সিডনী রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতির পীঠস্থান কলকাতা : সিদ্ধার্থ সিংহ


প্রকাশিত:
৮ জুলাই ২০২১ ১৮:০৯

আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪৬

 

তার থেকে যত উঁচুই বাড়ি হোক না কেন, কলকাতার সংস্কৃতি মানেই মনুমেন্ট। কলকাতার সংস্কৃতি মানেই ট্রামগাড়ি, কলকাতা সংস্কৃতি মানেই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান।

কলকাতার সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে ডাবল ডেকার বাস, মাদারি কা খেল, প্রিন্সেপ ঘাট।

যে যেটা ভালবাসেন, সেটার জন্যই তাঁর কাছে এই শহর হয়ে উঠেছে প্রাণের কলকাতা। সংস্কৃতির পীঠস্থান।

কলকাতার আরও একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল টালা ট্যাঙ্ক। যেটা শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পানীয় জলের আধার। যে ট্যাঙ্কে জাপানিরা বিধ্বংসী বোমা ফেলেছিল। ভেবেছিল, ওটা উড়িয়ে দিতে পারলেই কলকাতার মানুষজন পানীয় জলের অভাবে কলকাতা ছেড়ে পালাবে। কিন্তু অত শক্তিশালী বোমাও কয়েকটি ফুটো ছাড়া টালা ট্যাঙ্কের ‌আর কোনও ক্ষতিই করতে পারেনি।

এখনও, একটানা ১০০ বছরেরও বেশি দিন ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কলকাতার মানুষকে পরিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করে যাচ্ছে এই ট্যাঙ্ক।

শুধু আক্রমণ নয়, কালের বিচারে দেখা গেছে, আবহাওয়া দফতর কলকাতার ওপরে বড় কোনও দুর্যোগ আছড়ে পড়তে চলেছে বলে কলকাতাবাসীকে আগাম সতর্কবার্তা দিলেও, শেষ পর্যন্ত সেই সব দুর্যোগ কলকাতার আশপাশ দিয়ে ঠিক পাশ কাটিয়ে চলে গেছে। কলকাতার বুকে সে রকম ভয়ঙ্কর কিছুই ঘটেনি।

আসলে পৃথিবীর যাবতীয় সংস্কৃতি এসে মিশেছে এই কলকাতার সংস্কৃতিতে। 

এই শহর এক সময় শুধুমাত্র ভারতের পূর্বতন রাজধানীই ছিল না, ছিল এবং এখনও বহাল তবিয়তে আছে, আধুনিক ভারতের শিল্প ও সাহিত্য চেতনার জন্মভিটে হয়ে। যার ফলে কলকাতাকে অনেক সময় 'ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী' বলেও উল্লেখ করা হয়।

কী নেই ১৯৪৭ সালে গড়ে ওঠা জেলা সদর এই কলকাতায়? আছে ১৮১৪ সালে প্রায় আট হাজার বর্গমিটার জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম। এই জাদুঘরের সাতটি গ্যালারিতে মোট ৬টি ভাগে শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ব, ভূতত্ত্ব, প্রাণিবিদ্যা এবং উদ্ভিদবিদ্যা জাতীয় বিভিন্ন ধরনের বিশাল সংগ্রহ সুসজ্জিত রয়েছে।

 

রয়েছে আলিপুরে অবস্থিত ন্যাশনাল লাইব্রেরি। ভারতের বৃহত্তম গ্রন্থাগার। ১৯৫৩ সালে পুনঃস্থাপন করা হয়। বর্তমানে এই গ্রন্থাগারে রয়েছে ভারতের মোটামুটি সব ক'টি ভাষার অন্তত প্রায় কুড়ি লক্ষ বই এবং ৫ লক্ষ পাণ্ডুলিপি। স্বাধীনতার পরে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা এই সুবৃহৎ অট্টালিকাটি হয়ে উঠেছিল পশ্চিমবাংলার এল.টি. গভর্নর জেনারেলের বাসস্থান। 

আছে ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ৪৫ একর জমির উপরে একটি পশুশালা, যেটা আলিপুর চিড়িয়াখানা নামেই পরিচিত। ঠিক তার উল্টো দিকেই রয়েছে একটি অ্যাকোয়ারিয়াম, যেখানে চাক্ষুষ করা যায় সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ এবং জীবের সমাহার।

১৯২১ সালে উদ্বোধন হওয়া ভাইসরয় লর্ড কার্জনের মস্তিষ্ক প্রসূত ১৮৫ বর্গ কিলোমিটার জায়গার উপরে গড়ে ওঠা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ক'হাত দূরেই রয়েছে বিড়লা তারামণ্ডল। ঘোড়দৌড়ের চোখ ধাঁধানো রেসকোর্স।

আকাশবাণী ভবন, ইডেন গার্ডেন। খেলাধুলোর আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়াঙ্গন সল্টলেক স্টেডিয়াম।

ইংরেজদের দ্বারা নির্মিত কলকাতার সব চেয়ে প্রাচীনতম ইমারত--- ফোর্ট উইলিয়াম। 

আছে ১৮৩৫ সালে রাজা রাজেন্দ্র মল্লিকের বানানো মার্বেল প্যালেস। মুগ্ধ করার মতো সাদা ধবধবে মার্বেল দিয়ে তৈরি। এর ভিতরে একটি ছোট্ট চিড়িয়াখানাও আছে, যা ভারতের প্রথম চিড়িয়াখানা। রয়েছে অভিজ্ঞ এবং বিখ্যাত শিল্পীদের নানান স্থাপত্য।

বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা এই শহরের বিপুল জনসংখ্যার অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হল, শহরের ছোট ছোট অঞ্চলকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া পাড়া সংস্কৃতি। উত্তর কলকাতার রক কালচার থেকে যা গোটা কলকাতায় ছড়িয়ে পড়েছিল।

সাধারণত প্রত্যেক পাড়ায় একটি করে ক্লাবঘর-সহ নিজস্ব সংঘ বা খেলার মাঠ রয়েছে। সেখানে সন্ধে হলেই তুমুল আড্ডা বসে আর সেই সব আড্ডায় আলোচিত হয় বিশ্বের তাবড় তাবড় সমস্যা থেকে অত্যন্ত মোটা দাগের অশ্লীল চুটকি পর্যন্ত।

এই শহরে রাজনৈতিক দেওয়াল লিখনেরও এক ঐতিহ্য আছে; এই সব দেওয়াল লিখনে কুরুচিপূর্ণ কেচ্ছা-কেলেংকারির বর্ণনা থেকে শ্লেষাত্মক রঙ্গব্যঙ্গ, লিমেরিক, কার্টুন, ইস্তাহার--- সবই লেখা হয়।

এই গুজবের শহরেই একসময় যত্রতত্র দেখা যেত দেওয়াল পত্রিকা। চক্কর দেওয়া যেত দক্ষিণ কলকাতার লেকের মধ্যে ট্রয় ট্রেনে চেপে। এখন সেটা না থাকলেও আছে কলকাতার গর্ব মেট্রো রেল।

গথিক, ব্যারোক, রোমান, প্রাচ্য ও মুঘল স্থাপত্য-সহ অন্যান্য ইন্দো-ইসলামীয় শৈলীর মোটিফ দ্বারা সজ্জিত এখানকার অনেক ভবন ও স্থাপস্থ্য আছে।

চিৎপুরের যাত্রা পাড়া, নাটক ও গ্রুপ থিয়েটারের ঐতিহ্য সুবিদিত। বাংলা ছায়াছবি এবং মূলধারার হিন্দি চলচ্চিত্র এখানে সমান জনপ্রিয়।

শহরের ফিল্ম স্টুডিও যেহেতু টালিগঞ্জে; সেই কারণে বাংলা চলচ্চিত্রের স্টুডিও পাড়াকে হলিউড বলিউডের সঙ্গে মিলিয়ে 'টলিউড' নামে অভিহিত করা হয়।

একাধিক কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালকের কর্মজীবন শুরু হয়েছে এই শহরকে কেন্দ্র করেই। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সত্যজিৎ রায় (১৯২১–১৯৯২), মৃণাল সেন (জন্ম ১৯২৩), ঋত্বিক ঘটক (১৯২৫–১৯৭৬) এবং আধুনিক চিত্র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত (জন্ম ১৯৪৪), অপর্ণা সেন (জন্ম ১৯৪৫), গৌতম ঘোষ (জন্ম ১৯৫০) ও ঋতুপর্ণ ঘোষ (জন্ম ১৯৬২), শুভঙ্কর সিংহ (১৯৯২)।

এশিয়ার মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার নিয়ে আসেন এই শহরেরই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 

কলকাতার খাদ্যতালিকার প্রধান উপাদান ভাত, ডাল আর মাছের ঝোল হলেও কলকাতার রসগোল্লা অত্যন্ত বিখ্যাত। বিখ্যাত মিষ্টি দইও।

ইলিশ, চিংড়ি ও রুই-সহ অন্যান্য মাছের নানা ব্যঞ্জনও কলকাতায় বেশ প্রচলিত। আলুর চপ, বেগুনি, রোল, ফুচকার মতো ফুটপাতের খাবার যেমন এখানে অত্যন্ত জনপ্রিয়, তেমনি জনপ্রিয় চায়নাটাউনের ভারতীয় চিনা ডিসও।

ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ধর্মতলার অফিস বাবুদের জন্য গজিয়ে ওঠা ডেকার্স লেনের রকমারি এবং সস্তার উপাদেয় খাবারের।

এই শহরের যেমন পাঁচতারা হোটেলের সংস্কৃতি আছে, আছে মাত্র ৫ টাকা দিয়ে ডিম-ভাত খাওয়ার সংস্কৃতিও।

বাঙালি রমণীরা সাধারণত ঐতিহ্যবাহী শাড়ি পরলেও, কেউ কেউ পাশ্চাত্য পোশাক পরতেও অভ্যস্ত। আবার পুরুষদের মধ্যে পাশ্চাত্য পোশাকের চলই বেশি।

দুর্গাপুজো কলকাতার সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব। প্রতি বছর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে আশ্বিন-কার্তিক মাসে, মানে ইংরেজির সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এই পুজো হয়।

অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলির মধ্যে ঈদ উল ফিতর,‌ দোলযাত্রা, বড়দিন, পয়লা বৈশাখ, পঁচিশে বৈশাখ, সরস্বতী পূজা, রথযাত্রা, চড়ক উৎসব, পৌষপার্বন-সহ সমস্ত আনন্দ উৎসবই মহাসমারোহে পালিত হয়।

এ ছাড়াও অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তকমেলা, সঙ্গীত মেলা, নাট্যমেলা, কবিতা অকাদেমি আয়োজিত বাংলা কবিতা উৎসব, ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলন, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও নান্দীকারের জাতীয় নাট্য উৎসব।

প্রতি বছর জুন মাসে কলকাতায় সমকামীদের‌ গৌরব পদযাত্রা হয়; যেটা ভারতের মধ্যে প্রথম গৌরব পদযাত্রা।

শীতকালে গোটা গড়ের মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যত্রতত্র চলে মাদারি কা খেল। বসে হারমোনিয়াম, ঢোল নিয়ে হিন্দুস্তানি গানের আসর। বিভিন্ন এলাকায় বসে মেলা।

কলকাতার পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীর পাড়ে তৈরি হওয়া একের পর এক ‌ঘাটগুলিও সংস্কৃতির এক-একটি পীঠস্থানও বটে।

বউবাজারের ছানাপট্টি এবং সোনাপট্টিও বহন করছে এই শহরের অনেক প্রাচীন সংস্কৃতি।

গানের ঐতিহ্যময় এই শহরে ৯০-এর দশকের প্রথম দিকে শুরু হয় বাংলা সঙ্গীত জগতের এক নতুন ধারা--- বাংলা ব্যান্ড। কোনও কোনও ব্যান্ড আবার বাংলা লোকসঙ্গীতের সঙ্গে জ্যাজ ও অন্যান্য পাশ্চাত্য সঙ্গীতের মিশেলও ঘটিয়েছে। 

চূড়ান্ত বিতর্কের শহর এই কলকাতার সংস্কৃতি নিয়ে বলতে গেলে যেমন বলতে হবে কালীঘাট পটচিত্র, কলকাতা ফিলম সোসাইটি, তেমনি বলতে হবে গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট, কলকাতা, নন্দন, মহাজাতি সদন, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল, রবীন্দ্রসদন, থিওলজিকাল সোসাইটি, একাডেমি অফ ফাইন আর্টস, দ্বারভাঙা হল, ওয়াই এম সি এ, ত্রিপুরা হিতসাধনী সভা। অরবিন্দ পাঠমন্দির, শোভাবাজার রাজবাড়ি, কফি হাউস, প্রেসিডেন্সি কলেজ, মহাবোধি সোসাইটি, এশিয়াটিক সোসাইটি, স্টার থিয়েটারের কথাও। 

 

উল্লেখ করতে হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। সেখানে তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র এখনও সাজানো আছে উপর তলার ঘরে। প্রতিটি ঘরই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিচিহ্ন বহন করে। মোট চারটি ভবনের আঠারোটি গ্যালারি জুড়ে রবীন্দ্রভারতী মিউজিয়াম।

এক সময় যাকে সুপ্রিম কোর্ট বলা হত, সেই কলকাতা হাইকোর্টেই প্র্যাকটিস করতেন তাবড় তাবড় সব আইনজীবীরা। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত যখন প্র্যাকটিস করতেন, তখন যে চেয়ারে তিনি বসতেন, সেই চেয়ারটাও সংরক্ষিত আছে এখনও।

বলতে হবে একান্ন শক্তিপীঠের অন্যতম হিন্দু তীর্থক্ষেত্র, কালীঘাট মন্দিরের কথা। পুরাণে বলা আছে, সতীর অঙ্গচ্ছেদের সময় পায়ের আঙুল পড়েছিল এখানে। বলতে হবে পরেশনাথের মন্দির, ত্রিমাতৃ মন্দির, পাঞ্জাবীদের গুরুদুয়ারা, নাখোদা মসজিদ, স্বামী বিবেকানন্দের পৈত্রিক আবাসের কথাও।

হুগলি নদীর তীরে ১৮৫৫ সালে জমিদার রানি রাসমণির প্রতিষ্ঠা করা দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির অবশ্যই কলকাতার সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। কারণ এই মন্দিরেই কালীসাধনা করতেন স্বয়ং শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।

বাদ দেওয়া যাবে না সারদা মায়ের বাড়ি, ১৫০ বছরে পড়া জিপিও, ঐতিহাসিক রাইটার্স বিল্ডিং, রবীন্দ্র সরোবর, মহিলাদের জন্য বাংলায় প্রথম গড়ে ওঠা বেথুন কলেজ, কালীঘাট ট্রাম ডিপোর পাশে ‘হিব্রু চর্চা কেন্দ্র’র কথাও।

বলতে হবে আগুন নেভানোর জন্য কলকাতায় প্রথম গড়ে ওঠা দমকলের কথাও। উল্লেখ করতে হবে চামড়ার ঢাউস ব্যাগে করে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার কাহিনিও।

এ ছাড়াও রয়েছে ধর্মতলার কাছে লালদীঘি। কেউ কেউ বলেন, সিরাজ-উদ্-দৌলার সৈন্যরা যখন ১৭৫৬ সালে ইংরেজদের কচুকাটা করেছিলেন, তখন সাহেবদের রক্তে নাকি লাল হয়ে গিয়েছিল এই দীঘি। আবার কেউ কেউ বলেন, দোলের দিনে এই দীঘির চারপাশে এত রং এবং আবির দিয়ে হোলি খেলা হতো এবং তার পর রং মেখে এত মানুষ একসঙ্গে এই দীঘিতে নেমে স্নান করতেন যে, দীঘির জল লাল হয়ে যেত। সেই থেকেই নাকি এই দীঘির নাম--- লালদীঘি।

এই শহরে আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানান ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরও অনেক নতুন নতুন রঙিন পালক প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে কলকাতার মুকুটে। তার মধ্যে যেমন আছে নিউ টাউনের মোম শিল্পকর্মের জাদুঘর--- মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়াম। তেমনি আছে গোটা দেশের মধ্যে প্রথম তৈরি হওয়া দক্ষিণ কলকাতার জনবহুল এলাকা পাটুলির একটি বড় জলাশয়ের মধ্যে ভাসমান বাজার।‌ যেখানে রয়েছে মোট ১১৪টি নৌকায় ২৮০টি দোকান। 

প্রচণ্ড গরমে বরফের মজা নেওয়ার জন্য নিউটাউনের এক্সিস মলের একদম সর্বোচ্চ তলায় ৯ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে শহরের প্রথম স্নো পার্ক।

আছে অ্যাকোয়াটিকা। যেটা আসলে একটি জল-উদ্যান। যা ২০০০ সালে দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। 

পূর্ব কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসে ৫০ একর জমির ওপরে রয়েছে সায়েন্সসিটি। এটি মূলত বিজ্ঞান সংগ্রহশালা ও বিজ্ঞান কেন্দ্রিক বিনোদন উদ্যান।

সল্টলেকে ৪০ একর এলাকা জুড়ে রয়েছে বিনোদন পার্ক--- নিক্কো পার্ক। তার পাশাপাশি আছে ভারতের বৃহত্তম উদ্যান--- ইকো পার্ক।

 

কলকাতার বাস এবং লরিগুলোর পিছন দিকে যে সব চমকপ্রদ এবং অভিনব উক্তি বা উদ্ধৃতি লেখা থাকে, সেটাও কলকাতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যই বহন করে।

কলকাতার সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যেমন জড়িয়ে আছে লিটিল ম্যাগাজিন, সোনাগাছি, রুপোগাছি এবং অবশ্যই কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশ। কলকাতার পকেটমারও। ঠিক তেমনি ছড়িয়ে আছে নিমতলা মহাশ্মশান, কেওড়াতলা মহাশ্মশানও।

বলা হয়, কলকাতার মতো ঘিঞ্জি এলাকায় যাঁরা গাড়ি চালান, তাঁরা পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে গিয়ে চোখ বুজে গাড়ি চালাতে পারবেন।

এর পরেও আলাদা করে উল্লেখ করতেই হবে কলেজ স্ট্রিটের কথা। যেটা মধ্য কলকাতায় অবস্থিত। এটা পৃথিবীর বৃহত্তম বাংলা বইয়ের বাজার এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পুরনো বইয়ের বাজার। যেটা 'বইপাড়া' নামেও খ্যাত।

এ সব ছাড়াও আরও অনেক কিছু আছে, যার পরতে পরতে মিশে আছে কলকাতার সংস্কৃতি, কলকাতার ঐতিহ্য এবং অবশ্যই কলকাতার হাতছানি।

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে

 

সিদ্ধার্থ সিংহ
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top