সিডনী মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১

জীবনী; আফরোজা অদিতি (১৯৫৩ - )


প্রকাশিত:
৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ২২:৩৬

আপডেট:
৩ মে ২০২০ ২০:৫৮

 

পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার শাহপুর গ্রামের এক রাজনৈতিক পরিবারে কবি ও কথাসাহিত্যিক আফরোজা অদিতির জন্ম। জন্ম তারিখ ১ জুলাই, ১৯৫৩ সাল। তিনি স্বনামখ্যাত কমিউনিস্ট ও কৃষক নেতা প্রয়াত কমরেড আলাউদ্দিন আহমেদ ও প্রয়াত কমরেড আম্বিয়া বেগম-এর কন্যা। রাজনৈতিক পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। গ্রামের স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পরে পাবনা শহরে লেখাপড়া করেছেন তিনি। পাবনা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন; তারপর পাবনা মহিলা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং বিএ পাশ করেন। ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি সমর্থন করেছেন দুই-একবার মিছিলে গিয়েছেন তবে রাজনীতি তাঁর ভালো না লাগায় রাজনীতির পথ মাড়াননি; তিনি সব সময় মনে করেছেন কলমের জোরও কম নয়;এই চিন্তা-চেতনার থেকেই তিনি রাজনীতির চেয়ে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেছেন বেশি। ছোটবেলা থেকেই তাঁর লেখালেখির শুরু।

লেখাপড়া  শেষে ব্যাংকে চাকুরি। পূবালী ব্যাংক লিমিটেড থেকে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে অবসর নিয়েছেন। তিনি বাংলা একাডেমির সদস্য ছাড়াও বেশ কয়েকটি সাহিত্য সংগঠন এবং সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভূক্ত গীতিকার। তিনি কমরেড আলাউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার প্রবর্তন করেছেন। তিনি তটিনী (সাহিত্যপত্র ) নামে একটি পত্রিকার প্রকাশক এবং সম্পাদক। সাহিত্যের জন্য বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪৫।

আফরোজা অদিতির শৈশব-কৈশোর

গ্রামের নাম শাহপুর, উপজেলা ঈশ্বরদী, জেলা পাবনা। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যেতো একটি নয় দুইটি নদী। একটি শান্ত অন্যটি খরস্রোতা; তরতরিয়ে বয়ে যেতো সুতাগাং, খরগাং নামের ইছামতীর শাখানদী। জলে  টইটুম্বর নদীর পাড় ঘেঁষে কাঁচা রাস্তা; গ্রামের প্রধান সড়ক। সেই সড়কে চলতো গরু আর মহিষ টানা গাড়ী। ছইঢাকা গাড়িতে চলতো যাত্রী। তারপর গরু-মহিষের গাড়ির সঙ্গে যোগ হয়েছিল ঘোড়ায় টানা (টমটম) গাড়ি। ওই বড় সড়ক থেকে একটু নামলেই পায়ে চলা চিকন পথ, পথের দুপাশে সবুজ ঝোপ, বাঁশবাগান। ওই পথের সীমানা শেষ হয়েছে যেখানে, সেখানেই তাঁর বাপদাদার ভিটে। গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো বাড়িটির চারপাশে চারটি দরোজা আর বাড়ির সামনে ছিল একটি বাদাম (বাতাবিলেবু) গাছ। ওই গাছতলায় মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এলে বসতেন। তিনি এলে আসতেন আবদুল মতিন (ভাষা মতিন), হাসান আলী, আহাদ আলি, মোহসিন, গেদা মণ্ডল, বদিউজ্জামান, চুনু, কাসেম, আতিয়ারসহ আরও অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। গ্রামের মানুষও ভীড় জমাতো সেখানে। যখন কথা বলতেন মওলানা ভাসানী তখন কোথাও কোন শব্দ থাকতো না। রাজনৈতিক নেতারা শুধু জননেতা মওলানা ভাসানী এলেই আসতেন না, তাঁরা প্রায়ই আসতেন। শৈশব-কৈশোরে তিনি থইথই রাজনীতির মধ্যে থেকেছেন, বড় হয়েছেন।

দাদা, রিয়াজউদ্দিন সরদার ছিলেন চার ভাই দুই বোনের মধ্যে বড়ো। দাদার বাবা, কফেজউদ্দিন সরদার ছিলেন হাজী। স্কুল শিক্ষক দাদা ইমামতি করতেন মসজিদে। সময় পেলেই ওই মসজিদের মুছুল্লীদের ওজুর জন্য নদী থেকে পানি তুলে ড্রাম ভরে রাখতেন তাঁর বাবা। বাবার বড় ভাই (একমাত্র ভাই) থাকতেন ঈশ্বরদী, তিনি রেলে চাকরি করতেন। আফরোজা অদিতির চাচা, জয়নাল আবেদিন  তাঁর ছোটবেলাতেই মারা যান। তিনি গ্রামের স্কুল থেকে প্রাইমারি পাশ করে পাবনা শহরে পড়তে যান। শাহপুর প্রাইমারি স্কুলে প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তাঁর বাবা; বর্তমানে ঐ স্কুলটি সরকারি হয়েছে তাতেও তাঁর বাবার অবদান রয়েছে। পঞ্চম শ্রেণী পাশ করার পরে গ্রামে কোন হাইস্কুল না থাকায় তিনি পাবনা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঐ স্কুুল থেকেই তিনি ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাশ করেন। আফরোজা অদিতি, ছোটবেলাতে খুব গল্প শুনতে ভালোবাসতেন। স্কুল ছুটিতে পাবনা থেকে বাড়ি এলে চাচার বাড়ি চলে যেতেন; চাচার মেজ মেয়ে ভালো গল্প বলতে পারতেন; গল্প শোনার আগ্রহে মেজআপার কাছে যাওয়া। মেজআপার কাছে গল্প শোনার নেশা এখনও আছে তাঁর। পাবনা থেকে বাড়ি এলে বিকেলে প্রাইমারি স্কুল যেখানে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছিল সেই স্কুলের মাঠে খেলতে যেতেন। তিনি খেলতে, বই পড়তে ভালোবাসতেন। যে কোন বই শেষ না করে কখনও উঠতেন না। এই কারণে বকাও খেয়েছেন বড়োদের কাছে। এক বিকেলে খেলতে যাবো বলে বের হয়ে চাচাতো বোনের বাড়িতে একটি বই দেখে পড়তে শুরু করেন; তারপর সেটি শেষ হতে হতে সন্ধ্যা লেগে যায়; বাড়ি ফিরতেই মায়ের বকুনি; তাঁর মা খুব কড়া ধাতের মানুষ ছিলেন। তিনি তাঁদের যেমন স্বাধীনতা দিয়েছিলেন তেমন শাসনও করতেন। ছোটবেলার থেকেই মেহেদী লাগানো শখ তাঁর।

বাবার চাচা, তাঁর বাড়িতে একটি ইঁদারা (বড় শান বাঁধানো আঁকশি লাগানো কুয়া) ছিল ওটির পাশে ছিল মেহেদী গাছ। ওই দাদার মেয়ে খুব ভালো মেহেদী লাগাতে পারতেন; মাঝেমধ্যে ঐ ফুফুর কাছে যেতেন হাতে মেহেদী দিতে। তাঁর সবসময়ের সঙ্গী ছিল ছোট বোন মুক্তি (ক্যানসারে মারা গেছে)। ফুল কুড়ানো শখ ছিল তাঁর; শিমুল ফুল পছন্দ তাঁর।  ছোটবেলায় বোনকে সঙ্গে করে শিমুল ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথতেন তিনি।       

নানাবাড়ি পাশের গ্রামে; মাটির দেয়াল ঘেরা বিশাল বাড়ি। তিন মামা; তাঁর শৈশবে তাঁরা একত্রে থাকতেন। পরবর্তীতে বড় মামা ঈশ্বরদী এসে বাড়ি করেন। উনি ডাক্তার ছিলেন। এক খালা ছিলেন থাকতেন শ্বশুরবাড়ি; তিনিও অবস্থাপন্ন ছিলেন। মা ছিলেন ভাইবোনদের মধ্যে ছোট। বিয়ের পরেও  নানার বাড়ি থাকতেন কারণ লেখাপড়া করতেন বাবা। আফরোজা অদিতির জন্ম সেখানেই; তিনি মায়ের কাছে শুনেছেন তিনবছর বয়স পর্যন্ত ছিলেন নানাবাড়ি। নানা, অবস্থাপন্ন ধনী ছিলেন। বিশাল উঠান। সেই উঠানে মামাতো ভাইদের সঙ্গে খেলতেন। বেতের তৈরি হাতলওয়ালা ছোট পাত্র ছিল যেটাকে ‘টুরি’ বলে, সেটাতে করে মুড়ি ছিটিয়ে পাখিদের খাবার দেওয়াই ছিল তাঁর খেলা। নানাবাড়ি, দাদাবাড়ি হলো এ গ্রাম ও গ্রাম। দাদার বাড়িও ছিল বিশাল বড়ো। বাড়ির পাশেই ছিল আম বাগান। তাঁর শৈশব ও কৈশোরের কিছু অংশ কেটেছে ওই আমবাগানে চি-বুড়ি, ডাংগুলি আর গাদন (দাঁড়িয়াবান্ধা) খেলে; তারপরে কখনও বা আম কুড়িয়ে কখনও বা দাদির কাছে গল্প শুনে সময় কেটেছে তাঁর। 

ছোটবেলার গ্রামে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশ। এই পরিবেশ গড়ে তুলেছিলেন গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় তাঁর বাবা। তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের জন্য তিনি একটি লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি ক্লাব। গ্রামের লাইব্রেরীর পাশাপাশি তাঁর বাড়িতে পারিবারিক লাইব্রেরী গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তাঁর বাবার উদ্যোগে প্রতিবছর গ্রামে রবীন্দ্র, নজরুল, সুকান্ত জন্মশতবার্ষিকী পালিত হতো; সমাজ পরিবর্তনমূলক নাটক মঞ্চস্থ হতো। গ্রামের মেয়েরা তখন নাটকে অভিনয় করতো না, ছেলেরাই মেয়ে সেজে অভিনয় করতো। প্রাইমারী স্কুলমাঠে এসবের আয়োজন হতো। তাঁর মা, আম্বিয়া বেগম আবৃত্তি করতেন। আফরোজা অদিতি তখন গান গেয়েছেন, নাটক করেছেন। বড়ো হওয়ার পরে গান-নাটক ছেড়ে দিয়েছেন।

গ্রামে যাত্রাপালা হতো।  তাঁর ছোটবেলার গ্রামে ছইঢাকা গরুর গাড়িতে গ্রামের অনেক মহিলা সিনেমা-যাত্রাপালা দেখতে যেতেন, বেড়াতে যেতেন। তাঁর মা, তাঁর ছোটবেলায় সিনেমা দেখতে যাননি কখনও; যাবার সময় পেতেন না। সারাক্ষণ সংসারের কাজ করতেন বাঁকি সময় দেশের কাজ। মানুষের বিপদে-আপদে যেমন সঙ্গী ছিলেন বাবা তেমনি ছিলেন মা; বাবা-মায়ের সঙ্গে পর-সেবায় ব্রতী তিনিও ছিলেন। ছোটবেলার গ্রাম ছিল আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ। এর বিপদ ওর বিপদ সকলেই নিজের মনে করে ঝাঁপিয়ে পড়তো। কৃষকনেতা ছিলেন তাঁর বাবা কমরেড আলাউদ্দিন আহমেদ। মা, আম্বিয়া বেগমও রাজনীতি করতেন। তাঁরা ছিলেন মজলুম জননেতা  মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অনুসারী। মওলানা ভাসানী সাহেব তো আসতেনই আবার যখনই যেখান থেকে ডাক দিয়েছেন সেখানেই চলে যেতেন তাঁর বাবা ও মা দুজনেই। তাঁর দাদা ছিলেন কট্টর ধার্মিক। শরিয়তমতে মুরগী জবাই না হলে গলার হাড়ের সাদা সরু সুতার মতো রগ বের না করলে সেই মাংস খেতেন না তিনি। ইলিশ মাছেরও কিছু কিছু অংশ না ফেললে খেতেন না তিনি। তাঁর ছোটবেলাতে ধর্ম এবং রাজনীতি দুটোরই অবস্থান ছিল পাশাপাশি। বাড়ি বা গ্রামের পরিবেশ ধর্ম ও রাজনীতি পাশাপাশি চললেও তাঁর চলাফেরা লেখাপড়ায় কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ধর্ম বা রাজনীতি।

তাঁর বাবা লেখাপড়া শেষে প্রধানশিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন স্কুলে। রাজনীতির কারণে পাকিস্তান সরকারের আমলে বাবা সে চাকরি করতে পারেননি। এরপর  ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেণ্ট (চেয়ারম্যান) হয়েছিলেন, সেটিও থাকেনি। এর বদলে ‘রাষ্ট্রদূতের’ অফার দিয়েছিলেন পাকিস্তান সরকার কিন্তু তিনি সে প্রস্তাব গ্রহন না করে সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তাঁর বাবা ;বাবার বেশিরভাগ সময় কেটেছে হুলিয়া মাথায় নিয়ে। আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর বাবা দেশ ও দশের কাজে ব্যস্ত থাকলেও সময় বের করে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কাটাতেন। লেখাপড়ার খোঁজখবর করতেন। অসুস্থ হলে কখনও অবহেলা করেননি। তাঁর মা, বাবাকে সহযোগিতা করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদেরও বড় করে তুলেছেন। বাবার রাজনীতির কারণে প্রায়ই বাড়িতে পুলিশি ঘেরাও হতো; শুধু বাবার জন্য নয় তাঁর বাবার রাজনৈতিক-সহকর্মীদের জন্যেও পুলিশি ঘেরাও হতো।

শৈশব পেরিয়ে কৈশোর। পাবনা সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে ক্লাস সিক্সে ভর্ত্তি হন। ১৯৬৭ সালে ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাশ করেন ওই স্কুল থেকেই। ম্যাট্রিক পাশ করার পর পাবনা মহিলা কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬৯ সালে এইচএসসি পাশ করেন। তারপর যুদ্ধ এবং পারিপার্শিক কারণে লেখাপড়া বন্ধ থাকার পরে ১৯৭৬ সালে ড্রিগ্রি পাশ করেন পাবনা মহিলা কলেজ থেকে। তাঁর শৈশব কৈশোর ছিল নানান ঘটনায় ভরপুর। শিক্ষা আন্দোলন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। তিনি রাজনীতি না করলেও শিক্ষা আন্দোলনের সময় মিটিং-মিছিলে যোগ দিয়েছেন; এরপর এলো গণআন্দোলনের কাল। ১৯৬৯ সালে শাহপুরে বৃহৎ কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৮-১৯৬৯ এর গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন প্রেসিডেণ্ট আইয়ুব খান। নতুন প্রেসিডেণ্ট হলেন ইয়াহিয়া খান। তখন সামরিক শাসন চলছে। সেই  সামরিক শাসনের মধ্যেই তাঁদের গ্রামে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিল ঐ সম্মেলনে; ঐ সম্মেলন ‘লালটুপি’ সম্মেলন নামে খ্যাত। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ঐ সম্মেলনের আহ্বায়ক ছিলেন তাঁর বাবা, কৃষকনেতা আলাউদ্দিন আহমেদ। খোলা চত্বরে সম্মেলন করার অনুমতি না থাকায় পুরো এলাকা পাটখড়ি দিয়ে ঘিরে দেওয়ার কথা সরকার থেকে বললে গ্রামের মানুষদের সহযোগিতা ঘিরে দিয়েছিলেন। সম্মেলনের আগে ও সম্মেলনের সময়ে  ওই স্থানে ছিল হেলিকপ্টারের চক্কর। এই সম্মেলনে শুধু পাকিস্তান সরকার নয় কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠনও বিরোধিতা করেছিল। এই সম্মেলনে দেশের সব অঞ্চল থেকেই কৃষকনেতা-কর্মীরা নয় যোগ দিয়েছিল কবি,গায়ক,গীতিকার, সাহিত্যিকসহ লক্ষাধিক মানুষ। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে মিছিল করে এসেছিলেন অনেকে, অনেকে এসেছিলেন ট্রেনে। তাঁদের মাথায় ছিল লাল টুপি আর হাতে ছিল বাঁশের লাঠি। শ্লোগান ছিল ‘শ্রমিক কৃষক অস্ত্র ধরো- পূর্ব বাংলা স্বাধীন করো’, ‘জনগণতন্ত্র কায়েম করো’, ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’, ‘সামরিক আইন মানি না, মানি না’সহ নানা শ্লোগানে মুখর হয়েছিল সম্মেলন প্রাঙ্গন। এই সম্মেলনের প্রস্তুতির জন্য কয়েকদিন আগেই মওলানা ভাসানী এসেছিলেন তাঁদের  গ্রামের বাড়িতে। খুব কাছ থেকে তাঁকে দেখেছেন তিনি। নিরহংকার, নিরলস, নির্ভীক মানুষ ছিলেন তিনি। গ্রামের মানুষ এবং তাঁর বাবা-মা খুব যত্ন সহকারে সম্মানের সঙ্গে রেখেছিলেন মওলানাকে। তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল তাঁদের বাড়িতে। এই সম্মেলনে নারী কৃষককর্মীরাও যোগ দিয়েছিলেন। তাদের সংগঠিত করার দায়িত্ব পড়েছিল কমরেড আম্বিয়া এবং কমরেড মনিকা মতিনের ওপর। সম্মেলনে তাঁর মা, আম্বিয়া বেগম ও মনিকা মতিন নিজেদের যোগ্যতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। বয়স কম এবং কিছুটা অসুস্থ থাকলেও ঐ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। 

তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না কখনও। তিনি রাজনীতি করেন তা চেয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা, চেয়েছিলেন পার্টির অন্য নেতা-কর্মীরাও; তখন পার্টির সিদ্ধান্তের ওপরই কর্মী ও তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নির্ভর করতো; পার্টির নির্দেশে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য ‘নয় বছর’ বয়সে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন ‘ছোটদের রাজনীতি’ বইটি। ওই বয়সে বইটি পড়তে তাঁর ভালো লাগেনি। তাছাড়া ঐ বয়সেই তিনি মনে করতেন রাজনীতি যেমন দেশ-দশের কল্যাণ আনতে পারে তেমনি লেখালেখির মাধ্যমেও দেশ-দশের কল্যাণ আনা সম্ভব। রাজনীতি করার চেয়ে লেখালেখিই পছন্দ করতেন বেশি। বাড়িতে পার্টির কর্মীদের আনাগোনা লেগেই থাকতো সবসময়। মাঝেমধ্যে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা শহর থেকে নেতারা আসতেন। তিনি ছোটবেলায় দেখেছেন দেবেন শিকদার, সুখেন্দু দসিÍদার, হায়দর আকবর খান রণো, ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক, ইন্দু সাহা, মোহাম্মদ তোয়াহাসহ আরও অনেক রাজনীতিবিদদের, দেখেছেন টিভি ব্যক্তিত্ব ফজলে লোহানী ও তাঁর স্ত্রী এলিজাবেদ লোহানীকৈ।  আবদুল মতিন (ভাষা মতিন) স্কুল ছুটি হলে মাঝেমধ্যে বাবার সঙ্গে পাবনা থেকে আনতেও যেতেন। পাবনাতে কমরেড সেলিনা বানুর বাবার বাসাতে জায়গীর থাকতেন (এটাও ছিল পার্টির স্দ্ধিান্ত)। তাঁর বাবা কৃষকদের উন্নতির জন্য লড়াই করেছেন। সব সময়ই দরিদ্র নিপীড়িত মানুষের কথাই ভেবেছেন, তাদের ভালো রাখার নিমিত্তে শরিক হয়েছেন আন্দোলনে। গ্রামের কৃষকদের ওপর যখন অত্যাচার করতো জোতদাররা- যেমন গরু খোঁয়াড়ে দেওয়া, জমি কেড়ে নেওয়া, বর্গা চাষীর ন্যায্য ভাগ না দেওয়া তখন তারা আসতো বাড়িতে, বলতো বাবার কাছে তখন সাধ্যমতো সেই জোতদারের কাছ থেকে তা আদায় করে দেওয়া ছিল তাঁর লক্ষ্য। এজন্য তো একবার এক জোতদার মামলা করে দিলো গ্রামের বাবার সমর্থকদের নামে। এই মামলায় বাবার শিক্ষক জামাই-ও বাদ পড়েনি। জেল হয়েছিল তাঁর। পরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ এর ৩০ মার্চ জেল ভেঙে যখন কয়েদিরা বের হয় তখন তিনিও বের হন এবং যুদ্ধে যোগ দেন এবং নিহত হন।

কৈশোরেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। গ্রামের মানুষ তৈরি ছিল পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। অনেকদিন গ্রামবাসীরা ঠেকিয়ে রেখেছিল পাকি-মিলিটারীদের। ঈশ্বরদী যখন মিলিটারী দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন চাচি, মামি তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়ি কিছুদিন ছিলেন। মাঝে মধ্যে শহর থেকে আরও অনেকে আসতেন। অনেক অনেক রুটি বানাতে হতো, ভাত রান্না করতে হতো। রান্নাঘরের ছোট চুলাতে রান্না ঠিকঠাক হয়ে উঠতো না,  বড়ো হাড়ির জন্য বাইরে বড়ো মাটির চুলা বানাতে হয়েছিল। মাঝে মাঝে আটা না থাকলে গম পিষতে হতো; কারণ মাঝে মাঝেই আটা ভাঙানোর কল বন্ধ থাকতো তাঁকে। গ্রামের পুরুষরা তো বটেই মেয়েদের অনেকেই তখন সাহায্য করেছেন তাঁদের। গ্রামের দরিদ্রজনেরা একজোট হয়েই থেকেছে তখন। কখনও হয়তো বা কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া হয়েছে। গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে বিশাল ডিশের মধ্যে কাঁঠাল-কোয়া তুলে লেবুর রস দিয়ে খেয়েছে সকলে।  মসুর সিদ্ধ করে খেয়ে দিন গেছে তখন। একাত্তর চলছিল এভাবে। আত্মীয় স্বজন অনেকেই একাত্তরে নিহত হয়েছে।

একদিন তাঁদের গ্রামে মিলিটারী এসেছে। বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ হচ্ছে। তাঁদের বাঁশবাগানে গুলি এসে পড়লে তাঁর মা, তাঁর মামির সঙ্গে তাঁদের গ্রামের অপরপ্রান্তে পাঠিয়ে দেন। তাঁর মেয়ে তখন কেবল হাঁটি হাঁটি পা পা। সারাদিন ওকে কোলে নিয়ে গ্রাম থেকে দূরে একটা পাটক্ষেতের হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়েছিলেন; বিকেলে মিলিটারি চলে যাওয়ার খবর পেয়ে বাড়ি ফিরে এসে দেখেন পুড়িয়ে দিয়েছে বাড়ি, লুঠ হয়েছে বাড়ি। বাড়ির সঙ্গে পুড়ে গেছে আসবাবপত্র, পুড়ে গেছে পারিবারিক লাইব্রেরীর সব মূল্যবান বই আর তাঁর বাবার লেখা ও রাজনৈতিক দলিলগুলো; পুড়ে গেছে তাঁর লেখা, ছোটবেলার আঁকা ছবি আর পঞ্চকবির গানের সংগ্রহ। সেদিনের পরে  গ্রামেও বিপদ দেখে ঈশ্বরদীতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে চাচি চলে গেলেন ঈশ্বরদী, রয়ে গেলেন মামি। কয়েকদিন পরে, মামির সঙ্গে চলে গেলেন অন্যগ্রামে; যেতে যেতে অনেক অভিজ্ঞতা। যখন তাঁরা রওয়ানা হয়েছিলেন তখন পথে অনেক মানুষ। নারীদের কোলে-কাঁখে ছোট বাচ্চা আর হাতে ধরে তার চেয়ে বড় বাচ্চা। নারী পুরুষ সব একত্রে হাঁটছে। গরীব ধনী বলে কোন বাছ-বিচার ছিল না তখন। শুধু মানুষ নয়, মানুষের সঙ্গে আছে তাদের গরু ছাগল। রাস্তায় তখন অনেক কুকুর ছিল। পাশ দিয়ে যাচ্ছে গরু-ছাগল-কুকুর। গরু আর কুকুরে ছিল তাঁর ভয়। ঐ দিন হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছলেন একবাড়িতে; সেখান থেকে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের পর পৌঁছলেন শ্বশুরবাড়ি।

চাকরি ও লেখক জীবন

১৯৭৭ সালের জানুয়ারীতে পূবালী ব্যাংককে যোগ দেন এবং ২০১০ সালে অবসরে যান। ব্যাংকে কাজের কোন বাঁধা-ধরা সময় না থাকায় এবং দুপুরে খাওয়ার সময় ছিল মাত্র ১৫ মিনিট এবং সবাই একসঙ্গে খেতে যেতে পারতেন না; একজন খেলে অন্যজনকে কাজ সামলাতে হতো তাঁদের। কখনও কখনও ক্লিনক্যাশ (দিনশেষের হিসাব)  না মিললে রাত আটটা-নয়টা পর্যন্ত থাকতেও হতো। তখনও ব্যাংক কম্পিউটারাইজড  হয়নি; তখন ব্যাংকের কাজ ছিল ম্যানুয়ালি! সময় এগিয়েছে, ব্যাংক কম্পিউটারাইজ্ড হয়েছে, সরকারি থেকে বেসরকারি (লিমিটেড) হয়েছে। কম্পিউটারাইজ্ড  হওয়ায় কাজের গতি বেড়েছে; কমসময়ে বেশি কাজ করতে পারছে ব্যাংকারগণ; ম্যানুয়াল হোক আর কম্পিউটারাইজ্ড  হোক ব্যাংকিং হ্যাপা সামলানো সবসময়ই কঠিন! তবুও ব্যাংককে কাজ করে লেখা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। অনেকেই বলেন অর্থ নাড়াচাড়া করলে অর্থাৎ ব্যাংকে চাকরি করলে মানবোচিত বোধ নষ্ট হয়ে যায় ব্যাংকারদের, কিন্তু তিনি তা মনে করেন না! যাদের মন থাকে তাঁদের মানবিকতা বোধও থাকে। আর লেখালেখি; তিনি মনে করেন যারা লেখার নেশায় থাকেন, তারা ব্যাংকে নয় যে কোন স্থানে চাকরি করলেই লিখতে পারেন! তাছাড়া পেটে ভাত না থাকলে কলমের ডগায় কোন শব্দ আসে না, সৃষ্টি হয় না কোন সাহিত্য।

তাঁর মায়ের একা চাকরিতে সকলকে নিয়ে খেয়ে-পরে বাঁচা খুব কষ্টকর হয়ে উঠেছিল তাই সংসারের প্রয়োজনে ৩০০/- বেতনে ব্যাংকে টাইপিস্ট হিসেবে জয়েন করেন; যখন ব্যাংকে জয়েন করেন তখন টাইপরাইটারে চিঠিপত্র লেখার কাজ হতো। সারাদিন ব্যাংকের কাজ করে লেখালেখি করতেন রাতে। তিনি রাজনীতি না করলেও পূবালী ব্যাংক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ইংরেজিতে কখনও ব্যাংকের কোন চিঠি বা কোন নোট লিখতে চাইতেন না; এইজন্য অনেকসময় সুপিয়রের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন; শাস্তিও পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর সেই এককথা, এ দেশ বাংলাদেশ আমরা বাঙালি, আমাদের কাজ হবে বাংলায়। পূবালী ব্যাংক কর্মচারী ইউনিয়ন থেকে সাংস্কৃতি উৎসব হতো, পত্রিকা বের হতো, লেখার প্রতিযোগিতা হতো; তিনি ছোটবেলা থেকেই লিখতেন। ব্যাংকে জয়েন করার পর আবার  লেখার চর্চা  শুরু করেন।  ব্যাংকে ২১ শে ফেব্রুয়ারীর ওপর লেখার প্রতিযোগিতায় তিনি পুরস্কার পেয়ে আবার পরম উৎসাহে লেখালেখি শুরু করেন তিনি। কলিগদের সহযোগিতায় পুরাদমে লেখা চলতে থাকে তাঁর।  প্রদীপকাঞ্চন নামে তাঁর একজন কলিগ ছিলেন; তিনি একটি পত্রিকা বের করতেন।  ঐ পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন তিনি। টাইপিস্ট হিসেবে কাজ করতে ভালো লাগতো না তাঁর তাই অফিসার পদে পরীক্ষা দিয়ে অফিসার হন। অফিসার হওয়ার পরে কর্মচারী  ইউনিয়ন থেকে পদত্যাগ করেন। চাকরিতে জয়েন করার পর  ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে লাইব্রেরী সায়েনস-এ ভর্তি হন কিন্তু  নিয়মিত ক্লাস করতে পারেননি তাই আর পরীক্ষা দেওয়াও হয়ে ওঠেনি তাঁর।

১৯৮৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রথম কবিতা বের হয়। তখন তাঁর লেখক নাম ছিল আফরোজা বেগম।  আফরোজা বেগম নামে ১৯৮৪ সালে ‘তটিনী প্রকাশনী’ থেকে  কবিতার বই বের হয়-‘সেই মন নেই’। বইটি পাঠকপ্রিয় হয়েছিল। পাণ্ডুলিপিটি বই আকারে প্রকাশ করার দায়িত্বে ছিলেন তাঁর ছোটভাই শহীদুল হাসান স্বপন (প্রয়াত)। স্বপন নিজেও লেখালেখি করতো; তবুও কবি সমুদ্র গুপ্তকে দিয়ে পাণ্ডুলিপিটি সম্পাদনা করিয়েছিলেন; কারণ তিনি মনে করেন পাণ্ডুলিপি বই আকারে প্রকাশের আগে সম্পাদনার প্রয়োজন। বইটি প্রেমের কবিতার; তাঁর মায়ের প্রেমের কবিতা পছন্দ নয়; তাঁর মা রাজনীতি করতেন; এবং মায়ের পছন্দ ছিল সেই ধরণের লেখা। যাতে থাকবে সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্ট, অধিকারের কথা। মায়ের ইচ্ছে মতা কবিতা ছাড়াও গল্প, প্রবন্ধ বা অন্যান্য লেখাতে মনোযোগী  হলেও তিনি মনে করেন কবিতা হলো নরম প্রেমময়; ছন্দময় নূপুরের মিষ্টি ধ্বনিমুখর! গল্প, গদ্য হবে কঠিন, পাথুরে। মানব-অধিকারের কথা যে কবিতাতে লেখা যায় না তা নয়; তবে কবিতায় প্রেমই ভালো মানিয়ে যায়!

   ‘সেই মন নেই’ বের হওয়ার পর থেকে থেমে থাকেননি; দুহাতে লিখেছেন, এখনও লিখছেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাবাজার, যায় যায় দিন, মানব জমিন, ভোরের কাগজ, জনকন্ঠ,  মুক্তকন্ঠ। এ ছাড়াও দেশ-বিদেশের মাসিক, ত্রৈমাসিক, সাপ্তাহিকে লিখেছেন; লিখেছেন ছোটকাগজে; লেখা তাঁর  পেশা নয় লেখা তাঁর জীবন। লেখাকে পেশা হিসেবে কখনও নেননি, নিতে পারেননি!  তিনি অনেক নামে লিখেছেন! বারবার লেখক নাম পাল্টেছে; আফরোজা বেগম থেকে মঞ্জু আহমেদ; মঞ্জু আহমেদ থেকে আফরোজা অদিতি। এখন আফরোজা অদিতি লেখকনামেই  লিখছন। তিনি গল্প-কলাম-নারী বিষয়ক প্রবন্ধ লিখলেও কল্পনাপ্রবণ মনের চাহিদা মেটাতে প্রেমের কবিতা লিখেন, লিখেন কাল্পনিক-গল্পকথা। তাঁর প্রথম কল্পকথার গল্প ছাপা হয়  ‘দৈনিক মুক্তকন্ঠে’। ‘কি রহস্য’ (সত্য কাহিনী অবলম্বণে লেখা) নামে লেখা ছাপা হয়েছে ‘প্রিয়জন’ নামের পত্রিকায়। বিদেশের ‘আপনজন পত্রিকা’সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকাতে লেখা ছাপা হয়েছে, এখনও হচ্ছে।  বাংলা একাডেমির পত্রিকা  ‘উত্তরাধিকার’-এ কবিতা বের হয়েছে, গল্প বের হয়েছে নবারুণে, শিশু প্রত্রিকাতে গল্প বের হয়েছে তাঁর। এছাড়া সাপ্তাহিক  ছুটিসহ অনেকগুলো পত্রিকাতে লেখা ছাপা হয়েছে। এখন পত্রিকা ছাড়াও অন-লাইন পত্রিকাতে লেখালেখি করেন মাঝেমধ্যে।  তাঁর লেখার সবসময় তৃণমূল মানুষের কথাই উঠে এসেছে। লেখালেখির ক্ষেত্রে তার বাবা এবং মা উৎসাহ জুগিয়েছেন তাঁকে। ছেলেমেয়রাও কখনও তাঁর লেখার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি; তাঁদের সাহায্য সহযোগিতার হাত সব সময় বাড়িয়ে রেখেছে। তাঁর ভাই কামরুল হাসান যথেষ্ট সহযোগিতা করেন ও অন্য ভাই শহিদুল হাসান (প্রয়াত) এর হাত ধরেই বই প্রকাশের জগতে আসা। এককথায় বলতে গেলে লেখালেখির ক্ষেত্রে পরিবার থেকে কোন বাধারই সম্মুখীন হতে হয়নি। শুধু পরিবার নয় তার লেখালেখির ক্ষেত্রে বন্ধুদের অবদানও স্বীকার করেন তিনি।

তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনেক মেয়েকে শিক্ষার জন্য সহযোগিতা করেছেন, এখনও করছেন। তিনি প্রবীণ (নারী ও পুরুষ)ও শিশুদের জন্য ভালো কিছু করার জন্য সব সময় সচেষ্ট থাকেন। তিনি মনে করেন মানুষের আয়ুষ্কাল সীমিত; এই পৃথিবীর কাছে, সমাজের কাছে একজন মানুষের যে জন্ম ও শিক্ষার ঋণ আছে, তা প্রতিটি মানুষকে পরিশোধের জন্য সচেষ্ট থাকা উচিত। তিনি এ ব্যাপারে সচেষ্ট। তিনি কমরেড আলাউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার প্রবর্তন করেছেন। তটিনী নামে একটি মাসিক সাহিত্য প্রত্রিকার প্রকাশক তিনি। নিজ উদ্যোগে প্রবীণদের শীতবস্ত্র, ঈদ-পূজায় দরিদ্র প্রবীণদের কাপড় ও অন্যান্য  সাহায্য প্রদান করে থাকেন। প্রবীণদের জন্য কাজ করতে তিনি পছন্দ করেন। তিনি মনে করেন প্রবীণ সবার চোখের আলো/ প্রবীণকে সবাই বাসবে ভালো। তরুণদের সব সময় প্রবীণদের পাশে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তিনি সদস্য, বাংলা একাডেমি। অর্থ সম্পাদক, নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র। সদস্য, জাতীয় সাহিত্য পরিষদ। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভূক্ত গীতিকার।

প্রকাশিত গ্রন্থ :

কাব্যগন্থ                                                                                

১.সেই মন নেই  ২. পথের বাঁকে ৩. খুলে দেখতে বড্ড সাধ ৪. অহং ৫. নীল দ্বীপের ভালোবাসা ৬. প্রিয় কবিতা

৭. দোয়েলের শিস ৮. কি চাও হুর না মানবী ৯. গাঙচিল মন  (প্রেমের হাজার কবিতা) ১০. ভালোবাসার তানকা

১১. ভালোবাসায় অন্তরীণ (হাইকু) ১২. প্রেমের কবিতা ১৩. তর জন্যি ভালোবাসা ১৪. পংতিয়া (হিন্দি কবিতা)

১৫. নির্বাচিত কবিতা ১৬. ভিন্ন প্রকরণে কবিতা : মুহূর্তকাব্য (হাইকু) ১৭. দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য কাব্যগ্রন্থ : ইচ্ছার ডানা।             

গল্পগ্রন্থ

১.স্বাধীনতার সন্তান ২. বিপরীত পৃথিবী ৩. অন্যজগতের চিঠি(প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণ) ৪. বিশ্বাস কাঁদে বুকের ভেতর

৫. জীবনের পায়ে পায়ে  ৬. বাউরা ৭. নির্বাচিত গল্প ৮. একটি মৃত্যু বৃষ্টি ও স্মরণসভা ৯. বাছাই গল্প ১০. শূন্যতার ভেতর উত্থান ১১. আকাশ ও স্¦াতী নক্ষত্র

জীবনী

১.ইসলামের ইতিহাসে মহীয়সী নারী

প্রবন্ধ

১. যাপিত জীবনে নারী ২. প্রবীণকথা ও জীবানাচার

উপন্যাস

১.টু ফর জয় ২. চন্দনের গন্ধ ৩. দুই জীবনের গল্প ৪. তিনটি উপন্যাস ৫. জ জীবন

শিশুতোষ

১.ছায়াভূত ২. ছড়ায় ছড়ায় পড়া বারো মাসের ছড়া ৩. টুনির পড়া টুনির ছড়া ৪. একই সমান্তরালে (উপন্যাস) ৫. নাম হলো ওর ঝ্যাং ৬. ফুলকুমারী (অনুবাদ) ৭. নিলেশের অন্য ভূবন (উপন্যাস) ৮. মা আমার দেশ (কবিতা)

সম্পাদনা

১.দুই বাংলার আবৃত্তিযোগ্য কবিতা ২. কমরেড আলাউদ্দিন সমগ্র ৩. ছোট বড় আবৃত্তিকোষ

যৌথ কবিতা

১.দ্বিবীজপত্রী কাব্য ২. আমাদের কবিতা ৩. তিন প্রজন্মের কবিতা

অন্যান্য

পরমকথা : [১. নারী ২. শিশু ৩. মা ৪. ভালোবাসা ]

পুরস্কার ও সম্মাননা

 তিনি তাঁর সাহিত্য কর্মের জন্য বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। ঈশ^রদী সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ (১৯৯৮), আলম সাহিত্য একাডেমী (২০০০),নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র (২০০১), কবি কামিনী রায় সাহিত্য পুরস্কার(২০০২), কবি জীবননান্দ দাশ সাহিত্য পুরস্কার(২০০২), প্রিয়তমেষু পুরস্কার(২০০২), কবি সুকান্ত সাহিত্য পরিষদ (২০০২), নোঙর সাহিত্য পুরস্কার (২০০৪), আশরাফ সিদ্দিকী ও সাঈদা সিদ্দিকী ফাউন্ডেশন পদক (২০০৮), কপোতাক্ষ সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (২০০৮) জাতীয় সাহিত্য পরিষদ (২০১০), বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র (২০১৪), বিশ্ব কবি মঞ্চ (২০১৭), বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটি উল্লেখযোগ্য। তিনি বিশ্বাস করেন কোন একটি পুরস্কার বা সম্মাননা তার কাজের ক্ষেত্রে দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়।

সম্পাদিত পত্রিকা : মাসিক তটিনী, ২০০৫ সাল (প্রথমে ভাঁজপত্র পরে লিটলম্যাগ)।

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড : সদস্য, বাংলা একাডেমি। অর্থ সম্পাদক, নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র।

সদস্য,জাতীয় সাহিত্য পরিষদ।

বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভূক্ত গীতিকার।

সামাজিক কর্মকাণ্ড :প্রবীণদের শতিবস্ত্র, শাড়ি, ওষুধ ও অন্যান্য সহায্য প্রদান

বিভিন্ন পাঠাগারে বিনামূল্যে বই প্রদান ; কমরেড আলাউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার প্রবর্তন।

দেশ ভ্রমণ : তিনি কোলকাতা, শিলচর,দীল্লি, অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করেছেন। দেশের মধ্যে সাংগঠিক কাজে কুষ্টিয়া,  সিলেট, খুলনা, দিনাজপুর, লক্ষীপুর গিয়েছেন। 

 

লেখক ও সংগঠক



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top