ইসলামী বন্ড চালু করবে বাংলাদেশ সরকার
প্রকাশিত:
২০ জুন ২০১৮ ১০:২০
আপডেট:
৩ মে ২০২৫ ১৫:১৫

দেশে শরিয়াভিত্তিক ইসলামী বন্ড চালুর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। এ ধরনের বন্ড চালুর মাধ্যমে একদিকে যেমন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ সুবিধা পাবেন, তেমনি বড় অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য অর্থ সংগ্রহ সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রস্তাবিত বাজেটও শরিয়াভিত্তিক সিকিউরিটিজ চালুর ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় আর্থিক খাতের বিভিন্ন সংস্কারের বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজ ব্যবহারের মাধ্যমে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয়। এদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ফ্লোটিং রেট ট্রেজারি বন্ড (এফআরটিবি) চালু করতে যাচ্ছি। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে গাইডলাইন ও নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে ব্যাংকিং শিল্পে ইসলামী ব্যাংকিং এর হিস্যা প্রায় ২০ ভাগ হলেও এখনো শরিয়াভিত্তিক সিকিউরিটিজ প্রচলন করা হয়নি। বর্তমানে আমরা শরিয়াভিত্তিক সিকিউরিটিজ প্রচলনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের জিডিপিতে বন্ডের অবদান মাত্র ১২ ভাগ। অথচ পাশের দেশ শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানের জিডিপিতে বন্ডের অবদান যথাক্রমে ৫৫, ৩৫ ও ৩১ ভাগ। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিভিন্ন মেয়াদি প্রায় ২২১টি সরকারি ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে। এসব বন্ডের আকার ডিএসইর বাজার মূলধনের প্রায় ১৬ ভাগ। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বন্ড বাজারকে আরও শক্তিশালী করা দরকার। এ ছাড়া শরিয়াভিত্তিক ইসলামিক বিকল্প বন্ড ‘সুকুক’ ইস্যুর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে বড় বড় সেতু, মেট্রো রেল ও রেললাইন সম্প্রসারণসহ বহু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে এদেশে শরিয়াভিত্তিক বিনিয়োগ উপকরণের অভাব রয়েছে। তা ছাড়া দেশে ও বিদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রসার ঘটছে। অনেকেই এখন সুদ এড়িয়ে শরিয়াহ্ সম্মত উপায়ে বিনিয়োগ করতে চান। বর্তমান প্রচলিত বন্ড এবং ডিবেঞ্চার সুদভিত্তিক হওয়ায় অনেকেই এখানে বিনিয়োগ করছেন না। সে কারণেই দেশে ইসলামি সুকুক বন্ড চালুর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে ইসলামী ব্যাংকগুলো।
সূত্রগুলো জানায়, ইসলামি শরিয়া্ মতে মূলধনী বিনিয়োগ বাড়াতে বেশ কয়েক বছর আগে ইসলামি রীতিতে ‘সুকুক’ বন্ড চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)কে। ২০১৫ সালে পুঁজিবাজার উন্নয়নে ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএমডিপি) আওতায় এক হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা (২৫ কোটি মার্কিন ডলার) ঋণ চুক্তির শর্তে ‘সুকুক বন্ড’ নীতিমালা তৈরির প্রতি জোর দেওয়া হয়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এডিবির শর্ত ছিল ২০১৭ সালের মধ্যে বিএসইসিকে ‘সুকুক বন্ড’ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। তবে সেই নীতিমালা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
বাজেট ইস্যুতে সঙ্গে আলাপকালে সম্প্রতি অর্থ সচিব মুসলিম চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে বন্ড মার্কেটের ভিত্তি দুর্বল। একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট গড়ে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ সুবিধা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। তেমনি অবকাঠামো উন্নয়নেও অর্থ সংগ্রহ সহজ হবে।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: