সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১

দাগ : কৃষ্ণা গুহ রায়


প্রকাশিত:
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:২৪

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ১৪:১৯

ছবিঃ কৃষ্ণা গুহ রায়

 

- বলি ও নবাব নন্দিনী, ঘুম ভাঙল?
দরজায় দড়াম দড়াম শব্দে শাশুড়ি ইলার চিৎকারে ঘুম ভাঙল রিনিতার। বিছানা থেকে উঠতেই কঁকিয়ে উঠলো রিনিতা। গতকাল পিঠের মধ্যে অনিমেষ যেভাবে মেরেছে এখনো ব্যাথার জায়গাটা টনটন করছে। এটা তার নিত্য দিনের ঘটনা। দরজা খুলে বাইরে এসে দেখল ইলা মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে আছে।

- কটা বাজে ঘড়িতে খেয়াল আছে? বলি কত টাকা নিয়ে বাপের বাড়ি থেকে এসেছো যে নবাব নন্দিনীর মত বেলা গড়িয়ে গেল বিছানায় শুয়ে থাকো।

এখনো যে খুব একটা বেলা হয়েছে তা নয়, ঘড়িতে সাতটা বাজে। এর মধ্যেই হাঁকডাক চিৎকার। আসলে ইলা শেষ রাতে উঠে বসে থাকে। রিনিতা অন্যান্য দিন সাড়ে পাচটা ছটায় উঠে যায় কিন্তু কালকে এত রাত পর্যন্ত অনিমেষ অশান্তি করল যে সকালে উঠতে দেরি হয়ে গেল। অশান্তির কারণ একটাই রিনিতা ভিখারির মেয়ে।
চোখে মুখে জল দিয়ে তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের গেল রিনিতা। গ্যাসে চায়ের জল বসিয়ে সকালের জলখাবারের প্রস্তুতি শুরু করল।
ইলা ওদিকে গজ গজ করতে লাগল। মা-বাপ মরা রিনিতা মামাবাড়িতে মানুষ হয়েছে। মামা কষ্ট করে বিএ পাস করিয়ে ছিল। তারপর মামির এক খুড়তুতো বোনের মাধ্যমে এই সম্বন্ধ। ইলারা নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা আর দশ ভরি গয়না চেয়েছিল। রিনিতার মামা নিখিল বাবু সব মিলিয়ে ছয় থেকে সাত ভরি গয়না আর ত্রিশ হাজার টাকার মত নগদ দিয়েছিলেন । কিভাবেই বা দেবেন রিনিতার বাবা যে কিছুই রেখে যেতে পারেননি।
নিখিলবাবু একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করেন। কত টাকাই বা মাইনে পান, তার নিজেরও তো সংসার আছে। তবুও রিনিতাকে কলেজ পর্যন্ত পড়িয়েছেন।

যেহেতু পুরো নগদ আর চাহিদা মতন গয়না নিখিলবাবু এখনো দিতে পারেননি সেজন্যই দিনরাত খোটা শুনতে হয় রিনিতাকে। আর তার সঙ্গে অনিমেষের মার। অনিমেষের স্টেশনের ধারে মুদি দোকান। ভোররাত হতেই সে বেরিয়ে পড়ে। ওদিকে ফিরতে ফিরতে রাত নটা বেজে যায়। মাঝখানে শুধু দুপুর বেলা খেতে আসে ।
অনিমেষ খুবই মাতৃভক্ত। যদিও মায়ের ভক্ত হওয়া খারাপ কিছু নয় কারণ প্রত্যেকটা সন্তানকে মাপৃথিবীর আলো দেখান। কিন্তু তা বলে যাকে সে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে সারা জীবনের দায়িত্ব নিয়েছে তাকেও ঠিকমতন দেখভাল করার ব্যাপারটা তো দেখতে হবে। যেদিনই ইলার মনঃপুত কিছু না হয়, অনিমেষ রাতে বাড়িতে ঢুকতেই ছেলের কানে নালিশ করে বউমার নামে। অনিমেষ ভালো-মন্দ বিচার না করে বউকে ধরে পেটাতে থাকে। রিনিতাও জানে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। মেয়েদের যে বাপের বাড়িটুকু সম্বল সেটুকুও তার নেই। তাই মুখ বুজে সব সহ্য করে। নিখিলবাবু কথা দিয়েছিলেন বাকি কুড়ি হাজার এবং চার ভরি সোনা তিনি আস্তে আস্তে দিয়ে দেবেন। কিন্তু সেই কথা তিনি রাখতে পারেননি। তাই যতই দিন গিয়েছে রিনিতার ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে। অথচ প্রথম প্রথম অনিমেষ আবেগ ঢালা আদরে রিনিতাকে ভাসিয়ে দিত। ইলাও খুবই বৌমা বৌমা করত। কিন্তু যখন দেখল নিখিলবাবু আর টাকা,গয়না দিচ্ছেন না। তখন থেকেই ইলার চক্ষুশূল হয়ে গেল রিনিতা। ওর শশুর অনেক আগেই মারা গিয়েছেন । ছেলে আর মায়ের সংসার। অনিমেষের মামাবাড়ির সঙ্গে অনিমেষের খুব ভালো সম্পর্ক। মামা, মামি, মাসি, মেসো প্রায়ই আসে। আর তারা আসা মানেই ইলার কানে নতুন নতুন কুবুদ্ধির বীজ বপন করা। যখন বাড়ী ভর্তি লোকজন আসে রিনিতার এতগুলো লোকের আতিথিয়তা একার হাতে সামলাতে হয়। কেউ কুটোটি পর্যন্ত নেড়ে দেখে না। উল্টে যাওয়ার সময় কথা শুনিয়ে যায়, কি করবে দিদি তোমার ভাগ্য, ভিখারি ঘরের মেয়ে এনেছ। এখন তো সহ্য করতেই হবে। রিনিতা চুপ করে থাকে আর চোখের জল ফেলে। এভাবে প্রায় বছর দুয়েক কেটে গেল।
রিনিতার কোনও সন্তান হচ্ছে না দেখে এবার শুরু হল নতুন গঞ্জনা। একে তো ভিখারী তার ওপর আবার বাজা। ইলা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে খালি বলে,দেখে শুনে কি অলক্ষী আমি ঘরে আনলাম। বুড়ো বয়সে যে নাতির মুখ দেখব সেই ভাগ্য আমার নেই।
রিনিতা অনিমেষকে বলে, চল না একটু ডাক্তার দেখিয়ে আসি। অনিমেষ খ্যাক করে উঠল। কিসের ডাক্তার। ডাক্তার তোর বাচ্চা এনে দেবে। একটা পোকায় কাটা মাল তোর মামা আমাকে গছিয়েছে।

রিনিতা বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদল।
এভাবে দিনের পর দিন কেটে যেতে থাকল। পাড়া-প্রতিবেশীরা রিনিতাকে পরামর্শ দিল, দেখবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। আসলে ওর ব্যবহার খুব ভালো। তাই আশেপাশের পাড়া-প্রতিবেশীরা তাকে ভালোবাসে।
একদিন অশান্তি চরমে উঠল। সেদিন ঠান্ডা পড়েছে বেশ। শীতটা এবার জাঁকিয়েই এসেছে। নীলা সন্ধ্যের পর খিচুড়ি বসিয়েছে উনুনে। হঠাৎ ইলা ঘর থেকে চিৎকার করল,বৌমা আমার মশারিটা টাঙিয়ে দিয়ে যাও তো।
রিনিতা ভাবল মশারি টানাতে আর কতক্ষণ লাগবে,তাই গ্যাস না নিভিয়েই ইলার ঘরে চলল মশারি টানাতে। গিয়ে দেখল মশারি টানানোর থেকেও যেটা বড় কাজ সেটা হল ইলা আলমারি থেকে সমস্ত জামাকাপড় নামিয়েছে। আর সেগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। সেগুলোকে এখন ভাজ করে যথাস্থানে রেখে তারপরে মশারি টানিয়ে তবে তাকে ওই ঘর থেকে বেরোতে হবে। সে আলমারিতে টপাটপ করে জামা কাপড়গুলো গুছাতে লাগল। ভুলেই গিয়েছিল গ‍্যাসে খিচুরি বসিয়ে এসেছে। বিছানা ঝেড়ে ঝুড়ে মশারি টানিয়ে দিতেই পোড়া গন্ধ বাতাসে ভেসে ভেসে ইলার ঘরে এসে পৌঁছল। পোড়া গন্ধ নাকে যেতেই রিনিতার মনে পরল আরে গ‍্যাসে তো খিচুড়ি বসানো আছে। এদিকে ইলাও চিৎকার শুরু করেছে, কি ব্যাপার গ্যাসে কি বসিয়ে তুমি এখানে এসেছ। রিনিতা কোনও কথা না বলে রান্নাঘরে ছুটল।পেছন পেছন ইলাও। ততক্ষণে খিচুড়ির হাড়ি পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে। তাই দেখে ইলা মরাকান্না জুড়ল। অলক্ষী সংসারে যা আছে সব শেষ কর। মা লক্ষ্মীর ভাতের দানা তুই পুড়িয়ে শেষ করলি। তোর মরন হয় না। হা ঘরের মেয়ে এনেছি। আমাদের হাড় মাস জ্বালিয়ে খেল। আজ খোকা ফিরুক দাঁড়া তোর হবে।

রিনিতার চোখের সামনে যেন সারা পৃথিবী দুলতে লাগল। সে শাশুড়ির হাত পা জড়িয়ে ধরে বলল, মা আপনি কিছু বলবেন না,আপনার ছেলেকে আমি নতুন করে আবার খিচুড়ি বসাচ্ছি। পোড়া হাড়ি মেজে ঘষে পরিষ্কার করে ঝকঝক করছি ।

- বলবো না মানে। আজকে তোকে ঘর থেকেই তাড়াব। যতদিন থাকবি ততদিন আমাদের এই বাড়িতে শান্তি কিছুতেই ফিরবে না।

রিনিতা কাঁদতে লাগল। তারপর পোড়া হাড়ি সরিয়ে আবার নতুন করে আর একটা হাঁড়িতে জল ভরে গ্যাসের উপর বসাতেই, ইলা এসে গ্যাস বন্ধ করে দিল।
বলল, না আজকে এর একটা বিহিত করতেই হবে।তুমি কিছুতেই রান্না বসাবে না। আর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অনিমেষ দোকান বন্ধ করে চলে আসবে। এখন রান্না না বসালে এসে খেতে পারবে না। রিনিতা অনেক অনুনয় বিনয় করতে লাগল। কিন্তু ইলা অনড় সে কিছুতেই খিচুড়ি বসাতে দেবে না। কিছুক্ষণ বাদেই অনিমেষ এসে উপস্থিত হল। অনিমেষ দরজা দিয়ে ঢুকতে না ঢুকতেই ইলা চিৎকার শুরু করল।

- দেখ কি বউ নিয়ে এসেছিস। আজকে পুরো পোড়া খাবার খেতে হবে।
অনিমেষ কিছু বোঝার আগেই ইলা তাকে টেনে রান্নাঘরের নিয়ে গিয়ে পোড়া হাড়িটা দেখাল। তার সঙ্গে শুরু করল, আজ আর আমাদের কপালে এক দানাও জুটবে না, সারারাত উপোস করে থাকতে হবে।

অনিমেষের প্রচন্ড খিদে পেয়েছিল। তার তখন মাথায় আগুন ধরে গেল। রিনিতাকে মারতে মারতে দরজা দিয়ে বের করে দিল।
বলল, যা এক্ষুনি বাড়ী থেকে বেরিয়ে যা। তুই আমার কেউ না, কোনও দিন আর এই বাড়িতে ঢুকবি না। বাজা মেয়েছেলে ।
রিনিতাকে দরজা দিয়ে বার করে ওরা দরজা বন্ধ করে দিল। রিনিতা দরজা ধাক্কাতে লাগল। এই শীতের রাতে সে কোথায় যাবে? কিন্তু ওরা দরজা খুলল না।

রিনিতা বুঝে গেল এই বাড়িতে তার সময় ফুরিয়ে গিয়েছে । সে হাঁটতে-হাঁটতে নদীর ধারে গেল। কনকনে উত্তুরে হাওয়া বইছে। কলকাতায় কাজ করে অঞ্জলি। সে পাশের পাড়ায় থাকে। রিনিতার পাড়ায় এক বাড়িতে ত্রি নাথের পুজো হয়। সেখানেই অঞ্জলির সঙ্গে রিনিতার আলাপ। সেদিন ট্রেন লেট ছিল বলে তার কাজ থেকে ফিরতে দেরি হয়ে গেল। অত রাতে রিনিতাকে রাস্তায় দেখে অঞ্জলি এগিয়ে এল।
- আরে রিনিতা বৌদি,তুমি এত রাতে নদীর ধারে কি করছ ঠান্ডার মধ্যে।
রিনিতা ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলল। অঞ্জলির হাত ধরে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। অঞ্জলি বলল, চল বৌদি তুমি আমার বাড়িতে চল। সে রাতে রিনিতা অঞ্জলির বাড়িতেই থাকল। অঞ্জলির বাড়িতে অঞ্জলির বাবা,মা,অঞ্জলি আর অঞ্জলির ভাই থাকে। অঞ্জলি কলকাতায় একটা কসমেটিকস কোম্পানিতে সেলস এর কাজ করে।

অঞ্জলি গিয়ে ওর কোম্পানির বস নীলকে রিনিতার কথা বলল। চাকরিটা শিওর করে অঞ্জলি রিনিতাকে বলল, চল বৌদি তোমার একটা কাজ জোগাড় করে ফেলেছি। তুমিও আমার কোম্পানিতে এবার সেলস এর কাজ করবে।
তখনও স্কুল-কলেজের সার্টিফিকেটগুলো মামা বাড়িতেই ছিল। অঞ্জলি সে কথা রিনিতার কাছে শুনে ছিল। তাই বলল, তুমি এবার তোমার মামা বাড়ি থেকে সার্টিফিকেটগুলো নিয়ে এস।
রিনিতার হাতে অঞ্জলি কিছু টাকা গুঁজে দিল। রিনিতা মামা বাড়িতে গিয়ে সব কথা বলল। নিখিলবাবু তো ভাগ্নির জন্য কেঁদে আকুল।
- মা অপরাধী আমি। যেহেতু বাকি টাকা আর গয়না দিতে পারিনি বলে লজ্জায় তোর বাড়িতে আর যাইনি, তোর সঙ্গে যোগাযোগই রাখি নি।
মামিও বলল, আমিও যে কি ভুল করলাম। আমার খুড়তুতো বোনের কথায় বিশ্বাস করে না জেনে না বুঝে ওদের কথামতন জিনিস দিতে পারব বলে ওকে বিয়ে দিয়ে দিলাম।
রিনিতা তার নতুন চাকরির কথা বলল। তারপর সার্টিফিকেটগুলো নিয়ে তার নতুন অফিসে গেল। অঞ্জলি রিনিতার জন্য অপেক্ষা করছিল। রিনিতা যেতেই সে সেল ডিভিশনের ম্যানেজার কুশলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল। কুশল খুব ভালো মানুষ। সে রিনিতাকে সমস্ত কাজ বুঝিয়ে দিল।
রোজ সকাল নটা থেকে সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত ডিউটি। শনিবার হাফ আর রবিবার পুরো ছুটি । অঞ্জলির এক বন্ধু অফিসের কাছাকাছি এক লেডিস হোস্টেলে থাকত। রিনিতাকেও সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হল। এভাবে প্রায় বছর খানেক কেটে গেল। রিনিতা এখন অনেকটাই নিজেকে সামলে নিয়েছে । লেডিস হোস্টেলে থাকে, ওখানে তার মতন ঝড়ে ডানা ভাঙা পাখি বেশ কয়েকজন রয়েছে। ভালো-মন্দ মিশিয়ে তাদের সঙ্গে বেশ বন্ধুত্বও গড়ে উঠেছে। মাসে একবার এসে মামা বাড়িতে দেখা করে যায়। তখন সবার জন্য বিভিন্ন উপহার কিনে নিয়ে আসে। রিনিতার মামি মাঝে মাঝে বলে, আমরাও চল থানায় যাই, গিয়ে ওকে যেটুকু গয়না দিয়েছি সেটুকু নিয়ে আসার ব্যবস্থা করি।
নিখিলবাবু খুব নিরীহ স্বভাবের। তিনি বলেন, ছাড়ো আর ও সবে যেতে হবে না।ওদের মুখ দেখতে ইচ্ছে করে না।
এর মধ্যেই অঞ্জলি একটা খবর নিয়ে এল। অনিমেষের দোকানে এক মহিলা খদ্দেরের সঙ্গে তার ফষ্টিনষ্টি চলছে। মহিলার নাকি বিশাল ব‍্যবসা। ওখানে মাস ছয়েক আগে বাড়ি ভাড়া নিয়ে এসেছে।
রিনিতা শুনে হাসল। তার এখন কোনও কিছুতেই কিছু যায় আসে না।
রিনিতার যায় না আসলেও যিনি বিচার কর্তা হয়ে বসে আছেন তার তো যায় আসে । একদিন শেষ রাতে পুলিশ এসে অনিমেষকে ধরে নিয়ে গেল। খবর ছড়িয়ে পড়তে আর দেরী হলো না। যে মহিলার সঙ্গে অনিমেষের ফষ্টিনষ্টি চলছিল। সেই মহিলা অনিমেষকে কুপথে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। ড্রাগ হেরোইনের পেটি লুকিয়ে রাখা হত অনিমেষের দোকানে। সেজন্য অনিমেষকে কমিশন দেওয়া হত। পুলিশের কানে খবর পৌঁছাতেই পুলিশ দোকান রেড করে পেটি উদ্ধার করল। অনিমেষকে তারপর গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। ততক্ষনে ওই মহিলা চম্পট দিয়েছে। মহিলাকে অনেক খুজেও পাওয়া গেল না। মহিলা সম্ভবত আগে থেকে বুঝতে পেরেছিল বলেই গা ঢাকা দিয়েছিল। পাড়ার লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, দেখো বর্ডার পেরিয়ে নেপাল বা বাংলাদেশ হয়ত চম্পট দিয়েছে। বউটাকে কিভাবে রাত্তিরবেলা ঘরছাড়া করল, তার শাস্তি তো পেতেই হবে। ভগবানের মার দুনিয়ার বার।
রিনিতার কানে খবরটা এল। খবরটা এল মানে অঞ্জলি এসে সব জানাল। রিনিতা ভাবলেশহীন মুখে তাকিয়ে রইল অঞ্জলির দিকে। তারপর বলল, অঞ্জলি আমার এখন অনেক কাজ। অঞ্জলি কিছু বলল না। সে তার রুমে চলে গেল।
আসলে ক্ষতগুলো এরকমই হয়। যখন টাটকা থাকে তখন প্রচন্ড যন্ত্রণা হয়। তারপর যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে ক্ষতটা একসময় শুকিয়ে আসে। তারপর সেখানে আর কোনও রকম অনুভূতি হয় না। শুধু একটা দাগ থেকে যায়।

সমাপ্ত

পরিচিতিঃ কৃষ্ণা গুহ রায় একজন সাহিত্যকর্মী৷ নিবাস -পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ৷ সন্দেশ, নবকল্লোল, শুকতারা, বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে৷ কবিতা সঙ্কলন তিনটি, তার মধ্যে একটি বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে৷ বর্তমানে আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন ওয়েবজিনে লেখার সঙ্গে যুক্ত৷ কলকাতা স্বপ্নরাগ পরিবার নামে একটি সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ সেবা মূলক প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক৷

 

কৃষ্ণা গুহ রায়
সাহিত্যকর্মী
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top