সিডনী মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১


বিরহের চিলেকোঠায় : আফরোজা অদিতি


প্রকাশিত:
৯ মার্চ ২০২২ ০০:০৪

আপডেট:
৭ মে ২০২৪ ১০:৪৪

 

ভালো লাগছে, ভালো লাগছে খুব! ইচ্ছা করছে গাইতে
কিন্তু গাইতে তো জানি না, শিখিনি কখনও; তবুও গুনগুন
করি “আজ প্রণমি তোমায় চলিব নাথ, সংসারও কাজে...”-
এতো আমার ভোরের প্রাত্যহিকী! বৈকালিকও আছে,
“একটু কেবল বসতে দিও কাছে / আমার যা কিছু কাজ আছে
আমি সাঙ্গ করবো পাছে...”- রবীন্দ্রনাথ সকাল-বিকাল টেনে আনা
হ্যাঁ, বাংলা সাহিত্যের শেকড়ে তো হরহামেশা যেতেই হয়!

রবীন্দ্রনাথ বলো, নজরুল বলো, বলো জীবনানন্দ, তোমার ছোঁয়াতেই
সব কবিতা, সবার কবিতা ভালো লাগে। তুমি না থাকলে ভালো লাগে
না কিছুই! না কবিতা না ঘর-সংসার! জানি, ভালোবাসার এই
কাঙালপনা কখনও যাবে না আমার! কখনও নয়!

একদিন বলেছিলে,
অ্যাত্ত অ্যাত্ত ভালোবাসা পাও তবুও তোমার ভালোবাসার
কাঙালপনা যায় না! কেন যায় না? এই কথা বলার পর
অবশ্য বলেছিলে, একটা কথা স্বীকার্য যে, তোমার এই
ভালোবাসার কাঙালপনাতে কিছুই বুঝা যায় না; অর্থাৎ
মনে মনে তুমি যে ভালোবাসা চাও তা বুঝা যায় না
কিছুতেই!

সে তুমি যাই বলো,
তুমি বুঝতে পারো আর নাই পারো আমি তো নিজের মন
বুঝি; সারাক্ষণ যদি ভালোবাসার নাম তজবীমালা না জপে,
না করে হরিকীর্তন, খঞ্জনী আর একতারা বাজিয়ে না করে
ঈশ্বর বন্দনা তবে মনবাড়ির পাশে নদীটাতে হাঁটুজলও যে
থাকে না, জেগে ওঠে চর, নিরব পাখ-পাখালি, বৃক্ষপল্লব,
বুজ দূর্বা হয়ে যায় নিষ্প্রভ! মুখ ব্যাজার করে উড়তে
থাকে ফড়িঙ প্রজাপতি!

মন গঙ্গাফড়িং, তার সবুজ রঙ ফিকে হয়, লম্বা ঠ্যাং আর
পাখায় জোর পায় না, মুখ থুবরে পড়ে থাকে এককোণে!
পুষ্পবনে ভ্রমরের গুঞ্জন কান্না হয়ে ভাসে হাওয়ায়, দুঃখ পায়
প্রকৃতি, রোদন করে! ধূসর ছায়ায় ঢাকে পৃথিবী সাঁঝের আগেই!

দরোজায় পায়ের শব্দ তোমার টের পাই প্রকৃতির বদলে যাওয়া
রূপে; দৌড়ে যাই, দরোজা খুলি, আনন্দ ভাসে নয়নে!

একটা কথা জানো,
এই ফ্ল্যাটবাড়িতে কেউ কারও নয়। দরোজা-জানালা বন্ধ থাকে,
পাশাপাশি তবুও কোন ফ্ল্যাটে কী ঘটছে জানা যায় না কিছুই!
এই তো এই ফ্ল্যাটবাড়িটা, যেটা তোমার পছন্দে কেনা হয়েছিল
তার সামনের ফ্ল্যাটটিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে!

মৃত্যু স্বাভাবিক তবুও মনে হয় কেন মৃত্যু হয়? কেন জীবন যায়?
চোখের সামনে মৃত্যু দেখলে জীবনটাকে আর ভালোবাসতে ইচ্ছা করে না,
এই চাওয়া-পাওয়া, ঘর-গেরস্থালী, টাকা-পয়সার লেনদেন, ব্যাংক-জমা
নিরর্থক মনে হয়; তখন ইচ্ছা করে দূরে কোথাও চলে যাই!
যদি বাউল হতে পারতাম, যদি পিছটান না থাকতো তাহলে চলে যেতে
পারতাম দূর হতে দূরে; একদিন এই মনটা বৈষয়িক সব ভাবনা থেকে
ছিল দূরে, অনেক অনেক দূরে কিন্তু কখন কেমন করে জানি না
বিষয়-আশয় নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে এই মনমহুয়া!

মাঝেমধ্যে মনে হয়
এই আমি মাটির তৈরি, আমার ভেতরে কেন এতো চাওয়া, এতো
পাওয়ার আকাক্সক্ষা, কথায় আছে “আজ মরে গেলে কাল দুইদিন”
কেউ মনে রাখবে কেউ রাখবে না তবুও কয়দিনের এই ছোট্ট
জীবনে সবকিছু একবারে চাওয়া কেন? কেন মনে হয় সব কিছুই
চাই, আমার করে চাই! মনটাকে প্রশ্ন করি, এই বিষয়সম্পদ
নিয়ে কী করবি? উত্তর দেয় না কখনও!


ও আমার তুমি,
তোমার সঙ্গে কয়েক সেকেন্ডের দেখা, চোখের আড়ালে চোখ
হিয়ার আড়ালে হিয়া রেখে মন নিয়ে গেল তোমার ছায়া
বুকের ভেতরের মন হারালো কোথায়, বলো কোথায়?

তোমার হিয়ার তলে
ব্যাথাতুর বেদনে অশ্রুসজল নয়নে তোমার সঙ্গে
আমার ঘর বাঁধার খেলা চলছে চলুক, চলছে চলুক!

বিরহের চিলেকোঠায় একাকি আমি তোমার ছায়ার সঙ্গে থাকি!

আফরোজা অদিতি
কবি ও কথা সাহিত্যিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top