সিডনী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

খাঁচা : অমিতা মজুমদার


প্রকাশিত:
১০ মে ২০২১ ১৯:৫৫

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ২১:০৬

ছবিঃ অমিতা মজুমদার

 

সামনের বাড়ির বারান্দায় বেশ বড়ো একটা খাঁচা রাখা।অনেকগুলো পায়রা থাকে ওখানে।বেশ আদর যত্নেই রাখে ওদের। সময়মতো খাওয়া দেয়,পরিষ্কার করে।মালিকের বদান্যতায় পায়রাগুলো খুব ভালো আছে। এমনকি শীতে ওদের খাঁচাটা গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়।

আবার বৃষ্টিতেও আড়াল করে রাখে ত্রিপল দিয়ে। পায়রাগুলো নিজেদের মধ্যে বকম বকম করে। আর ভাবে তাদের মনিব কত ভালো।

শুধু তারা যে প্রতিমাসে একজোড়া করে বাচ্চা দেয় তাদের যেন কোথায় নিয়ে যায়... 

এ পাশের বাড়িতে আছে অনেকগুলো পরিবার।আধুনিক বহুতল আবাসিক ভবন কী-না।একটা সুন্দর গালভরা কাব্যিক নাম আছে বাড়িটার।আনন্দনিকেতন। আনন্দনিকেতনকে অনেকটা ওই পায়রার খোপের মতোই মনে হয় প্রিয়তির।

এতগুলো পরিবার আছে এই একটা বাড়িতে। প্রায় প্রতিটা ঘরে আছে- মিনা যুথি,রানু,রেখা,সাথি নামের কেউ না কেউ। যাদেরকে সবরকম আরাম আয়েস, খাওয়াপরা সহ অনেক কাল্পনিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাম থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। এনেই ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ফ্লাট নামক আধুনিক খাঁচায়।

কেউ কৈশোর পেরিয়েছে কেউ-বা কৈশোরে পা দিয়েছে।যাদের দুপুর কিংবা বিকেলের কোনো কোনো সময় কাজের ফাঁকে এসে বারান্দা নয়তো জানালার গরাদে দাঁড়িয়ে মাথার উপরের আকাশটা দেখার আপ্রাণ চেষ্টা থাকে।কল্পনায় ফেলে আসা গ্রামের ঘরবাড়ি, মা-বাবা,ভাই-বোন বা বন্ধুদের দেখে স্বপ্নহীন মাছের চোখে।হঠাৎ চমকে ওঠে জমে যাওয়া কাজের পাহাড়ের কথা মনে পড়ায়।

হেসে ওঠে অকারণ কোনো স্বপ্ন কল্পনায়। নিজেকে যে স্বপ্নে আবিষ্কার করে গ্রামের পথে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়ায় সে।

পরিবেশ,পরিস্থিতি নামক অদৃশ্য জাদুর ছোঁয়ায় মনের বয়সে অনেকটাই পরিণত হয়ে ওঠে সময়ের আগেই এই বন্দিজীবনের অভ্যস্ততায়। ওরা জেনে যায়, ওরাও ঠিক ওই পায়রাগুলোর মতো। ওরা সব পায় শুধু হারায় ওদের স্বপ্ন।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top