রাজা মিডাস এবং আমাদের লোভ : শ্রাবন্তী কাজী
প্রকাশিত:
১ মার্চ ২০২৪ ২২:৫১
আপডেট:
১ মার্চ ২০২৪ ২২:৫৩
লোভ নিয়ে গ্রীক পৌরানিকের একটা গল্প বলি। ফ্রিজিয়ার রাজা মিডাসের কাছে একদিন তাঁর রক্ষীরা রাজ্যের আংগুর ক্ষেতে ঘুমানো এক স্যাটারকে (অর্ধ মানব ও অর্ধ ছাগ সদৃশ প্রানী) ধরে নিয়ে এল। রাজা দেখেই চিনতে পারলেন এ হচ্ছে ওয়াইনের দেবতা ডিওনিমাসের অনুচর সিলেনাস। তিনি সিলেনাসকে দ্রুত মুক্ত করে দিলেন। এতে দেবতা ডিওনিমাস খুশী হয়ে রাজাকে বললেন তিনি যা চাইবেন দেবতা তাকে আজ তাই দিবেন। রাজা মিডাস বললেন তিনি এমন ক্ষমতা চান যে, তিনি যা ধরবেন তাই যেন সোনা হয়ে যায়। দেবতা রাজাকে আরেকবার ভেবে চিনতে দেখতে বললেন, তিনি যা চাচ্ছেন তা ঠিক আছে কি না। মিডাস লোভের বশে অন্ধ হয়ে বললেন, তিনি ভেবে চিন্তেই এই বর দেবতার কাছে চাইছেন। দেবতা তাকে সেই বর দিয়ে দিলেন। রাজা মিডাস খুশী্তে আত্মহারা। মন্ত্রী, আমলা, সভাসদরা সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছেন, রাজা যাই ধরছেন তাই সোনা হয়ে যাচ্ছে। এক সময় রাজার ক্ষিধে পেল। কিন্তু সমস্যা হল রাজা খেতে পারছেন না। উনি যে খাবারই ধরছেন, তাই সোনা হয়ে যাচ্ছে। উনি ক্ষুধায় কাতর হয়ে গেলেন। খবর শুনে অতি আদরের রাজকন্যা দৌড়ে এল ক্ষুধায় ক্লান্ত বাবার কাছে। রাজা মেয়েকে আসতে দেখে বারন করতে যাবেন নিজের কাছে আসতে, কিন্তু ততক্ষনে দেরী হয়ে গেল। মেয়ে এসে বাবাকে স্পর্শ করল। আর অমনি রাজকন্যা সোনার মূর্তি হয়ে গেল। নিজের আদরের মেয়েকে হারিয়ে রাজা মিডাস নিজের ভুল বুঝতে পারলেন।
বাংলাদেশে পর পর কয়েকটি অগ্নি কান্ডের ঘটনার পিছনে অনেক কারনের মধ্যে অন্যতম যে কারন রয়েছে, তা হচ্ছে রাজা মিডাসের মত লোভ। লোভ আমাদের গ্রাস করে নিয়েছে। তাই আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আবাসন বাড়ীর নীচে অননুমোদিত দোকান বানিয়ে ভাড়া দেই, বিপদজনক ক্যামিকেলের গোডাউন গড়ে তুলি, বাড়ীর জন্য নিজের নির্ধারিত সীমার বাইরেও আরো দুই ফুট দখল করে দেওয়াল তুলে দেই, ব্যবসায়ী ও আবাসন প্রতিষ্ঠান গুলোতে অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যূত সংযোগ দেই, অনুমোদন ছাড়া, নকশা পরিবর্তন করে বিল্ডিং তৈরী সহ নানবিধ অবৈধ কর্মকান্ড করি। আমরা ভুলে যাই, লোভের আশায় আমরা যে সোনা রাতারাতি চাইছি তা আমদের ধংসের কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নিজে বাঁচতে হলে আর আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে আমাদের সবার আগে এই লোভ থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
বিষয়: শ্রাবন্তী কাজী
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: