সিডনী রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


ভারতে নিষ্ক্রিয় হচ্ছে অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র


প্রকাশিত:
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:২১

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০১:৫১


অন্য দেশের নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগে ভারতে এবার জাতীয় পরিচয়পত্র ‘আধার’ কার্ড নিষ্ক্রিয় করতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া।

গত এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা বা কলকাতা লাগোয়া নিউ টাউন, হুগলি, পূর্ব বর্ধমানসহ বিভিন্ন জেলার অনেকেই এ সংক্রান্ত সরকারি চিঠি পেয়েছেন। খবর বিবিসি বাংলার।

‘আধার’ ভারতের জাতীয় পরিচয়পত্র হলেও এটা দেশের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। তবে আধার কার্ডের সঙ্গে ব্যাংক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা যুক্ত রয়েছে। যাদের আধার নিষ্ক্রিয় বা অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে, ব্যাংক বা অন্যান্য সরকারি পরিষেবা কী করে পাবেন তা নিয়েই এখন তারা চিন্তিত। দেখা গেছে, কোনো এলাকায় ২০ জন, কোথাও ৩০, কোথাও সাত-আটজন আবার কোনো এলাকায় ১৫ জন ‘আধার’ নিষ্ক্রিয় হওয়ার চিঠি পেয়েছেন।

‘আধার’ অকার্যকর করার চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আধার নথিভুক্তি ও হালনাগাদ’ সংক্রান্ত যে বিধি ২০১৬ সালে চালু করেছিল আধার কর্তৃপক্ষ, তার ২৮ (এ) ধারা অনুযায়ী পরিচয়পত্রগুলো নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে।

ইউআইডিএআই, বা ‘আধার’ কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে ওই বিধির যে প্রতিলিপি রয়েছে, সেটার ২৮ (এ) ধারার প্রথমেই লেখা আছে যে, ইতোমধ্যেই ‘আধার’ নম্বর আছে বা যিনি নথিভুক্ত করাতে চাইছেন, এমন বিদেশি নাগরিকদের ‘আধার’ নম্বর নিষ্ক্রিয় করা হতে পারে দুটি কারণে।

প্রথমটি, ভারতে থাকার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, দ্বিতীয়ত পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী ভারতে প্রবেশের বা বসবাসের শর্ত পূরণ না করতে পারলে ‘আধার’ নিষ্ক্রিয় করা হতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু আন্দোলনের অন্যতম নেতা সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস বলেলেন, ‘যাদের ‘আধার’ নিষ্ক্রিয় করার চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ। যতটুকু আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে খবর পেয়েছি, এদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে দুই দেশে যাতায়াত করতেন।’

সম্প্রতি ভারতের একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা মন্তব্য করেছেন যে, খুব দ্রুত সারা দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন চালু করা হবে। ‘আধার’ নিষ্ক্রিয় করার পাঠানো চিঠির সঙ্গে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ চালুর সম্পর্ক না থাকলেও বিদেশি চিহ্নিত করার জন্য যেভাবে আসামে এনআরসি চালু করা হয়েছিল, এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে তার মিল রয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি তাতে জানতে চেয়েছেন কেন হঠাৎ করে বহু মানুষের ‘আধার’ কার্ড নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হচ্ছে?

মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন, ‘আমি আপনার কাছে জানতে চাই যে হঠাৎ করে কোনো কারণ না দেখিয়ে এভাবে আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার কারণ কী? যোগ্য ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার জন্য, নাকি লোকসভা ভোটের ঠিক আগে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করার জন্য এটা করা হচ্ছে?’

মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছেন, যাদের ‘আধার’ কার্ড নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার মঙ্গলবার থেকে তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য একটি পোর্টাল চালু করবে।

ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে পূর্ব ভারতে আধার কর্তৃপক্ষের মূল দপ্তর এবং দিল্লির সদর দপ্তরে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে বিবিসি। কিন্তু কোনো ভাবেই এ বিষয়ে ইউআইডিএআইয়ের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি, ‘আধার’ নিষ্ক্রিয় করার কথা জানিয়ে চিঠিতে যে ‘হেল্পলাইন’ নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেখানেও কল করা যাচ্ছে না।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top