সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের করোনা টিকা দেয়া শুরু কিন্তু মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা পাচ্ছেন না করোনা টিকা : মু: মাহবুবুর রহমান


প্রকাশিত:
১২ আগস্ট ২০২১ ২০:০৯

আপডেট:
১২ আগস্ট ২০২১ ২০:২৪

 

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের কক্সবাজারের ৩৪টি ক্যাম্পে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। যেখানে সামাজিক দূরত্ব মানার তেমন সুযোগ নেই বললেই চলে। করোনার প্রথম ঢেউয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেড়েছে সংক্রমণ। এখন পর্যন্ত ক্যাম্পগুলোতে করোনা আক্রান্ত হয়েছে আড়াই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। আর মারা গেছেন ২৯ জন। তবে ক্যাম্পে গাদাগাদি করে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে সত্যিকার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেশি হবে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের৷
এ অবস্থায় মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যূত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের গত ১০ আগস্ট থেকে করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গাকে চীনের সিনোফার্মের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুরুতে ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সী রোহিঙ্গাদের দেয়া হচ্ছে এই টিকা।
কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে উখিয়ায় ৪৬টি এবং টেকনাফের ১০ টি কেন্দ্রসহ মোট ৫৬টি কেন্দ্রে এই করোনা টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকা নিতে আগতদের তথ্য ব্যবস্থাপনা ও নির্দেশনা বুঝতে সহযোগিতা করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ‘ফ্যামিলি কাউন্টিং নাম্বার’ বা পরিবার পরিচিতি নম্বর দেয়া হয়েছে। মূলত এ নম্বরের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের টিকা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ তো গেলো বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের করোনা টিকা পাবার চিত্র কিন্তু মিয়ানমারে এখনো অবস্থানরত ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গারা করোনা টিকাদান কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে কোভিড-১৯ টিকাদান শুরু করেছে দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষ। তবে আশ্রয়শিবিরগুলোতে কিংবা শিবিরগুলোর বাইরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের এ উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই বলে জানা গেছে। এমনটাই জানিয়েছেন জান্তা নিযুক্ত স্থানীয় প্রশাসক খিউ লিউইন। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন তথ্য জানায়।
খিউ লিউইন রাখাইনের সিত্তে এলাকা থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সিত্তে অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা বিভিন্ন শ্রেণি ও গোষ্ঠীর মানুষ যেমন: বয়স্ক ব্যক্তি, স্বাস্থ্যকর্মী, সরকারি কর্মী ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মধ্যে ১০ হাজার টিকা প্রদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান এ কর্মসূচিতে আশ্রয়শিবিরগুলোতে বসবাসকারী কোনো রোহিঙ্গা মুসলিমকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নেই।
এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য আরও প্রকট হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে লিউইন কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা শুধু নির্দেশ পালন করছি।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘টিকাদান কর্মসূচিতে কারা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন, তা নির্ভর করছে আমরা কত টিকা পাচ্ছি ও আমাদের কী নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে, তার ওপরে। এখন পর্যন্ত আমরা রোহিঙ্গাদের টিকাদান কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো ধরনের নির্দেশনা পাইনি।’’
বিতর্কিত টিকাদান পরিকল্পনা বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে মিয়ানমারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল রয়টার্স। কিন্তু তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মিয়ানমারে বর্তমানে গড়ে ৩০০ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের ধারণা, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। অন্যদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত ব্যক্তিদের ব্যাপারে কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে না জান্তা কর্তৃপক্ষ।

 

মু: মাহবুবুর রহমান
নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top