নির্বাচনে প্রশ্নে সময় নিল জামায়াত, পার্থ চান না ‘যেতে’
প্রকাশিত:
১১ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫৩
আপডেট:
৪ আগস্ট ২০২৫ ১৬:৪৪

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২৩টি দলের সমন্বয়ে গঠিত ২০ দলীয় জোট।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা দফায় দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।
তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করে দু’দিনের মধ্যেই ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে সাংবাদিকদের বলেছেন জোটের শরিক এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ।
বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। নির্বাচনে যাব কি না, বৈঠকে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দু’দিনের মধ্যে ২০ দল, মূল দল বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।’
বিএনপির সাবেক এই নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি হলো আমাদের প্রাধান্য। তাকে মুক্ত করতে হবে। তাহলে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে আসবে। বিএনপির নেতাকর্মীকে গত দু’দিনে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাস্তাঘাটে তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ না করা পর্যন্ত সুষ্পষ্টভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাতে পারব না।’
২০ দল নির্বাচনে যাবে বলে সংবাদমাধ্যমের খবরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কথা গণমাধ্যমে বলিনি। যদি কেউ বলে থাকেন, তাহলে অনৈতিক কাজ করেছেন।’
আজকের বৈঠকে নির্বাচনে যাব কি না, খালেদা জিয়ার মুক্তি, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, নেতাকর্মীদের উপর যে নির্যাতন, মিথ্যা মামলা হচ্ছে— সেগুলোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান অলি আহমেদ।
বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক নেতা জানান, ২০ দলীয় জোটের আজকের বৈঠকে বেশিরভাগ দলই নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে মত দেন। তবে ৬ থেকে ৭টি দল নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
আর জামায়াতে ইসলামী তাদের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য জোটের কাছ থেকে একদিন সময় নিয়েছে। তারা আগামীকাল রোববার সিদ্ধান্ত জানাবে।
যারা নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন, তাদের যুক্তি, জোটনেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে নির্বাচনে গিয়ে খুব একটা লাভ হবে না। সুতরাং না গিয়ে নিজেদের এতদিনের আন্দোলনের স্বপক্ষে থাকাই ভালো।
বৈঠকে একাধিক যুক্তি তুলে ধরে বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ সাফ জানান, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
তবে তার যুক্তি খণ্ডন করে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বলেন, ‘আমরা এখনই এমন কঠিন সিদ্ধান্তের কথা ভাবছি না। স্বৈরাচারকে হটাতে হলে নির্বাচনই একমাত্র সমাধান।’
পরে অবশ্য বৈঠকের শেষ অংশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শরিক দলের নেতাদের বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পন্থায় যত উপায় আমাদের সামনে রয়েছে, সবগুলোই বিবেচনায় নিতে হবে। আপনারা সবগুলো বিকল্প মাথায় রেখেই সার্বিক প্রস্তুতি নিন।’
বৈঠক শেষে করে হয়ে যাওয়ার সময় জামায়াত নেতা আব্দুল হালিম বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছিল। আমরা একদিন সময় নিয়েছি। দলের মধ্যে আলোচনা করে আগামীকাল রোববার জানাব।’
তবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে গেলে আমরা জোটবদ্ধ হয়েই যাব।’
এ বিষয়ে বৈঠকে অংশ নেয়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মুহিউদ্দিন ইকরাম বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে মত দিয়েছি। জোটবদ্ধ হয়েই নির্বাচনে যাব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বৈঠকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের মহাসচিব রোববার এ বিষয়ে ব্রিফিং করবেন। তখন সব স্পষ্ট হবে।’
এদিন, সন্ধ্যায় প্রথমে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা বৈঠক করেন। পরে জোটের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি।
এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, জামায়াতের আব্দুল হালিম, খেলাফত মজলিসের মাওলানা ইসহাক, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাম্যবাদী দলের কমরেড সাঈদ আহমেদ, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান নূর হোসেন কাসেমি, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মুহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আব্দুর রকিবসহ ২৩টি দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।
আর বিএনপির পক্ষ থেকে জোটের বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: