সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১


গোরস্তানে বসে করি জীবনের কাব্য পাঠ : মোঃ ইয়াকুব আলী


প্রকাশিত:
৬ জুলাই ২০২২ ০৪:০৩

আপডেট:
৯ মে ২০২৪ ২৩:২৯

 

আমি গোরস্তানে বসে করি জীবনের কাব্য পাঠ
সারি সারি শুয়ে আছে নিশ্চল নিথর এক একটা জীবন
যাদের পদাভারে মুখরিত ছিল একসময় এই ধরিত্রী
কোণের চার্চ থেকে ভেসে আসছে ঘন্টা ধ্বনি
যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে একদিন আমাকেও যেতে হবে
তবুও গাছে গাছে মুখরিত কাকাতুয়ার দল মেতেছে শোরগোলে
মনেহচ্ছে যেন ইসরায়েলি কামান গোলা দাগছে নিরীহ ফিলিস্তিনে
শীতের তীব্রতা ভেদ করে আজ জেগেছে সূর্য
জানান দিয়ে যাচ্ছে তার উপস্থিতি সুতীব্র উত্তাপে
মৃদুমন্দ বাতাসে শরীর জুড়িয়ে আসে আমার হয়তোবা গোরবাসীদেরও
পাশের রাস্তাবমাঝেমধ্যে শো শো শব্দে ছুটে যাচ্ছে যান্ত্রিক যান
আবারও ঘন্টা ধ্বনি বেজে উঠলো
প্রতি পনের মিনিট পরপরই বেজে উঠে আপন নিয়মে।
মেঘগুলো আজ খুশিতে যেন সূর্যের সাথে খেলছে লুকোচুরি
পাশের পার্কে যেমন শিশুর দল মেতেছে পিকাবু খেলায়
আমি বসে আছি একটা কবরের শান বাধানো দেয়ালে
মনেহয় যেন অনন্তকাল ধরে বসে আছি, আছি নিজের শেষ দিনের অপেক্ষায়
আমরা কি সবাই এইভাবে অপেক্ষায় থাকি
যদি থাকি তাহলে কেন এতো হানাহানি কানাকানি চারিদিকে
বিশ্বের মোড়ল তেলের গ্যালনের দামে শান্তি বিক্রির পসড়া নিয়ে বসেছে
যেখানে যত তেল সেখানে তত বেশি তার খবরদারি
আরব বসন্তের নামে চলছে শান্তির প্রচার
তার নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে ইয়েমেনের ক্ষুধার্ত শিশুর স্বর
ধরিত্রী আজ নিজের কান্ন থামিয়ে হয়েছে সেইসব শিশুর খাদ্য
মাটি খেতে খেতেই তারা শুয়ে পড়ে ধরিত্রী মায়ের কোলে
কেউবা উঠে আবার কেউ চিরঘুমে শুয়ে থাকে গোরস্তানের মানুষের মতো
শকুনও আজ ক্লান্ত, আর কত মানুষের মাংস খাবে
সেও হয়তোবা স্রষ্টার কাছে করে ফরিয়াদ তার জীবনের অন্ত চেয়ে
সে আর দেখতে চায় না জীবনের অপচয়
আবারও ঘন্টা ধ্বনি বেজে উঠলো ঢং ঢং
এভাবে বাজতেই থাকবে যতদিন এই পৃথিবীতে থাকবে মানুষের বসবাস
মানুষ নিজের জীবনের জন্য সৃষ্টি করেছিলো যে সভ্যতা
সেই সভ্যতায় আজ তাকে করেছে বর্বর, হয়েছে বিলীনের হাতিয়ার
আচ্ছা মৃত্যুর পরে কি কোন জীবন থাকে, হয় কি দেখা সবার সাথে
আবারও কি সেখানে তৈরি হয় কোন অদেখা মানব সভ্যতার
সেখানেও কি আছে এই ধরিত্রীর মতো মৃত্য
সেই মৃত্যুও কি দেয় জন্ম অন্য কোন একটা সভ্যতার
হয়তোবা হয় হয়তোবা হয় না হলেও আমরা তো আর দেখি না
এই দেখা না দেখা এই বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলেয় চলে জীবনের জয়গান
আবারও ঘন্টা ধ্বনি বেজে উঠলো
আচ্ছা আমি ঘন্টা ধ্বনি কে কেন জীবনের অন্তিমের আহবান ভাবছি
না কি গোরস্তানে আছি বলেই আমি আজ নিরাশায় আক্রান্ত
কাকাতুয়াগুলো ডেকে চলেছে এখনো অবিরাম
বিশ্বব্যাপী বেজে চলেছে যুদ্ধের জয়ডঙ্কা
হয়তোবা এটাই জীবনের নিয়ম, এটাও জীবনের অংশ
আমি আর গোরস্তানে আসবো না ভাবছি
কারণ আসলেই আমাকে আলিঙ্গন করতে চায় মৃত মানুষগুলো
না কি আবারও আসবো নিজের অন্তিমের কথা ভেবে মনকে শান্তনা দিতে
খায় খায় দুনিয়ার সবকিছু থেকে নিজেকে আড়াল করতে আবারও আসবো গোরস্তানে
কারণ গোরস্তানে কবরের উপরে আমি দেখেছিলাম বেগুনি ফুল
মাটির নিচের রয়েছে জীবনের শেষ আর তার উপরের জীবনের ফুলেল জয়গান
আহা এ এক অনবদ্য কাব্য যা ফুরোয় না কোনদিন
আমি তাই গোরস্তানে বসে করে চলি জীবনের কাব্য পাঠ।

 

মোঃ ইয়াকুব আলী
মিন্টো, সিডনী, অস্ট্রেলিয়া


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top