আজকের বিষয় হাতুড়ে ডাক্তার
প্রকাশিত:
৪ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:৩০
আপডেট:
৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:৩৫
ভাস্কর ব্যানার্জী: একবার দেখে যাও ডাক্তারি কেরামৎ ---
কাটা ছেঁড়া ভাঙা চেরা চটপট মেরামৎ ।
কয়েছেন গুরু মোর, "শোন শোন বৎস,
কাগজের রোগী কেটে আগে কর মকস'।
উৎসাহে কি না হয় ? কি না হয় চেষ্টায় ?
অভ্যাসে চটপট হাত পাকে শেষটায় ।
খেটে খুটে জল হল শরীরের রক্ত---
শিখে দেখি বিদ্যেটা নয় কিছু শক্ত ।
কাটা ছেঁড়া ঠুক ঠাক, কত দেখ যন্ত্র,
ভেঙে চুরে জুড়ে দেই তারও জানি মন্ত্র।
চোখ বুজে চটপট বড় বড় মূর্তি,
যত কাটি ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস তত বাড়ে ফুর্তি।
ঠ্যাং-কাটা গলাকাটা কত কাটা হস্ত,
শিরিষের আঠা দিয়ে জুড়ে দেই চোস্ত।
এইবারে বলি তাই, রোগী চাই জ্যান্ত---
ওরে ভোলা, গোটাছয় রোগী ধরে আনত !
গেঁটেবাতে ভুগে মরে ও পাড়ার নন্দী,
কিছুতেই সারাবে না এই তার ফন্দি---
একদিন এনে তারে এইখানে ভুলিয়ে,
গেঁটেবাত ঘেঁটে-ঘুঁটে সব দেব ঘুলিয়ে।
কার কানে কটকট কার নাকে সর্দি,
এসো, এসো, ভয় কিসে? আমি আছি বদ্যি।
শুয়ে কে রে? ঠ্যাং-ভাঙা? ধরে আন এখেনে---
স্ক্রুপ দিয়ে এঁটে দেব কি রকম দেখেনে।
গালফোলা কাঁদ কেন? দাঁতে বুঝি বেদনা ?
এসো, এসো, ঠুকে দেই-- আর মিছে কেঁদো না,
এই পাশে গোটা দুই, ওই পাশে তিনটে---
দাঁতগুলো টেনে দেখি-- কোথা গেল চিমটে ?
ছেলে হও, বুড়ো হও, অন্ধ কি পঙ্গু,
মোর কাছে ভেদ নাই, কলেরা কি ডেঙ্গু---
কালাজ্বর, পালাজ্বর, পুরানো কি টাটকা,
হাতুড়ির একঘায়ে একেবারে আটকা !
(হাতুড়ে, সুকুমার রায়)
বাংলা উইকিপিডিয়া অনুসারে, হাতুড়ে ডাক্তার হচ্ছে এমন ব্যক্তি যারা চিকিৎসাশাস্ত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা আছে বলে দাবি করে কিন্তু রোগ নির্ণয়ে হাতড়ে বেড়ায়। অল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অদক্ষ এসব তথাকথিত ডাক্তার প্রায় সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেয়, সব রোগের চিকিৎসা করে, যদিও সেসব চিকিৎসা সম্বন্ধে তাদের তেমন কোন জ্ঞান নেই, থাকলেও খুবই সামান্য। এদের চিকিৎসা পেশার ভিত্তি প্রধানত দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা অথবা স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে পরিচিতি ও চিকিৎসা কেন্দ্রে চাকরি।
যেকোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সহকারী হিসেবে কিংবা নিবন্ধনপ্রাপ্ত চিকিৎসকের কাজে সাহায্য করে অথবা ওষুধের দোকানে বা চিকিৎসকের ডিসপেনসারিতে ওষুধ তৈরি ও বিক্রির কাজ করার মাধ্যমে এদের অধিকাংশই চিকিৎসার অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এ সময় কতকগুলি সাধারণ রোগের উপসর্গের সঙ্গে ক্রমে এদের পরিচিয় হয়। এসব রোগের চিকিৎসায় ব্যবহূত ওষুধ ও অন্যান্য দ্রব্যের নাম শিখে নেয় এবং ক্রমে থার্মোমিটার, স্টেথোস্কোপ, রক্তচাপ মাপার যন্ত্র ইত্যাদির ব্যবহার শেখে। সেসঙ্গে শরীরে ইনজেকশন ও আন্তঃশিরায় তরল পদার্থ প্রবেশ করানোর কৌশলও রপ্ত করে। অধিকাংশ হাতুড়ে ডাক্তার এ ধরনের জ্ঞান সম্বল করে তাদের পেশা শুরু করে। অনেকের এ ধরনের প্রাথমিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাও থাকে না, বিশেষ করে যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা পেশায় নিযুক্ত থাকে।
বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশসমূহের গ্রামীণ এলাকায় শত শত হাতুড়ে চিকিৎসক চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হয়েছে। এদের মধ্যে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক থেকে হেকিম, কবিরাজ, ধাত্রী, আয়া, সাপুড়ে, ওঝা থেকে হাড়-বসানোর বিশেষজ্ঞ এবং রক্ত-মোক্ষণকারী পর্যন্ত রয়েছে। যদিও কখনও কখনও ভুল রোগনির্ণয় ও ভুল চিকিৎসার কারণে রোগকে জটিল পর্যায়ে নিয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য এরা মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিসেবা স্তরে এরাই জনশক্তির এক বড় উৎস।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের বাসিন্দা গৌতম নিজেকে ডাক্তার হিসাবে পরিচয় দেন।
তার গ্রামের লোকজনও তা মেনে নিয়েছেন এবং অসুখ হলে তার ওষুধের দোকান-কাম চেম্বারে চলে আসেন।
কিন্তু গৌতমের কোনো ডাক্তারি ডিগ্রি তো দূরের কথা, কোনো প্রশিক্ষণও নেই। কিন্তু স্বীকার করলেন, তিনি তার রোগীদের অ্যান্টি-বায়োটিকও দেন।
গৌতমের মতো হাজার হাজার হাতুড়ে ডাক্তার ভারতের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে আছে। জর-জরা থেকে শুরু করে জটিল রোগের চিকিৎসা করেন তারা, যদিও পুরোটাই বেআইনি।
এক হিসাবে, ভারতের যারা নিজেদের ডাক্তার হিসাবে পরিচয় দেন, তাদের অর্ধেকেরই কোনো ডিগ্রি নেই। যে সব গ্রামে কোনো ডাক্তার নেই, এই হাতুড়েরাই সেখানে মানুষের ভরসা।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি এই হাতুড়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে তৈরির একটি বিতর্কিত স্কিম চালু করা হয়েছে।
এই পরিকল্পনার কথা প্রথম মাথায় আসে ড. অভিজিৎ চৌধুরীর, যিনি লিভার ফাউন্ডেশন নামে একটি মেডিকেল দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত।
কেন তার মাথায় এই চিন্তা এলো এমন প্রশ্নের জবাবে ড. চৌধুরী বলেন, ‘এই লোকগুলো তাদের এলাকায় সম্মানিত। মানুষজন তাদের ওপর ভরসা করে। সুতরাং, স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় তাদের যুক্ত করলে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। তবে তাদেরকে কিছু প্রশিক্ষণ দিতে হবে, বলতে হবে কোনটাতে তারা হাত দেবেন, আর কোনটায় দেবেন না।’
‘বিনামূল্যে এই প্রশিক্ষণের শর্ত হচ্ছে, তারা আর নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দিতে পারবেন না, বরঞ্চ নিজেদের স্বাস্থ্যকর্মী বলবেন। আমরা তাদের বার বার বলি, আপনারা ডাক্তার নন, আপনারা ডাক্তার নন।’
ড. চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মনে করি, প্রশিক্ষিত এসব স্বাস্থ্যকর্মী হাইপার-টেনশন, রক্তে শর্করা বা আরও কিছু জটিল রোগের প্রাথমিক উপসর্গ নজরদারি করতে দারুণভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে।’
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারও এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে হাজার হাজার হাতুড়ে ডাক্তারকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
হাতুড়ে ডাক্তার কিভাবে কোকাকোলা আবিষ্কার করলেন সেই কাহিনী বলছি।
পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হলো কোকাকোলা।বাচ্চা থেকে বুড়ো সবার পছন্দ কোকাকোলা।গ্রীষ্মকালে কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন পান করে।এমনকি বছরের অন্য সময় গুলোতেও মানুষ কোকাকোলা পান করে।কিন্তু এই কোকাকোলা কিভাবে আবিষ্কার হলো জানেন? চলুন জেনে নিই সেই কাহিনী।জন স্মিথ পেমবার্টন হলেন কোকাকোলার আবিষ্কারক।প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন একজন হাতুড়ে ডাক্তার এবং একজন রসায়নবিদ।তিনি নিজের তৈরি করা ওষুধ বিক্রি করতেন আর আবিস্কার নিয়ে মেতে থাকতেন।তিনি 1886 সালে একটি সিরাপ আবিস্কার করেন।তিনি বলেন এটি মাথা ব্যাথার টনিক।প্রথম দিকে সিরাপটি ঠান্ডা জলের সাথে মিশিয়ে প্রতি গ্লাস 5 সেন্ট দরে বিক্রি করা হতো।ভালই বিক্রি চলছিল ।কিন্তু একদিন ঘটলো এক অবাক করা কান্ড।একটা লোক প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে তার কাছে এলো।সে তাকে সিরাপ দিলো কিন্তু সেই সিরাপে ঠান্ডা পানীয়ের বদলে তাড়াহুড়ো তে কার্বনেটেড মেশানো পানীয় মিশিয়ে দেন।
যতক্ষণে তিনি বুঝতে পেরেছেন ততক্ষণে লোকটি সিরাপটি খেয়ে ফেলেছেন।মজার ব্যাপার হলো তিনি বিচিত্র সিরাপ টি খেয়ে আনন্দ পান।তখনই পেমবার্টন এর মাথায় পানীয়টি বাজারজাত করার আইডিয়া আসে।প্রথম বছরে তিনি 50 ডলার আয় করেন কিন্তু 70 ডলার গচ্চা যায়।
তারপর আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হতে থাকে কোকাকোলা।আর এখনতো সারাবিশ্বে এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।প্রতি সেকেন্ডে 8000 টি করে কোকাকোলা বিক্রি হয়।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: