সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: অসমাপ্ত আত্মজীবনী : শাহনাজ পারভীন 


প্রকাশিত:
২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:০৪

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৫৯

 

বত্রিশ নম্বরের ল্যাম্পপোস্টে সেদিন আলো জ্বলে নি;
তাহলে কি মশাল জ্বলেছিল?
যেই মশালের দাউদাউ আগুনের ফুলকি মুহূর্তেই লেলিহান শিখা হয়ে পুড়ে যায় আটষট্টি হাজার গ্রাম,
তেরশত নদী, বৃক্ষ, পাহাড়, ত্রিশ লক্ষ শহীদের
দগদগে রক্তের বিনিময়ে সদ্য কেনা লাল সবুজের মানচিত্র!
আর অগুণতি মা বোনের সম্ভ্রমের সমীহ অর্জন
পূর্ব দিগন্তের লাল টকটকে সূর্যটিও?
সেই ভয়ঙ্কর কালো রাতে নরককুণ্ড থেকে উঠে আসা হিসহিস শব্দে থেমে গিয়েছিল অকস্মাৎ দিন
আজদাহা ঢেউয়ে পাখিরা ভুলে গিয়েছিল কলকাকলি,
মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি তখন গড়িয়ে যাওয়া রক্তকণায় জমাট বেঁধেছিল সিঁড়িতে
এফোঁড় ওফোঁড় হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের হৃদপিণ্ড।
কেবলই সচল ছিলো গ্রেনেডের আওয়াজ, গুলির শব্দ, খাকি উর্দি পরা একদল কাপুরষের বুটের দুপদাপ
আর নিজস্ব স্বজনের বিশ্বাসঘাতকতা।
তারা উপেক্ষা করেছিলো ছোট্ট রাসেলের আকুতি, নববধূর মেহেদির রং, মা ফজিলাতুন্নেছার দয়াদ্র হৃদয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অটল বিশ্বাস!
তুমি তো জানতে, ভাবাবেগ দিয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা যায় না।
তা অর্জন করা সহজ হলেও রক্ষা করা কতটা কঠিন? এবং প্রথম বিপ্লব সহজ হলেও দ্বিতীয় বিপ্লব ছিল ততটা দূরের!
তুমি তো দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পেতে ভবিষ্যৎ,
তবে কেন গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস দেখতে পাওনি সেদিন?
বুঝতে পারো নি, মিত্রের চাইতে শত্রুর সংখ্যা অধিক তোমার?
তুমি তো জানতে না, ভাই কিভাবে ভাইয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়?
কই, কাক তো কখনো কাকের বিরুদ্ধে যায় না।
বিপদের দিনে এই ল্যাম্পপোস্টেই তারা মিটিং, মিছিল
আর আন্দোলন করে, ভাইয়ের পক্ষে দাঁড়ায়;
কা কা করে, সরবে জানান দেয় পুরো এলাকাবাসীদের। অতঃপর বিজয়ের বেশে একসাথে তারা শান্ত হয়, জিতে যায়।
তাই আজ বড় দুঃখ হয়,
তুমি কেন এই স্বাধীনতা এনে দিয়ে জীবন বিসর্জন দিলে নিজ আঙিনায়
ঝরনা ধারার মতো রক্ত গড়িয়ে দিলে আপন ধারায়।
যেদিকে তাকাই আজ শুধু লুটেরা, খুনি, ভণ্ড, বিশ্বাসঘাতক;
মুখোশের আড়ালে সব অমানুষ হাসে।
লাগাতার দুষ্কর্ম, দুঃসংবাদ ভারাক্রান্ত করে এই নাদান হৃদয়।
আহা! এ দুঃখ কোথায় রাখি?
তোমার লেখা 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী,' 'কারাগারের রোজনামচা', 'নয়াচীন ভ্রমণ' সোকেসে শোভা পায়, সিথানেই রাখে; অথচ মননে থাকে না আজ আর!
ভূখণ্ডের শোক গাঁথা বুকে নিয়ে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল ছাড়িয়ে তোমার লেখনী বিদেশ বিভূঁইয়ে দেখো ছড়ায় শেকড়।
তাই তো, একটি সূর্য পুড়ে গেলে অসমাপ্ত আত্মজীবনীর কি সমূহ সমাপ্তি সম্ভব?
না, তা তো নয়,
তাই তো অনাগত পৃথিবীর দিনগুলির সাথে আমরাও ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থটির সমাপ্তিতার সাযুজ্য খুঁজে খুঁজে
বত্রিশ নম্বরের দিকে ছুটে যাই গভীর শোকে, প্রত্যয়ে!

ড. শাহনাজ পারভীন
কবি, কথাসাহিত্যিক, উপাধ্যক্ষ, উপশহর মহিলা কলেজ, যশোর।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top