সিডনী মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নীলাম্বরী অস্ট্রেলিয়া (প্রথম পর্ব) : শাহান আরা জাকির


প্রকাশিত:
৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:৫১

আপডেট:
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৫৯

ছবি :  শাহান আরা জাকির

 

(পূর্ব প্রকাশিতর পর)
রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমুতে গেলাম!সারাদিনের দীর্ঘ জার্নির ধকল এ রাতে টানা ঘুম হলো!
সিডনী সময় সকাল দশটা নাগাদ ঘুম ভাঙলো পাখির কিচিরমিচির ডাকে!জানালার ফাক দিয়েই দেখলাম মনার নান্দনিক বাড়ি!চারদিকে নানাজাতের ফুলের গাছ !এক পাশে সুইমিং পুল এ আকাশের নীল রঙ টলমলে জল এ দোলা লাগছে !আর আঙিনায় প্রচুর চড়ুইপাখি ۔۔গ্যারেজ এর চালায় কিছু ঘুঘু পাখি ও টিয়া পাখি ওড়াউড়ি করছে !
আমিতো অবাক!
এখানেও চড়ুই ,ঘুঘুর ডাক শুনতে পাবো ভাবাই যায়না!আরো যে কত পাখির আনাগোনা!
চোখটা জুড়িয়ে গেলো ۔۔۔আমি আমার সোনার বাংলার অমৃত সুধা এখানেও পেয়ে গেলাম!
পাখিদের কলরব আর কিচিরমিচির ডাক শুনে মনে হচ্ছিলোনা বিদেশ আছি!চড়ুই ,ঘুঘু,টিয়াপাখি এসব দেখে ঠিক আমার বাংলাদেশই মনে হচ্ছিল চোখ বন্ধ করে!
ততক্ষনে টুনটুনি,ও তাসুমনি ড্যাবড্যাব করে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে আমাদের রুমের দরোজায় দাঁড়িয়ে!
আমরা দুজনেই উঠে এলাম বিছানা থেকে!
চারদিক ঘুরে ঘুরে মনা ও বেটা দেখাতে লাগলো! আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখছি!
সামনে পেছনে অপূর্ব লন!
রাস্তার এপার ওপার সবই প্রায় একই মডেল এর কটেজ টাইপ এর বাড়ি!প্রতিটি বাড়ি ও রাস্তার চারপাশটাই নানান প্রজাতির ফল ফুল ইউক্যালিপ্টাস গাছের দৃষ্টিনন্দন সমাহার!
বাড়ির পেছনের দিকে গেলাম!
বাহ্ বেশ কয়টি সব্জির বেড রয়েছে !
মনা টমেটো, জুকিনি, পুঁইশাক, মিষ্টিকুমড়ো লাগিয়েছে!এসব শিবাজীর গাছ একটু বেঁটে বা খাটো প্রকৃতির!গাছগুলো খুব নাদুসনুদুস!ছোট গাছেই ঝোপা বেঁধে ফল আসে!আমাদের দেশের সব্জি গাছের মতো অত লম্বা লতানো গাছ নয় বলে তেমন বড়োসড়ো জাংলা দেবার প্রয়োজন পড়েনা! সব্জির বেড দেখে আমার আনন্দ যেন আর ধরে না!বাগান করা আমার নেশা!যাক এখানেও করতে পারবো ভেবে খুব ভালো লাগছিলো!
হটাৎ দেখি পেছনের ওয়াল ঘেসে
পাশের বাড়ির একটি বিশাল কাগজি লেবুর ডাল মনার বাড়ির ভেতরে ঝুকে আছে !ডাল ভর্তি ঝোপা ঝোপা ইয়া বড় বড় লেবু !এতো বড় কাগজী লেবু আমি দেশে কমই দেখেছি!বোঝা যাচ্ছে রসে টইটম্বুর হবে !আমিতো প্রথমে কমলা লেবু ভেবেছিলাম !গাছের সীমানার ব্যাপারে এখানে কিছু মজাদার নিয়মকানুন আছে!মনা ও বেটা তা
বুঝিয়ে বললো!এখানে পাশাপাশি কারো বাড়ির কোন ডালপালা অন্যবাড়ির সীমানায় চলে এলে ,সে ডালপালা ও ফলমূলের অধিকার সেই বাড়ির মালিকের হয়ে যায়!সে ডালের ফলমূল সব তারা ভোগ করতে পারবে!শুনে আমরাতো অবাক!সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আঙিনায় ঝুকে পরা ডাল থেকে আমি তিন চারটে লেবু পেরে আনলাম!এতো বড় আর রসালো দেখতে,ঠিক মাল্টা বা কমলালেবুর মতোই !পরানবন্ধু খুব খুশি হলেন !খাবার টেবিলে সবসময় তার লেবু থাকতেই হবে!সে খুব আশ্বস্ত হলো!আমিও!
ভাবলাম কি চমৎকার এখানকার রীতিরেওয়াজ!আমাদের দেশে হলেতো ,কারো সীমানায় গাছের ডাল চলে গেলে সীমানা মাপা শুরু হয়ে যেত!এরপরই বলা নেই কওয়া নেই সোজা ডাল কেটে দিতো !ছোটখাট যুদ্ধই বেধে যেত প্রতিবেশীর সাথে!ফল খাওয়াতো পরের কথা,গাছে হাত দেয়াই দায় হতো!
এরপর যতদিন আমরা মনার বাড়িতে ছিলাম মনের আনন্দে ইচ্ছেমতো লেবু খেয়েছি আমরা!এই লেবু না পেলে আমারতো মনে হয় এ কমাসে লাখ টাকার লেবুই কিনতে হতো মনার!
মনা বললো,এখানে অনেক শাকসবজি,ফলমূল একদম বাংলাদেশের মতোই!ফলের মধ্যে আম জাম লিচু কলা কাঁঠাল,কমলা আবার শাকসবজির মধ্যে ডাটা শাক ,পালংশাক,পুইশাক,কচুশাক সবই পাওয়া যায়!
চাইনিজদের বিশাল বসবাস রয়েছে এখানে!বাংলাদেশের সাথে আবহাওয়ার ও অনেকটাই সাদৃশ্য রয়েছে এখানকার আবহাওয়ার!শুধু একটু ওলোটপালোট ঋতু!অর্থাৎ এখানে যখন শীতকাল,বাংলাদেশে তখন গ্রীষ্মকাল!

কদিন এভাবেই কেটে গেলো!কিছুদিন পর বিকেল হলে তাসু মনিকে নিয়ে তার প্রাইভেট টিউটর এর কাছে যাতায়াত শুরু করলাম!
ছোট ছোট টিলার ওপর দিয়ে পায়ে হেটে যাওয়ার বেশ চওড়া রাস্তা!আমাদের বাসা থেকে হেটে হেটেই যাওয়া যায় টিউটর এর বাসায়! হাঁটাহাঁটিও হবে!তাই গাড়িতে না যেয়ে আমি আর তাসুমনি মজা করে করে হেটে হেটে যেতাম!
যাবার সময় রাস্তার চারপাশে বাড়ির সামনে নান্দনিক সুসজ্জিত ফল ফুলের বাগান দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে যেত!
কমলা গাছের নিচে কমলা পেকে পরে আছে !নেবার মানুষ নেই!ঠিক আমাদের বাংলাদেশের উল্টো চিত্র!মাঝে মাঝে আমি দুস্টুমি করে তাসুমনিকে বলতাম ۔۔۔সোনা could i take some fruits?...ওরেব্বাবা!তাসুমনি no no didimum ..its very bad..বলে আমার দুই হাত টেনে ধরে রাখতো !
এভাবে মজা করতে করতে তার টিউটর এর বাসায় আসা যাওয়া চলছিল!
একদিন টিউটর এর বাসায় ঢুকতেই দেখলাম ঘরের সামনে বেশ কিছু টেবিলে অনেক কমলার প্যাকেট সাজানো রয়েছে!লেখা আছে For guest...
বুঝতে পারছিলামনা !
কি ব্যাপার!পরে জানলাম ,এসব কমলা এখানে যারা পড়তে এসেছেন তাদের অভিভাবকদের জন্য রাখা হয়েছে !খুশি হয়ে আমিও নিয়ে এলাম এক প্যাকেট!
পরে জেনেছিলাম ۔۔۔ঐ টিউটর এর বাড়ির মধ্যে প্রতিবেশীর কমলা গাছ এর অজস্র ফলসহ বিশাল ডাল ঢুকে পড়েছে টিউটর এর বাড়ির প্রাচীর উঁচিয়ে!এ দেশের নিয়মানুযায়ী এ ফল এর মালিক এখন ঐ টিউটর!
তো বেচারা এতো কমলা কি করবে !খেয়ে শেষ হয়না !তাই প্যাকেট করে করে এভাবে বিলি বন্টন করছেন তিনি !
বিষয়টা এতো ভালো লাগছিলো আমার!
কত উদার এখানকার মানুষগুলো!অনেকেইতো পচিয়ে ফেলে দেয় ডাস্টবিন এ۔۔۔۔
????????????
(চলবে)

নিলাম্বরী অস্ট্রেলিয়া (দ্বিতীয় পর্ব)

 

শাহান আরা জাকির  
নাট্যকার, লেখক ও গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top