সিডনী রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে ঘুড়ে বেড়ান যে নারী


প্রকাশিত:
২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২৩:৫৫

আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:২৪

লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে ঘুড়ে বেড়ান যে নারী

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: বাংলাদেশের এক সাহসী নারী নাজমুন নাহার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্গম পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে দেশের পতাকা বহন করে ইতোমধ্যে ঘুরেছেন ১৩০ টি দেশ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ভ্রমণে ভিসা নয়, আমি গুরুত্ব দেই লাল-সবুজের পতাকাকে। মানুষ চাঁদে গেছে পতাকা হাতে।



কিছুদিন আগে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় সাহসী এ নারীর সাথে এক আড্ডা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় নাজমুন নাহার এসব কথা বলেন।



আড্ডায় অংশগ্রহণকারীরা তন্ময় হয়ে শোনেন নাজমুন নাহারের বিশ্ব অভিযানের অভিজ্ঞতা। বিপদ সংকুল পরিস্থিতিতে তার এ দু:সাহসিক অভিযানের সময় নানান প্রতিকূল অবস্থা কিভাবে প্রতিহত করে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে ঘুরেছেন তার বর্ণনা দেন নাজমুন নাহার।



আড্ডার শুরুতে নাজমুন নাহারের বড় ভাই আমিনুল ইসলাম স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে নজমুন নাহারের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দেন অতিথিরা।



নজমুন নাহার জানান, এই দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় পৃথিবীর পথে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমাদের লক্ষ কোটি নারীকে আলোর পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, নারীদেরকে কৌশলী হতে শিখাবে। শুধু তাই নয় ভয়হীন ভাবে কিভাবে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে নিজের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে হবে সেই আল্পনা অংকিত করে যাচ্ছেন তিনি। এ যাত্রা পথে তিনি মধ্যরাতে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে আটকা পড়েছেন, সাহারা মরুভূমিতে মরুঝড়ের মধ্যে রক্তাক্ত হয়েছেন, পোকা মাকড়ের কামড় খেয়েছেন আফ্রিকার জংলী পথে, অন্ধকারে অচেনা শহরে পথ হারিয়েছেন, তিন মাস আফ্রিকাতে আলু খেয়ে ছিলেন, কখনো না খেয়ে ছিলেন! কখনো কাঠের মধ্যে, কখনো পাথরের উপর, কখনো আদিবাসীদের সাথে জঙ্গলে তাকে ঘুমাতে হয়েছে বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার হয়ে। কখনো রাতের অন্ধকারে বর্ডার ক্রস করতে না পেরে অপরিচিত স্থানীয় পরিবারের সাথে ঘুমাতে হয়েছে। কখনো পড়ে গিয়েছেন, কিন্তু ভেঙে পড়েননি, লাল সবুজের পতাকা হাতে আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। মৃত্যুর হাতছানি দেখেও মৃত্যুকে জয় করে উঠেছেন সু উচ্চ পর্বতের চূড়ায়। গেঁথে এসেছেন লাল-সবুজের পতাকা।



গার্লস গাইড করার সুবাদে তিনি স্কুল জীবনে ২০০০ সালে প্রথম ভারতের ভূপাল সফরে যান। ৮০টি দেশের পক্ষে অংশ নেয়া ছেলে মেয়েদের সামনে তুলে ধরেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। তিনি জানান, তার লক্ষ্য বিশ্বের ২০০টি দেশে বাংলাদেশের পতাকাকে পৌঁছে দিয়ে এক অনন্য রেকর্ড গড়ার মাধ্যমে পুরো বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিক মূল্যবোধকে এগিয়ে নেয়া।



নাজমুন নাহার তার সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ বর্ণনার সময় জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে ভ্রমণের সময় তাকে গভীর জঙ্গল, হিংস্র পশু, হিংস্র মানুষ, পোকা-মাকর মোকাবেলা করে এগুতে হয়েছে। কখনো বাধ্য হয়ে তিনি কাঁচা গরুর মাংসও খেয়েছেন। বিশেষ করে আফ্রিকার অনেক জায়গায় সুপেয় পানির অভাবে কষ্ট পেয়েছেন। তারপরও তিনি প্রত্যন্ত এলাকায় গেছেন বাংলাদেশের পতাকা হাতে, বাংলাদেশকে পরিচিত করতে পেরেছেন। বিশ্বের সব দেশকে একটি ছাতার নিচে দেখতে চান বাংলাদেশের এ নারী, যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি থাকবে না, থাকবে মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা আর সম্মান।



পরে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নাজমুন নাহার জানান, সুইডেনে পড়তে গিয়ে সে দেশের পাসপোর্ট তিনি নিয়েছেন একটি উদ্দেশ্যে। বিভিন্ন দেশের ভিসা পেতে সুবিধা রয়েছে এ পাসপোর্টে। সেদেশে একটি গবেষনা প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করে যা আয় করেন সে টাকা দিয়েই তিনি দেশে দেশে ঘুরেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশে ইয়ুথ হোস্টেল আছে যেখানে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।



নজমুন নাহার ১০০ তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন পূর্ব আফ্রিকার জিম্বাবুয়েতে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের উপর ১ জুন ২০১৮ সালে। সর্বশেষ ১৩০ তম দেশ হিসেবে ভ্রমণের রেকর্ড কানাডায় এ বছরের ২৩ আগস্ট। অভিযাত্রার সঙ্গী হিসেবে ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মাকে নিয়ে ঘুরছেন পৃথিবীর ১৪ টি দেশ।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top