বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত ২৮ হাজার, মৃত ৪০০ ছাড়াল
 প্রকাশিত: 
 ২২ মে ২০২০ ১৪:৪৯
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৫৪
                                
প্রভাত ফেরী: দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭৭৩ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৫১১ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। এক দিনেই রেকর্ড ২২ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪০৮। বাংলাদেশে ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর খোঁজ মেলার পর দশ দিনের মাথায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত দশ সপ্তাহে কখনও এক দিনে এত নতুন রোগী আর এত বেশি মৃত্যু বাংলাদেশকে দেখতে হয়নি। এদিকে ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ হওয়ার পর প্রথম ১৪ দিন করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সময় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দুইই বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সংক্রমণের গতি ঊর্ধ্বমুখী। মে মাসে সংক্রমণের শীর্ষ পর্যায় আসবে এমন ধারণা থাকলেও, তা এখনও আসেনি। জুনের মাঝামাঝি সর্বোচ্চ সংক্রমণ হতে পারে। এই হার কমতে ঈদুল আজহা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলেও অনেকের মত।
দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত যে হারে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে, ২০ মে থেকে ৩১ পর্যন্ত একই হারে তা বৃদ্ধি পাবে। ১০ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৯৬৮, সরকারি হিসেবে মৃত্যু ছিল ১৭২ জনের। অন্যদিকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৪শর বেশি মানুষের। যদি একই হারে ২১ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় তাহলে মে মাস শেষে আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৩৮ থেকে ৪০ হাজারে। মৃত্যু হতে পারে ৫শ’র বেশি। এর আগে দেশের আট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, মে মাসের শেষ নাগাদ দেশে শনাক্তের সংখ্যা আনুমানিক ৪৮ থেকে ৫০ হাজারে গিয়ে দাঁড়াবে। সব মিলিয়ে মৃত্যু হতে পারে ৮০০ থেকে ১০০০ জনের।
এর আগে বাংলাদেশে তৈরি করোনাভাইরাসের উপসর্গ প্রশমনের ওষুধ রেমডিসিভির বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালসের কর্মকর্তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে তুলে দেন। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রেমডিসিভির আমেরিকাতে কেবল ইমারজেন্সি রোগীদের জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে। বেক্সিমকো ওষুধটি আমাদের অঞ্চলে তৈরি করতে পেরেছে। ওষুধটি দেওয়া হবে মুমূর্ষু ও ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত অনলাইন বুলিটিনে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, মারা যাওয়াদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ এবং তিন জন নারী। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের আট জন, সিলেট বিভাগের তিন জন ও ময়মনসিংহ বিভাগের একজন। ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা শহরের আট জন, ঢাকার অন্যান্য স্থানের একজন, নারায়ণগঞ্জের একজন, চট্টগ্রাম শহরের চার জন, কক্সবাজারের একজন, চাঁদপুরের তিন জন, ময়মনসিংহ শহরের একজন, সিলেট বিভাগের সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার একজন এবং সিলেটের অন্যান্য স্থানের দুই জন রয়েছে। ২২ জনের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছে ১৬ জন, বাড়িতে মারা গেছে পাঁচ জন এবং মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় একজনকে।
তাদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে দুই জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে দুই জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে তিন জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দুই জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে দুই জন রয়েছে।
ডা. নাসিমা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১০ হাজার ১৭৪টি। তবে পরীক্ষা করা হয়েছে ১০ হাজার ২৬২টি। অর্থাৎ এ সময়ে জমা থেকেও নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষা করা হয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার ১১৪টি। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ১৫৪ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছে তিন হাজার ৮৯৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছে ৭৩ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছে এক হাজার ৯৬৬ জন। তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম নিয়ে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে চার হাজার ৩২ জনকে। এখন পর্যন্ত দুই লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৪ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছে দুই হাজার ৫৯১ জন। এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছে দুই লাখ এক হাজার ১৫২ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টাইনে আছে ৫৪ হাজার ৩৮২ জন। করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে সবাইকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট দিকনির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
বিষয়:

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: