সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


মালদ্বীপের কাছে ভারত মহাসাগরে পড়েছে চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ : মু: মাহবুবুর রহমান 


প্রকাশিত:
১০ মে ২০২১ ১৯:৫০

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৩৪

 

বিশ্বজুড়ে কয়েকদিনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি আর নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে স্বস্তি মিলেছে। চাইনিজ লং মার্চ ৫ বি রকেটের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে ফিরে এসেছে এবং তার  ধ্বংসাবশেষটি আছড়ে পড়েছে মালদ্বীপের কাছে, ভারত মহাসাগরে। এর মাধ্যমে কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।   

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানায়, চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষের ওই অংশটি আছড়ে পড়ার আগে এর বেশিরভাগ অংশ বায়ুমণ্ডলে থাকা অবস্থায়ই আগুনে পুড়ে যায়। রোববার (৯ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে আটটার দিকে রকেটটির ধ্বংসাবশেষ মালদ্বীপের ওপর দিয়ে পৃথিবীতে পুনরায় প্রবেশ করে। এরপর সেটি ভারত মহাসাগরে আছড়ে পড়ে। 

পর্যবেক্ষণ সংস্থা স্পেস-ট্র্যাকও নিশ্চিত করেছে, চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে সাগরে আছড়ে পড়েছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর তথ্য ব্যবহার করে স্পেস-ট্র্যাক। আর স্পেস-ট্র্যাক টুইট করে বলেছে, তারা মনে করছে, চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ ভারত মহাসাগরে পড়েছে। 

প্রায় ২১ টন ওজনের এই রকেটের টুকরোটি ছিল গত কয়েক দশকের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করা সবচেয়ে ভারী মহাকাশ বর্জ্য। চীনা রকেটের এই ধ্বংসাবশেষ শিগগিরই অনিয়ন্ত্রিতভাবে পৃথিবীতে আছড়ে পড়বে বলে আগে থেকে জানা গেলেও কোথায় সেটি পড়বে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা করা সম্ভব হয়নি। 

চীনা রকেটটির ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে ঠিক কখন ও কোথায় আছড়ে পড়বে, তা যেহেতু কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছিলো না আর তাই এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে একধরনের শঙ্কা কাজ করছিল। এই নিয়ে রীতিমতো চাপে পড়ে গিয়েছিলে নিউইয়র্ক, মাদ্রিদ, চিলি, নিউজিল্যান্ড এমনকী ভারত। 

কয়েকজন মহাকাশ বিজ্ঞানীর বরাত দিয়ে কিছু গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছিল, রকেটের ধ্বংসাবশেষ ইতালিতে আছড়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে দেশটির অন্তত ৯টি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল। সেই ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ইতালিতে কড়া সতর্কবার্তাও জারি করা হয়। 

শনিবার (৮ মে) যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, ‘লং মার্চ ৫ বি’ চীনা নভোযানের ধ্বংসাবশেষটি মধ্য এশিয়ার দেশ তুর্কমেনিস্তানের কোনো অংশে আছড়ে পড়তে পারে।   

এর আগে শুক্রবার (৭ মে) এক টুইটে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারোস্পেস করপোরেশন জানায় যে, রকেটটি নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডের আশপাশের যেকোনো জায়গায় আছড়ে পড়তে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি মালদ্বীপের পাশে ভারত মহাসাগরে এসে পড়ল। 

তবে অধিকাংশ মহাকাশ বিজ্ঞানীরাই জানিয়েছিল, চীনা রকেটটি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে পতিত হওয়ার সময়েই টুকরো টুকরো হওয়া শুরু করবে এবং অধিকাংশই আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। পুড়ে যাওয়ার পর বাকি অংশগুলোই পৃথিবীর ভূমিতে পড়বে। পৃথিবীর ৭০ ভাগই সাগর হওয়ায় সাগরে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মত দিয়েছিলো তারা। এবং শেষ পর্যন্ত রকেটটির ধ্বংসাবশেষ সাগরেই পড়ল। এ থেকে ক্ষয়ক্ষতির এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।  

পৃথিবীর কক্ষপথে ‘তিয়ানহে মহাকাশ স্টেশন’ নামে একটি মহাকাশ স্টেশন বানাতে যাচ্ছে চীন। এর অংশ হিসেবে গত ২৯ এপ্রিল প্রথম মডিউল পাঠাতে লং মার্চ ৫ বি রকেটটি উৎক্ষেপণ করে দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।  

লং মার্চ ৫ বি রকেটটি সফলভাবে মহাকাশ স্টেশনের অংশটিকে কক্ষপথে স্থাপন করতে পারলেও নিজেকে আর গ্রাউন্ড স্টেশনের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। রকেটটি মহাকাশ স্টেশন থেকে আলাদা হওয়ার পর কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। এর ভেতরের ১০০ ফুট লম্বা (৩০ মিটার) একটি অংশ রকেট থেকে আলাদা হয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে। এরপরই বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।  

 

মু: মাহবুবুর রহমান   
নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top