সিডনী শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ভাঙ্গা গড়া : নূরহাসনা লতিফ


প্রকাশিত:
১৭ জুলাই ২০২১ ১৯:৩১

আপডেট:
১৮ মে ২০২৪ ১৮:১৬

 

ধুলি উড়ছে। মনে হয় আসছে তুফান। গরুটাকে তাড়া করে ঝুমুরি। পাথারে এনেছিল ঘাস খাওয়াতে। গরু ঘাস খেলে দুধ হয় বেশি। এখানে এলেই ওর ছোট বেলার কথা মনে পড়ে। মা ছিল না ওর। মানুষ করেছে ওকে দাদী। বাবা খুব নিষ্ঠূর প্রকৃতির মানুষ। সামান্য দোষে মাকে অনেক মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিল। মা ওকে নিয়ে যায়নি। নানুভাই বারণ করে, মেয়েকে আনার দরকার নেই।ভালো সম্বন্ধ আছে। তোরে আবার বিয়ে দেব। আর মাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি।

কালু মামার সাথে দেখা হয় ওর। উনি বলেন-তোর মা ভালো আছে ঝুমুরি, ঘরে নুতন মা এনেছেন বাবা। ঝুমুরি ভাবে দুনিয়ার তাবৎ নুতন জিনিস ভালো শুধু ভালো নয় নতুন মা। এই মানুষটা বাড়িতে পা দিতে না দিতেই কষ্টের বোঝা দ্বিগুন হয়েছে ওর। ছোট মানুষটাকে গাদা গাদা কাজ দিয়ে বসিয়ে রাখে। বাবা কিছু বললে বলে –মেয়ে মানুষ পরের ঘরে গিয়ে কাজই করতে হবে।কাজ নাজানলে তখন কি অইবো। পুকুর পাড়ে বসিয়ে দেয় এত এত কাপড় দিয়ে। দাদী রেগে বলেন ছোট মানুষটাকে এত কাজ দেয়? নতুন মা মুখ ঝামটা মেরে বলে—খাওনের সময়তো বড় মাইনসের মত খায়। দাদী আরও রেগে যায় খাওনের খোটা দিবা না। খাওন সবাই খাইতে পারে। দাদী মরে যাওয়ার পর শহরের কাছাকাছি গ্রামের শেষ সীমানায় আড়তদারের বাড়িতে রেখে আসে ঝুমুরিকে ওর বাবা। থাকবে ও নার বুড়ো মায়ের সাথে। দাদীর মতই একজন বুড়ো মানুষ। ঝুমুরি মহা খুশি, মাঝে মাঝে গরু নিয়ে বের হয়। বাড়ির লোকেদের গরুর দুধ পছন্দ। আজ বেরিয়েছিল মুনার মায়ের সাথে। হঠাৎ বাড়ি থেকে কি খবর আসে। ওকে একা রেখে চলে যায় সে। মুনার মা আসার আগে ঝড় বাদল শুরু হয়। গরু গুলো বড় বেয়াড়া ওদের সাথে পারেনা ঝুমুরি। ছোট গরুটা ওকে ঢিস দেয়। পাশে সোনা খালা না থাকলে খবর আছিল। সোনাখালা থাকে পাশের বাড়িতে। ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে ঝুমুরি।

দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেল ঝুমুরি। আড়তদার সাহেব মেয়েটির আদর যত্ন করেন। একদিন ওর বাবাকে বললেন—তোমার মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে। সে বলে- আমি যে কিছুই দিতে পারবো না মহাজন সাহেব।

মৃদু হেসে আড়তদার সাহেব বলেন, তোমার কিছুই দিতে হবেনা। মেয়েটা তোমার তাই অনুমতি চাই। আমার মা ওকে অনেক ভালোবাসে। ওকে সাজিয়ে গুজিয়ে সুন্দরভাবে বিয়ে দিতে বলেছেন। আর সত্য বলতে কি ঝুমুরির জন্য এত দিন আমি কিছুই খরচা করিনি। ইচ্ছে আছে খুব আড়ম্বরে বিয়েটা দেব। আমার আড়তে ভালো ছেলে আছে। আসলে মহাজন সাহেব আমার মেয়ে হলে হবে কিওর জন্য কিছুই করিনি আসলে ওর মা ছিল ভালো  একটা মেয়ে তাকে বুঝতে পারিনি। তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। পরে যাকে ঘরে আনলাম সে এত অত্যাচারি। একটা দিনের জন্য শান্তি পাইনি। ওর কারণেই ঝুমুরিকে দিয়ে যাই আপনার কাছে।

আড়তেই কাজ করে সোভানের সাথেই বিয়ে হলো ঝুমুরির। ভালো একটা ছেলে। আড়তদার সাহেব ওকে একটা মুদি দোকান করে দিয়েছেন। দুই তিন গ্রাম দূরে ওদের বাড়ি। চেনা চেনা লাগে গ্রামটার নাম। মনে পড়েছে ঝুমুরির। এই গ্রামেই ওর মায়ের বিয়ে হয়েছে। কালু মামা এই নামটাই বলতেন। শুধু গ্রাম নয় সেই বাড়িতেই ঝুমুরির বিয়ে হয়েছে। সোভানের বড় চাচা ঝুমুরির মায়ের দ্বিতীয় স্বামী। দুটি ছেলে আছে তার। কিন্তু ঝুমুরির মা বেঁচে নেই। সাতদিন আগে মা হঠাৎ মারা গেছেন। নতুন বৌ ঝুমুরির কাছে এলেন বড় চাচা। ডাকলেন দিপু আর শিবু এইদিকে আয়। ঝুমুরির হাত ধরে বললেন, এই তোগ বড় বইন ঝুমুরি। এর নাম সব সময় কইছে তোদের মায়ে। জানিনা আল্লাহর কি ইচ্ছা ওর লগে তার দেখা অইলোনা। তোরা অরে যত্নে রাখিস। অনেক দুঃখে কষ্টে মানুষ হইছে মাইয়াটা। ততক্ষনে ফোটায় ফোটায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ে ঝুমুরির চোখ বেয়ে। এজীবনে মায়ের সাথে দেখা হলোনা ওর।

 

নূর হাসনা লতিফ
কবি ও লেখক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top