১৯৭১: ভারত ও পাকিস্তানে প্রতিবাদ : সালেক খোকন
 প্রকাশিত: 
 ৭ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৫৩
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ২১:২৯
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার বিরুদ্ধে সারাবিশ্বে নানাভাবে প্রতিবাদ করেছিলেন কিছু মানুষ। ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়েই বিশ্বকে তারা আহবান জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য। ইতিহাসের পাতা থেকে নেওয়া তেমনি কিছু প্রতিবাদের কথা তুলে ধরা হলো:
আমাদের সবচেয়ে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত। ১৯৭১ সালে প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল তারা। বাংলাদেশের গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে সেখানেই হয়েছিল সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ ও ঘেরাও কর্মসূচি।
২৭ মার্চ ১৯৭১। বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার প্রতিবাদে কলকাতায় ছাত্ররা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। অতঃপর তারা প্রকাশ্যে ইয়াহিয়ার কুশপুত্তলিকা দাহ করে। এ ছাড়া গণহত্যা শুরুর তিন দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৯ মার্চ ১৯৭১ তারিখে দিল্লিতে পাকিস্তান এম্বাসি ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সহস্রাধিক ভারতীয় নাগরিক। সেদিন তাদের মুখে উচ্চারিত হয়- ‘স্বাধীন বাংলা-জিন্দাবাদ’, ‘বাংলাদেশ-জিন্দাবাদ’, ‘গণহত্যা-বন্ধ করো’ প্রভৃতি। অতঃপর এম্বাসির সামনেই এক বিক্ষোভ সমাবেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানান তারা। বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিসহ অবিলম্বে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের বাংলার মাটি ত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয় ওই সমাবেশ থেকে। সেদিন কণ্ঠ আকাশে তুলে তারা স্লোগান দেয়- ‘ইয়াহিয়া খান, ইয়াহিয়া খান, ওহাপাস যাও পাকিস্তান।’
একাত্তরে চীন ও আমেরিকার নীতিগত সমর্থন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে। তাই ভারতের মানুষ মোটর শোভাযাত্রা করে দিল্লিতে চীনা এম্বাসিও ঘেরাও করে এবং বাংলাদেশের গণহত্যা বন্ধে চীনা উদ্যোগের আহ্বান জানিয়ে স্মারকলিপি দেয়। জুন মাসের ২৫ তারিখে পশ্চিমবাংলার বাঙালিরাও বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে আমেরিকা দূতাবাসের সমানে বিক্ষোভ করে এবং স্মারকলিপি প্রদান করে। তাদের হাতে হাতে ছিল ফেস্টুন। সেখানে লেখা দাবিগুলো ছিল- `Arms aid to Pakistan is abetment of genocide’, `Stop The Ship’, প্রভৃতি। সেদিন তাদের মুখে উচ্চারিত হয়- ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’, ‘বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ- হাত উঠাও, হাত উঠাও’, ‘খুনিকা হাতিয়ার চালা-বান করো, বান করো’ প্রভৃতি।
৬ আগস্ট ১৯৭১ তারিখে বাংলাদেশকে স্বীকৃতির দাবিতে ভারতের জনসংঘ পার্টি বড় ধরনের বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং শেখ মুজিবের মুক্তিরও দাবি জানায়। বিক্ষোভকারীদের ব্যানার ও ফেস্টুনে দাবিগুলো ছিল-`Release Mujib’, `Down with Pak-Us conspiracy against Bangladesh’ প্রভৃতি। বাংলার মানুষের দুঃখকে নিজেদের মনে ধারণ করে ওইদিন তারা আওয়াজ তোলে-‘হাম সব-এক হে’। একই দাবিতে কলকাতায় ৬টি শ্রমিক ও বাম সংগঠনের উদ্যোগে ২৯ আগস্ট ২৪ ঘণ্টা হরতালও পালিত হয়।
প্রতিবাদ হয়েছিল পাকিস্তানেও। একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন বাংলাদেশের নিরস্ত্র নিরপরাধ মানুষের ওপর বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিল, তখন পাকিস্তানেও এর বিরুদ্ধে কেউ কেউ প্রতিবাদ করেছিলেন। ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চ লাইট নামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে হত্যার মাধ্যমে যে নিধনযজ্ঞ চালায় পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম নাসিম আখতার ছিলেন তার প্রত্যক্ষদর্শী। এর প্রতিবাদে মার্চের শেষ সপ্তাহে বেগম তাহিরা মাজহার আলীসহ সহযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি বিক্ষোভ করেন পাকিস্তানের লাহোরের মল রোডে। ফলে ওইদিনই তাদের গ্রেফতার করা হয়। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে কথা বলায় তার পরিবারকেও পোহাতে হয় নানা বিড়ম্বনা। এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর লাহোর কারাগারে বন্দি ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন পাকিস্তানের এ নেত্রী।
ছবি: সংগৃহীত
সালেক খোকন
লেখক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক      
বিষয়: সালেক খোকন

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: