সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াঙ্গানুই শহরে একদিন : মু: মাহবুবুর রহমান 


প্রকাশিত:
৩০ নভেম্বর ২০২০ ২২:০৩

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১১

 

মনে আছে ২০১৭ সালে একটি নদীকে মানুষের অধিকার দিয়ে বিশ্বজুড়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। কারণ ওটি ছিল পৃথিবীতে কোনো নদীকে মানুষের মর্যাদা দেয়ার প্রথম ঘটনা। নদীটির নাম কি মনে আছে? নদীটির নাম ওয়াঙ্গানুই। সেই নদীকে কেন্দ্র করে যে শহর গড়ে উঠেছে তার নাম ওয়াঙ্গানুই শহর। এ বছর অক্টোবরের একদিন সুযোগ হয়েছিল সেই ওয়াঙ্গানুই নদী ও নদী কেন্দ্রিক ওয়াঙ্গানুই শহর ঘুরে দেখার। পুরো নিউজিল্যান্ডই আমার কাছে ছবির মতো সাজানো গুছানো মনে হয়। ওয়াঙ্গানুইও তার ব্যাতিক্রম নয়।   

 

ওয়াঙ্গানুই থেকে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা - সবাই পেয়েছে মানবসত্তার স্বীকৃতিঃ 

শুরুটা করেছিল নিউজিল্যান্ডের ওয়াঙ্গানুই নদী। ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ বিশ্বের প্রথম নদী হিসেবে জীবন্ত সত্তার আইনি স্বীকৃতি পায় নিউজিল্যান্ডের ওয়াঙ্গানুই নদী। ঐ দিন নিউজিল্যান্ড সংসদে ওয়াঙ্গানুই নদীকে একজন মানুষের সমান আইনি অধিকার দিয়ে পাশ করা হয় বিল।  বিলে বলা হয় একজন মানুষ যেসব অধিকার ভোগ করে এখন থেকে সেসব অধিকার ভোগ করবে ওয়াঙ্গানুই নদী। অর্থাৎ নিজের অধিকার রক্ষায় আদালতে কোনো মামলায় পক্ষ/ বিপক্ষ  হতে পারবে ওয়াঙ্গানুই। 

ওয়াঙ্গানুই নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় দীর্ঘতম নদী। নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী মাওরিদের কাছে ওয়াঙ্গানুই নদী খুবই পবিত্র৷ কারণ একসময় এই নদীকেন্দ্রিক ছিল মাওরিদের জীবন।  আর তাই ১৬০ বছর ধরে আইনগত লড়াই করে এ নদীর মানবসত্তার স্বীকৃতি আদায় করে নেন মাওরিরা।   সংসদে বিলটি পাশ হওয়ার খবরে মাওরি সম্প্রদায়ের লোকেরা আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলো।  মাওরিদের প্রতিনিধিত্বকারী একজন এমপি বলেছিলেন, "নদীই যাদের জীবন, নদীর ওপর যারা নির্ভরশীল, সার্বিকভাবে তাদের জন্য নদীর অস্তিত্ব খুবই জরুরি।" (সূত্র: বিবিসি) 

ওয়াঙ্গানুই নদীর মানবসত্তার স্বীকৃতির ঠিক পাঁচ দিন পর ভারতের গঙ্গা ও যমুনাকে জীবন্ত সত্তার স্বীকৃতি দেয়, উত্তরখান্ডের হাইকোর্ট। আদালতের আদেশে বলা হয়, এই দুটি নদীতে দূষণ মানুষের ওপর আঘাত হিসেবেই বিবেচিত হবে। তবে  গঙ্গা ও যমুনাকে ভারতের রাজ্য থেকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করলেও পরে তা উচ্চ আদালতে স্থগিত হয়ে যায়।  আর বাংলাদেশের সব নদ- নদীকে জীবন্ত সত্তার স্বীকৃতি দিয়ে হাইকোর্ট আদেশ জারি করেন ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি, যেটা এখনো কার্যকর আছে। বাংলাদেশে পাশ হওয়া আইনে বলা হয়েছে ‘নদী হত্যা মানুষ হত্যার মতোই অপরাধ।' 

 

পামারস্টোন নর্থ থেকে ওয়াঙ্গানুইঃ 

১০ই অক্টোবর সকাল ৮ টার দিকে একটি বাসে চেপে আমরা জনা পঞ্চাশ পিএইচডি ছাত্র ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা পামারস্টোন নর্থ শহর থেকে যাত্রা শুরু করলাম ওয়াঙ্গানুই'র উদ্দেশে। যাত্রা পথে চারি দিকে তাকিয়ে শুধু দেখছিলাম নিউজিল্যান্ডের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ আর সবুজ খেতে চষে বেড়াচ্ছে গরু কিংবা ভেড়ার দল। একটি কথা এখানে বলে রাখি নিউজিল্যান্ডকে ভেড়ার দেশ বললেও ভুল বলা হবে না। মানুষ ও ভেড়ার মোট সংখ্যা হিসাব করে দেখা যায়, একজন মানুষের বিপরীতে নিউজিল্যান্ডে রয়েছে দশটিরও বেশি ভেড়া, যে অনুপাত পৃথিবীর অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় সর্বোচ্চ!  

আমাদের বহনকারী বাসটি কখনো আবার পাহাড় কেটে তৈরি করা রাস্তা ধরে এগুচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো যেন পাহাড়ের ভেতর দিয়ে কোনো দুঃসাহসিক অভিযানে যাচ্ছি আমরা।  আর মাথায় তো ছিলোই কখন দেখবো সেই ঐতিহাসিক ওয়াঙ্গানুই নদী। প্রায় এক ঘন্টা ভ্রমণ শেষে পৌঁছলাম ওয়াঙ্গানুই শহরে। নিউজিল্যান্ডের উত্তর দ্বীপ (নর্থ আইল্যান্ড) এর একটি ছোট নদীবন্দর শহর হলো ওয়াঙ্গানুই। আয়তন খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেলাম শহরটির আয়তন ২৩৭৩ বর্গকিলোমিটার। যদিও আমার কাছে শহরটি ছোটই মনে হয়েছে। আর জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। জনসংখ্যা খুব কম এবং মূল শহরটি ছোট থাকায় আমার ধারণা সবার কাছে ওয়াঙ্গানুই শহরটিকে ছোটই মনে হবে। 

ওয়াঙ্গানুই পৌঁছে সকালের নাস্তা সেরে সবাই এক একটা দলে ভাগ হয়ে নেমে পড়লাম শহর দর্শনে।  প্রথমে সবাই একসাথে গেলাম ওয়াঙ্গানুই জাদুঘর দেখতে। জাদুঘরটির নাম হলো ওয়াঙ্গানুই রিজিওনাল জাদুঘর (Wanganui Regional Museum)।  জাদুঘর মানেই তো হলো পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের সংগ্রহ শালা। এ জাদুঘরে ঘুরে ঘুরে আমরাও মাওরি জনগোষ্ঠীর জীবন যাপনের একটা ধারণা নেয়ার চেষ্টা করলাম।   

জাদুঘরের পাশেই ওয়াঙ্গানুই ওয়ার মেমোরিয়াল সেন্টার (Wanganui War Memorial Centre) অর্থাৎ যুদ্ধ স্মৃতি সংগ্রহশালা। ওয়ার মেমোরিয়াল সেন্টারে অবশ্য আমরা প্রবেশ করিনি শুধুমাত্র সবাই মিলে একটি গ্রুপ ছবি তুলে যাত্রা শুরু করি কাঁচের শিল্প তৈরির কারখানার উদ্দেশে।    

ছবিঃ ওয়াঙ্গানুই রিজিওনাল জাদুঘরের সামনে ভ্রমনকারী দল

নিউজিল্যান্ড গ্লাস ওয়ার্কস (New Zealand Glass Works) নামের এ কারখানায় আমার যাত্রা মানে হলো প্রথমবারের মতো গ্লাস বা কাচের শিল্প তৈরির কৌশল স্বচক্ষে পরিদর্শন।  যেটা অন্যের মুখে শুনেছি কাঁচ গলিয়ে লাল, নীল নানা রঙের নানা আকারের শিল্পকর্ম তৈরি করেন এ শিল্পের সাথে জড়িত কারিগররা সেটা আজ দেখার সুযোগ পেলাম।  কয়লার আগুনে লোহা পুড়িয়ে কিভাবে কামাররা দা, ছুরি, চাপাতি, বটি ইত্যাদি বানায়  সেটা দেখেছি বাংলাদেশে। আর আজ দেখলাম কাঁচ পুড়িয়ে কিভাবে সুন্দর সুন্দর শৈল্পিক জিনিস তৈরি হয়।   

দেখতে পেলাম গরম গলানো কাচের পিণ্ড চুল্লি থেকে বের করে নানা আকারের, নানা রঙের ফুলদানি, পাত্র কিংবা প্লেট তৈরি করছেন এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা।  কারখানাটা এমন ভাবে তৈরি যে আমরা দোতলা কিংবা একটু উঁচু থেকে দেখছি আর কারিগররা নিচতলায় এ শিল্প সামগ্রী তৈরি করছে (যেখানে ভিজিটরদের প্রবেশাধিকার নাই)। আমরা যেখান থেকে দেখছিলাম সেখানের দেয়াল কিংবা আশেপাশে যেদিকে চোখ যায় শেলফ, টেবিল, হ্যাঙ্গিং সবদিকে সূক্ষ্ম শিল্পের ছোঁয়া লাগা গ্লাস-ওয়ার্ক। যেখানে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে তাকিয়ে একটি গ্লাস-ওয়ার্কের দাম খোঁজার চেষ্টা করলাম দেখলাম, দাম লেখা রয়েছে ২৫,০০০ নিউজিল্যান্ড ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় যার দাম প্রায় ১৫ লাখ টাকা)।   

 

ওয়াঙ্গানুই নদী ও এ সংলগ্ন ফার্মার্স মার্কেট দর্শনঃ 

নিউজিল্যান্ড গ্লাস ওয়ার্কস দেখা শেষে সবাই যাত্রা শুরু করলো উন্মুক্ত ফার্মার্স মার্কেট দেখতে।  আমাদেরকে বলা হলো এ মার্কেট দেখা শেষে আমরা দুপুরের খাবার খেতে যাবো ভার্জিনিয়া লেক এ। উন্মুক্ত ফার্মার্স মার্কেটে ঘুরে মনে হলো এ যেন বাংলাদেশের কোনো গ্রামের হাট। কারণ আমাদের গ্রামের হাটের মতোই উন্মুক্ত ফার্মার্স মার্কেটও সপ্তাহে একদিন বসে (প্রতি শনিবার)। পার্থক্য হলো এ মার্কেটে লোকজন কম, বেচাকেনা হয় ডলারে আর সুন্দর সাজানো গোছানো বলে ঘুরতে ভালো লাগে। আরো আছে বিভিন্ন রকমের খাবারের ব্যবস্থা, আছে উন্নত মানের পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থাও।     

উন্মুক্ত ফার্মার্স মার্কেটে ঘুরতে গিয়ে দেখা পেয়ে গেলাম যাকে দেখতে চেয়েছিলাম সেই ওয়াঙ্গানুই নদীর। কারণ ওয়াঙ্গানুই নদীর তীরেই যে বসেছে উন্মুক্ত ফার্মার্স মার্কেট। নদীমাতৃক বাংলাদেশে জন্ম আর বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী পটুয়াখালী জেলার বাসিন্দা হবার কারণে নদী তো আমার কাছে নতুন কিছু নয়। কিন্তু ওয়াঙ্গানুই নদী দেখার পর আমার সে ধারণা পাল্টে যেতে শুরু করে। কারণ এ তো অপূর্ব সুন্দর, দূষণমুক্ত, ঝকঝকে পানির নদী।   

ছবিঃ ওয়াঙ্গানুই নদীর পাড়ে দাবা খেলছে দুই শিশু

দেখতে পেলাম নদীর পাড় বাধাই করা যেখানে আছে সুন্দর হাঁটার ব্যবস্থা, সেখানে সাজানো আছে সুন্দর বসার জায়গা, আছে দাবা খেলার ব্যবস্থাও। দেখতে পেলাম দুটি শিশু বিশাল আকৃতির দাবার গুটি দিয়ে, দাবার কোর্টের উপর দাঁড়িয়ে দাবা খেলছে। মনে হলো এ তো সেই ওয়াঙ্গানুই নদী যাকে এ পৃথিবীতে সর্বপ্রথম দেয়া হয়েছে মানুষের সমান অধিকার, তাই হয়তো সে এতো সাজানো, গোছানো।   

 

ভার্জিনিয়া লেক ও বাড়তি পাওয়া, ওয়াঙ্গানুই উইন্টার গার্ডেনঃ

উন্মুক্ত ফার্মার্স মার্কেট থেকে বাসে চেপে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম ভার্জিনিয়া লেকে।  এ লেকটির বৈশিষ্ট্য হলো এর চারপাশে আছে সুন্দর পার্ক। আছে লেকের পার দিয়ে হাঁটার রাস্তা। পুরো লেক পার ঘুরে আসতে আপনার সময় লাগবে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট। লেকের পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন ধরণের বিরল প্রজাতির হাঁস। প্রকৃতি যেন অপুরূপ সাজে সাজিয়ে রেখেছে এ ভার্জিনিয়া লেক।   

 

ছবিঃ ভার্জিনিয়া লেকের পাড়ে লেখক

লেকের পারে দুপুরের খাবার শেষে বাড়তি হিসাবে পেয়ে গেলাম ওয়াঙ্গানুই উইন্টার গার্ডেন। এ ইনডোর বাগানে প্রবেশ করে আমি অভিভূত হয়ে যাই। এতো সুন্দর এবং হরেক রকমের ফুল আমি কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না। মনে হচ্ছিলো যেন এ গার্ডেনেই দিনের বাকি সময়টুকু কাটিয়ে দেই।   

 

ডুরি হিল টাওয়ার এবং টানেলঃ  

ভার্জিনিয়া লেকে দুপুরের খাবার শেষে আবার বাসে চেপে ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যে হাজির হলাম ডুরি (Durie) হিল টাওয়ার এবং টানেল দেখতে। প্রথমে আমরা যাই টানেল দেখতে। প্রায় ৭০০ ফুট (২১৩ মিটার) দীর্ঘ টানেল দেখতে আমরা সবাই লিফটে চেপে ডুরি পাহাড়ের উপর থেকে নীচে নামি। নীচে নেমে দেখতে পাই বিশাল এক টানেল যার ভিতর শব্দ করলে প্রতিধ্বনি কানে ভেসে আসে। ১৯১৯ সালে এ টানেলটির যাত্রা শুরু হয় এবং যে লিফটে চড়ে আমরা নীচে নামি সেটিও ১৯১৯ সাল থেকে আজোবধি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা যায়। টানেল থেকে বেরিয়ে লিফটে না উঠে আমরা সবাই পায়ে হেটে প্রায় ২১৭ ফুট (৬৬ মিটার) উচ্চতা বেয়ে আবার পূর্বের জায়গায় অর্থাৎ পাহাড়ের উপর ফিরে আসি।   

ছবিঃ টানেলের মধ্যে লেখক

সবশেষে পুরো বিকাল আমরা কাটিয়ে দেই ডুরি হিল টাওয়ারে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত এই এলাকার ৫১৩ জন নিউজিল্যান্ডারের স্মরণে ১৯২৫ সালে এই টাওয়ারটির উদ্ভোধন করা হয়। এ টাওয়ারটি নির্মাণে শত বছরের পুরানো পাথর ব্যবহার করা হয়েছে এবং এর উচ্চতা ১০৪ ফুট (৩৩.৫ মিটার)। এ টাওয়ারের উপর থেকে পুরো ওয়াঙ্গানুই শহরকে দেখা যায়। এবার আবার ১০৪ ফুট উচ্চতা বেয়ে আমরা টাওয়ারে উঠে শহরকে দেখার চেষ্টা করি। 

 

টাওয়ারে সময় কাটাতে কাটাতে আমাদেরও যেন ফেরার সময় ঘনিয়ে আসছিলো। পশ্চিম দিকে সূর্যটাও হেলে পড়ে জানান দিচ্ছে, ফিরে চলো এবার। গত মার্চে এ দেশটিতে আসার পরই আটকা পড়েছিলাম করোনা ভাইরাসের লকডাউনে। গত ৮ই জুন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডর্ন নিউজিল্যান্ডকে করোনামুক্ত ঘোষণা করলেও আবার এসেছিলো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ মিলে নিউজিল্যান্ডে করোনার কারণে মারা গেছেন মাত্র ২৫ জন। আর করোনা ভাইরাস থেকে এখন অনেকটাই মুক্ত নিউজিল্যান্ড। আর আমাদের জনা পঞ্চাশ এর দলবেঁধে এ ভ্রমণ তো সেটাই প্রমান করে।   

 

মু: মাহবুবুর রহমান  
নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top