা নয়। চোখ দুটি তার ছোটই বলা যায়,আর নাক! অনেকেই বলে পরীর নাকের উপর দিয়ে রেলগাড়ি গিয়েছে। মুখখানা তার মোটেই পানপাতার মতো নয়। খুব সাধারণ মানব সন্তান বলেই মনে হয় নিজেকে।

সেই পরী, যার নাম পরী না হয়ে অন্য কিছু হলেই হয়তো সুবিচার করা হতো তার উপরে।হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে মন কেমন করা বয়সে পৌঁছে গেল সে।এখন যদিও মা বাবা প্রায় সময়েই বলে,ঈশ্বর যখন একটা মেয়ে দিলো তাকে একটু সুশ্রী করে দিলো না কেন!এই মেয়েকে কী করে পার করব? আমাদের তো তেমন টাকা পয়সাও নেই, আবার মেয়েতো পড়ালেখায়ও তেমন আগ্রহী না। ভালো লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াবে সেরকম কোন ইচ্ছাও তার মধ্যে দেখছি না।এভাবেই চলছিল পরীর দিন।টেনে টুনে এস এস সি পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। বাড়ি থেকেই ক্লাস করে। এরই মধ্যে বড়দা চাকরি পেয়েই পাশের গ্রামের এক অপরূপ সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসে। বৌদির নাম অহনা। সে আসার পরই যেন পরী নিজেকে আয়নায় আরও বেশি ম্রিয়মান দেখতে পায়। নিজের খামতিগুলো যেন সব বেরিয়ে আসে প্রকট হয়ে। পরীকে যেন তাড়িয়ে বেড়ায় আলো থেকে আঁধারের দিকে।

ধীরে ধীরে সে যেন অপরাধী হয়ে ওঠে সকলের কাছে।যে খামতির দায় তার নয়,তার হাতেও কিছু ছিল না সেই খামতি পুরণের। এক অলিখিত বিচারে সুশ্রী না হওয়ার অপরাধে  তাকেই বয়ে বেড়াতে হয় এক অপরাধীর জীবন।

বাহ্যিক সুন্দরের পূজারি মানুষ কখনও কী ভেবে দেখেছে একটা মানব শিশুর জন্মে সেই শিশুর কোন হাত থাকে না। তার শারীরিক সৌন্দর্য বা সৌন্দর্যহীনতা দিয়ে তার মানব সত্তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় না।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top