সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১


মেডুসার দুটি সর্পচোখ ও বিষণ্ণ বিশ্বকবি: খন্দকার জাহিদ হাসান


প্রকাশিত:
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১২:২৫

আপডেট:
১৩ এপ্রিল ২০২০ ১৩:৩৯

 

সারস চরতো নদীর তীরে
সারস থাকত দীঘিতে আর বিলে,
মাছের অভাবে অথবা কি জানি কেন যে
কখন যেন সে উঠে এলো বাগানে আর বসতবাটীর প্রাঙ্গণে,
পাল্টে গেল তার এতকালের খাদ্যাভ্যাস,
এখন বেচারা সারস পোকা ধরে ধরে খায়
আর ডাস্টবিনে হামলে পড়া বুনো ভালুকের সাথে
খাবার নিয়ে করে প্রতিযোগিতা।
ওদিকে বন্য মানব একজন ক্লীন শেভ্‌ড্‌ শ্বেতকায় টারজান
ট্রপিক্যাল অরণ্যে ঝুলে ঝুলে
হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে অনেক দূরে চলে যায়,
আর দীর্ঘকেশী শ্মশ্রুধারী শান্ত সৌম্য বিশ্বকবি
ভাবের রাজ্যে বাঙ্গালীকে অনেক দূরে ভাসিয়ে নিয়ে যান,
কিন্তু আবার ততক্ষণে আস্তে আস্তে
গোটা বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডই সেঁদিয়ে যায় ল্যাপটপের ভেতর,
অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত জট পাকিয়ে হয়ে যায় একাকার,
শৈশব পেরোলেই বার্ধক্য হানা দেয়,
অথবা বার্ধক্যের পরপরই ফিরে আসে যৌবন,
ডিম হতে মুর্গী আর মুর্গী হতে ডিমের সেই চিরন্তন পালা
বড্ড বেশী বাধাগ্রস্থ হয়,
সারস ভালুক মুর্গী ডাইনোসর আর্কিওপটেরিক্স ম্যামথ
আর অজানা অচেনা সব পশুপাখী
একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে পরস্পরের ওপর,
ডাস্টবিনের কাছাকাছি রেফারীর ভূমিকাতে
হুইসেল হাতে অশ্বপৃষ্ঠে বসে থাকে দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার,
ল্যাপটপের স্ক্রীনে ধীরে ধীরে ভেসে ওঠে
এক ভয়ঙ্কর সুন্দরী সর্পকেশী মেডুসার ভয়াল চেহারা,
তার দুটি সর্পচোখ চুম্বকের মতো টানতে থাকে সবকিছু-
যা কিছু রয়েছে বেঁচে এই ধরাধামে,
দেবদূতের ভূমিকাতে সাহসী টারজান শূন্যে ভাসতে থাকে।
ক্রমান্বয়ে এই পৃথিবীর অনেক বাক্যই কবিতা হয়ে ওঠে,
অতঃপর বাকী সব বাক্যই পদাধিকারবলে কবিতা হতে চায়,
ডিজিটাল আকাশে ওড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে কবিতার কবুতর,
সঙ্গীতের হোলিখেলা সাহিত্যের শুঁড়িখানা
দিকে দিকে মাথা তোলে
গজিয়ে ওঠা লাখো লাখো পীরের আস্তানার মতো-
জীবনের পরতে পরতে আসে মৌলবাদ নেমে,
মুখরা ননদিনীর মতো দুর্মুখিনী হয়ে ওঠে ইন্টারনেট,
বড্ড বেশী ব্যক্তিগত কথাবার্তা,
সবকিছুই বড্ড বেশী পচিয়ে ফেলা,
সব ভালকিছু অতিমাত্রায় ধুয়ে ধুয়ে জল খাওয়া!
হালের বেহায়া বাতাস তাই কানে কানে ফিস্ ফিস্ করে,
"তুমি কি আসলে সুকৌশলে সুবিধাবাদী?
নাকি তথাকথিত আদর্শের নামে
সুকৌশলে চরমপন্থা প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ঠ-
ধর্মে, কিংবা জাতীয়তাবাদে, ভাষায়, কিংবা নাচেগানে,
চলনে বলনে, পোশাকে আশাকে, আহারে কিংবা নিদ্রায়?"
এককালের মনোহর সকল ঝকমকে গান
ক্রমশ হয়ে ওঠে পাঁজরের খাঁচাবন্দী ঘ্যানঘেনে সঙ্গীত,
অতীতের প্রাণছোঁয়া সব লোকগীতি
ক্রমশ হয়ে ওঠে শব্দদুষণে ভরপুর পপগান,
অতঃপর নৃত্য ও গীতের সীমারেখা হয় অপসৃত,
সুতরাং বিশ্বকবির শান্ত সৌম্য চেহারা বেশ বিষণ্ণ দেখায়,
ক্রমান্বয়ে তাঁর দীর্ঘ চুলদাড়ি খুব অবিন্যস্ত হয়ে ওঠে,
আর রূপবতী মেডুসা অভিশাপে জর্জরিত হয়।
তবু ভয়ঙ্কর সুন্দরী অভিশপ্ত সর্পকেশী মেডুসা
ধীর পায়ে মঞ্চে ওঠে হাওয়ায় উড়িয়ে আঁচল,
পিয়ানোর সাদাকালো রীডে সে আঙ্গুল ছোঁয়াতেই
কিন্নরীরা গেয়ে ওঠে সমঃস্বরে,
সে গান ধরতেই রোদবৃষ্টির অপরূপ খেলায়
ধরাপৃষ্ঠ হয়ে ওঠে সুখের নিবাস,
সে গাইতে থাকলেই রাত কেটে ভোর হয়ে যাচ্ছে-
একথা ভুলে যায় সবাই,
সে গান থামালেই তার দুটি সর্পচোখ
প্রস্তরীভূত করে দেয় সমবেত সুধীমণ্ডলীকে।

 

খন্দকার জাহিদ হাসান

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top