সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

করোনার ভাইরাসের উৎস এবং বিশ্বরাজনীতি : তন্ময় সিংহ রায়


প্রকাশিত:
১ মে ২০২১ ১৯:২২

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৫৯

 

উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজি? উহান সি ফুড মার্কেট থেকে, না ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস নাগাদ উহানে এক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি দল ছড়িয়ে গেছে এই করোনা নামক মারণ ভাইরাস? এটা কোনো জীবজন্তুর দেহ থেকে প্রকৃতিগতভাবেই মানুষের শরীরে প্রবেশ করে সমগ্র বিশ্বব্যাপী ধারণ করেছে অতিমারি রূপ, নাকি উদ্দ্যশ্যমূলকভাবে এটা প্রয়োগ করা হয়েছে মানুষের দেহে? 

বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়া, ওয়েবসাইট ও দেশ-বিদেশের নানান সংবাদ মাধ্যমে যেন সাধারণত এই প্রশ্নগুলোই তাদের যোগ্য উত্তর পাওয়ার জন্যে এক তীব্র দুঃখ-কষ্টকে বুকে চেপে নিয়ে ছটফট করে বেড়াচ্ছে অসহায়ভাবে দিবারাত্রি!

শুধু কি তাই? এ সন্দেহের বাণ ছুঁড়ছে ও-কে, আবার ও দোষারোপ করছে এ-কে! চীন ও ইরানের ভেতর থেকে সন্দেহের তীর তো যুক্তরাষ্ট্রের দিকে, আবার আমেরিকা প্রায় সেই প্রথম থেকেই কাঠগড়ায় আসামি হিসেবে তুলে দাঁড় করিয়ে রেখে দিয়েছে উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজি'কে!

 

প্রায় সমগ্র পৃথিবীর অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা সার্চ ইঞ্জিন ব্রাউজার হিসেবে গুগুল, ক্রোম এইসব একপ্রকার নিশ্চিন্তে ব্যবহার করে থাকেন যেখানে, সেখানে চীন তার দেশের মধ্যে ব্যবহার করে ইউসি ব্রাউজার ও বাই দু! বিশ্বের প্রায় ১৮০ টা দেশ জুড়ে যেখানে হোয়াটস অ্যাপ ইউজার ২ বিলিয়নের বেশি, সেখানে চীন ব্যবহার করে শুধুমাত্র উইচ্যাট! অনলাইন কেনাকাটায় বিশ্বের বৃহত্তম প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন, সেখানে চিনবাসীকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় আলিবাবা!

শুধু তাই নয়, প্রায় সারা পৃথিবীতে নির্দ্বিধায় যেখানে ব্যবহার করা হয় জি'মেইল, সেখানে চিনে ব্যবহৃত হয় কিউ কিউ মেইল! স্যোশাল মিডিয়ার অতি জনপ্রিয় ও বৃহত্তম প্ল্যাটফর্ম হিসাবে উঠে আসে একটি নাম ফেসবুক, ২০১৯-এর এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা বিশ্বে ফেসবুক ইউজার ২.৫ বিলিয়ন, সেখানে চীনের স্যোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট রেনরেন ডট কম বা রেনরেন!

আর এভাবেই টুইটার-এর পরিবর্তে ওয়েইবো ও ইউ-টিউব- এর বদলে ইউ'কো ব্যবহার করে থাকেন সে দেশের মানুষজন! এত গোপনীয়তা কেন? অতিরিক্ত গোপনীয়তাই তো জন্ম দেয় সন্দেহের? বিশ্বের ১৯৪ থেকে ৯৫ টা স্বাধীন কোন রাষ্ট্র এ ধরণের গোপনীয়তার অভাবে ধ্বংসের পথে?

চীনের ভিতরে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষজন তো বেমালুম ও প্রায় ক্রমাগতই লিখছে বা লেখে এবং শেয়ারও করছে যে, চীনকে শায়েস্তা করতে যুক্তরাষ্ট্র জীবাণু অস্ত্র হিসাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে গেছে চীনে।

শুধু সোশ্যাল মিডিয়া কেন? 

একজন চীনা কূটনীতিক তার টুইটার অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে একেবারে সরাসরি ইঙ্গিত করেছেন যে,  উহানে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে এক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি দল ছড়িয়ে দিয়ে গেছে এই বিধ্বংসী মারণ ভাইরাস! 

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের কম্যান্ডার মেজর জেনারেল হুসেইন সালামি তো একদম সরাসরি বলেছেন যে, করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র! জে. সালামি উল্লেখ করেন, 'যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে চীনে এবং পরে ইরানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে জীবাণু অস্ত্রের!'

পরবর্তীতেই ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য হেশমাতোল্লাহ ফাতালহাতপিশে মন্তব্য করে বসেন, 'ট্রাম্প এবং পম্পেও করোনা নিয়ে ডাহা মিথ্যে কথা বলছেন, এটা কোনো সাধারণ রোগই নয়, বরং এটা ইরান এবং চীনের বিরুদ্ধে জীবাণু অস্ত্রের এক পরিকল্পিত হামলা!'

এদিকে অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, আত্মবিশ্বাসের সাথে ২০২০-র প্রথম ভাগের দিকে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, 'উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকেই বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে COVID- 19!'

এবং এর সপক্ষে তাঁর কাছে নাকি আছে প্রমাণও! কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ এক বা একাধিক সেই প্রমাণ যে ঠিক কি, তা আজও কৃষ্ণগহ্বরের জমকালো অন্ধকার গর্ভে তলিয়ে আছে পড়েই! কে আর কবে যে উদ্ধার করবে সেগুলোকে, বা আদৌ উদ্ধার হবে কি না, তাও বা আবার কে জানে?

 

ক্যালিফোর্নিয়ায় কংগ্রেসের এক রিপাবলিকান রাজনীতিক জোয়ান রাইট যা টুইট করেছেন, তা দেখে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের চোখ তো রীতিমতন ছানাবড়া! তিনি তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করেছেন এমন যে, 'উহান ল্যাবরেটরিতেই তৈরি করা হয়েছে এই করোনা ভাইরাস, এবং ঐ গবেষণায় চীনাদের সহায়তা করেছেন বিল গেটস!'

ফোবস ম্যাগাজিন ২০২০ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবীর চতুর্থ ধনকুবের বিল গেটস সম্পর্কে এ ধরণের মন্তব্য, তাও আবার টুইটারের মাধ্যমে প্রকাশ্যে? জোয়ান রাইটের এ ধরণের সরাসরি মন্তব্যের পিছনে তবে কি লুকিয়ে আছে কোনো সত্যতা?  না কি এ এক নিতান্তই ব্যক্তিগত আক্রমণ অথবা গুজব? 

 

চীনের একজন ৩৪ বছরের ডাক্তার (অপথালমোলজিস্ট) ওয়েনলিয়াং, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসেই করোনার প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে তাঁর সহকর্মীদের এক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেই মুহুর্তে হঠাৎই তিনি মারা গেলেন করোনা আক্রান্ত হয়ে! ওয়েনলিয়াং-এর মৃত্যু কি করোনা সংক্রমিত হয়েই হয়েছিল?  

আমার মতন এ প্রশ্নের ঝড় যে আর কারো মনে ওঠেনি বা আজও ওঠেনা, তা বলাটা অযৌক্তিক। মৃত্যু যদি করোনা আক্রান্ত হয়েই হয়, তো চীন সরকার গুরুত্বসহকারে সেই মুহুর্তে বিষয়টার গুরুত্ব অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিজেদের সরকার , বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা'র দ্বারা সেই মুহুর্তে সতর্কতা জারি করেনি কেন সমগ্র পৃথিবীবাসিকে? 

তবে তো আগে থেকেই বিশ্ববাসী অনেক বেশি সতর্ক ও মুক্ত থাকতো করোনার এই নৃশংস আক্রমণ থেকে?

 

'UNRESTRICTED WARFARE'(China's master plan to destroy America)-নামক একটা বই চিনে প্রকাশিত হয়েছিল ২০০২ সালে, যার সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু এমন যে, 'আমেরিকা আমাদের চেয়ে অনেক শক্তিধর একটি রাষ্ট্র। 

আমরা সরাসরি এঁদের যুদ্ধে হারতে পারবোনা,  হারাতে গেলে কিছু ছল-চাতুরী ও কৌশল অবলম্বন করতে হবে।' এই গ্রন্থ তবে কি ঈঙ্গিত দেয় বিশ্ববাসীকে? 

 

প্রবীণ ভাইরাস বিশেষজ্ঞ বোটাও জিয়াও এবং লেই জিয়াও 'দ্য পসিবল অরিজিনস অব ২০১৯-এনকভ করোনাভাইরাস' নামক শিরোনামের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন রিসার্চ গেটে, যে জার্নালে বলা হয়েছে, 'ভাইরাসটি এই ল্যাব থেকে ছড়াতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করছি, তবে শক্ত প্রমাণ পেতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।'

 

চীনের এক চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ভাইরাসবিদ লি-মেং ইয়ান তো রীতিমতন এক জোরালো দাবি করেন বসেন যে, করোনা ভাইরাস প্রাকৃতিক নয় এবং চীন তা তৈরি করেছে গবেষণারেই। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় উহানে নিউমোনিয়া নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এমনই তথ্য তাঁর হাতে এসেছে বলে তিনি জানিয়েছেন, এবং গোটা বিষয়টা চীন যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে ধামা চাপা দেওয়ার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ বিষয়ে পালন করছে বোবা'র ভূমিকা!

যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, গবেষণা করতে গিয়েই তিনি দেখতে পান যে, সি সি ৪৫ এবং জেড এক্স সি ৪১ নামের ওই দুটো করোনা ভাইরাস থেকেই নোবেল করোনা ভাইরাস জন্ম দেওয়া হয়েছে , আর পরীক্ষাগার থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে বাইরে!

পরবর্তীতে হয়তো বাদুড় বা ওই জাতীয় কোনও প্রাণীর থেকে ভাইরাল স্ট্রেন নিয়ে ভাইরাসটাকে রাসায়নিক ভাবে করে তোলা হয়েছে আরো বেশি শক্তিশালী, যাতে তা মানবশরীরে ঢুকে মুহূর্তেই বিভাজিত হয়ে তৈরি করতে পারে অসংখ্য প্রতিলিপি।

চীন সরকারের বিরুদ্ধে এ তথ্যের পর্দা জনসমক্ষে তুলে ধরায় বিজ্ঞানীকে দেওয়া হয় প্রাণনাশের হুমকিও।

তাঁর সমস্ত তথ্য মুছে ফেলা হয় সরকারি ডাটাবেস থেকে, এবং তাঁর সম্পর্কে গুজব ছড়ানোর মিথ্যে অভিযোগ ও মিথ্যেবাদী প্রমাণ করার জন্য এমনকি লোক পর্যন্ত নিয়োগ করা হয়!

হংকংয়ে নিজের বাড়িতে ফিরতে পারবেন কিনা আর কোনোদিনও, ও তাঁর পরিবারের জীবন  সংকটময় জেনেও প্রাণভয়ে অগত্যা তিনি বাধ্য হন আমেরিকায় চলে যেতে!

বর্তমানে বিশ্বের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানীর সঙ্গে এ বিষয়ে নতুন করে গবেষণা শুরু করেছেন তিনি , এবং সময় আসলে গোটা বিশ্বকে তিনি এ বিষয়ে আরও অনেক তথ্য দেবেন বলেও জানিয়েছেন।  

 

সব কেমন যেন জড়ানো-প্যাঁচানো এক দীর্ঘ সুতো, যার উৎস তো আছে ঠিকই, কিন্তু ঠিক কোথায়?  

তা যেন খুঁজে পেয়েও, যাচ্ছেনা পাওয়া বা আদৌ দেওয়া হচ্ছে না খুঁজে বের করতে! যদিও বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে দুটো অত্যাধিক জনপ্রিয় শব্দ আছে, তা তো জানি প্রায় আমরা সবাই, আর সমাজের অণু-পরমাণুতে রাজনীতি যে প্রবেশ করেছে বহু আগে থেকেই, তা আর বলার বোধহয় অপেক্ষা রাখেনা কোনো?

 

তন্ময় সিংহ রায়
কোলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top