সিডনী শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১

গোয়েন্দা অপ্সরা ও ধাঁধাল পত্র (পর্ব এক) : আসিফ মেহ্‌দী


প্রকাশিত:
১১ মে ২০২১ ২৩:১০

আপডেট:
২৪ মে ২০২১ ২১:০৭

 

ভুমিকাঃ বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হচ্ছে নতুন গোয়েন্দা- গোয়েন্দা অপ্সরা! রহস্যেঘেরা ম্যাজিকাল চরিত্রের অধিকারী অপ্সরা। জানার সীমাহীন আগ্রহ ও জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা অপ্সরাকে দিয়েছে সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, নানা চরিত্রের মানুষকে বোঝার দক্ষতা এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পারদর্শিতা। অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি কাজে লাগিয়ে রহস্যভেদ করে গোয়েন্দা অপ্সরা ও তার টিম। বাংলা ভাষার স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক আসিফ মেহ্‌দীর সুনিপুণ রচনাশৈলীতে ফুটে উঠেছে অপ্সরার রহস্য উন্মোচনের অসাধারণ সব গল্প।

 

পর্ব একঃ
রহস্যের খোঁজে ঢাকার গুলশানে অপ্সরা; সঙ্গে তার সহযোগী। আলিম সাহেব কল দিয়েছেন সকালে। তার একান্ত ব্যক্তিগত রহস্যময় ধাঁধার জট খুলতে হবে। মূল কাহিনির আগে কিছু বিষয় জানানো প্রয়োজন বলে মনে করছি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সহজ-সরল মেয়ে হৃদির নাম কেন অপ্সরা হলো এবং পরবর্তীতে সেই নামেই কেন সে পরিচিত হতে চাইল, তার পেছনে রয়েছে দৃঢ় প্রত্যয় ও কঠিন সংকল্পের গল্প। সহজ-সরল-প্রণোচ্ছ্বল অপ্সরার জীবনে এক পর্যায়ে আঘাত হানে ভয়াবহ কষ্টের টাইফুন। সেই আকস্মিক শোককে নিজগুণে শক্তিতে রূপান্তর করে অপ্সরা। ডিপ্রেশন স্টেট থেকে জেগে ওঠে সেলফ-মোটিভেশনের মাধ্যমে। জীবনের দুর্ঘটনাটির আগে অপ্সরা তার এই অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পর্কে জানত না। ঘটনাটি তাকে করে তুলেছে সেলফ-মোটিভটেড ও সেলফ-গাইডেড এক আত্মপ্রত্যয়ী নারী। 

একসময় অপ্সরা ছিল অন্তর্মুখী স্বভাবের। কিন্তু জীবনের সেই দুর্ঘটনা ধীরেধীরে তাকে অন্তর্মুখিতার বৃত্ত থেকে বের করে এনেছে। অপ্সরা যখন তার সরলতাপূর্ণ চাহনি ও প্রাণবন্ত হাসিতে কোনো আলাপচারিতায় যুক্ত হয়, তখন আলোচনা যেন ঔজ্জ্বল্য পায়। রহস্যেঘেরা ম্যাজিকাল চরিত্রের অধিকারী অপ্সরা হাসলে তার চারপাশের প্রকৃতি ও জীবন যেন হেসে ওঠে এবং কাঁদলে চতুর্পাশও যেন কেঁদে ওঠে! জানার সীমাহীন আগ্রহ ও জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা অপ্সরাকে দিয়েছে সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, নানা চরিত্রের মানুষকে বোঝার দক্ষতা এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পারদর্শিতা। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে অপ্সরা সিরিজের প্রথম তিনটি বইতে। বইগুলোর নাম প্রকাশকাল অনুসারে-অপ্সরা, অপ্সরার স্পর্শ এবং অপ্সরীরী। অবশ্য গোয়েন্দা অপ্সরার ঘটনাগুলো পড়তে সেসব ইতিকথা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

বেগুনি রঙের তেজস্বিতা অপ্সরার মধ্যে আকস্মিক অভাবনীয় শক্তির বা আত্মবিশ্বাসের উদ্ভব ঘটায়! একারণেই অপ্সরার ডান হাতে সবসময় থাকে বেগুনি রঙের ব্রেসলেট। মাঝেমাঝে বেগুনি রঙের পোশাক পরে অপ্সরা। বর্তমানে তার মোবাইলের কভারটিও বেগুনি রঙের। সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশুনা সম্পন্ন করে কয়েক বছর একটি সংবাদপত্র প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছে অপ্সরা। কপটতা, অন্যায়, অবিচার প্রতিহত করার শপথে বাংলার পথে সে পথ চলতে চায়। প্রফেশনের সঙ্গে প্যাশনের সমন্বয় না হওয়ায় অপ্সরা পরিপূর্ণভাবে মানসিক শান্তি পাচ্ছিল না। কিন্তু কী তার প্যাশন, তা-ই তো সে জানে না। এসব নিয়ে বেশ কয়েক মাস নিবিড়ভাবে ভাবতে থাকে অপ্সরা।

মাসখানেক আগের ঘটনা। বিকেলে অপ্সরা একটি পার্কে একাকী হাঁটছিল আর নিজের মনের গহীনের কথা জানার চেষ্টা করছিল। জীবনে চলার পথে মাঝেমাঝে মেয়েটি স্রষ্টাকে স্মরণ করে। সেদিন অপ্সরা তার অন্তরের প্রকৃত ইচ্ছার কথা মনেমনে স্রষ্টার কাছে জানতে চাইল! আকস্মিকভাবে যেন সে উত্তর পেয়ে গেল; পেল তার প্যাশনের খোঁজ। ছেলেবেলা থেকে বইপড়া অপ্সরার অন্যতম শখ। আর গোয়েন্দাদের কর্মকাণ্ড তাকে তাক লাগিয়ে দিত। তারাও মানুষের সেবা করে; তবে এমন উপায়ে যা অপ্সরাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। অপ্সরা সিদ্ধান্ত নিল শখের গোয়েন্দা হবে। এভাবেও সে অন্যায়কারীকে ধরতে পারবে; উপরন্তু প্রফেশন ও প্যাশনের মধ্যে সমন্বয় ঘটবে। গোয়েন্দাগিরিতে তার সামগ্রিক সক্ষমতার যথার্থ প্রয়োগ হবে-এসব ভেবে অপ্সরা অত্যন্ত আনন্দিত হলো।

পরিচিত বন্ধুদের মাধ্যমে পুলিশবাহিনীর কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলল অপ্সরা। তারা সরাসরি জানিয়ে দিলেন, গল্প-উপন্যাস বা চলচ্চিত্রে যে শখের গোয়েন্দা চরিত্রসমূহ দেখা যায়, তা আসলে বাস্তবে সম্ভব না। এজন্য যে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা প্রয়োজন, তা ব্যক্তিগতভাবে অর্জন করা ভীষণ কঠিন। অপ্সরা কিছুটা মর্মাহত হলেও দমবার পাত্রী আর নেই। কেউ যদি তাকে কোনো রহস্যের জট খুলতে অনুরোধ করে এবং অপ্সরা যদি সেই রহস্যজাল ছিন্ন করতে পারে, তাহলে বাধা কোথায়! এসময়ে ঘটা একটি ঘটনার কথা লিখতেই হবে। কারণ, সেদিনের সেই ঘটনার কারণে অপ্সরা পাকাপাকিভাবে শখের গোয়েন্দা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এক বান্ধবীর দাওয়াতে একটি জন্মদিনের উৎসবে গিয়েছিল অপ্সরা। কেক কাটার পরমুহূর্তেই শুরু হলো শোরগোল। কেক-এর ওপাশে জন্মদিনের ছোট্ট ছেলেটিকে কোলে নিয়ে রেখেছিলেন বাবা। ভদ্রলোকের পকেট থেকে চুরি গেছে মানিব্যাগ! কেক কাটার পরই তিনি দেখলেন, মানিব্যাগ নেই। অথচ কিছুক্ষণ আগেও তা ছিল প্যান্টের পেছনের পকেটে। তাতে ছিল অনেক টাকা! অপ্সরা খুব অবাক হলো, সেই পার্টিতে উপস্থিত এক মেয়ের বুদ্ধি দেখে। মেয়েটি তার উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে বের করে ফেলল চোরকে। ভাড়াটে ক্যামেরাম্যান কেক ও তার পেছনে দাঁড়ানো মানুষজনের দিকে ক্যামেরা তাক করে বারবার ফটো নিচ্ছিল। সেসব ফটো দেখে পিচ্চির বাবার কাছে ঘেঁষা ছেলেটিকে কিছুক্ষণের মধ্যে পাকড়াও করে ফেলল সে। ছেলেটি আরেক ভদ্রলোকের বাসায় গৃহপরিচারক হিসেবে আছে। ক্যামেরায় তোলা ছবিতে একবার ছেলেটিকে ভিকটিমের কাছে ঘেঁষতে দেখা যায়; পরের ছবিতে তাকে রান্নাঘরের দিকে যেতে দেখা যায়। রান্নাঘরে কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরই পাওয়া যায় মানিব্যাগ। এই ঘটনায় সবাই স্বস্তি পেল আর অপ্সরা হলো বিস্মিত। ক্যামেরায় তোলা কয়েকটি ছবি দেখে এভাবে চোর ধরার বুদ্ধিটা দারুণ লেগেছে তার। বার্থডে পার্টি চলাকালীন মেয়েটির সঙ্গে কথা বলল অপ্সরা।

‘আমি অপ্সরা, তোমার প্রতিভায় সত্যিই ইমপ্রেসড!’
‘ধন্যবাদ, আপু। আমি জ্যাকলিন।’
‘বাহ্, বেশ অন্যরকম নাম তো তোমার! জ্যাকলিন নামের রহস্য জানতে পারলে খুশি হব।’

জ্যাকলিন বলল, ‘আসলে নামটি রেখেছেন আমার বাবার পিএইচডি সুপারভাইজার প্রফেসর ড. স্টুয়ার্ট ডেভিড কার্টার। আমার জন্মের সময় আমার বাবা কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে ইংল্যান্ডে গবেষণায় ছিলেন। গবেষণার এক পর্যায়ে জ্যাকলিন নামক উপাদানের প্রয়োজন হলো। এই উপাদান পাওয়া যায় আমাদের দেশের জ্যাকফ্রুট বা কাঁঠালের বিচিতে। ইংল্যান্ডে পাওয়া যায় না বলে আমার বাবা আমার দাদাকে বলে কাঁঠালের বিচি দেশ থেকে বিলেতে নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। একসময় গবেষণা সফল হলো। রিসার্চ টিমের সবাই যখন সেই আনন্দে বিভোর, তখনই লিভারপুলের একটি হাসপাতালে আমার জন্ম। বাবার সুপারভাইজার আমাকে দেখতে এলেন এক সকালে। বললেন, আমার নাম জ্যাকলিন রাখতে। সেই থেকে আমার নাম জ্যাকলিন।’

অপ্সরা মুগ্ধ শ্রোতার মতো শুনল জ্যাকলিনের কথা। শুধু নামই ব্যতিক্রম না; দেখতেও উপস্থিত সবার থেকে একটু আলাদা জ্যাকলিন। বেশ লম্বা, ফর্সা, মায়ামায়া চেহারার মেয়ে জ্যাকলিন। অপ্সরা বলল, ‘তোমার নামের পেছনের ঘটনা শুনে ভালো লাগল, জ্যাকলিন। তুমি কোথায় পড়াশুনা করছ?’

‘একটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছি এ বছর।’
‘দারুণ, ডাক্তারি পড়ছ তাহলে! নিশ্চয়ই পড়ার অনেক চাপ।’
‘জি, প্রথম থেকেই ভীষণ চাপে রেখেছে।’

‘আমি আসলে একটা গোয়েন্দা টিম তৈরি করতে চাচ্ছিলাম। শখের গোয়েন্দাগিরি বলতে পারো। আজকে যেভাবে তুমি মানিব্যাগ উদ্ধার করলে, তা দেখে আমি মুগ্ধ। তোমাকে আসলে আমি আমার গোয়েন্দা টিমে নিতে চাচ্ছিলাম কিন্তু ডাক্তারি পড়ার চাপের কথা শুনে বুঝতে পারছি…’

অপ্সরার কথা শেষ না হতেই জ্যাকলিন বলল, ‘আপু, আপনার টিমে থাকতে আমি আগ্রহী। পড়ার চাপ তো থাকবেই। এখন তো যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিক। শুধু কোনো স্থানে যেতে হলে আমাকে আগে জানালেই হবে। আমি চেষ্টা করব ম্যানেজ করতে। ছোটবেলা থেকে গোয়েন্দা বই পড়ে, ডিটেকটিভ মুভিগুলো দেখে আমি বড় হয়েছি। তাই খুব ভালো লাগে। বলতে পারেন, আমার শখ এটি। আপনার গোয়েন্দা টিমে থাকতে পারলে আমি খুব খুশি হব।’

‘তুমি তো দেখছি আমার মতোই গোয়েন্দা কাহিনি পছন্দ করো। খুবই ভালো হলো। আপাতত তুমি আর আমি-দুজনে একটা টিম করছি। খুব তাড়াতাড়ি আমি একটা অফিস নেব। প্রথমে তোমাকে সম্মানী হিসেবে কতটুকু দিতে পারব জানি না, তবে একসময় আশাকরি এসব নিয়ে আর ভাবতে হবে না।’

‘সমস্যা নেই, আপু।’
‘তোমার মোবাইল নম্বরটা দাও। আমি পরে তোমার সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলব।’

জ্যাকলিন তার মোবাইল নম্বর অপ্সরাকে দিল। অপ্সরা পরদিনই তার প্রতিষ্ঠানে জানিয়ে দিল যে সে স্বনির্ভর হতে চায়। তার আইডিয়া শুনে সবাই মুখে বাহবা দিলেও এ পথে অপ্সরা কতটুকু এগোতে পারবে, তা নিয়ে প্রত্যেকেই সন্দিহান। দীর্ঘ কয়েক বছর চাকরির সুবাদে ব্যাংকে অপ্সরার বেশ ভালো সঞ্চয় আছে। কিছু টাকা দিয়ে মিরপুর এক নম্বরে অফিসের জন্য একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিল। অপ্সরার বাসাও মিরপুরে। কিন্তু বাসস্থান ও কর্মস্থান একসঙ্গে রাখার পক্ষপাতী না অপ্সরা। এতে কোনোটাই ঠিকমতো হয় না। অফিস ভাড়া নেওয়ার পর আপাতত অফিস চালানোর মতো কয়েকটি আসবাব কিনল। অফিসের জন্য আলাদা একটি কম দামি মোবাইল সেট ও সিম কিনল। পরিশেষে আজ সকালে দেশবাসী দেখতে পেল, জনপ্রিয় একটি দৈনিকের ক্লাসিফায়েড বিজ্ঞাপন সেকশনে ‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপনগুলোর নিচে ছাপা হয়েছে অপ্সরার বিজ্ঞাপন:

রহস্য চাই
হালকা রহস্য, জটিল রহস্য, হাটিল (হালকা+জটিল) রহস্য
সরাসরি যোগাযোগ: গোয়েন্দা অপ্সরা
যোগাযোগ: ০১XXX০৮XXXX

 

অপ্সরা কল্পনাও করেনি যে বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর কলের যন্ত্রনায় তাকে মোবাইল সেট বন্ধ রাখতে হবে। তবে প্রথম যিনি কল করেছেন, তার সঙ্গেই প্রথম দেখা করার পরিকল্পনা করল। তার নাম আলিম চৌধুরী। অপ্সরা জ্যাকলিনকে কল দিয়ে দুপুর বারোটার সময় আলিম চৌধুরীর বাসার সামনে থাকতে বলল। ঠিকানা জানিয়ে দিল। ঠিক বরোটা এক মিনিটে দুজন ঢুকল আলিম সাহেবের গুলশানের বাসায়। 

অপ্সরা হালকা বেগুনি রঙের একটি ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে এসেছে। এই ব্যাগটির ভেতরে রেখেছে তদন্তের কাজে লাগতে এমন কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস; যেমন: ডায়েরি, কলম, অডিও রেকর্ডার, ডিজিটাল ক্যামেরা, মিনি টর্চ, মাল্টিফাংশন পকেট নাইফ ইত্যাদি। যদিও শেষের আইটেম বাদে বাকিগুলোর কাজ এখন মোবাইল সেটের মাধ্যমেই সেরে ফেলা সম্ভব, তারপরও অপ্সরা সেসব নিয়েছে নিজেকে প্যাশনের পথে বাড়তি মোটিভেশন দেওয়ার জন্য। গুলশানে ঠিকানামতো পৌঁছে বাড়ির সামনেই জ্যাকলিনকে দেখতে পেল অপ্সরা। দুজনে একসঙ্গে পা বাড়াল দেয়ালঘেরা বাড়ির দিকে।

চলবে

 

আসিফ মেহ্‌দী
কথাসাহিত্যিক ও প্রকৌশলী

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top