সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর ২০২৪, ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজলকে ওয়াশিংটনে পরিচয় করিয়ে দিলেন ড. বদিউল আলম  


প্রকাশিত:
২৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৮

আপডেট:
৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০১:২৫

ছবি: সংগ্রহ

 

সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় সদ্য নিয়োগ পাওয়া রাষ্ট্রদূত ও প্রবাসী সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি অনুষ্ঠানে কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে সন্ধ্যায় বাস বয় অ্যান্ড পয়েটসের হলরুমে এই অনুষ্ঠান হয়। সেখানে ড. বদিউল আলম মজুমদারের লেখা ‘টুডে আই স্য এ রেভ্যুলুশন ফরম গ্রাস রুটস টু গ্লোবাল চেঞ্জ’ বইয়ের প্রকাশনা উপলক্ষে ‘অ্যা কনভারসেশন উইথ ড. বদিউল আলম মজুমদার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিশিষ্ট লেখক ক্যাথে বার্ক’র সঞ্চালনায় বইটির বিষয়ে আলোচনা করেন দারিদ্র্যবিমোচন সংস্থা হাঙ্গার প্রজেক্ট এর বোর্ড সদস্য ড. জন কনরড এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ড. বদিউল আলম মজুমদার। অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটন ডিসির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

মুশফিকুল ফজল আনসারীকে পরিচয় করানোর সময় হলরুমে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা এস ব্লুম বার্নিকাট, বিভিন্ন কূটনীতিক, ইউএসএআইডি এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিসহ উপস্থিত সকলে রাষ্ট্রদূত মুশফিককে করতালি দিয়ে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানান। ড. বদিউল আলম মজুমদারের কাছে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী প্রশ্ন করেন- আপনার সাহসী অবস্থানের কারণে অনেকটা আয়নাঘরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলেন, একটু আগে যা বললেন। অন্যদিকে, আমাদের নাগরিক সমাজ যদি আমি বলি, অনেকটা আপস করেছিল। আপনি কি মনে করেন এখন নাগরিক সমাজ গণতন্ত্র রক্ষার চ্যালেঞ্জটি মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে?

জবাব দেওয়ার আগে বদিউল আলম মজুমদার প্রথমে মুশফিককে থামিয়ে বাংলাদেশের সাহসী যোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করে উপস্থিত বিশিষ্টজনদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, মুশফিক হচ্ছেন বাংলাদেশের এখন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রদূত। আপনারা সকলে তাকে শুভেচ্ছা জানান। কেননা, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের যত খারাপ এবং অঘটন ঘটত তখনই মুশফিক তার প্রতিবাদে কণ্ঠ উচ্চারিত করেছে। পরে উপস্থিত সকলে রাষ্ট্রদূত মুশফিককে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানান।

প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমি মনে করি পরিস্থিতি এখনো সেরকম হয়নি, তবে আগের চেয়ে পরিস্থিতি এখন ডিসিপ্লিনড। বিরাট সংখ্যক জনগণ দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, আয়না ঘর ইত্যাদির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিল। আমি মনে করি বাংলাদেশে একটি গতিশীল সিভিল সোসাইটি ছিল। কিন্তু এটা ঠিক বিগত সরকারের সময় আমাদের সিভিল সোসাইটি অগ্রণী ভূমিকা ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং আমি মনে করি নাগরিক সমাজ যদি তাদের ভূমিকা রাখতে পারেন তাহলে গণতন্ত্রের প্রশ্নে সবকিছুই করা সম্ভব।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। সেসময় আমি এ বিষয়ে লেখালেখি এবং প্রতিবাদ করলে কিছু মানুষ আশ্চর্য হয়েছিলেন যে, আমাকে আয়নাঘরে এখনো কেনো নেওয়া হয়নি? কেননা, সেসময় যারাই সরকারের অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে তাদের আয়নাঘরে নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে দমন করা হতো। যেটাকে জেলখানা বলা যায়। সেখানে যাদের নেওয়া হতো তাদের জীবন বলে কিছু থাকত না। এমনকি অন্য কারও সঙ্গে যোগাযোগ একেবারেই বন্ধ থাকত। সুতরাং বাস্তবতা হলো ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা বাতিলের রাজনীতি’ শীর্ষক আমি একটি বই লিখেছি। ফলে অনেকেই আশ্চর্য হয়েছিলেন যে আমাকে কেনো আয়না ঘরে নেওয়া হয়নি?

অনুষ্ঠানে একজন বাংলাদেশি প্রশ্ন করেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার করার বিষয়ে আপনি যদি কোনো কাজ না করেন বা আপনি চেষ্টা করেও যদি ব্যর্থ হন তাহলে কী হবে? কিংবা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে কতো সময় লাগবে? জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বার বার চেষ্টা করে যেতে হবে এবং সেটি পূর্ণভাবে কাজ না করা পর্যন্ত চেষ্টা করতে হবে। কারণ আমরা একটি উন্নত বাংলাদেশ চাই। কেননা বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে লাখ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে। বাংলাদেশের সদ্য বিপ্লবও কিন্তু বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। সুতরাং তাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। কারণ তারা কোনো দ্বিধা ছাড়াই তাদের জীবন এবং রক্ত দিয়েছেন। সেজন্যই কী করতে পারি সেটা না জানলেও এ বিষয়ে কিছু করা হবে সে ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলাদেশের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা এস ব্লুম বার্নিকাটের প্রশ্নের জবাবে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থানের বাংলাদেশ নির্মাণ করতে সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছি। এ বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আকৃষ্ট করা হচ্ছে। নাগরিক সমাজের ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। তাদেরক বলছি যে- রাজনীতি ভিন্ন হতে পারে কিন্তু একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আমাদের মতৈক্য হতে হবে।

প্রসঙ্গত, প্রকাশিত বইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদিউল আলম মজুমদারকে নিয়ে কয়েকটি লেখা স্থান পেয়েছে। এছাড়া বইটি সম্পর্কে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ভূমিকা লিখেছেন। ড. বদিউল আলম ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গমন করার পর, উচ্চশিক্ষা শেষ করে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সিয়াটোল ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি ও সেন্ট্রাল ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। এ ছাড়া ১৯৮০ সালে কিছুকাল তিনি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন।

১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৯৩ সালের মাঝামাঝিতে দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সাথে যুক্ত হন। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) বোর্ড অব গভর্নরস্-এর একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তিনি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ড. মজুমদারকে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রধান নিযুক্ত করেছেন।

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top