সিডনী শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


ইরাকে আবারও বিক্ষোভ, পুলিশের গুলিতে নিহত ৫


প্রকাশিত:
২২ জানুয়ারী ২০২০ ০৩:১০

আপডেট:
৩ মে ২০২৪ ১৪:৪০

বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ইরাকের বিক্ষোভে আবারও সহিংসতা হয়েছে। এতে তিনটি শহরে সোমবার অন্তত পাঁচ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। এর মধ্যে বাগদাদে দুই জন, উত্তরাঞ্চলীয় বাকুবাহতে দুই জন আর দক্ষিণাঞ্চলের কারবালাতে নিহত হয়েছে এক জন। বাগদাদে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের তুমুল সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল থেকে মারাত্মক আহতদের সরিয়ে নিতে দেখেছেন সাংবাদিকেরা।

নিহতের কথা স্বীকার না করে ইরাকি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৪ নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়েছে। বাগদাদ থেকে আটক করা হয়েছে নয় বিক্ষোভকারীকে। এদিকে সহিংস উপায়ে বিক্ষোভ দমন যেকোনও মূল্যে এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে ইরাকে নিযুক্ত জাতিসংঘ দূত। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সোমবার রাজধানী শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়লে নিহতের ঘটনা ঘটে। সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে আবার রাস্তায় নেমেছে দেশটির মানুষ।

বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবি পূরণে সোমবার পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দিয়েছিল। সেসব দাবির মধ্যে নতুন নির্বাচনী আইন অনুযায়ী আগাম নির্বাচনের আয়োজন, স্বাধীন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিচার শুরু করা। রোববার শুরুর পর সোমবার পর্যন্ত তরুণ বিক্ষোভকারীরা রাজধানী বাগদাদ ও তার দক্ষিণের এলাকার মহাসড়ক ও সেতুতে টায়ার জ্বালিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগদাদের এক বিক্ষোভকারী আলজাজিরাকে বলেন, আমরা আমাদের অধিকারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেছি। চাকরি পাওয়ার জন্য তরুণদের অধিকার।

তরুণ ওই বিক্ষোভকারী আরও বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে আগাম নির্বাচনের আয়োজন ও নতুন এক স্বাধীন প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করার দাবি জানাচ্ছি। যদি এটা না হয়, তাহলে আমরা আরও বিস্তৃত হয়ে শহরের সব রাস্তা ও প্রাণকেন্দ্র বন্ধ করে দেব।
বাগদাদে যেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি ইমরান খান বলেন, বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। টায়ারান স্কয়ারে সেসব বিক্ষোভকারী টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করছিল। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশের ছোড়া গুলিতে একজন মারাও গেছেন।

কাঁদানে গ্যাসে আহত ও অসুস্থ কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক। আলজাজিরার প্রতিনিধি বলছেন, ‘সহিংসতার খবর শোনার পর আরও অনেক মানুষ ঘটনা্থেলে উপস্থিত হয়েছেন। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই বিক্ষোভে সর্বোচ্চ মানুষ অংশ নিয়েছেণ। সহিংসতার ক্ষেত্রেও আজকের দিনটি এগিয়ে। ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের শহর নাসারিয়া, কারবালা এবং আমারাতেও বিক্ষোভ হচ্ছে। সেসব স্থানে বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন। চলতি মাসের শুরুতে ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার সোলেইমানি ইরাকের রাজধানী বাগদাদে নিহত হওয়ার পর তৈরি আঞ্চলিক উত্তেজনার কারণে বিক্ষোভে কিছুটা ভাটা পড়ে।

ইরাকের এই বিক্ষোভ শুরু হয় গত বছরের অক্টোবরে। তাতে মারা গেছে ৫ শতাধিক মানুষ। দুর্নীতি, দুর্বল জনসেবা ও চাকরির স্বল্পতার মতো নানা অভিযোগে সরকারবিরোধী এই বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার ইরাকি। ২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসনের পর ইরাকের কোটাভিত্তিক রাজনৈতিক পদ্ধতির অবসানের দাবিও তোলেন বিক্ষোভকারীরা। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে দুই মাস আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদি পদত্যা করেন। কিন্তু তার উত্তরসূরি নির্বাচনে ব্যর্থ হয় দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো। তারপর থেকে তিনি দেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশটিতে চরম এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছেই।


বিষয়: ইরাক


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top