সিডনী মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১

তিনজন শিক্ষককে বরখাস্ত কিসের আলামত : শাকিলা নাছরিন পাপিয়া


প্রকাশিত:
৩১ মে ২০২৩ ২২:৩৮

আপডেট:
৩০ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:১৭

 

গত ৪ মে/২৩ প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডের দাবীতে মানববন্ধন হয়। কোন শিক্ষক সংগঠনের ব্যানারে নয় শুধুমাত্র ফেসবুকে যোগাযোগের মাধ্যমে এমন একটি সফল আন্দোলন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

শিক্ষকদের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে গেছে, অসম্মানের বেতন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর অপমান এবং সামাজিক নানা অবজ্ঞায় শিক্ষকবৃন্দ তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছে।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হবার পরও শিক্ষকদের ললাটে কেন দরিদ্রতা আর তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর অসম্মানের তিলক সে প্রশ্নের জবাব খুঁজেছেন প্রাথমিকের শিক্ষকবৃন্দ।

শিক্ষকদের চেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে অনেকেই যখন দশম গ্রেডের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা শিক্ষক তখন তেরোতম গ্রেডের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। যদিও বর্তমানে শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনার্স, মাস্টার্স।

সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের বেতন নিম্নরূপ ঃ

গ্রেড ঃ ১৩ তম
বেতন স্কেলঃ ১১০০০/ --২৬৫৯০/

বেসিক সেলারীঃ ১১০০০/
বাড়ি ভাড়াঃ ৪৯৫০/
চিকিৎসা ভাতাঃ ১৫০০/
টিফিন ভাতাঃ৷ ২০০/

মোটঃ৷ ১৭৬৫০/

বিএফ কর্তনঃ৷ ১১০/
রেভি. স্টাম্পঃ ১০/

মোট কর্তনঃ ১২০/

নীট প্রাপ্যঃ ১৭৫৩০/
একজন শিক্ষকের জন্য বর্তমান দ্রব্যমূল্যের এই সময়ে এ বেতন দিয়ে চলা কি সম্ভব?

অনেকের অবস্থানই পরিবর্তন হয়েছে, শুধু শিক্ষক ছাড়া।
শিক্ষকদের অর্থনৈতিক অবমূল্যায়ন, সামাজিক অসম্মান থেকে মুক্তির জন্য মু. মাহবুবর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে " প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শইক্ষা ১০ ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ "।
রিট করা হয় আদালতে।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকের ১০ম গ্রেড প্রদানে রিটকারী ১৫জনের নামের তালিকা: ১। মো: মাহবুবর রহমান - ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট - ২। মোহাম্মদ আনোয়ার উল্লাহ - ডেমরা, ঢাকা- ৩। মো: জহুরুল ইসলাম- ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট - ৪। মো: জুয়েল আহমেদ - সুনামগঞ্জ-৫। মো: সহিদুজ্জামান- চৌগাছা, যশোর- ৬। সিদ্দিক মো: আবু বকর- গাবতলী, বগুড়া- ৭। মো: জাকির হোসেন - গৌরিপুর, ময়মনসিংহ- ৮। মো: তাসরিফ আহমেদ - সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ- ৯। জাহেদুল আলম - হাটহাজারী, চট্টগ্রাম- ১০। নজরুল ইসলাম - সিলেট সদর - ১১। মো: আব্দুল মালেক - রৌমারী, কুড়িগ্রাম - ১২। মো: শহিদুল ইসলাম - বাউফল, পটুয়াখালী- ১৩। মোছা: মাহমুদা খাতুন - কালাই, জয়পুরহাট- ১৪। সায়না শিরিন - কালকিনি, মাদারীপুর - ১৫। নাজমুন নেছা লাভলী - টেকনাফ, কক্সবাজার-

এছাড়াও যাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে দশম গ্রেডের আন্দোলন তারা হলেনঃ

১. মাসুদুর রহমান ডেমরা ঢাকা ২. জাকির হোসেন ফেনী ৩. জামিল বাশার টাঙ্গাইল ৪. মোস্তাফিজুর রহমান কুমিল্লা ৫. ইয়ারন চৌধুরী ফরিদপুর ভাংগা ৬. আকরাম হোসেন জুয়েল বান্দরবান ৭. কবির মোল্লা সিরাজগঞ্জ ৮. স্বাধীন সোহেল নাটোর, ৯. মাহবুবা আক্তার বগুড়া ১০.মোসা: শাহনেওয়াজ আক্তার প্রমুখ।

গত ৪মে সারা দেশ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকবৃন্দ আসেন ঢাকার প্রেসক্লাবে মানববন্ধনে অংশ নিতে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষকদের বঞ্চনার কথা পৌঁছে দেওয়াই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দশম গ্রেড পাওয়া উচিৎ সে কথাও তুলে ধরা হয় এই মানববন্ধনে।

শিক্ষক সংগঠনগুলো শিক্ষকদের এই যৌক্তিক দাবীগুলো তুলে ধরতে সক্ষম হয়নি ইতিপূর্বে। কোন সংগঠন ছাড়া শুধুমাত্র ফেসবুকের আহ্বানে এতগুলো মানুষ রাজধানীতে ছুটে আসবে তা ভাবতেই পারেনি সংগঠনগুলো।

এই মানববন্ধনের নিউজ বড় বড় ইলেকট্রনিকস মিডিয়া কাভার না করলেও প্রিন্ট মিডিয়া যত্ন করেই প্রকাশ করেছিল। অধিকার আদায়ের এই আকুলতা ভিতরে ভিতরে কি ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল কাউকে?

করোনাকালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের পুরস্কার দেয়া হয়নি। বরাবর এই পুরস্কার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গ্রহণ করেন সেরা শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা।

চার বছরের বিরতির পর এই পুরস্কার প্রদান করেন মাননীয় প্রতিমন্ত্রী। ফলে, এক মিডিয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পাবার যে বাসনা মনে ছিল সে কথা ব্যক্ত করা হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু আমাদের প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যাও।
তাঁকে সামনাসামনি দেখার স্বপ্ন দেখা,
তাঁর হাত থেকে কাজের স্বীকৃতির পুরস্কার পাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করা যদি পাপ হয়
তাহলে সে পাপে এ দেশের কোটি কোটি মানুষ পাপী।

তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ালো? এখানে শিক্ষক নয়, প্রশাসনের প্রতিপক্ষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করা হলো সেটাই কি তাদের গাত্রদাহ?
স্বপ্ন দেখতে ট্যাক্স লাগে না। তাই মানুষ স্বপ্ন যখন দেখে তখন সেরাটাই দেখে।

একটি অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে তিনজন শিক্ষকের এই বরখাস্ত শিক্ষকদের জন্য চরম অসম্মানের।
শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পুরস্কার হাতে তুলে দিয়ে এই অসম্মান করার অধিকার কারো নেই।
আমরা এই অন্যায়ের প্রতিকার চাই। এই অসম্মানের বিচার চাই। এই স্বেচ্ছাচারিতার অবসান চাই।

একদিকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পুরস্কার, অন্যদিকে সাময়িক বরখাস্ত। এটা কি স্ববিরোধীতা নয়?
প্রাথমিকের শিক্ষকদের জন্য নিয়মের এই খড়গ যদি বুমেরাং হয় তখন?

 

শাকিলা নাছরিন পাপিয়া
শিক্ষক ও কলামিস্ট

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top