সিডনী মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১


করোনা টিকা নিলে রক্তদানে নিষেধ দুই মাস


প্রকাশিত:
১৬ মার্চ ২০২১ ১৮:২৬

আপডেট:
৭ মে ২০২৪ ১২:৩৬

 

প্রভাত ফেরী: দুই মাস রক্তদান করতে পারবে না করোনা টিকা গ্রহণকারী। কলকাতায় জাতীয় রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্ত রোগী-স্বার্থেই। কিন্তু বাস্তব সমস্যা হল, এর জেরে আপৎকালীন রক্তদান থেকে শুরু করে রক্তদান শিবির, হোঁচট খাচ্ছে কমবেশি সবই। জরুরি সময়ে যাঁরা মূলত রক্ত দেন, সেই চিকিৎসাকর্মী, পুলিশের মতো প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদেরই প্রথম পর্যায়ে টিকাকরণ চলছে। পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে অনেক শিবিরও, যেখানে পরিকল্পনা থাকলেও কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণে রক্তদান করতে পারছেন না অনেকেই।
এ দিকে গরম ও ভোটের জোড়াফলায় এমনিতেই শিয়রে রক্তসঙ্কট। তাই আরও বেশি করেই রক্ত সংগ্রহ প্রয়োজন। কিন্তু রক্তদান আন্দোলনের দীর্ঘ দিনের কর্মী দীপঙ্কর মিত্রের কথায়, 'ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। টিকাকরণ ও রক্তদান-দুটোই জরুরি। কিন্তু টিকাকরণ তাৎক্ষণিক প্রয়োজন। রক্তের চাহিদা সারা বছরের। এমন ভাবে সবাইকে শিবির পরিকল্পনা করতে হবে যাতে সাপও মরে, লাঠিও না-ভাঙে।'
সমস্যা তবু হচ্ছেই। যেমন রবিবার মিল্ক কলোনির ঋষভ ফাউন্ডেশন আয়োজিত শিবিরে ৮০ জন রক্তদাতা প্রস্তুত থাকলেও টিকা নেওয়ায় ২২ জন বাদ পড়েন। মাত্র ৫৮ জন রক্ত দিতে পেরেছেন। জাদুঘর চৌহদ্দিতে বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কর্মীদের সাম্প্রতিক রক্তদান শিবিরেও ১০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৬১ জন রক্ত দিতে পেরেছেন। বাকি কর্মীরা ভোটের ডিউটির জন্য টিকা নিয়ে ফেলায় আর রক্তদান করতে পারেননি। বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি এক রোগিণীকেও তাঁর নিকটাত্মীয় চিকিৎসাকর্মী রক্ত দিতে পারেননি কিছু দিন আগেই টিকা নেওয়ায়।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের (এনবিটিসি) ভার্চুয়াল বৈঠকে আলোচনা হয়, টিকা নেওয়ার অব্যবহিত পরে রক্তদান সম্ভব কি না। বৈঠকে যোগ দেওয়া এনবিটিসি-র উপদেষ্টা তথা ওয়েস্টবেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ঘোষ জানান, রক্ত সঞ্চালন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নানা মত। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ন্যূনতম ২৮ দিন রক্ত দেওয়া যাবে না। কয়েক দিন আগে সেই সিদ্ধান্ত নির্দেশিকা আকারে জানিয়েছে এনবিটিসি।
অর্থাৎ, কেউ প্রথম ডোজ নিলে, তার ২৮ দিন পরে দ্বিতীয় ডোজ পাবেন এবং তারও ২৮ দিন পর পর্যন্ত রক্তদানে তাঁকে বিরত থাকতে হবে। তার মানে, টিকাকরণ প্রক্রিয়ার আওতায় এলে মাস দুই কেউ রক্ত দিতে পারবেন না। অপূর্ব বলেন, 'ঠিক কত দিন রক্ত দেওয়া যাবে না, তা নিয়ে সারা দুনিয়ায় নানা মত থাকায় প্রস্তাব দিয়েছি, টিকা-নির্মাতা সংস্থাদের যেন এনবিটিসি চিঠি দিয়ে জানতে চায়, সংশ্লিষ্ট টিকার ক্ষেত্রে কত দিনের বিধিনিষেধ প্রযোজ্য।'

কেন এনবিটিসি-র এই বিধিনিষেধ? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, 'টিকা নেওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের চরিত্রে ও গতিবিধিতে সামান্য তাৎক্ষণিক বদল হয়। জীবিত জীবাণু বা তার অংশ নিয়ে তৈরি (যেমন কোভিশিল্ড তৈরি স্পাইক-প্রোটিন দিয়ে) টিকায় এমনটা বেশি হয়। মৃত ভাইরাস থেকে তৈরি টিকায় (যেমন কোভ্যাক্সিন) ঝামেলা কম। তাও কিছু দিন রক্তদান থেকে বিরত থাকলে ভালো। অন্যথায় ওই রক্ত রোগীর শরীরে ঢুকলে কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।'
প্রসূন জানান, হেপাটাইটিস-বি, বিসিজি, পোলিয়ো, রেবিস, টিটেনাস ইত্যাদির ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও এক থেকে তিন সপ্তাহের ব্যবধান রাখতে বলা হয় রক্তদানে। তবে করোনার টিকায় এক থেকে দু'সপ্তাহের ব্যবধানই যথেষ্ট বলে মনে করেন তিনি। তাঁর আশা, অচিরেই এনবিটিসি-র নির্দেশিকায় বদল আসবে। কমবে বিধিনিষেধের সময়সীমা। তা হলে অন্তত রক্তসঙ্কটের মোকাবিলাও কিছুটা সহজ হবে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top