সিডনী মঙ্গলবার, ২১শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

চোরাবালি (শেষ পর্ব) : দীলতাজ রহমান


প্রকাশিত:
২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:২১

আপডেট:
১৮ মে ২০২০ ২২:৫৭

 

রামপুরায় আমাদের নিজেদের বাড়ি। ভাইয়া এখনো সেই বাড়িতেই আছে। মা মারা যাওয়ার পর ভাইয়া মুশফিকের সঙ্গে বোঝাপড়া করে আমার ভাগের সব অংশ বুঝিয়ে দিয়েছে। কম দিলে মুশফিক যে তাকে ছেড়ে কথা বলতো না। এতেই বুঝি ভাইয়া আমাকে ঠকায়নি। সংসারে ঢুকে প্রতিটি বিষয়ে মুশফিকের টানটান হিসেবি মনের উঁকি আমাকে ওর প্রতি সব বিষয়ে আগ্রহ ক্রমে কমিয়ে দিয়েছে।  আর সেই ফাঁকটুকুতে বুঝি উজ্জ্বল হতে থাকে আরেকজনের মুখচ্ছবি। তারই প্রভাবে হয়তো আমি আমার প্রতি অমোঘ করে তুলতে চাইনি মুশফিকের কোনো ধরণের দাবি, বিশ^াস বা সহৃদয়তা।

সেদিন নদীভাসা আমেজ না কাটতেই বিস্বাদ উগরাতে লেগেছিলো মুশফিক। ভাইয়াকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে বলেছিলো, ‘তোমরা যদি সম্বন্ধটা করতে চাও, দেরি করা চলবে না।’ উত্তরে ভাইয়া বলেছিলো, দেরি তো তোমরা করছো, মা তো চাইছেই মৌলির বিয়েটা তাড়াতাড়ি হোক এবং তোমার সাথে হোক!’

মুশফিকের হঠাৎ ক্ষিপ্র হয়ে ওঠার কারণ এহসান ভাই। যে ওর সঙ্গে আমার বিয়েটা ঠিক করে দিয়েছিলো। আমাকে নিয়ে এহসান ভাইয়ের আগ্রহটা কখনো মুশফিকের ভালোলাগেনি। এই ভালো না লাগাটুকু আজো আমার কাছে মহার্ঘ্য হয়ে থাকতে পারতো, যদি সেদিন ওর এতটুকুু অধিকারবোধের প্রকাশ দেখতাম। তাহলে নৈমিত্তিক এই সম্পর্কটিই আজ অন্যরকম করেও তুলতে পারতাম।  টানাপোড়েনের সেই সময়ে একদিন হন্তদন্ত অবস্থায় ছুটে এসে এহসান, ভাইয়াকে বলেছিলো-মুশফিকের সঙ্গে মৌলির বিয়েটা ভেঙে দিলে তোদের কি খুব অসুবিধা হবে...?

ভাইয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই মা ভেতর থেকে এসে ভাইয়ার দিকে গলা বাড়িয়ে বলেছিলেন-‘আমি আগেই বলেছিলাম, মৌলিকে তোমরা তোমাদের সঙ্গে নিয়ো না! এ নিয়ে কথা হবে। তাছাড়া মানুষের মন... না, না এহসানের চেয়ে মুশফিক অনেক ভালো। এহসান এখনও ঢাকায় এককাঠা জমি কিনতে পারেনি। চাকারিটাই যা সম্বল! অথচ মুশফিকদের সব শহুরে। বাড়ি-গাড়ি, স্ট্যাটাস সব আছে! আমার মনে হচ্ছে, ওরই মনে ধরে গেছে মৌলিকে। মৌলি লেখাপড়ায় গড়পড়তা হলেও দেখতে তো ভালো। শান্তশিষ্ট। বাবার সম্পত্তি যা পাবে, তা এহসানের জন্য অনেক! না, না, আত্মীয় স্বজনের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে এ বিয়ে ভেঙে দিলে। জামাই হিসেবে সবাই মুশফিককে পছন্দও করেছে।’

এইরকম সাদামাটা একরৈখিক বিষয়ের বাইরে আমার মা ভাবতে শেখেননি বলে, মা আমাদের কাছে সারাজীবন তেমন একটা সম্মান পেয়ে যাননি।

ভাইয়া তখনি মাকে ধমকের সুরে বুঝিয়েছিলো, এহসানকে আমি জানি মা। ওর আত্মসম্মানবোধটা কতটা প্রখর, তাও আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। ও যদি নিজের জন্য বলে থাকে, তবে তা তোমার মেয়েকে উদ্ধার করতেই বলেছে। দেখছো না মুশফিকরা কতদিন ধরে ধীরেসুস্থে সময় নিলো পুরোপুরি মত দিতে? এতদিন বাজিয়ে দেখলো, মৌলি কতটা নিয়ে ওদের ঘরে ঢুকতে পারবে। বাবা কোথায় কী রেখে গেছেন সব জেনে নিয়েছে। এখন হিসেব পুরে গেছে বলেই অন্য পাত্রকে ঠেকাতে চাইছে। আর মৌলির মতো মেয়ে খুঁজে পাওয়াও তো সহজ নয়! নিশ্চয় মৌলির সম্মানে লাগে এমন কিছু ওরা কেউ বলেছে। আর এহসান হয়তো তাই জানতে পেরেছে। তাই ও এসেছে তোমার মেয়েকে উদ্ধার করে নিজে বলি হতে। কারণ এমন অবস্থায় যে এগিয়ে আসে তার সম্মানটা দশজনের কাছে বাড়ে না।

মা’র চুপসে থাকো অবস্থার সুযোগ নিয়ে ভাইয়া একচোট যা ঝাড়লো, তাতে আমার দশা হযবরল হয়ে গেলো। ক’রাত ঘুমুতে পারিনি। ভেবেছিলাম এহসান ভাই আবার এলে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জানতে চাইবো- বলো, আমি তোমার কতটুকু সুখ? নাকি শুধু চ্যালেঞ্জে জিততে চাও? শুধু জিততে চাইলেও তোমাকে আমি কারো কাছে হারতে দেবো না!’

কিন্তু সে আর আসেনি। তাকে শুনিয়ে মায়ের বলা কথাগুলো মনে পড়ে, মেসে খোঁজ নেবো নেবো করেও নেয়ার সাহস হয়নি। তাছাড়া আমাকে কেন্দ্র করে দু’জনের কারো সঙ্গেই তো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। দু’জনই তারা ভাইয়ের বন্ধু।

সেইদিন তো আমি নৌকায় বসে মুশফিকের মনোযোগই চেয়েছিলাম! ভেবেছিলাম, ও আমার কাছে আসার ছুঁতো খুঁজবে। ইচ্ছে করে ভুলে ভুলে আঙুল ছোঁবে। ফেরার পথে আমরা তিনজন একসঙ্গে ট্যাক্সিতে ফিরতে পারতাম। মুশফিক আগেই নেমে যেতে পারতো, যেহেতু ওদের বাড়ি আগে। বাসাবো। সেই মুশফিকের একগুয়ে অনুদার মনোবৃত্তির কাছে আমার আমিত্বটুকু ভাস্বর করে না রাখতে পারলেও, বিলীন যে করে ফেলিনি, তাই বুঝি, সুখের জন্য কারো কাছেই আমার হাপিত্যেশ নেই বলে।

বিয়েটা হয়ে গিয়েছিল এক সপ্তাহের মধ্যে। হঠাৎ সৃষ্ট হওয়া একটা শূন্যতা নিয়েই আমি একটা ভরা সংসারে ঢুকলাম। কী নেই মুশফিকদের বাড়ি? সারাদিন সবার মন রক্ষা করতে আর নিজেকে রকমারি গহনায় সাজিয়ে রাখতে সময় পার হয়ে যায়। আর্ট-কালচারের পরিপূর্ণ আবহে আমি মানুষ। গহনাপত্র-আসবাব, বাড়ি-গাড়ি, মোটকথা প্রাচুর্যের ভেতর থেকেও কখনও আমাদের কাছে প্রাণের কোলাহলের চেয়ে অর্থের প্রাচুর্য গুরুত্ব পায়নি। এখানে এসে প্রতিদিন ক্লাসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হতে হতে ছাত্রীর আমেজটি আমার মন থেকে মুছে গেলো। এ বাড়ির বউয়েরা চাকরি করতে পারবে না। কারণ অর্থের প্রয়োজন নেই। মুশফিকের মা’ও শিক্ষিত-বনেদি ঘরের মেয়ে। দশ ভরি ওজনের সোনা পরে সারাদিন নুন-তেলের হিসেব কষেই দিন পার করেন নির্বিঘ্নে।

আবার অন্ধকার আলো করে তৃপ্ত মুখে ঘুম থেকে ওঠেন। যেন এর বাইরে একটা মানুষের আর কোনো কিছুই করার নেই। খবরের কাগজগুলোও সব বাড়ির পুরুষ-মানুষদের দখলে। বাড়ির আরো তিনটি বউয়ের সঙ্গে কাজের লোক নিয়ে আমারও সংসারের জোয়াল টানতে হয় ঘুমোতে যাবার আগপর্যন্ত। সংসারের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে জীবনের মণি-মুক্তা সব অলক্ষে ফুরিয়ে যায়। মা’র কাছে যেতে দেরি হলে মা’ই চলে আসতেন। এখনো ভাইয়া ভাবী বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার দিনগুলো ছাড়াও আসে। আমিও যাই না, তা নয়। এখনো এহসান ভাইকে নিয়ে মুশফিকের তাচ্ছিল্যপূর্ণ কথাবার্তা এমন হয় যে, তা এমন ক্ষীণ নয় যে এড়িয়ে যাওয়া যায়। আবার এমন জোরালো নয় যে একদিন গলদ ভেঙে হেস্থনেস্থ করি। তবে একটা বিষয় লক্ষ করেছি, এহসান ভাইয়ের নামটি উচ্চরণ করতে মুশফিকের কণ্ঠ ফোটে না। আর সেটুকুতে ভর করে আমারও একটা শক্তি জমতে থাকে। ধুলোবালির মতো স¥ৃতিগুলো ক্রমে মণি-রত্নের মতো দামি হয়ে ওঠে। প্রতি মুহূর্তে যেন তা জীবনকে আরো তেজী, আরো গূঢ় করে তোলে।

তিনদিন হলো মুশফিক অফিসিয়াল ট্যুরে দিল্লি গেছে এক সপ্তাহের জন্য। এরকম ট্যুরে সে আগেও একা বহুবার বহু দেশে গেছে। কিন্তু তখন একান্নবর্তী পরিবারে ছিলাম। মাসখানেক হলো আমরা আলাদা ফ্ল্যাটে উঠেছি। তূর্য্য’র এখন অনেক বন্ধু জুটে গেছে। সারাদিন সে লেখাপড়া, স্কুল আর বন্ধুদের নিয়ে হৈচৈ-এ মেতে থাকে। ছেলেটা দেখতে যেমন বাবার মতো, স্বভাবেও। একরোখা কিন্তু তৎপর। যেকোনো কাজেই নিজেকে একাই এক’শ মনে করে। তাছাড়া ছেলে যত বড় হয়, তত বাইরের দিকে ধাবিত হয়। মেয়ে বড় হলে ক্রমে হতে হয় ঘরমুখো। এ আমার মায়ের দর্শন। মা উঠতে বসতে এভাবে বলে বলে অবদমিত করে দিয়েছিলেন আমার বলয় ভাঙার তেজ। না হলে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েও কেন এমএ পরীক্ষা দেয়ার চেষ্টা করলাম না! কেন জীবন ছেঁকে অমৃত পরের জন্য বিলিয়ে, আকণ্ঠ গরলে নিজে ডুবে থাকি!

সহসা পেঁচানো সুতোর ঘুড়ির মতো মনে কার দমকা বাতাস হয়ে আসার সাধ লাগে। সেদিন যার সব গ্লানি ধুয়ে দিতে পারিনি, তারই টানে বাতাস এসে দরজা-জানলার পর্দায় ফরফর শব্দ তুলে কী এক মিশ্র আবহ তৈরি করে। আমি মনের এ বিভ্রমকে আজ আর কোনো যুক্তি দিয়ে ঢেকে রাখতে চাইনি। শুরুতে পারিনি নিজের কোনো একটি ইচ্ছেকেও প্রাধান্য দিতে। আজ ভূমিকার গৌণ অধ্যায়টি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছি। সেদিন যে দূরদর্শিতা দিয়ে আমার প্রতি ঘটা নিরন্তর নীরব এই নিগ্রহকে আঁচ করতে পেরেছিলো। প্রাণপণ চেষ্টায় উদ্ধারও করতে চেয়েছিলো, আমি সেই তার সাথে সারাজীবন এতটুকু যোগাযোগও না করে, তাকে বিচ্ছিন্ন রেখে দিয়েছি কার ভয়ে?

এহসান ভাই সরাসরি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে হয়তো তার সঙ্গে আমি চলে যেতাম না। নাকি যেতাম? জানি না গেলে সে জীবন কেমন হতো? তবে অনেকেই তো জানে, কেন এহসান এ বড়িতে আসে না। আমারও কেন মুশফিকের সব বন্ধুর বড়ি যাওয়া নিষেধ!

যা ঘটেনি, ভরা দুপুরে একার  উদ্বেলিত সময়ে তারই পরিণতি দেখতে চেয়ে মুশফিকের সবগুলো ডায়রি খুলে এলোমেলোভাবে একটি নাম্বার আমি খুঁজতে থাকি। পেয়ে যাবোই এমন উত্তেজনায় দম আটকে আসার উপক্রম হলো। তাই পেলাম যখন, লম্বা করে আবার দম টেনে নিলাম। আঁচলে মুছে নিলাম কপালজর্জরিত উষ্ণঘাম। বাইরে ঝাঁ ঝাঁ রোদ। তার ঝাপটা দেয়ালেও গড়াচ্ছে। আর সবকিছু ছাপিয়ে টের পাচ্ছি, প্রবল ডানায় নেমে আসছে আমার আরেকটি পৃথিবী। উত্তেজনায় দরদর করে ঘামছি আমি। বহুদিনের নীরব আচ্ছন্নতা সহসা আমাকে কেমন মুখর করে তুললো। মনে মনে সব রঙের শাড়িতে আমি বারবার নিজেকে সাজাই। কোন রঙটি তার প্রিয় ভেবে। যেন এক্ষুনি জানা হয়ে যাবে, সেইদিন সে কোন রঙের শাড়ি পরতে বলেছিলো। মনে হচ্ছে, বহু পথ পাড়ি দিয়ে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি, যেন সবুজ পাহাড় থেকে ঝর্না ছুটে আসছে আমার দিকে। তৃষ্ণার্ত আমি মুগ্ধ সে নৈসর্গিক সৌন্দর্যে। আমি ইচ্ছে করলেই ডুব দিতে পারি পাহাড়ের পাদদেশের বিশাল সরোবরে। আবার ভেসে উঠতে পারি উন্মুক্ত আকাশের দিকে। নিরুদ্দেশ থেকে ছুটে আসা প্রখর জলকে আমি দু’হাতে ছিটাতে পরি অন্যবাড়ির সার্সিতে। তারপর প্রিয় আস্তিনে মুছে নিতে পারি আমার ভেজা করতল। মুখ...

পৃথিবীর সব সুন্দরতায় আজ আমার দর্পিত অধিকার...। কাতর চোখে যে আমার মেরুনরঙা টেলিফোন সেটটির বাটনে উঁকি মারছে, আমি তার দৃষ্টি বেয়ে মনের ঘরের চালে তুমুল বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারি। তার নির্জনতাকে ল-ভ- করে, ব্যস্ততাকে অবিন্যস্ত করে তাকে নিয়ে মেতে উঠতে পারি এখন ঘুর্ণি হাওয়ার মতো।

মুশফিকের লেখা, ডায়রির নাম্বারের সঙ্গে মিলিয়ে একটা একটা করে বাটন টিপে বরফের মতো জমতে থাকি। টেলিফোন বাজছে। থেমে যাওয়ার ঠিক আগে এসে যে ধরলো, তার কণ্ঠস্বর আমার চেনা। তবে বাড়তি গাম্ভীর্যটুকুও শ্রুতি এড়ালো না। কিন্তু আমি ঢেলে পড়া উচ্ছ্বাসে বললাম, আমি! আমি মৌলি বলছি! আপনি ভালো আছেন?

-হ্যাঁ ভালো আছি! তুমি?

কণ্ঠে কোনো বিস্ময় নেই, বেদনা নেই! হঠাৎ আসা বৃষ্টির ঝাপটার জানালা দরজার কপাটের মতো তুমুল দরদরে হওয়া দূরে থাক, কণ্ঠে নেই ওর এতটুকুু শিশিরে আর্দ্রতার আভাসও। কিন্তু আমার কণ্ঠনালী চেপে রাখে একটিমাত্র অস্ফূট প্রশ্ন-কেন তুমি ভালো আছো? কেন ভালো তুমি, আমাকে ভালো থাকতে না দিয়ে? এত বছর পর এইমাত্র বুঝলাম, এহসানকে আমার বলার মতো কোনো বিষয়ই ছিলো না।

ওপাশ থেকে একের পর এক আমি ওর নিঃশ^াসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু বুঝতে পারছি ওরও বলার আর কোনো কথা নেই। কিন্তু এ নীরবতা অসহ্য। অথবা অসহ্য প্রশান্তির! তাই অনন্তকাল আমি এভাবে রিসিভারটি ধরে রাখতে চাই। অপূর্ণতার এ জেরটুকু ছাড়া জীবন বড় ঠুনকো! সমস্ত চেতনা লুপ্ত হয়ে এলেও পূর্ণতার এটুকু পিপাসাই শুধু সতর্ক চাতকের মতো আরো গাঢ় হতে থাকে বুকের গহনে।

কিন্তু মহাকাল বিশাল ঈগলের মতো তার দু’টি ডানা দু’দিকে বিস্তৃত করে ক্রমশ বুঝি দু’জনকে দুটি প্রান্তে টেনে সরিয়ে দিচ্ছে। সমস্ত বুক শূন্য করে, সমস্ত পৃথিবীতে একা হয়ে যেতেই বুঝি এ লগ্ন এমন ঘোরতর হয়ে উঠেছিলো!

ঘড়ির কাঁটায় মিনিট পনেরো এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমি পিছনে ছুটছি, সুরভিত স্মৃতির দিনগুলো নিয়ে আমি এফোঁড় ওফোঁড় হচ্ছি। ও কি টের পাচ্ছে আমার ভো-কাট্টা ছুট? আমার ক্ষত বিক্ষত হওয়া? আমাদের দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে বিমূর্ত বিভাজন যা, তা তো ওরই এঁকে দেয়া! ও কেন সেদিন এ বিয়ে ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব রাখতে এসেছিলো...।

-‘রাখি কেমন! ভালো থেকো।’ মুহূর্তে তীরের মতো তীক্ষ্ম ক’টা ক্ষীপ্র শব্দ এসে হৃৎপি- থেকে ছিন্ন করে দিলো কল্পনার সবকিছু। চোরাবালিতে আটকে পড়ার মতো আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। তবু তাতেই ঠাঁই খোঁজার মতো এহসানকে বলতে ইচ্ছে করে, তোমার কঠিন পরিমিতিবোধটুকু অন্তত একবার ভুলে যাও। একবার অন্তত জানতে চাও, আমি কেমন আছি!

 

দীলতাজ রহমান
লেখক ও সংগঠক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top