মা দিবস যখন ব্যবসা


প্রকাশিত:
১৩ মে ২০১৯ ০৭:০৯

আপডেট:
৫ মে ২০২৫ ১৪:৩২

মা দিবস যখন ব্যবসা

মা দিবসে একটি প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিবসে মায়েদের জন্য বিপুল আয়োজন দেখা যাচ্ছে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মা দিবসকে স্মরণ করে বিভিন্ন করপোরেট সংস্থা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন প্রচার করছে গণমাধ্যমে। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার মা দিবস উপলক্ষে তাদের পণ্যে ছাড় ঘোষণা করেছে। এনিয়েও প্রকাশ করেছে বড় বড় বিজ্ঞাপন।



গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত সেসব বিজ্ঞাপনে মায়েদের কথা সামান্যই প্রতিফলিত হয়েছে। বরং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ওই প্রতিষ্ঠানের পণ্যের কথাই বেশি প্রতিফলিত হয়েছে। মায়েদের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের অফার করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে— সেলাইমেশিন, ওভেন, জুস তৈরির মেশিন, বিশেষ প্রসাধন সামগ্রী, রান্নার গ্যাস ইত্যাদি।



মা দিবস উপলক্ষে যেসব পণ্যের দামে ছাড় দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— বুটিকশপ, উপহার সামগ্রী বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, অনলাইন শপ ইত্যাদি। সবারই উদ্দেশ্য মা দিবসকে উপলক্ষ করে বেশি বেশি পণ্য বিক্রি করা। এটা শুধু মা দিবসেই নয়, বাবা দিবস, শিক্ষক দিবস অন্যান্য দিবসেও এখন অনেকটা রীতি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।





 



মা দিবসের এসব আয়োজন ব্যবসা কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কেউ বলছেন, এই ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে মায়েদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়। মায়ের জন্য এই আয়োজন দেখে নিশ্চয়ই মায়েরা খুশি হন, তাদের ভালো লাগে। কেউ কেউ আবার এই বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষ্য— মায়ের আবেগকে পুঁজি হয়ে বণিকশ্রেণি তাদের ব্যবসা ফেঁদেছে। নানা অফার দিচ্ছে। সন্তানেরা তাদের মোহনীয় প্রচারণার ফাঁদে পা দিচ্ছেন। এসব না করে মায়ের পাশে দুদণ্ড বসে কুশলাদি জানতে চাওয়া, মায়ের বিশেষ কোনও ইচ্ছে আছে কিনা— তা জেনে নেওয়া, পছন্দের কিছু থাকলে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে কিনে দেওয়া হলে মায়েরা বেশি খুশি হন।



মা দিবসে বেবি ওয়েলের বিজ্ঞাপনএই বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটা পৃথিবীর সব দেশেই কম বেশি হয়। বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে ব্যবসায়ীরা এটাকে সুযোগ হিসেবে নেবেন— এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার মধ্যেও নৈতিকতা বজায় থাকতে হবে। মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে মায়ের কথাই যেন বেশি থাকে, গুরুত্ব পায়। পণ্যের প্রচার বেশি হলে তা ব্যবসায়িক কৌশল হিসেবেই দেখা হবে।’ তিনি মনে করেন, মা দিবস উপলক্ষে যেসব বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে, তাতে যেন ভাষার প্রয়োগটা যথাযথ এবং সংবেদনশীল হয়। তাহলে মায়ের মর্যাদাটাই প্রাধান্য পাবে। মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধাটাই প্রকাশ পাবে।



এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বাগডুম ডট কম ও ইজেনারেশনের নির্বাহী চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, ‘আমাদের দেশে এই ট্রেন্ডটা শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে শো অফ করা হচ্ছে। দেখা গেলো যে, কেউ মা দিবসে মায়ের খোঁজ নেননি, দেখা করেননি, মায়ের সঙ্গে বিষয়টা শেয়ারও করেননি, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিচ্ছেন। এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে করপোরেটরা। মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে তারা ব্যবসায় ফাঁদছে। এটা ঠিক হচ্ছে না। মা দিবসটা হওয়া উচিত মাকে ঘিরে এবং একান্তই মাকেন্দ্রিক।’





 



মা দিবসে একটি কোম্পানির ওয়াশিং পাউডারের বিজ্ঞাপন



এ বিষয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থা বেঞ্জমার্ক পিআর এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ কায়সার বলেন, ‘এর দুটো দিক আছে। একটা হলো ইমোশনাল রিলেশন— মা দিবস বলে যে একটা দিন আছে, সেটা মনে করিয়ে দেয়। পাশাপাশি পুঁজিবাদী সমাজ এটাও মনে করিয়ে দেয়— আমাদের একটা মানবিক সম্পর্ক আছে। যেটা বিভিন্ন কারণে,এমনকী ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে। অন্যদিকে, পুঁজিবাদী সমাজ এও মনে করিয়ে দেয়, এই দিবসে তুমি তোমার পণ্যের প্রচার করো।’



তিনি আরও বলেন, ‘মা দিবস নিয়ে বিজ্ঞাপনের একটা মার্কেট আছে, মার্কেট সাইজ দিন দিন বড় হচ্ছে। গত বছর মা দিবস নিয়ে যত বিজ্ঞাপন দেখেছি, এবার দেখছি বেশি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এবার স্ট্যাটাস ও কমেন্ট বেশি দেখছি।’



উৎসঃ   বাংলা ট্রিবিউন


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top