যশোর রোড: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের নীরব সাক্ষী : ডঃ সুবীর মণ্ডল
প্রকাশিত:
১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০২:২০
আপডেট:
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৩৯
প্রাচীন শহর বনগাঁ ও যশোর। মাঝখানে সীমান্তরেখা। এপার বাংলা- ওপার বাংলার জনপ্রিয় প্রবেশদ্বার। সবুজের সমারোহ আর পল্লীপ্রকৃতির স্পর্শে আজও অনবদ্য। সুপ্রাচীন এই শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদী। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে বনগাঁ শহর ও যশোর ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ শহর। মানব সভ্যতার আলোয় আলোকিত হয়ে দুটি সমৃদ্ধ জনপদ ভূমি যেভাবে ধীরে ধীরে নতুন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আজও, ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে যোগাযোগের জন্য নানান ধরনের রাস্তা তৈরি হয়েছে। তবু এমন কিছু রাস্তা বা পথ প্রাচীন ভারতে নির্মিত হয়েছিল, তার বিকল্প নেই আজও বলে মনে হয়। তেমনি এক বর্ণময় ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত রাস্তা যশোর রোড। দুই বাংলার যোগাযোগের ও আট থেকে আশির স্বপ্নপূরণের ও ইচ্ছাপূরণের অনবদ্য ঠিকানা।
সভ্যতার অভাবনীয় উন্নতি হলেও মানুষের পথচলার পথ এখনো সুগম হয়নি। গর্বের বিষয় হলো উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা আমার জন্মভূমি। এ- মাটি আমার পূর্বপুরুষের। এর প্রতিটি ধূলিকনা আমার কাছে পবিত্র- আমার প্রাণ- আমার জীবন। শৈশব ও কৈশোর জুড়ে এই যশোর রোডের সঙ্গে একটা সখ্যতা গড়ে ওঠে। সেই তাড়নাতেই যশোর রোডের ইতিহাস লেখার একটা দুঃসাহসিক চেষ্টা করছি। পথচলা রাস্তার নামের ইতিহাস। সবিনয়ে বলি যশোর রোডের ইতিহাস লেখার সেই ভাবে কোন প্রামাণ্য তথ্য আমার কাছে নেই। তবু বিভিন্ন জায়গায় থেকে যে তথ্যসূত্র পেয়েছি, তা দিয়ে একটা কাঠামো তৈরির চেষ্টা করছি মাত্র। কোন কোন ক্ষেত্রে বিভিন্ন গুণী ব্যক্তিত্বদের ও প্রবীণ মানুষের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। যে কোন ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন- এই আশা রাখি।
যশোর জেলা নামকরণের খোঁজে:
বেশ কিছু দিন হলো, পুজোয় ঘুরে এসেছি পুরি। তবুও মন, কোথাও যাই যাই করছে। সামনে বড়দিনের ছুটি। হঠাৎ ঠিক করলাম, এবার কোলকাতার একেবারেই কাছে বাংলাদেশে তিন দিনের জন্যে যাব। অল্প খরচে, আট থেকে আশির বিদেশ ভ্রমণের একমাত্র স্বপ্নপূরণের আদর্শ ঠিকানা, বাংলাদেশের যশোর। যেমন ভাবা, তেমনিই কাজ। যাওয়ার দিন ঠিক করা হল পঁচিশে ডিসেম্বর। সাথী বিরাটির চার বন্ধু কাম কলিগ। দ্রুত পাসপোর্ট ও ভিসার কাজ সেরে ফেললাম। ফোন করলাম, বাংলাদেশের বেনোপল সীমান্ত শহরের অত্যন্ত কাছের মানুষ মনিরুলকে। সব সহযোগিতার আশ্বাস পেলাম। অবশেষে বড়দিনের উৎসবে সবাই যখন মেতে উঠেছে, তখন কাকভোরে শীতের পোশাক ও সামান্য লাগেজ সহ বিরাটি থেকে ৫-৩০-এর শিয়ালদহ-বনগাঁ লোকালে চেপে চার জন রওনা দিলাম, বনগাঁ সীমান্ত-এর পেট্র্রোপোলের দিকে। বারাসাত, হাবড়া, ঠাকুর নগর, চাঁদপাড়া হয়ে আমরা সকাল ৭-৩০ এ বনগাঁ স্টেশনে পৌঁছলাম। সময় লাগল ১ঘন্টা-৫৬ মিনিট। দূরত্ব ৭০ কি,মি। ভাড়া প্রতিজনে ২৫ টাকা। চারজনে একটি অটো রিকশা নিয়ে রওনা দিলাম পেট্র্রোপোলে। অপরূপ বনগাঁ শহরের যশোর রোডের হৃদয় ছুঁয়ে নানান বর্ণময় প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে মিনিট কুড়ির মধ্য পৌঁছে গেলাম এপার বাংলার সীমান্ত শহর বনগাঁর পেট্র্রোপোলে। মনিরুলের সহযোগিতায় দুই দেশের চেক পোস্ট -এর দরকারি সমস্ত কাজ সেরে বাংলাদেশে প্রবেশ করার জন্য, জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছি। কয়েক মিনিট পরে বিদেশের মাটিতে প্রথম পা রাখব। এ -এক অন্য অনুভূতি। সীমান্ত রেখার দুইপারে দাঁড়িয়ে আছে দুই দেশ। একভাষা ও সংস্কৃতি। সীমান্ত বিভাজনে শুধু কাঁটা তাঁরের বেড়া। কিন্তু দু'দেশের মানুষের মনে ও হৃদয়ে কোন বেড়াজাল দেখলাম না। সকাল ৯ টায় প্রবেশ করলাম বাংলাদেশের সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ পৌর ও বাণিজ্য শহর বেনোপলে। এখান থেকে যশোরের দূরত্ব ৩৮ কিমি। টিফিন সেরে সাধারণ একটি ট্রেকারে উঠে পড়লাম। জনপ্রতি ভাড়া ৩০ টাকা। এবার আমাদের গন্তব্যস্থল যশোর শহর। যাত্রা শুরু হল। শিক্ষিত তরুণ ড্রাইভারের কাছ থেকে যশোরের ভূগোল ও প্রশাসনিক বিষয়ে কিছুটা জানার চেষ্টা করলাম।
বেনোপোল সীমান্তে -এ বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের দৃষ্টিনন্দন বড় বড় ছবি শোভা পেতে দেখলাম। হঠাৎ অসাধারণ একটি বালাদেশের ব্র্যাণ্ডের ক্যাপশান চোখে পড়লো। 'নানা রঙের ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ে যশোর জেলা'। পড়ে মুগ্ধ হলাম। শুনেছিলাম যশোর খেজুর গুড়, কৈ মাছ আর ফুলের শহর। প্রকৃতি দু'হাত ভরে এই জেলাকে সাজিয়েছেন অকৃপণ ভাবে। সামনে বাংলাদেশের জাতীয় সড়ক যশোর রোড। ১৯৭১ -এর মুক্তি যুদ্ধের নীরব সাক্ষী।
যশোর রোডের দুই দিকের সুপ্রাচীন গাছ গুলো দু'বাহু জড়িয়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। যাত্রা পথের বাংলাদেশের গ্ৰামীন প্রকৃতির রূপ, এক কথায় অনুপম। ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সত্যিই রূপসী বাংলার দেশ যশোর। ঐতিহাসিকদের মতে 'যশোহর'- এর অপভ্রংশ হল যশোর। এটি আরবি শব্দ। কানিংহাম সাহেবের মত অনুসারে, যার অর্থ সেতু বা সাঁকো। তিনি নাম দিয়েছিলেন নদ নদী সংঙ্কুল সেতু প্রদেশ। অনুপম সৌন্দর্যের কারণে ওয়েষ্টল্যাণ্ড সাহেব সৌন্দর্য হরণকারী দেশ আখ্যা দিয়ে ছিলেন। ব্যুৎপত্তি অনুসারে 'যশোহরের' অর্থ সর্বাপেক্ষা যশঃ শালী প্রদেশ। এই ভাবনাকে মান্যতা দিয়েছেন আধুনিক গবেষক ও ইতিহাসবিদগণ। রোডের দুই ধার ঘেঁষে, সর্ষে, ধনে, ধান, আম, জাম, কাঁঠাল, শিরিষ, খেজুর, তাল, শিমুল, নারকেল, কলাগাছ দিয়ে পরপর সাজানো ক্ষেত ও বাহারি দেশি- বিদেশি ফুলের বাগান দেখে মনে হল, প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে এখানে রংমেলান্তি খেলা খেলছে। মনিরুলের কাছে জেনেছিলাম, ভৈরবনদীর তীরে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের বহু বর্ণময় স্মৃতির সাক্ষী যশোর। এটি সাহিত্য, শিল্প -সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সুপ্রাচীন বর্ণময় শহর। আটটি উপজেলা ও থানায় বিভক্ত। সাতটি পৌর শহর। সর্ববৃহৎ উপজেলা অভয়নগর আর সবচেয়ে ছোট উপজেলা কেশবপুর। বর্তমানে লোক সংখ্যা প্রায় (২০১১ সালে) ২৪,৭২,০০০।
যশোর বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল শহর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে, যশোরই প্রথম শত্রু মুক্ত জেলা। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উৎসব প্রতি বছর এখানে অনুষ্ঠিত হয়। মধুসূদনের স্মৃতি বিজোড়িত সাগরদাঁড়ি গ্ৰাম ও কপোতাক্ষ নদ এই জেলার অন্যতম গর্বের বিষয়। বহু কৃতি মানুষের জন্ম এই জেলায়। বিজ্ঞানী রাধাগোবিন্দ চন্দ্র, কবি মোশারফ হোসেন, শিক্ষাবিদ আব্দুর রউফ, প্রফেসর শরীফ হোসেন, জাতীয় দলের তরুণ ক্রিকেটর সৈয়দ রাসেল, অভিনেত্রী ববিতা, চম্পা, রিয়াজ, হাসান, বিপ্লবী বাঘা যতীন, অভিনেত্রী সন্ধারায়, ইলা মিত্র, সাহিত্যিক শিশির ঘোষ, ধীরাজ ভট্টাচার্য -এই জেলায় জন্মেছিলেন।
আমরা ধীরে ধীরে চলেছি শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলার মধ্যে দিয়ে। জেলার অর্থনীতিতে এই দু'ই উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার অতুলনীয় গ্ৰামীন সৌন্দর্য। চোখ ফেরানো যায়না। ২২ কিমি, এসে পেলাম গদখালি। যশোরের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এটি বাংলাদেশের flower of kingdom ।
যশোর রোডের সোনালি ইতিহাসের খোঁজে-
যশোহর রোড বা চলতি ভাষায় যশোর রোড। শুধু কোনও রাস্তার নাম নয়। শের শাহ সুরি নির্মিত গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা জিটি রোডের মতোই এই রাস্তাটিও ইতিহাসের অম্লান সাক্ষী। ভারতের কলকাতার শ্যামবাজার থেকে শুরু করে বারাসত, বনগাঁ, পেট্রাপোল, বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশের খুলনা জেলার যশোরে শেষ হয়েছে রাস্তাটি। ইতিহাস বলে, যশোরের তৎকালীন জমিদার কালী পোদ্দার ১৮৪০ সালে যশোর থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত এই রাস্তা তৈরি করেছিলেন। এবং রাস্তার দুপাশে রেনট্রি বা কড়ই গাছ লাগিয়েছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর মা এবং অন্য পুণ্যার্থীরা শক্তিপীঠ কালীঘাটে তীর্থস্নানে যাওয়ার সময়, যেন দীর্ঘ পথশ্রমের ক্লান্তি কেটে যায় গাছের শীতল ছায়ায়। বর্তমানে যশোর রোডের দমদম–বারাসত অংশটি ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং বারাসত–পেট্রাপোল অংশটি ১১২ নম্বর জাতীয় সড়কের অন্তর্গত। এবং বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে বেনাপোল–যশোর পর্যন্ত অংশ বাংলাদেশের এন ৭০৬–এর অন্তর্গত। ১৯৭১–এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল যশোর রোডের। রাজাকার এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের হাত থেকে নিজেদের প্রাণ এবং বাড়ির মেয়েদের সম্মান রক্ষার্থে এই রাস্তা দিয়েই অজানা শহর কলকাতার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের কয়েক হাজার নাগরিক। গাড়ি বা ট্রেনে সফর তখন তাঁদের কাছে ছিল বিলাসিতা। হেঁটেই ভারতে শরণ খুঁজেছিলেন তাঁরা। জমিদার কালী পোদ্দারের পোঁতা গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে ফের অজানার উদ্দেশ্যে হেঁটেছিলেন। ঠিক যে ছবিটা আমরা কয়েক মাসে আগে দেখেছি লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে। সেই ছবিরই ইতিহাস ছিল ১৯৭১–এর শরণার্থীদের পথচলা। যেমন বহু পরিযায়ী শ্রমিকই হাঁটতে হাঁটতে পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন। তেমন ১৯৭১–এও অনেকেই যশোর রোডের উপরই মারা যান হাঁটার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে।
১৯৭১–এ ভারতে এসেছিলেন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ। আর সেসময় যশোর রোড ধরে হাজার হাজার শরণার্থীর পথচলার ছবি ব্যাকুল করেছিল কবিহৃদয়। যার বর্ণনা তিনি দিয়েছিলেন ১৫২ লাইনের মর্মস্পর্শী কবিতা, ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। গিন্সবার্গের ওই কবিতায় সুর দিয়ে সেই গানকে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেন বব ডিলান। আর দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি রাস্তায় অখ্যাত কতগুলি নিরীহ মানুষের যন্ত্রণা পৌঁছে যায় সারা বিশ্বে। এর পিছনে ছিল প্রয়াত সেতারবাদক পণ্ডিত রবি শঙ্করের অবদান। বিটলস্–এর প্রাক্তন সদস্য জর্জ হ্যারিসনের বন্ধু ছিলেন রবি শঙ্কর। তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের ঘরছাড়া মানুষদের দুরবস্থার কথা তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন হ্যারিসনকে। তারপর ১৯৭১–এর পয়লা আগস্ট নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়্যারে ওই শরণার্থীদের সাহায্যার্থে কনসার্টের আয়োজন করেছিলেন হ্যারিসন, রবি শঙ্কর, রিংগো স্টার সহ অনেকে। সেখানেই গিন্সবার্গের কবিতাকে নিজের গানে মূর্ত করে তুলেছিলেন ডিলান। ওই অনুষ্ঠানের টাকা ভারতে ঠাঁই নেওয়া শরণার্থীদের উন্নয়নের জন্য ইউনিসেফের হাতে তুলে দিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ সীমান্তে বেনাপোল যশোর রোডের উপর অবস্থিত। ১৯৭৮ সালে এখানে চালু হয়েছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর। আজও যশোর রোড হয়ে এই বেনাপোল দিয়েই দুদেশের পণ্য আমদানি–রপ্তানি হয়। ২০১৮ সালে সরকার পেট্রাপোল পর্যন্ত দুলেনের যশোর রোডকে চার লেন করার লক্ষ্যে রাস্তার দুপাশের শতায়ু গাছগুলি কাটতে চেয়েছিল। কিন্তু পরিবেশপ্রেমী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে আদালতে যান। শেষপর্যন্ত শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে রক্ষা পেয়ে যায় ১৮৪০ সালে যশোরের জমিদার কালী পোদ্দারের পোঁতা গাছগুলি। যা তিনি একসময় লাগিয়েছিলেন পুণ্যার্থীদের পথশ্রম দূর করার লক্ষ্যে। যা পরে শীতলতা দিয়েছিল যুদ্ধের আগুনে তপ্ত, শঙ্কিত, ভিটেমাটি হারানো শরণার্থীদের। এবং যা আজও ছায়া দেয় বর্তমান প্রজন্মকে।
পরগনার যশোর রোডের সবুজ পল্লবঘন শতবর্ষী বৃক্ষরাজি বিরল শোভা এবং সম্পদের আকর। পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এদের অবদান অতুলনীয়। প্রাচীন গাছগুলো রাস্তাটির সৌন্দর্য, গৌরব। বাংলাদেশের যশোর থেকে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত বেনাপোল-পেট্রাপোল পেরিয়ে সোজা কলকাতার বুক ছুঁয়েছে এই রাস্তা । দু দেশের সীমানা পেরোনো রাস্তা বলেই এটি একটি আন্তর্জাতিক সড়ক। এই দীর্ঘ পথ নিয়ে অনেক কাব্য-কথা-কাহিনি। মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ এই যশোর রোডর মায়ায় একাত্তর সালে লিখেছিলেন কবিতা, ‘September on Jessore Road’
বাংলাদেশের যশোর থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল-বনগাঁ-হাবড়া-বারাসাত পার করে কলকাতার শ্যামবাজার পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তার দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার। দেশভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় ওপার বাংলার হাজার হাজার ছিন্নমূল মানুষ এই সড়কের দুধারের শহর, গঞ্জের উপনিবেশে মাথা গোঁজার আস্তানা গড়েছে। এ দেশের ইতিহাস, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে এভাবেই পথটি আদ্যন্ত জড়িয়ে আমাদের জাতীয় জীবনের অনেকটা অংশ অধিকার করে আছে।
সম্রাট শের শাহের আমলে ১৫৪০ থেকে ১৫৪৫ সালের মধ্যে বাংলার সোনারগাঁ থেকে আজকের সড়কটির প্রাথমিক কাজ করেই রাখেন। পরে বকচরের জমিদার কালীপ্রসাদ পোদ্দার মায়ের তীর্থযাত্রার সুবিধার্থে বনগাঁ থেকে ৮০ কিলোমিটার রাস্তা নতুন করে তৈরি করেন এবং পথচারীদের ক্লেশ কাটানোর জন্যে পথের দুপাশে ঘনছায়ার শিশুবৃক্ষ পুঁতে দেন। যশোর রোডের শ্যামল ছায়াঘন বৃক্ষরাজি কালীবাবুর অবদান, আমাদের ঐতিহ্যের উৎস, ইতিহাস ও প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ। সময়ের দাবি মেটাতে দুপাশে রাস্তা চওড়া করার প্রয়োজনে সরকার গাছগুলো কেটে ফেলার উদ্যোগ নিলে পরিবেশ রক্ষা কর্মী এবং বৃক্ষপ্রেমীরা একত্র হয়ে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলেন । তাঁরা সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত এই আন্দোলনকে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁদের ধন্যবাদ।
উত্তরকথা:
উপমহাদেশের এক বহুখ্যাত ও বহুল পরিচিত নাম যশোর রোড, বর্ণময় এক ঐতিহাসিক সড়ক। দুই বাংলার হৃদয় ছিঁড়ে চলে গেছে এই ঐতিহ্যবাহী সড়ক। শুরু বাংলাদেশের যশোর জেলা থেকে, যা বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত বেনাপোল-পেট্রাপোল পেরিয়ে সোজা কলকাতায় গিয়ে মিশেছে। সেই যশোর রোড নিয়ে কত বর্ণিল কাহিনি, কত স্মৃতিমাখা ইতিহাস এখনো ঘুরে বেড়ায়।
একটা অকথিত বর্ণময় ইতিহাস আর তাকে নিয়ে হাজার জনশ্রুতি এবং কল্পনার বুনন। সেখানে খোলা আকাশের নীচেয় সযত্নে বেড়ে ওঠে বহু কিংবদন্তি ও লোককথার গল্পরা। রাতের অন্ধকারে হেঁটে বেড়ায় ইতিহাসের কল্পকথার অশরীরী চরিত্ররা। অতীতের ঘটে যাওয়া ঘটনার ক্ষীণ সূত্র ধরেই কিংবদন্তির যাত্রা শুরু। ইতিহাস যেখানে নীরব, কিংবদন্তির সেখানে মনোরম কাহিনী নিয়ে সরব হয়ে ওঠে। বিস্ময়কর যশোর রোডের শতবর্ষী বৃক্ষ আর পাথরের খাঁজে খাঁজে ওঁরা বেঁচে আছে জনশ্রুতিতে। ওঁরা বেঁচে আছেন ইতিহাস ও কিংবদন্তির হলুদ পাতায়।
গবেষক ও প্রবীণ মানুষের মতে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই যশোর রোড হয়ে উঠেছিল এক জীবন্ত ইতিহাসের বর্ণময় দলিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স তখন মাত্র ৮ হবে। নিজের চোখে দেখার সুযোগ হয়েছিল। এই রোড দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। এই রোডের পাশে সংখ্যাতীত মুক্তিযোদ্ধা আর শরণার্থী শিবির গড়ে উঠেছিল। এই রোড ঘুরেছেন অনেক নেতা, কবি-সাহিত্যিকেরা। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায় ও এসেছিলেন। শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষের কাছে এসেছেন নানান পেশার মানুষ। সেই কারণেই যশোর রোডের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর গৌরব আজও অমলিন। বর্তমানে যোগাযোগের জন্য যশোর রোড বেশ চওড়া হয়েছে। দুই দেশের কাছে আন্তর্জাতিক সড়কের মর্যাদা পেয়েছে। আজও যশোর রোডের দুই পাশের শতবর্ষী বৃক্ষ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। সেই বৃক্ষরাজিই আজ যশোর রোডের গর্ব।
কিন্তু এই ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী বৃক্ষ কেটে দুই দেশের সরকার সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল, যদিও শেষমেশ স্হানীয় মানুষ, পরিবেশ কর্মীদের তীব্র বিরোধিতা ও আদালতের হস্তক্ষেপের পর সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। গাছ কাটার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁরা দাবি তুলেছিলেন, শতবর্ষী বৃক্ষ ধ্বংস নয়। পরিবেশ বাঁচাতে তাদেরও বাঁচাতে হবে; ইতিহাস মুছে নয়, ইতিহাস রক্ষা করে। তাই তো বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দুই দেশেই পৃথকভাবে আন্দোলন করেছেন এই বৃক্ষরাজিকে বাঁচাতে। লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের সমর্থন পায়। দাবি তুলেছেন, পেট্রাপোল (হরিদাসপুর) সীমান্ত থেকে কলকাতায় আসতে যশোর রোডের এই শতবর্ষী বৃক্ষরাজিকে বাঁচিয়ে রাখতে এই ঐতিহাসিক বৃক্ষ সড়কের মাঝে রেখে যেভাবে রাস্তা চওড়া করা হয়েছে, সেভাবেই তৈরি করা হোক গোটা যশোর রোডকে। আসলে বহু স্মৃতি বিজড়িত রাস্তা যশোর রোড। আশার কথা, দেরিতে হলেও বাংলাদেশ সরকার তা মেনে নিয়েছে। দুই বাংলার মানুষের ঐকান্তিক আকুতি, যশোর রোড প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠুক।
ইতিহাস বলছে, যশোর থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল-বনগাঁ-হাবড়া-বারাসাত পার হয়ে কলকাতার শ্যামবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত এই ১২৫ কিলোমিটারের যশোর রোড। বাংলাদেশের অংশটুকু যশোর-বেনাপোল সড়ক নামে পরিচিত হলেও পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে একেবারে কলকাতা বিমানবন্দর ছাড়িয়ে নাগের বাজার হয়ে শ্যামবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত এই সড়ককে যশোর রোড নামেই জানে মানুষ। সাইনবোর্ডে কোথাও কোথাও এই যশোর রোডের নাম চোখে পড়ে। এই বিস্তৃত যশোর রোডের ৩৫ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে, বাকিটা পশ্চিমবঙ্গে।
একাত্তরে এই যশোর রোডের আশপাশের সেই চাঁদপাড়া, ঠাকুরনগর, গোবরডাঙ্গা, মছলন্দপুর, হাবড়া, বাণীপুর, গাইঘাটা আর অশোকনগরে বাংলাদেশিদের ঠাঁই হয়েছিল সড়কের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা শরণার্থী শিবিরে। মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ এই যশোর রোড দেখে একাত্তর সালে লিখেছিলেন কবিতা, ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। এই যশোর রোড দিয়েই একাত্তরের ১১ ডিসেম্বর যশোরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত করতে গিয়েছিলেন অস্থায়ী বাংলাদেশ প্রবাসী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ। সেই যশোর রোড আজও ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে।
এবার যশোর রোডের ইতিহাস জানতে একটু পেছনের দিকে ফেরা যাক। সম্রাট শের শাহ্ ১৫৪০ থেকে ১৫৪৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সোনারগাঁ থেকে আজকের পাকিস্তান পর্যন্ত তৈরি করেন গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড। যশোর-বেনাপোল-বনগাঁ-কলকাতা ছুঁয়ে লাহোর-পেশোয়ার অবধি চলে গেছে এই রোড। আবার ইংরেজদের বাংলা দখলের আগে সংস্কারের অভাবে এই রোড মেঠো পথে পরিণত হয়। তখন দস্যু-তস্করের হামলার ভয়ে ঝুঁকি নিয়ে এই পথ দিয়ে চলাচল করতেন রাজকর্মচারী ও ব্যবসায়ীরা। তখন যশোর থেকে কলকাতায় যাওয়ার বিকল্প মাধ্যম ছিল নৌপথ। যশোর জেলা হওয়ার পর এর গুরুত্ব বেড়ে যায়। প্রসার ঘটে ব্যবসা-বাণিজ্যের। তখন যশোরে গড়ে ওঠা উচ্চ ও মধ্য শ্রেণির প্রায় সবাই ছিলেন হিন্দু। হিন্দুদের কাছে গঙ্গাস্নান পুণ্যের কাজ। সেই সময় যশোর থেকে বহু হিন্দু নারী গঙ্গাস্নানের জন্য নদীপথে কলকাতা যেতেন। আবার কেউ কেউ পালকিযোগেও যেতেন। যেতেন বনগাঁ হয়ে চাকদহের গঙ্গার ঘাটে। যশোর থেকে চাকদহের দূরত্ব ছিল ৮০ কিলোমিটার।
সে সময় যশোর শহরের বকচরের জমিদার ছিলেন কালী প্রসাদ পোদ্দার। কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানে তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। নৌকার মাঝিদের অসহযোগিতার কারণে একবার জমিদারের মা গঙ্গাস্নানে যেতে না পারায় নিজেকে অপমানিত বোধ করে ঘরের দরজা বন্ধ করে অনশনে বসেন। উদ্বিগ্ন পুত্র দরজা খোলার অনুরোধ জানালে মা শর্ত দেন, গঙ্গাস্নানের জন্য যশোর থেকে চাকদা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করে দিলেই তিনি অনশন প্রত্যাহার করবেন। পুত্র কালী প্রসাদ মায়ের দাবি মেনে রাস্তা নির্মাণ করেন। ফলে এই রাস্তাকে অনেকে কালী বাবুর সড়ক বলেও অভিহিত করেন। ভারতের তৎকালীন গভর্নর অকল্যান্ড এই সড়ক নির্মাণে সহযোগিতা করেছেন, যার নির্মাণকাজ ১৮৪৫ সালে শেষ হয়। আর তখন এই সড়কের পাশে বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রচুর শিশুগাছ লাগানো হয়। সেই গাছই আজ শতবর্ষী গাছের তকমা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যশোর রোডজুড়ে।
এখন কেমন আছে সেই যশোর রোড আর যশোর রোডের শতবর্ষী বৃক্ষ, তা স্বচক্ষে দেখতে সুযোগ পেলেই ছুটে যাই পেট্রাপোল বা হরিদাসপুর সীমান্তে। গত বছর পুজোর ছুটিতে বিরাটি থেকে একটা গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিলাম। মাঝে মাঝে থেমে দেখলাম, যশোর রোড জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে অগণিত সুউচ্চ বৃক্ষ। রাস্তার দু পাশের জনপদ ভূমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমরা এগোতে লাগলাম। চারদিকে শুধু সবুজের সমারোহ দেখে অভিভূত হলাম। সামান্য বিরতিতে চায়ের দোকানে বসে আলাপচারিতায় জানিয়েছিলেন বিভিন্ন ধরণের মানুষ এই রাস্তা হোক আগামী প্রজন্মের মেধাবী পাঠ। দুই বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির মেলবন্ধন করে চলেছে। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের আলো কমছে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছিলাম এক স্মৃতিমেদুরতায়। মনটা টসটস করে উঠলো। কত সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে আজও।
পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে যখন পেট্রাপোলের যশোর রোড ধরে কলকাতায় ফিরছি, তখন চোখে শুধু সেই ইতিহাস ভেসে উঠল-বৃক্ষরাজি। এখন পেট্রাপোল থেকে জয়ন্তীপুর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তার যশোর রোডের ঐতিহাসিক বৃক্ষ না কেটে সড়কের ডানে তৈরি করা হয়েছে বর্ধিত সড়ক। ফলে ডানপাশের বৃক্ষরাজি চলে আসে রাস্তার মাঝে। আর রাস্তা দুই দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সোজা রাস্তা চলে গেছে একেবারে শ্যামবাজার পর্যন্ত। কিন্তু আমরা পেট্রাপোল থেকে জয়ন্তীপুর, ছয়ঘরিয়া, চাঁদপাড়া, বকচরা, গাইঘাটা, বাঘনা, গোপালপুর, কলাসীমা, অশোকনগর, মানিকতলা, চালতাবেড়িয়া, তেঁতুলতলা, রসুলপুর, দীঘার মোড় হয়ে কলকাতার দিকে যত এগোচ্ছি আর আমাদের চোখে পড়ছে শতবর্ষী গাছ; যা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে যশোর রোডের দুই পাশে। এই বিশাল গাছের গায়ে এখনো গ্রামের মানুষ গোবর দিয়ে তৈরি করা ঘুঁটে শুকাচ্ছে। তবে এ কথা ঠিক যে পেট্রাপোল বা হরিদাসপুর থেকে অশোকনগর পর্যন্ত এই সড়কে অগণিত শতবর্ষী গাছ থাকলেও অশোকনগর থেকে বারাসাত পর্যন্ত পুরোনো গাছ কিছুটা কম। তবে এখানে চোখে পড়েছে পুরোনো গাছের সঙ্গে বহু নতুন গাছ।
বাংলাদেশ সীমান্তে বেনাপোল, যশোর রোডের উপর অবস্থিত। ১৯৭৮ সালে এখানে চালু হয়েছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর। আজও যশোর রোড হয়ে এই বেনাপোল দিয়েই দুদেশের পণ্য আমদানি–রপ্তানি হয়। বাঙালির প্রিয় ইলিশ মাছ এই পথে আজও আসে,শুধু তাই নয় বাংলাদেশের বহু মানুষ কোলকাতা ও দক্ষিণ ভারতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা করতে আসেন। পদ্মা সেতু চালু হলে এই দূরত্ব কমে যাবে অনেকটাই। তিন ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা যাওয়ার পথ সুগম হবে। ২০১৮ সালে সরকার পেট্রাপোল পর্যন্ত দু-লেনের যশোর রোডকে চার লেন করার লক্ষ্যে রাস্তার দুপাশের শতায়ু গাছগুলি কাটতে চেয়েছিল। কিন্তু পরিবেশপ্রেমী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে আদালতে যান। শেষপর্যন্ত শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে রক্ষা পেয়ে যায় ১৮৪০ সালে যশোরের জমিদার কালী পোদ্দারের পোঁতা গাছগুলি। যা তিনি একসময় লাগিয়েছিলেন পুণ্যার্থীদের পথশ্রম দূর করার লক্ষ্যে। যা পরে শীতলতা দিয়েছিল যুদ্ধের আগুনে তপ্ত, শঙ্কিত, ভিটেমাটি হারানো শরণার্থীদের। এবং যা আজও ছায়া দেয় বর্তমান প্রজন্মকে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও বাংলাদেশ সরকার পরিবেশবিদ, পরিবেশ প্রেমিক ও সচেতন নাগরিকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই ঐতিহ্যবাহী রাস্তাটির পুরোনো গাছ কাটা থেকে সরে আসার যে ঘোষণা করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসা ও সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
কৃতজ্ঞতাঃ অধ্যাপক সুদিন চট্টোপাধ্যায়, অমরসাহা (প্রথম আলো পত্রিকা), আনন্দবাজার পত্রিকার আর্কাইভ ও বিভিন্ন গবেষণা মূলক পত্রিকা।
ডঃ সুবীর মণ্ডল
প্রাবন্ধিক, রম্যরচনা, ফিচার, অণুগল্প ও ছোটগল্প এবং ভ্রমণকাহিনী লেখক
বিষয়: ডঃ সুবীর মণ্ডল
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: