সিডনী শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


নির্বাচনী অনিয়ম ‘বিশ্বাসযোগ্য’, গণতন্ত্র উদ্বেগজনক: বৃটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরে


প্রকাশিত:
১০ জুন ২০১৯ ০২:৫০

আপডেট:
৩ মে ২০২৪ ০৯:২১

নির্বাচনী অনিয়ম ‘বিশ্বাসযোগ্য’, গণতন্ত্র উদ্বেগজনক: বৃটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরে

বাংলাদেশের বহুল আলোচিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া দিল ব্রিটিশ। গত ৩০ ডিসেম্বরের এই সাধারণ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগকে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ বলে তারা উল্লেখ্য করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটি।



গত সপ্তাহে ‘মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিবেদন ২০১৮’ শীর্ষক বাষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর। এতে বাংলাদেশে ২০১৮ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্রের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।



ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট সুষ্ঠু নির্বাচনে যুক্তরাজ্য সরকারের মনোভাব গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠককালে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যক্ত করেছিলেন। কারণ যুক্তরাজ্য মনে করে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে সহায়ক হতে পারে। এই পথই দেশটির উন্নয়নের গতিকে শক্তি যোগাবে। রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের নির্বাচন ও উন্নয়ন বিষয়ে যুক্তরাজ্যের অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সুস্পষ্ট।



এছাড়া যুক্তরাজ্য সরকার আরও স্পষ্ট করেছে যে, গুম, ধর্মীয় স্বাধীনতা বা বিশ্বাস এবং আধুনিক দাসপ্রথা বিলোপের মতো বিষয় বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের এজেন্ডায় অগ্রাধিকার রয়ে গেছে।



এছাড়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে বাংলাদেশের উদারতায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও দেশটিতে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়া এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা কমে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।



রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। আগের চেয়ে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরের অবস্থার উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।



প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সাধারণ নির্বাচনে সকল দলের অংশ নেয়া উৎসাহব্যঞ্জক হলেও গ্রেফতার এবং বিরোধী দলের প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়। এর ফলে ‘কিছু লোক ভোট দিতে পারেনি।’ যুক্তরাজ্য নির্বাচনী অনিয়মের সব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে।



আরও বলা হয়, ‘ব্রিটেন এ বিষয়ে স্পষ্ট ও অনড় যে, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চাই। যা একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে।’



প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়েছে ২০১৮ সালের বাংলাদেশে। সীমিত হয়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ (মে থেকে জুলাই পর্যন্ত) সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ‘গুম’-এর ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘দায়মুক্তি’ পাওয়ার অভিযোগকে গ্রহণযোগ্যতা দেয়।



প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্য সরকার গত অক্টোবরে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর ভিন্নমত প্রকাশে স্বাধীনতার দিকটি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। ২০১৮ সালে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার-এর বিশ্ব গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৬তম। ২০১৭ সালেও একই অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৫৪ জন সাংবাদিককে ডিজিটাল আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ড. শহিদুল আলমের মামলার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী এবং হাইকমিশন বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরেছে।



রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মানব পাচার রোধে একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু অগ্রগতি মন্থর। ইউকে-বাংলাদেশ স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ, ২০১৯ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এই বিষয়টিকে আরো গভীরভাবে নেয়া হবে। রিপোর্টে বলা হয়, ১৯১ টি মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত আছে। কিন্তু তার একটিও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এরমধ্যে ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডও আছে। যুক্তরাজ্য চাইছে সরকার মৃত্যুদণ্ডের প্রথা বিলোপের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে একটি বিরতিকালে যেতে পারে।

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top