সিডনী শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১

আমার মুক্তিযুদ্ধের গল্প : কাইউম পারভেজ


প্রকাশিত:
২ ডিসেম্বর ২০২২ ০২:৫৬

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ২২:৩৫

ছবিঃ : কাইউম পারভেজ

 


তাহলে ব্যাপারটা আরো খোলাসা করেই বলতে হয়। আমি বলছি ১৯৭০-এর কথা। তখন যশোর শহরের ভোলাট্যাংক রোডের ওপর আমাদের বাসা। সরকারী বাসা। বাবা সরকারী চাকরী করতেন সে হিসেবে পাওয়া বাসা। যশোর দমকল অফিসের ঠিক উল্টো দিকে। পাশেই নিরালা সিনেমা হল। আমি তখন সবে এইচএসসি পাশ করে পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে ভর্তি হয়েছি। ছুটিতে বাড়ী এসেছি। আমাদের ঠিক একটা বাসা পরেই টিটো ভাইদের বাসা। প্রয়াতঃ নেতা খালেদুর রহমান টিটো। তখনকার সময়ে তুখোড় বামপন্থী ছাত্রনেতা। আমাদের রাজনৈতিক গুরু। বহুবার জেল খেটেছেন শারিরীকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন কিন্তু তখন নীতির সাথে কখনো আপোস করেননি। আমাদের রোল মডেল। সারা যশোর শহর যেমন সম্মান করতো তেমন ভয় পেতো তাঁকে। আমাদের খুব স্নেহ করতেন।
তো সেই টিটো ভাইয়ের বড় ভাই টোজো ভাই। যেদিন লন্ডন থেকে দেশে ফেরত এলেন সেদিন যে প্যান্ট কোট পরিবর্তন করে লুঙ্গি আর হাওয়াই সার্ট ধরলেন পরবর্তীতে তাঁকে কোটপ্যান্ট পরতে খুব কমই দেখেছি। দেশে ফিরেই চাকরী খুঁজছেন। তাঁর এমন উচ্চতর যোগ্যতায় কোন চাকরী নেই। পরে চট্টগ্রামে কোন এক ইনস্যূরেন্স কোম্পানীতে যেন চাকরী পেলেন। তাও সেখানে তিনি ইচ্ছে মাফিক যান - আসেন। অনেক টাকা বেতন শুনেছি। এটাও শুনেছি টোজো ভাই নাকি সে সময়ে সারা পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র একচুয়ারিষ্ট।
একদিন তাঁদের বাসায় গিয়ে দেখি দুই ভাইয়ে ভীষণ ঝগড়া। এ ওকে বলে তুই সংসার দেখ আমি রাজনীতি করবো। তিন বোন আর ছোট ফুপুকে নিয়ে ওঁদের সংসার। টোজো ভাইয়ের কথা - এতোদিন বিদেশে ছিলাম দেশের জন্য কিছু করতে পারিনি। টিটো ভাই বলেন - তুমি বিলেত গিয়ে এতো এতো লেখাপড়া শিখে এসেছো কিসের জন্য। ওগুলো খাটিয়েও দেশের জন্য কাজ করা যায়।
এর মধ্যে সময় গড়িয়ে গেছে। আমি ময়মনসিংহে ফিরে গেছি। তারপর একাত্তর চলে এলো। বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এক পর্যায়ে আমি যশোর ফিরে এলাম। দেখি টোজো ভাই টিটো ভাই তরিকুল ভাই (তখন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা পরে বিএনপি মন্ত্রী) শান্তি ভাই (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ) আর আমার সব বন্ধুরা দিন রাত ঘুসুর ফুসুরে ব্যস্ত। কখনো আমার বন্ধু মানিকের চা দোকানে। কখনো পাশের কাঠের গোলায় লুকিয়ে লুকিয়ে। আমি ওদের সাথে যোগ দিতে শুরু করলাম। বিষয় একটাই। ইয়াহিয়ার সাথে যদি আলোচনা ফ্লপ করে (যা করতে বাধ্য) তখন বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা কে কোথায় থাকবো। কি করবো।
প্রসঙ্গতঃ একটা কথা বলা দরকার। ভোলাট্যাংক রোডের এক মাথায় জিলা স্কুলের উল্টো দিকে ছিলো ইপিআর-এর স্থায়ী কোয়াটার-মাস্টার ক্যাম্প। আর অপর মাথায় ইপিআর-এর হেড কোয়ার্টার। মাঝখানে অন্যদের সাথে আমাদের আর টিটো ভাইদের বাসা। এরই উল্টো দিকে মানিকের চা দোকান এবং কাঠের গোলা। এ দোকানের অধিকাংশ খদ্দের হলো ইপিআর-এর জোয়ানরা যার মধ্যে অনেকেই অবাঙালী। তাই ওদেরকে এড়ানোর জন্য আমাদের শলাপরামর্শ পরিকল্পনা হতো লুকিয়ে ছাপিয়ে। ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় যখন ক্র্যাক ডাউন হলো সে খবর যশোর পোঁছতেই রেলগেটের বিহারীরা বাঙালীদের বাড়ীতে আগুন দেয়া শুরু করলো। টোজো ভাই আমাদের নির্দেশ দিলেন রাস্তায় বড় বড় গর্ত খুঁড়ে ফেলো এবং মানিকের কাঠগোলা থেকে বড় বড় গুঁড়ি দিয়ে রাস্তায় বেরিকেড তৈরী করে ফেলো। যাতে পাক সেনারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে শহরে ঢুকতে না পারে। আমরা পাড়ার সব মানুষ কাজে নেমে পড়লাম। এর মধ্যে চারিদিকে আগুনের লেলিহান আর মানুষের চিৎকার আর্তনাদ। এলাকার সমস্ত লোকজনকে সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য তৈরী হতে বললাম। মহিলা এবং শিশুদের অন্যত্র সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে মানিক, প্রিয় বন্ধু সাধন আর আমাকে টিটো ভাই ডেকে বললেন - যে বাঙালী ইপিআরদের সাথে কথা বলে রাখা হয়েছিলো ওদেরকে ডেকে নিয়ে আয়। এক্ষুনি। আমরা ছড়িয়ে পড়লাম। ওদের মেসে গিয়ে কারো কারো বাড়ীতে গিয়ে ডেকে আনা হলো। ওরা বললো আমরা লড়বো কিন্তু হাতিয়ার নাই। ও গুলোতো ক্যাম্পে। চাবি সুবেদার মেজর খানের কাছে। ওয়ারিস খানকে খোঁজা শুরু হয়ে গেলো। তাকে পাওয়া গেলো না। এরমধ্যে ভোর হয়ে গেছে। আমরা খোঁজ করছি রাতে কোথায় কোথায় আগুন দিয়েছে। লুটপাট হয়েছে। মানুষ মেরেছে। ২৬ শে মার্চ দুপুর নাগাদ যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাক সেনাদের দল যশোর শহরে এসে ঢুকে পড়লো। বিশেষ বিশেষ ভবনগুলো দখল করে নিলো। আমাদের দেয়া বেরিকেড গুলো সরিয়ে ওরা দমকল অফিসেরও দখল নিলো। দমকল অফিসে সাততলা উঁচু টাওয়ারে উঠে মেশিনগান তাক করলো। আমাদের বাঙালী ইপিআরদের উপর কড়া নজর রাখলো। কিন্তু তখনো পর্যন্ত কোন এ্যাকশান শুরু করেনি। কেবল মাইকে ঘোষণা করলো অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারফিউ থাকবে। কেউ ঘর থেকে বেরুতে পারবে না।
আমাদের বাড়ীর পেছন দিয়ে টিটো ভাইদের বাড়ীর পেছনে যাওয়া যেত। আমি টহলরত পাক সেনাদের নজর এড়িয়ে চলে যেতাম টিটো ভাইদের বাসায়। গোপনে মানিক সাধন এবং আরো দু একজন আসতো। সংক্ষিপ্ত আলোচনা পরিকল্পনা শেষে আবার যার যার বাড়ী ফিরে যেতাম। ২৯শে মার্চ যশোর ক্যান্টনমেন্টে বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করলো। হঠাৎ বাড়ীর সামনে কারা যেন চিৎকার দিয়ে উঠেছে ”জয় বাংলা”। তখনতো সবার বাড়ীর দরজা জানালা বন্ধ। যেন যমপুরী। আলগোছে জানালা ফাঁক করে দেখি মানিক। সঙ্গে আমাদের বয়োঃজ্যেষ্ঠ রিকশাচালক বন্ধু মজু। ও টিটো ভাইয়ের পারমানেন্ট রিকশাচালক। জয় বাংলা বলে হাঁক দিয়ে বলছে - ভাই শিগগির বেরোয়ে আসেন। ওই শালারা ভাইগে গেছে। আসে পাশে কোথাও আর পাক সেনারা নাই। চারিদিকে তখন মুহুর্মূহ জয়বাংলা ধ্বনি আর মুক্ত মানুষের ঢল। তিন দিনের বন্দী জীবন থেকে সবাই ছুটে আসছে। আমাদের ইপিআর জোয়ানরাও এসে গেছে। ওরা খবর দিলো যশোর ক্যান্টোনমেন্টে বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে পাক সেনাদের সাথে লড়ছে। আমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ছুটতে হবে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করতে। এর মধ্যে এক বাচ্চা এসে খবর দিলো কে যেন ইপিআর ক্যাম্পের পাশে খড়ের গাদার নিচে লুকিয়ে আছে। ছুটে গিয়ে দেখি সুবেদার মেজর ওয়ারেস খান। ওর সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক। আমরা মানিকের চা দোকানে যখন আড্ডা দিতাম ওর সাথে তখন প্রায়ই কথা হতো। অবশ্য রাজনৈতিক বিষয়ে কখনো কথা হয়নি। যাহোক - ওকে টেনে হিঁচড়ে বের করে এনে বললাম হাতিয়ার ঘ্যার কা চাবি দে দো। চাবি কাঁহা? কিছুতেই মুখ দিয়ে চাবির খবর বের করতে পারলামনা। ততক্ষণে হাতে যার যা আছে লাঠি শাবল কোঁচ দাঁও এগুলোর ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। এক সময়ে ওয়ারেস খানের আর্তনাদ চিৎকার ক্ষীণ হতে হতে থমকে গেলো। চাবি না পেয়ে ক্ষিপ্ত আমরা ছুটছি ক্যাম্পের দিকে অস্ত্রাগার লুট করার আশায় পেছনে রেখে গেলাম আমাদের হাতে নিহত প্রথম শত্রু ওয়ারেস খান। অস্ত্রাগার ভেঙ্গে থ্রি নট থ্রি এবং বেশ কিছু বাক্স ভর্ত্তি গুলি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া গেলো না। এর মধ্যে টোজো ভাই হন্ত দন্ত হয়ে এলেন। পরনে লুঙ্গি। সেই হাওয়াই সার্ট। মাথায় গামছা। বললেন খুব ভালো কাজ করেছিস। এখন অস্ত্র গুলো ইপিআরদের কাছে দিয়ে দে। গাড়ী যোগাড় করে ক্যান্টনমেন্টের দিকে সবাই মিলে যাতি হবে। জলদি। ট্রাক আছে কার বল। বললাম হোটেলআলা কাশেম চাচাদের আছে। কিন্তু চালাবে কে? টোজো ভাই বললেন সে চিন্তা তোকে করতে হবে না। তুই আমাকে দেখা কোন বাড়ী। কাশেম চাচার বাড়ীর সামনে গিয়ে চাচাকে ডাকতেই ছুটে এলেন। বললাম ট্রাক লাগবে। তিনি বললেন ড্রাইভার তো নেই। চাবি ওর কাছে। টোজো ভাই ইতোমধ্যে ট্রাকের তার ফার সব জোড়া দিয়ে স্টার্ট দিয়ে ডাকলেন - জলদি আয় এখন ফ্যাস ফ্যাস করার মুটেই সুময় নেই। ক্যাম্পের সামনে এসে বললেন - এই টিরাকে যতজন পারিস তুইলে দে এক খ্যাপ দিয়ে আসি। তুরা আরো গাড়ী যুগাড় করতি থাক। টিটো গেছে কনে জানি গাড়ী আনতি। বইসে থাকিস নে মোটে। গোলাগুলি শুনতি পাততিছির? যুদ্ধ কলাম বাইদে গেছে।
এর মধ্যে আরো ট্রাক বাস যোগাড় হয়েছে। আমরা মানুষ ভর্তি করছি। গুলির বাক্স উঠাচ্ছি। তারপর ছুটছি। ক্যান্টনমেন্টের যতটা কাছে যাওয়া যায়। খয়েরতলা পর্যন্ত কেবল যেতে পারছি। সেখানেই লোকজন রেখে আবার আসছি লোক নিতে। চারিদিক থেকে যে যেভাবে পারছে ছুটছে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করতে। তিন দিন আমরা হাজার হাজার মানুষ মিলে ক্যান্টনমেন্ট ঘিরে রেখেছিলাম। এরপর যখন গোলা বারুদ রসদের অভাবে বেঙ্গল রেজিমেন্ট আর টিকতে পারেনি তখন ওঁরা পালিয়ে এসে আমাদের কাতারে সামিল হলেন। বললেন ওরা কামান ট্যাংক নিয়ে ধেয়ে আসছে। যে যেদিকে পারেন ভাগেন। মাথায় গুলির বাক্স নিয়ে দৌড়াচ্ছি এর মধ্যে আমার পাশে রিকশাচালক মজু-র হাতে গুলি এসে লাগলো। বৃষ্টির মত গুলি আসছে। মজু-র মাথা থেকে গুলির বাক্স নামিয়ে আমার লুঙ্গি ছিঁড়ে ওর হাত বেঁধে দিলাম। রক্তাক্ত হাত। ওর কোন বিকার নেই। মাথার ওপর দিয়ে কানের পাশ দিয়ে শোঁ শোঁ শব্দে গুলি যাচ্ছে কেউ কোন আমলই দেয় না। যার যার মত সব ছুটছে। এখন মনে হলে গা শিউরে ওঠে। গুলির বাক্সটা মাথায় নিয়ে ওকে ধরে দৌড়াতে থাকলাম। একটু সামনে এসে পেলাম মানিক আর সাধনকে। এর পর যখন শেল পড়তে শুরু করলো তখন কে কোথায় ছিটকে পড়লাম জানিনা। এক সময় দেখলাম রাস্তায় একটা বাস। আমাকে আর মজুকে ডেকে তুলে নিলো। মজুর হাত তখন রক্তে ভিজে আছে। বাসটা খুলনা বাসষ্টান্ডে এসে সবাইকে নামিয়ে দিলো। চারিদিকে আবালবৃদ্ধবনিতা প্রাণ নিয়ে যে যেদিকে পারছে ছুটছে। মজু বললো - ভাই আপনি যান আমি এখানে আমার এক চিনা মানুষ রয়েছে দেখি তারে পাই কিনা। আপনি পারলি টিটো ভাই টোজো ভাইদের একটু খোঁজ করেন। উদ্ভ্রান্তের মত এদিক ওদিক ছুটছি। হঠাৎ দেখি সাধন আর মানিক। আমাকে বললো তোদের বাড়ীর সবাই নড়াইলের দিকে চইলে গেছে। চল আমরা নড়াইলের বাস ধইরে সেদিকেই যাই। এর মাঝে অনেক ঘটনা যা এই পরিসরে শেষ হবার নয়। নড়াইল থেকে মাইজপাড়া গ্রাম। সেখান থেকেই আমার সাধন আর মানিকের মুক্তিযুদ্ধের শুরু।
সম্ভবতঃ জুন মাসের দিকে একদিন রাতের অন্ধকারে হঠাৎ মানিক এসে হাজির আমাদের গোপন আস্তানায়। মানিকের মন খুব খারাপ। ভীষণ শক্ত ছেলে মানিক। সহজে ভাঙ্গে না। অথচ দেখলাম মানিক কাঁদছে। বললো যাগের আশ্রয়ে থাইকে টোজো ভাই, খড়কীর আসাদ ভাইসহ (আসাদুজ্জামান - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান এবং প্রখ্যাত গীতিকার রফিকুজ্জামানের ভাই) আরো সাত আট জন অপারেশনের জন্য রেডি হচ্ছিলো উরাই রাজাকারগের খবর দে ডাইকে এনে উনাগের ধরাইয়ে দিয়েছে - কুত্তার বাচ্চারা টোজো ভাইসহ সবগুলোরে চোখ বাইন্দে নিয়ে গে ব্রিজের সাথে বাইন্দে একটা একটা করে গুলি কইরে ম্যাইরে ফেইলেছে। উগের আমি শ্যাষ কইরে ফ্যালবো।
দেশের একমাত্র এ্যাকচুয়ারিষ্টকে এভাবেই দেশের জন্য প্রাণ দিতে হলো। মানিকের ভাষায় ”কুত্তার বাচ্চাদের” হাতে আমাদের টোজো ভাই নিহত হলেন। নিহত হলেন যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজের তৎকালীন জিএস আসাদুজ্জামান। আমাদের প্রিয় আসাদ ভাই। আমাদের পাড়ার শান্তি ভাই।
১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১। আমি সেদিন খুলনা শহরে। ৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর হাত থেকে যশোর মুক্ত হলো। খবরটা আগের থেকে জানতাম। সহযোদ্ধা বন্ধু মানিক আগেই সেটা জানিয়ে গেছে গোপনে এবং আমাদের কী কী করণীয় তার একটা নির্দেশ দিয়ে গেছে। মানিক অবশ্য নিশ্চিত করে ৬ তারিখের কথা বলেনি - বলেছিলো প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে মুক্তি বাহিনী মিত্রবাহিনীর সহায়তায় যশোর দখল করবে। ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই যশোরে গৃহবন্দীর দশা থেকে শুনতে পাচ্ছি ভারী কামান আর গোলার শব্দ। যতই দিন যাচ্ছে সে শব্দ আরো কাছে চলে আসছে। অবশেষে বিশাল এক গোলা এসে পড়লো আমাদের বাসার সামনের দমকল অফিসের মাঠে। এরপর মনে হলো আমাদের বাড়ীর চারদিকে যেন গোলাগুলি কামান গোলার শব্দ। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শুনছি যশোর মুক্ত হলো। প্রথম মুক্ত জেলা। এক সময়ে দেখি মানুষ যে যেভাবে পারছে পালাচ্ছে। শহর খালি হয়ে যাচ্ছে। আসলে কী ঘটছে কেউ জানে না - প্রাণের ভয়ে সব ছোটাছুটি করছে সেই গোলাগুলির মধ্যেই। আমার তো কোথাও যাবার জায়গা নেই। আমি বন্দী পাকসেনাদের নজরে। আমার বাড়ীতে আমাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে -আমার কোর্ট মার্শাাল হবে। সকাল বিকাল শর্ত অনুয়ায়ী সেনারা খোঁজ নিচ্ছে আমি আছি না পালিয়েছি। শর্ত হলো আমি পালালে আমার পুরো পরিবারকে এবং যে দুজন জামিনদার ছিলেন তাঁদের পরিবারসহ সকলকে মেরে ফেলা হবে।
এই গোলাগুলির মধ্যেই আমার ফুপাতো বোনের স্বামী রফিকউল্লাহ তাঁর পরিবারসহ কোত্থেকে একটা বাস জোগাড় করে এনে আমাদের বাসায় এসে বললেন - এখনই পালাতে হবে। পাকসেনাদের সাথে মিত্রবাহিনীর প্রচন্ড যুদ্ধ হচ্ছে। আমি বললাম আমার তো যাবার উপায় নেই। আপনি বাকী সবাইকে নিয়ে যান। দুলাভাই বললেন তোমাকে যারা বন্দী করে রেখেছে তারাও সব ভাগোয়াট। আমি যাবো না। কারণ মানিকের সাথে আমাদের অপারেশনের প্লান করা হয়ে আছে। মুক্তিবাহিনী শহরে প্রবেশ করলে আমাদের কী কী করনীয়। যাহোক আমার কথায় কর্ণপাত না করেই একপ্রকার টেনেহিঁচড়ে আমাকে বাসে তোলা হলো। আমরা কোথায় যাচ্ছি জানি না। আমরা যাচ্ছি রাস্তায় দেখি শত শত আর্মি ভ্যানে পাকসেনারাও ভাগছে। তখন ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্লেন থেকে জেনারেল ম্যানেক শ-র নামে লিফলেট ছড়ানো হচ্ছে আত্মসমর্পণ করার জন্য এবং বলা হচ্ছে যদি পাকসেনারা আর কোন গোলাগুলি না করে, প্রতিরোধ না করে তবে তাদের জানমালের রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়া হবে। এবং সব পাকসেনাকে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে জড়ো হবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আত্মসমর্পণের জন্য। ওদিকে ভারতীয় যুদ্ধ বিমানগুলো উপর থেকে শেলিং করে যাচ্ছে। দুলাভাই দেখলাম তাঁর পরিচিত একজনের বাসায় আমাদেরকে এনে তুললেন।
অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর খুলনা মুক্ত হলো। খুলনা বিভাগে অবস্থানরত সব পাকসেনা এসে জড়ো হলো খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে।
ওদিকে বন্ধু মানিক, সাধন আর অন্যরা এক জীপ নিয়ে এসেছে আমাদের যশোরের বাসায়। বাড়ী ফাঁকা দেখে ওরা ভেবেছে আমাদেরকে বোধহয় মেরে ফেলা হয়েছে। এদিক ওদিক আমাদের খোঁজ করে না পেয়ে ওরা ছুটলো খুলনার দিকে। ১৬ই ডিসেম্বর সকালে বাসায় কাওকে না জানিয়ে বেরিয়ে গেলাম সার্কিট হাউসের উদ্দেশে। আত্মসমর্পণ দেখবো আর খুঁজবো আমার সাথীদের যাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। রাস্তায় কেবল লাশ আর লাশ। শেষ মূহুর্তে খুলনা শহরের বিহারী এবং রাজাকাররা যত্রতত্র বাঙালী খুন করে রাস্তার পাশে এবং ড্রেনে ফেলে রেখেছে। গা ছিম ছিম করছে। মেজর আকরামের হাতে ধরা পড়ার পর পাকসেনাদের অত্যাচারের কথা মনে পড়ছিলো। পাকসেনাদের সাথে বিহারীরাও পালাচ্ছে কিন্তু যাবার পথে যাকে পাচ্ছে তাকেই হয় গুলি করছে নয় কোপাচ্ছে। হঠাৎ একটা হুড খোলা জীপ দ্রুত আমার সামনে দিয়ে গেল আবার প্রচন্ড ব্রেক কসে পেছনে আসতে লাগলো। ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম ভাবলাম বিহারীরা বোধ হয় আমাকে বাঙালী হিসেবে সনাক্ত করে ফেলেছে। কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহকে স্মরণ করে বললাম তুমি অলৌকিকভাবে আমাকে মেজর আকরামের হাত থেকে বাঁচিয়েছো এবার এদের হাত থেকে বাঁচাও। আমার পাশে জীপটা থামতেই ’জয় বাংলা’ বলে মানিক আর সাধন জীপ থেকে নেমে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার নিজের নিরাপত্তার জন্য হাতে একটা এসএমজি ধরিয়ে দিয়ে বললো গাড়ীতে ওঠ। আগে সার্কিট হাউসে যাবো।
১৯৭১-এ ১৬ ডিসেম্বর খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে অস্ত্র হাতে আমরা সহযোদ্ধা বন্ধুরা। অবলোকন করছি, মিত্র বাহিনীর কমান্ডে যে পাক সেনা গুলোকে ধাওয়া করে কুষ্টিয়া যশোর থেকে খুলনায় এনে জড়ো করা হয়েছে ওদের আত্মসমর্পন। দূর থেকে দেখছি সেই মেজর আকরামকেও যার হাতে আমি বন্দী হয়েছিলাম - সেই মেজর আকরামকে দেখছি এক এক করে কোমরের পিস্তলসহ বেল্ট, সোল্ডারের র‌্যাঙ্কব্যাজ খুলে সামনে মাটিতে রাখছে। টকটকে ফর্সা মুখমন্ডল তখনো সূর্য্যরে আলোয় ঝলমল করছে। আস্তে করে মানিককে বললাম - মেজর আকরামকে কি কোনভাবে বাঁচানো যায় না? মানিক আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে হঠাৎ ওর হাতে থাকা এসএমজিটা আমার বুকে ঠেকিয়ে বললো - শালা তুই মেজর আকরামের হাত থেকে বেঁচে গেলেও আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবি না। তখন এক উত্তেজনার সময়। সবাই উত্তেজিত। আমি বললাম - মানিক, নরপশু মেজর আকরামের ভেতরে যে এক কোমলমতি মানুষ বাস করছে তাকে তোরা দেখিসনি। আমি দেখেছি। আমরা বাঙালিরা ইপিআর-এর হেড কোয়ার্টারে ওর চোখের সামনে ওর ছোট মেয়ে আর বউটাকে গুলি করে মেরে ফেলেছিলাম। তারপর থেকে ও হিংস্র হয়ে গেলো। যাকে ধরছে তাকেই মেরে ফেলছে। শুধু বাদ গেলাম আমি। ওর মেয়ের মত দেখতে আমার ছোট বোনের অশ্রু আর আকূতি ওর হিসাব নিকাশ সব ওলোট পালট করে দেয়। মেজর আকরাম আমাকে প্রাণে না মেরে আমার কোর্ট মার্শালের ব্যবস্থা করে। আমার বুকে রিভলবার ধরেও আমাকে ছেড়ে দেয়। তোকে ঘটনাটার মাত্র বিশ শতাংশ বললাম। বাকীটা শুনলে তুইও হয়তো আমার মত করে ভাবতি - মেজর আকরামকে বাঁচানো যায় কি না! মানিক বলে সেটাই বল তুই ধরা পড়লি ক্যামনে?
সেই রাতে তুই যখন আমার সাথে দেখা করে চলে গেলি তার কয়েকদিন পর হঠাৎ একদিন রাতে আমাদের বাড়ীটা ঘিরে ফেললে পাকসেনারা মেজর আকরামের নেতৃত্বে। বারান্দায় ভারী বুটের শব্দ পেয়ে আমার মেজো বোন আব্বাকে বললো আব্বা আমদের বাড়ীতে মনে হয় আর্মি এসেছে আমি ওদের বুটের শব্দ পেয়েছি আর ওরা ফিসফিস করে কথা বলছে। আমি তখন আম্মার সাথে ট্রানজিস্টারের কাছে মাথা রেখে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনছি। আব্বা এসে আমাকে আস্তে করে ডেকে বললেন বাবা ওরা টের পেয়ে গেছে তুমি এখানে। তোমাকে বোধহয় ধরতে এসেছে। তুমি আমাদের পুকুরের কচুরীপানার মধ্যে ডুব দিয়ে থাকো। উঠানে লাফ দিয়ে পুকুরের দিকে যেতেই হল্ট হল্ট শব্দে থমকে গেলাম। হ্যান্ড্স আপ। তারপর এলোপাথারি রাইফেলের বাড়ি। আমি জানতাম না ওরা বাড়ীর ভিতরে ঢুকে আছে। তাড়াতাড়ি আমার হাত আর চোখ বেঁধে পিছনের দরজা দিয়ে ওদের গাড়ীতে তুললো। বুঝতে পারছি শরীরে বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত ঝরছে। ওদিকে সামনের দরজা খুলতেই মেজর আকরাম আব্বার বুকের ওপর পিস্তল ধরে বলছে তোমার ছেলে কোথায়? ততক্ষণে বাড়ীতে কান্নার রোল। মেজর আকরামকে জানানো হলো শিকার আয়ত্বে। কিছুক্ষণ পর মেজর আকরাম গাড়ীতে এলো। গাড়ী চলতে শুরু করলো। কোথায় যাচ্ছি জানিনা।
একসময়ে গাড়ী থামলে আমাকে লাত্থি দিয়ে গাড়ী থেকে নামানো হলো। তারপর বুঝতে পারলাম আমি কোন এক ঘরে। এবার শুধু আমার চোখের বাঁধনটা খোলা হলো। হাতে হ্যান্ড কাপ। চোখ খুললে বুঝলাম যশোর কোতয়ালী থানার হাজত ঘরে আমি। যেখানে চারজন মানুষ ঠিকভাবে বসতে পারে না সেখানে প্রায় চল্লিশজন মানুষ। সবাই আমার মত আহত আধমরা। কেউ কাতরাচ্ছে কেউ অচেতন। চারিদিকে রক্ত, আর প্রশ্রাব থৈ থৈ করছে। পরে জেনেছি ওদেরকে দিন কয়েক ধরেই ধরে আনা হচ্ছে এবং যখন খুশী বিশেষ ঘরে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে।
হাত বাঁধা অবস্থায় অর্ধচেতন পড়ে আছি। হঠাৎ চোখে পড়লো হাফিজ ভাইয়ের দিকে। আমার সহযোদ্ধা অন্ধকারে নির্যাতনে বিভৎস চেহারাটা চিনতে পারিনি প্রথমে। চোখাচোখি হতেই বললেন আমরা কিন্তু কেউ কাওকে চিনি না।
ভোরের আজান শুনতে পারছি। সেদিন বোধহয় ঈদের দিন। রাজাকার আর বিহারী পুলিশরা নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার ঈদ মুবারক ধ্বনি দিচ্ছে চারিদিকে। এক সময়ে এক বিহারী সেন্ট্রীকে বললাম আমাকে একটু পানি দেবে?। অট্টহাসি দিয়ে বললো - তুমি পানি খাবে? বেশ হা কর আমি পেশাব করে দিচ্ছি আপতত ওটাই পান করো। কথাটা নিজের ঘরে বসে ওসি সাহেব শুনেছিলেন। আজানের সময় যখন আমাকে তাঁর ঘরে নেওয়া হলো তিনি সেন্ট্রীকে ইংরেজীতে আদেশ করলেন আমার হ্যান্ডকাফ খুলে দিতে। তারপর একগ্লাাস পানি এনে দিতে বললেন। আমাকে পানিটা খেতে বললেন। পানিটা খেয়ে আমি এবার খুব কাঁদলাম। বললাম জীবনের প্রথম হাতকড়া পরলাম। এবার ওসি সাহেব বাংলায় বললেন চুপ করুন। সারা দেশের হাতে হাত কড়া আর আপনি .. তাঁর কথা শেষ করতে না দিয়ে আমি বললাম আপনি বাঙালী? বললেন ওরা (সেন্ট্রীরা) শুনতে পাবে ইংরেজীতে বলুন..। আমি এখন আপনার জবানবন্দী তৈরী করবো। যা প্রশ্ন করবো তার উত্তর দেবেন। নানা জেরা তাঁর। এক পর্যায়ে বললেন আমি একটা ব্যাপারে অবাক হচ্ছি যে মেজর আকরাম কাওকে ধরলে ফুলতলা ব্রিজে নিয়ে মেরে ফেলে কিন্তু আপনাকে কেন হাজতে রেখে গেলো। যাবার সময় বললো আপনার যাবতীয় কাগজপত্রসহ আপনাকে ক্যান্টনমেন্টে চালান করতে আপনার কোর্ট মার্শাল হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম আমার অপরাধ? বললেন ১. আপনি ইপিআর এর সুবেদার মেজর ওয়ারিস খানের কাছ থেকে ওদের অস্ত্রগারের (কোথ) চাবি জোর পূর্বক কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হবার পর ঠান্ডা মাথায় আরো কয়েকজনকে নিয়ে তাকে হত্যা করেছেন। ২. কোথ লুট করে সব অস্ত্র ইপিআর এর বাঙালী সিপাহী এবং অন্যান্য মানুষের কাছে বিলি করে যশোর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করতে গিয়েছিলেন। ৩. আপনি নড়াইল এলাকায় পাকিস্তানী জোয়ানদের কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছেন। গোলাগুলি করেছেন। ৪. আপনি এবং আপনার সাথে আরো দুজন মিলে আপনারা হাতে লিখে পত্রিকা এবং পোষ্টার তৈরী করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করার চেষ্টা করেছেন। তার কপি আমাদের হস্তগত হয়েছে। ৫. আপনি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) হয়ে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং তাদের নির্দেশ মত রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করে চলেছেন।
আমি অবাক হয়ে গেছি। গত আট মাসের সমস্ত খবর ওদের কাছে আছে। বাঙালী ওসি বলে তাঁর কাছে অকপটে সব স্বীকার করেছি। তিনি বললেন কনগ্রাচুলেশনস। ঘাবড়াবেন না। মেজর আকরাম যখন মারেনি তখন হয়তো আর প্রাণে মারবে না তবে কী করবে আমি জানিনা।
দুদিন পর আমার জামিন হলো শর্ত সাপেক্ষে। আমি বাড়ীতে থাকতে পারবো কিন্তু যে কোন মুহুর্তে ওরা আসলে আমাকে যেন বাড়ীতে পাওয়া যায় নইলে আমার জামিনদার এবং আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হবে। বাড়ীর কাছেই মেজর আকরামের অফিস। যাতায়াতের সময় দুবেলা খোঁজ নিতো আমি আছি না পালিয়েছি।
মানিককে বললাম - এরপর তোরা যখন যশোরে ঢুকলি ওরা পালালো খুলনায় - আমরাও চলে এলাম খুলনায়।
আত্ম সমর্পণের পর্বটি দেখার পর আমরা সবাই ক্ষুধার্তু। এক রেষ্টুরেন্টে ঢুকলাম। ওখানে বসচা চলছে মালিকানা নিয়ে যেহেতু ওটা ছিলো বিহারীর রেষ্টুরেন্ট। আমরা সাতজন। সবার কাঁধে অস্ত্র। ওরা একটু ঘাবড়ে গেলো। আমাদের সার্ব করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কে কী খাবে অর্ডার দিচ্ছে। আমি মুরগী খাসি গরু তিনটারই অর্ডার দিলাম আমার জন্য। বন্ধুরা সব আমার দিকে তাকিয়ে। বললাম কিছু মনে করিস না গত নয় মাস আমি মাছ মাংস স্পর্শ করিনি। আমার প্রতিজ্ঞা ছিলো দেশ স্বাধীন করে তারপর মাছ মাংস খাবো।
সেদিনই সবাই মিলে জয় বাংলা শ্লোগান দিতে দিতে যশোর ফিরে এলাম। তারপর যশোর সার্কিট হাউসে মেজর এম এ মনজুরের (আট নং সেক্টর কমান্ডার) হেড কোয়ার্টারে রিপোর্ট করলাম। তারপর মেজর মনজুরের নির্দেশ অনুযায়ী শহর নিয়ন্ত্রনের কাজে লেগে পড়লাম। চারিদিকে তখন বারুদ আর লাশের গন্ধ। স্বাধীনতার গন্ধ।

 

ডঃ কাইউম পারভেজ
লেখক, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top