সিডনী মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


অনুষ্ঠান আর কথামালায় নয়, মুজিবকে ধারণ করতে হবে আমাদের শিক্ষা ও চেতনায়


প্রকাশিত:
২১ জানুয়ারী ২০২০ ০৬:২০

আপডেট:
২২ জানুয়ারী ২০২০ ০৩:৩১

শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২০২০-২১ খ্রীস্টাব্দকে মুজিব বর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই উপলক্ষ্যে  বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৫টি দেশে উদযাপিত হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ। আমরা যারা স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্ম, আমরা কেউই মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, আমরা দেখিনি হিমালয় পর্বতের মত মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাদের জন্যই আমার এই লেখা।

বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গে (বর্তমানে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে) ১৭ই মার্চ ১৯২০ খ্রীস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।  তাই ১৭ মার্চ ২০২০ সাল থেকে শুরু হবে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী আর এই উদযাপন চলবে ১৬ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত পুরো বছর জুড়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছিল এই মহান নেতার আত্মত্যাগ আর নিবিড় ভূমিকা।

শেখ মুজিবুর রহমান। একটি নাম। একটি ইতিহাস। একটি রাষ্ট্র। যে মানুষটি বাঙালী স্বার্থরক্ষায় তার জীবনের একটি মূহূর্তও আপোষ করেননি কারো সাথে। তার যৌবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে অন্ধকার কারাপ্রকোষ্টে। নিপীড়িত বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে শেখ মুজিবুর রহমান ছুটেছেন সারা বিশ্ব জুড়ে। স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের বিপরীতে অনেকটা একাই লড়েছেন সিংহের মতো। জাতির জনক গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের প্রশ্নে আপস করেননি বলেই তার জীবদ্দশায় তাকে ৪ হাজার ৬৭৫ দিন কারাগারে কাটাতে হয়েছে। বাঙালী জাতির ভাগ্যঅন্বেষণে ছুটতে গিয়ে নিজের পরিবারকেও তিনি ঠিক মতো সময় দিতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলন এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরবর্তীতে এদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাঙ্গালির স্বার্থ রক্ষায় তিনি আজীবন নিজেকে নিয়োজিত রাখায় তার উপাধি হয় "বঙ্গবন্ধু"।

সেই মহান নেতা, বাংলাদেশের মানুষের চেতনার স্পর্শ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে প্রস্তুত পুরো বাঙালী জাতি। আগামী ২০২১ খ্রীস্টাব্দের ২৬শে মার্চ তারিখে বাংলাদেশ স্বাধীনতার অর্ধ-শত বার্ষিকীতে পদার্পণ করবে। তাই মুজিব বর্ষের পাশাপাশি ওই দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে উদযাপন করা হবে সুবর্ণজয়ন্তী।

আগামী ১৭ মার্চ, ২০২০ইং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের অংশ হিসেবে এই তারিখে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সূচনা হবে।

ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনার সময়সূচিও। জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় এই ক্ষণগণনা।

বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের আশা, আনন্দ, সুখ, বেদনা শৈশব থেকে গভীর ভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। মিশে গেছেন গ্রামীন বাংলার খেটে খাওয়া মজদুর মানুষদের সাথে।  তিনি দেখেছেন তখনকার সমাজ ব্যবস্থার অনিয়ম, অন্যায় আর অবিচার। গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িকতার । সমাজ ও পরিবেশ তাঁকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। তাই পরবর্তী জীবনে তিনি কোনো শক্তির কাছে— সে যত বড়ই হোক, আত্মসমর্পনকরেননি; মাথানত করেননি। আমাদের এই মহান নেতা ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “এই স্বাধীন দেশে মানুষ যখন পেট ভরে খেতে পাবে, পাবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন; তখনই শুধু এই লাখো শহীদের আত্মা তৃপ্তি পাবে।’

দেশ ও মুজিবকে জানতে হলে, আমাদের তরুন ও যুব সমাজের সবাইকে তাঁর লেখা “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” এবং “কারাগারের রোজনামচা” বই দুটি পড়তে হবে। কারাগারের রোজনামচা বইয়ের প্রসংগে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও এই মহান নেতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, “স্বাধীন বাংলাদেশ ও স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা বাঙালি পেয়েছে যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, সেই সংগ্রামে অনেক ব্যথা-বেদনা, অশ্রু ও রক্তের ইতিহাস রয়েছে। মহান ত্যাগের মধ্য দিয়ে মহৎ অর্জন করে দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । বাংলার মানুষ যে স্বাধীন হবে এ আত্মবিশ্বাস বারবার তাঁর লেখায় ফুটে উঠেছে।“এই বই দুটি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেনীতে অন্তর্ভূক্ত হওয়া সময়ের দাবী মাত্র। আমি এর দ্রুত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অনুষ্ঠান আর কথা মালায় নয়, মুজিবকে ধারন করতে হবে আমাদের শিক্ষা ও চেতনায়।

 

শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী

প্রধান সম্পাদক, প্রভাত ফেরী



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top