সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

প্রাসাদোপম কুঁড়েঘরে আন্তরিকতার রুশনি : মীম মিজান


প্রকাশিত:
১৫ জুলাই ২০২১ ২০:৩১

আপডেট:
১৯ জুলাই ২০২১ ০২:৪৪

 

কোভিডে আক্রান্ত গোটা দুনিয়া। বাসায় কাটছিল না সময়, মৃত আর আক্রান্তের সংখ্যা গুণিয়া। তাই হাঁসফাঁস কাটাতে বেরুলাম। রাজশাহী যাচ্ছিলাম। ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেখে নিজ বাড়িতে বেরানোর আমন্ত্রণ জানালেন জীবন সৈনিক কবি মো. গোলাম রাব্বানী। তার ইতিহাস-ঐতিহ্যে ঋদ্ধ জেলা নওগাঁ আর সাথে কবিসঙ্গ। কি আড্ডা হবে আর সাথে পুষ্ট হব ঐতিহ্যের জ্ঞানালোকে। এ সুযোগ একদম হাতছাড়া করা নয়। সে নেমন্তন্নে সঙ্গী হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র, তরুণ কবি ও গবেষক হাসান নাশিদ। তিনি কুষ্টিয়ায় কী যেন এক কাজে এসেছিলেন। সেখান থেকে উড়ে আসলেন। অতঃপর আমরা রওয়ানা হলাম নেমন্তন্ন পালনের উদ্দেশ্যে। তখন বিকেল। আর আকাশ জানান দিচ্ছিল যে, যেকোনো সময় ঝপঝপ করে তার বারিধারা ঢেলে ভিজিয়ে দিবে শরতের ভেলায় ভাসা পদ্মা, সিল্ক আর আমের জন্য বিখ্যাত নগরী রাজশাহীকে।
লোকাল বাসের কন্ট্রাক্টর কি পথ আগলেই না দাঁড়ালেন! একদফা, এক দাবী, আমাদের বাসেই যেতে হবে! তাকে উপেক্ষা করে পাশের পান দোকানদারকে জিগ্যেস করে সামনের বাসেই যাবো বলে টিকেট নিলাম। ওমা কবি গোলাম রাব্বানী জানালেন যে নওগাঁ যাওয়ার জন্য বিআরটিসি সেরা। দ্রুত নিয়ে যায়। কী আর করা বেশি চালাকি করে বোকা বনে বসে পড়লাম ১৭ এবং ১৮ নম্বর আসনে। বোকাসোকা ভাবটা দূর করতে সাহিত্য নিয়ে নানা কথা বলা শুরু করলাম। কিন্তু কবি ও গবেষক মহোদয় তাড়াহুড়ো করে জানালা বন্ধ করলেন। কারণ ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে শুরু হয়েছে। হালকা বাতাসে পানির ছাট জানালা মাড়িয়ে আমাদের ভিজিয়ে দেয়ার আয়োজন করছে।
বদ্ধ জানালার কাঁচে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে ভিজে বাইরের দৃশ্যকে স্মৃতিভ্রম মানুষের মতো আধা জ্ঞাত আধা অজ্ঞাত অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তারপরেও আমার চিরপরিচিত শহরটির নওদাপাড়ায় অবস্থিত আমচত্বরটি চিনতে খুব একটা অসুবিধে হলো না। ডালাতে সাজানো উপরাংশে হলুদ আর নিম্নাংশে সবুজ রঙের ইয়াব্বড় তিনটি আম তার চেনা অতিথিকে স্বাগত জানাল। কবিকে বললাম, দ্যাখুন এই স্থাপনা রাজশাহীর পরিচয় বহন করে। কবি চশমা উঁচিয়ে বড় চোখে দেখে নিলেন।
বৃষ্টির মধ্যে গড়িয়ে চলল বাস। কত্ত স্মৃতি এ পথের। রেহানার বাড়ি। বান্ধবীটি ফার্স্ট ইয়ারেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে শিক্ষাজীবনের ইতি টেনেছে বৈরি মনের সোয়ামীর জন্য। তাদের বাড়িতে অনেক দুপুর আর রাতের ভোজন করেছি। স্মৃতিগুলো চাড়া দিয়ে উঠল। দেখলাম নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল। ডেকে যায় নবীন বরণ বাস। প্রেয়সী আসত শাহজাদপুর থেকে। তাকে রিসিভড করে রিকশায় চড়ে প্রেমালাপ জমিয়ে, মেসে দিতাম নামিয়ে।
ভাবনায় ছেদ ঘটল গুড়–ম গুড়–ম মেঘের ডাকে। নাশিদ সাহেব নাশিদ ধরলেন। আমিও সুর মেলালাম। এবার হার্দিক সম্পর্কটা বেড়ে গ্যালো। কারণ দুজনই নাশিদ ভালবাসি। একটানা কয়েকটা নাশিদ গাইলাম। হঠাৎই নাশিদ মহাশয়ের মেজাজ তিরিক্ষি। ‘এই কন্টাক্টর, তোমার বাসে মিয়া উপর থাইক্কা পানি পড়ে’! ওমা সত্যিই ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ছে বাংকার থেকে। চেক চেক শার্ট ভিজে গ্যালো। সরে বসলেন তিনি।
জানালার ঘোলাটে কাঁচ গলিয়ে বাইরে দেখি কালোশাদা মেঘে আকাশ ছেয়েছে। ঝাপটে পড়ছে বাতাস। রাস্তার পাশে উঁচু নারকেল গাছ আর খেজুর গাছ কাঁপছে। চিকন চিকন পাতাগুলো নুয়ে পড়ে স্বাগত জানাচ্ছে বুঝি ভিজে যাওয়া নাশিদ মহোদয়কে। তিনিই অভ্যাগত। আর আমিতো তারই(রাজশাহীর) লালিত সন্তান। এখনো এর সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে গবেষণা করি। তার সাময়িক প্রমত্তা আর বেশিরভাগ বালুকাময় পদ্মা, সিল্ক আর আম আমাকে স্বজন জানে।
ওভার ফোনে জীবন সৈনিক জানালেন যে, হাপানিয়া বাজারে নামতে হবে। সফরসঙ্গীকে বললাম, দেখুন কি নাম রে ভাই! হাপানিয়া! উনি একলাইন বাড়িয়ে বললেন, হাপানিওয়ালা কোনো লোক হয়তো ও বাজার চালু করেছেন তাই তার নামেই হাপানিয়া বাজার।
কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি। জেগে দেখি শুকনো রাস্তায় সজোরে গড়িয়ে চলছে বাস। দুধারে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। ‘এই হাপুনিয়া বাজার, হাপুনিয়া বাজার।’ সম্বিত ফিরে পেলাম হেল্পারের উচ্চগলার ডাকে। জিগাইলাম, ভাই, হাপুনিয়া না হাপানিয়া। ‘তাড়াতাড়ি নামেন মিয়া! এটাই হাপুনিয়া। হাপানিয়া বলতে কিছু নাই।’ ধেরী গলায় বলে উঠল চিকনা কালশিটে হেল্পার। আমার তাড়ায় ধড়পড় করে উঠে পড়লেন নাশিদ শাহেব। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বাস থেকে নেমেই দেখি ‘হাপানিয়া-বক্তারপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস’ এর প্রধান ফটক। সঙ্গী আমার ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ‘ধুর মিয়া, এরা আসলে নিজেরাই জানে না এ এলাকার সঠিক নাম কোনটি। আর কী পরিমাণ তাফালিং করল!’ আমি এবার তার খেদ কমানোর জন্য বললাম, দ্যাখেন, আপনার নামকরণে কিন্তু আরও একটা বিষয় যোগ হবে। তা হচ্ছে সেই ব্যক্তি বোধহয় বক্তা ছিলেন। হাঁপাতে হাঁপাতে বক্তব্য দিতেন আর লোকজন তার নামে চালুকৃত বাজার ও এলাকাকে তাই ‘হাপানিয়া-বক্তারপুর’ নামকরণ করেছে।
আবার সেই মোবাইল বার্তায় জানলাম টমটমে উঠে বর্ষাইল বাজারে যেতে হবে। পনেরো টাকা প্রতিজন। মনটা খুশিই হলো, যাক ঘোড়ার গাড়িতে ওঠা যাবে। একজনকে জিগ্যেস করলাম ভাই টমটমে উঠে বর্ষাইল যাব। তিনি বললেন, ‘জি এখানে উঠে বসুন। আরে ভাই আমরা টমটমে যামু। এটাতে নয়। ‘কি মুসিবত! এটার নামই টমটম।’ বলে বিরক্তি প্রকাশ করলেন তিনি। বৈদ্যুতিক ব্যাটারিচালিত অটোর সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। উঠেই বসলাম। ঘোড়ার ঘাড়ির যে ঝুমুরঝুমুর নান্দনিক গড়িয়ে চলা। এটারও ঝুমুরঝুমুর নান্দনিকতা। তবে তা খানাখন্দভরা রাস্তার ঝাক্কিতে। ঘোড়ার ক্ষুরের আঘাতে ধুলো উড়ে বাতাসে মিশে। আর এর চাকার চাপায় খন্দকে জমে থাকা আঁঠালো পানি ছড়িয়ে গিয়ে তালপাতাগুলোকে মলিন করে দেয়। আসনের জায়গা প্রসস্থ হয় ডানেবামে হেলা দুলা খেয়ে।
প্রচুর পরিমাণে তালগাছ রাস্তার দুপাশে। ছোট্ট বড়। এসব গাছ থেকে পাতা কেটে হাতপাখা বানিয়ে বোধহয় আমাদের ওদিকের বান্যি বা মেলায় বিক্রি হয়। রাজশাহীর তুলনায় এখানে খেজুর গাছ কম। হয়তো রস কম ঝরে।
বাজারে দাঁড়িয়ে ছিলেন অমায়িক ব্যবহারের কবি গোলাম রাব্বানী। আমাদের নিয়ে হেঁটে চললেন তার বাড়ির দিকে। কয়েকদিন ধরে নাকি বৃষ্টি হচ্ছে এখানে। প্যাক কাদায় কাঁচা রাস্তা শহুরে ফুল বাবুদের জন্য হাঁটার অনুপযোগী। পা টিপে টিপে হাঁটছি। বার কয়েক পিছলে যাওয়ার উপক্রম হলেও সামলিয়ে নিয়েছি। আর পারছি না চটিজুতো পায়ে হাঁটতে। ইবনে বতুতার মতো বগলে মে জুতা নিয়ে সান্ধ্যকালীন আঁধারিতে পৌঁছে গেলাম কবির প্রাসাদে।
প্রাসাদোপম বাড়ি। এজন্যই যে, এটার বাসিন্দাদের হৃদয় বাদশাহী। আতিথেয়তায় অনন্য। অথচ জীর্ণ মাটির মাত্র দুটো কক্ষ। এক চিলতে বারান্দা। সেখানে আবার গরু বাঁধা। খড়-বিচুলি। বাজারের ব্যাগ। আলুথালু কিছু কাপড়চোপড়। আর এখানেই শুয়ে রাতের আঁধারকে মাড়িয়ে মোবাইল টিপে টিপে লিখেছেন কত হৃদয় কাড়া কবিতা। যেমন তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আমি দ্যুতি বলছি’। এ দ্যুতি শিক্ষার জন্য পাগলপড়া। সমাজের অন্যায় মুছতে একাট্টা। নজরুলের ‘যৌবনের গান’র এ উক্তিটির ‘বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি যাঁহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মতো প্রদীপ্ত যৌবন’ ন্যায়। কেননা, তিনি যে চিন্তা লালন করেন তা সমাজের কল্যাণের। প্রগতির। সুহৃদ মানুষের শাসনের।
জৌলুশের নেই ছিটাফোঁটা। একটা চৌকি। কাঠের একটা শোকেস। তার উপর কয়েক কপি নিজ কাব্যগ্রন্থ। চৌকি ঘেঁষে একটা টেবিল। কদিনের জন্য ধার করে আনা একটি ভাঙাচোরা কম্পিউটার সেটার উপর। পাশের ঘরে ঢুকিনি আমরা। সেখানে তার সদ্য প্রসূতি ছোট্ট বোন ও ভাগ্নি। ওঘরের জৌলুশ নিশ্চয় বেশি এর থেকে বেশি হবে না।
হাত-মুখে পানি ছিটিয়ে আমরা চৌকিতে বসলেই পাঁচপদের নাস্তা চলে আসল। ট্রে বোঝাই। হাসিতে ভরে রেখেছেন ঘর। অথচ স্বাধীনতার পূর্বে প্রয়াত একজন প্রখ্যাত কবির বাড়িতে গিয়ে যে অপমানজনক আপ্যায়িত হয়েছিলাম, সে কথা মনে হতেই তুল্য সম্মানে আনন্দাশ্রæতে চিকচিক করে উঠলো দুচোখ। প্রয়াত সে কবির নাম-যশ ভাঙিয়ে খাচ্ছে। তারই রেখে যাওয়া জমিতে দালান করে বাস ও ভাড়া দিয়ে স্বচ্ছলতায় জীবন যাপন করছিল সে উত্তরসূরি।
আমরা কবিতা, গল্প আর সাহিত্যাঙ্গন নিয়ে কথাবার্তা বললাম। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাবেন নাশিদ মহোদয়। বিছানা ছেড়ে দুকদম বাড়াতেই কারেন্ট চলে গ্যালো। কাঠের দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে উহু করে উঠলেন। আবার আসলো কারেন্ট। বসলাম খেতে। গরুর মাংস আর নানা পদ দিয়ে খাচ্ছি। কবি গোলাম রাব্বানী অতিথির প্লেটে বেশি করে মাংস উঠিয়ে দিতে গেলে নাশিদ শাহেবের পরনের শাদা লুঙ্গিতে হলুদ ঝোল লেগে যায়। আমি বললাম, শুধু কি পেট পুড়েই খাবেন? স্মৃতি হিশেবে না হয় একটু হলুদ ঝোলের দাগ লুঙ্গিতে নিয়ে গেলেন।
রাত কেটে গ্যালো গপ্প শেষে ঘুমে। সকালবেলা আবারও নাস্তার বাহার। খানিক বাদেই ভাত, মাছ, সবজি ইত্যাদি। টিপটিপ বৃষ্টি আমাদের আটকে রেখেছে ঘরে। তাই যাওয়া হচ্ছে না কোথাও। শুরু করছি জীবন সৈনিকের জীবন সংগ্রামের বহুমুখী গল্পের সাগরে সাঁতার।
আমাদের শিল্পে সর্বব্যাপী নজরুল যে কথাগুলো বলেছিলেন তাঁর ‘দারিদ্র্য’ কবিতায় তার এক প্রোজ্জ্বল উদাহরণ এ মাটির ঘরের কবি। নজরুল পাঠে যে, ‘হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান্।/তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান/কন্টক-মুকুট শোভা।-দিয়াছ, তাপস,/অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;/উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার,/বীণা মোর শাপে তব হ’ল তরবার!/দুঃসহ দাহনে তব হে দর্পী তাপস,/অ¤øান স্বর্ণেরে মোর করিলে বিরস,।’ দীক্ষা পাই, তাই প্রত্যক্ষ করছি গোলাম রাব্বানীর ক্ষয়িষ্ণু সংসারে শিল্পের চাষবাসে।
এ কবি সেগ্রেট টানেন। তার মায়ের মুখে সবসময় পান লেগে থাকে। কথা বলেন পানভরামুখ নিয়েই। কবির প্রশ্ন ছিল, ‘মা, তুমি এত পান খাও ক্যান?’ মা উত্তর করেছিলেন, ‘বাবারে, তুমি যে কারণে সিগারেট টানো, আমি সে কারণেই পান খাই। দুঃখ ভুলে থাকার চেষ্টা করি।’ কবিও অসংকোচে স্বীকার করলেন, ‘নিজের দুঃখ কষ্ট ভোলার জন্য সিগারেট খাই স্যার।’
এ দুঃখের কারণ যেমন তার বাবার অস্বচ্ছলতা। তেমনই আঞ্চলিক সংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবল। যৌতুক প্রথার এক চরম বলি কবি ও তার পরিবার। বড়বোনকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সন্তান জন্ম দিতে না পারায় নিঠুর স্বামী তালাক দেয়। অনেকদিন এখানে থাকার পর আবার আরেক জায়গায় পাত্রস্থ করা হয়েছে। কিন্তু অর্ধ-লক্ষাধিক টাকা অবশ্যই তার নববরের হাতে পরিশোধ করতে হবে।
আর ছোট্ট বোন। তারও বিয়ের সময় যৌতুক দিতে হয়েছে। যৌতুক পরিশোধ হলেও আঞ্চলিক সংস্কৃতির কড়াল থাবায় তিনি পর্যুদস্ত। কারণ প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণ করার তিনমাস আগ থেকেই বোনকে বাড়ি নিয়ে আসতে হয়েছে। প্রসূতিকালীন সব খরচ তাকেই বহন করতে হয়েছে। এখন মাস খানেক পরেই বরের বাড়ি থেকে সাড়ম্বরে লোকজন এসে নিয়ে যাবে মা-মেয়েকে। তাদের আপ্যায়নে কত না খরচ যাবে এ গরীবের! অথচ তার আয়ের উৎস বর্ষাইল বাজারে বুধবার ও শনিবার হাঁটে কাঁচামালের ব্যবসা। দুহাটে আর কত আয় হবে? আবার বাকি বাকড়া যায়।
ঘরের দেয়ালে সাঁটানো একমাত্র ক্যালেন্ডারের উপর একটি আইডি কার্ড দেখলাম। দেখি উনি নওগাঁ সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সম্মান শ্রেণির প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু বোন আর সংসারের বোঝা মাথায় নিয়ে তাকে অধ্যয়নের পাঠ চুকিয়ে ব্যবসায় নামতে হয়। তাও তার ভাগ্যে শুভ্র রেখা ফোটেনি। জোটেনি একদণ্ড স্বস্তি।
তাই এসব যন্ত্রণার যাপন তার কবিতাকে করেছে ঋদ্ধ। এমনই হতভাগ্য যে, নিজের প্রথম কবিতার পাণ্ডুলিপি তিনি আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। পরবর্তী(আমি দ্যুতি বলছি) পাণ্ডুলিপিটাও আরেক সুহৃদের সাহায্যে প্রকাশ হয়েছে। এখন তিনি একটি নভেলা লিখছেন আতœজীবনী রীতিতে। জানি না সেটার ভাগ্যে কী জুটবে!
দুপুর হয়ে গ্যালো। আমরা ছটফট করছিলাম। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারসহ আলতা দিঘি ঘুরবো। কিন্তু বৃষ্টি ছাড়ার নাম নেই। খেতে বসলাম। এবার দেখি পুরো চৌকি জুড়ে খাবার। নাশিদ শাহেব ততোটা খেতে পারেন না। যা খেলাম আমি। কবির বাবাকে দেখলাম কালশিটে দাঁতে হাসি ফুটিয়ে হাতে মিষ্টি দইয়ের খুটি নিয়ে হাজির। এটা এখানকার সেরা দই। আমি মনে মনে কেঁদে সিক্ত। বাপরে কি আতিথিয়েতা! এদের এই দীন অবস্থায় যে খায় খাতির আর আপ্যায়ন দেখলাম, না জানি সত্যিকার প্রাসাদে বাসকারী খানদানি পরিবার হলে কত্ত কিছুর আয়োজন করতেন!

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top