সিডনী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম কদম ফুল : অমিতা মজুমদার


প্রকাশিত:
২৭ মে ২০২১ ১৯:৫০

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ২২:৫৪

 

আজ নীলার কি হয়েছে! সেই ভোর রাতে ঘুম ভেঙে যায়। আর তারপর থেকে অনুক্ষণ তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে প্রবাল। সেই প্রবাল যার সাথে দেখা নেই, যোগাযোগ নেই তা প্রায় বছর পঞ্চাশেক হবে। এখন নীলা পঁয়ষট্টি, প্রবালও তাহলে তাই। বয়ঃসন্ধির ভালোলাগা তাকে কি প্রেম বলে? না-কি অনুরাগ! 

গত চল্লিশ বছর ধরে নীলা কানাডায় স্বামীর সাথে বসবাস করছে। সেই ঘরমুখো, শান্ত নীলা এখন অনেক কিছুই পারে। সে একটা বৃদ্ধনিবাসে চাকরি করে। মাস গেলে মোটা টাকা মাইনে পায়। নিজে গাড়ি চালিয়ে যেখানে খুশি সেখানে যায়। স্বামী দ্বৈপায়ন আর দুই ছেলে অর্ক আর প্রভাতকে নিয়ে বাড়-বাড়ন্ত সংসার তার। এই বয়সে শরীর একটু পৃথুলা হলেও ছোট ছোট পোশাক, উঁচু গোড়ালির জুতা পরে দিব্যি নাচতে পারে তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে।

আজ সেই নীলার বেশ মনে পড়ছে প্রবালের কথা। প্রবাল তার সেজ কাকিমার মামাত ভাইয়ের ছেলে। কাকিমার বাপের বাড়ি গেলে ওর সাথে দেখা হতো, আবার কাকিমার ভাইয়ের ছেলে মেয়েদের সাথে প্রবালও তাদের বাড়ি আসত। আসলে তখন গ্রামের একান্নবর্তী পরিবারে আত্মীয়তার চুলচেরা বিশ্লেষণ হতো না। সবাই কেমন হৈ হুল্লোড় করে কেটে যেত দিনগুলো। নীলা সবে ক্লাস নাইনে উঠেছে, প্রবাল কলেজে ভর্তি হয়েছে। প্রবাল লেখাপড়ায় খুব ভালো। তাই সবাই তাকে একটু বেশি গুরুত্ব দিত। যেটা নীলার মনে মাঝে মাঝে হিংসার উদ্রেক ঘটাত।সেই হিংসা থেকেই দুজনের আলাপের সূত্রপাত। তারপরের বেশ কয়েকটা বছর ছোটখাট খুন.সুটি,হাসি ঠাট্টার মধ্য দিয়ে একটা অম্লমধুর সম্পর্ক ওদের মাঝে গড়ে ওঠে।

প্রবাল কলেজ, পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়, আর নীলা! হঠাৎ করেই সেজমামা দ্বৈপায়নকে নিয়ে হাজির। প্রবাসী শিক্ষিত, সুদর্শন দ্বৈপায়নকে দেখে একবাক্যে বাড়ির সবাই রাজি হয়ে যায়। নীলার কাছে কেউ জানতেও চায়নি সে কী চায়?

তারপর সবকিছু খুব দ্রুত ঘটে যায়। দ্বৈপায়নের তাড়া ছিল। সে বিয়ে করার জন্যই দেশে এসেছে। সেবারে না-হলে আবার আসতে অনেক দেরি হবে। তাই এমন সুপাত্রকে হাত ছাড়া করতে চায়নি নীলার পরিবার। মহাধুমধামে নীলার বিয়ে হয়ে যায়, এবং বিয়ের পরপরই স্বামীর কাছে চলে যায়।

দ্বৈপায়ন খুবই ভালো মানুষ, নীলার কোন অসুবিধা হয়নি প্রবাসের আত্মীয়-পরিজনবিহীন জীবনে। সংসারে অনভিজ্ঞ নীলা একটু একটু করে সব শিখে নেয়। একজন প্রবাসী নাগরিক হিসেবে নিজেকে পুরোদস্তুর উপযুক্ত করে তুলে স্বল্পসময়েই।

সেই আঠারো, কি উনিশ বছর বয়সে এদেশে আসে আর আজ পঁয়ষট্টি। 

 ঝাঁকড়া চুলের লম্বা শান্ত, সৌম্য চেহারার প্রবালের জন্য আজ মন কেমন করছে। সে কী প্রবাল তার জীবনের প্রথম পুরুষ ছিল বলে?

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top