বিশ্ববাজারে পাম তেলের দাম ১৪ শতাংশ কমেছে
 প্রকাশিত: 
 ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:১৯
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:১৮
                                বিশ্ববাজারে অবশেষে পাম তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি থেমেছে। শুধু থামেইনি, বরং কমতেও শুরু করেছে। গত দুই সপ্তাহে পণ্যটির দাম প্রায় ১৪ শতাংশ কমেছে। আর প্রতি টন হিসাবে কমেছে প্রায় ১৫০ মার্কিন ডলার। দাম কমার এই খবর বাংলাদেশের ক্রেতাদের জন্য স্বস্তির হতে পারে। কারণ, বিশ্ববাজারে দাম কমার পর দেশের পাইকারি বাজারেও পাম তেলের দাম ইতিমধ্যে কমতে শুরু করেছে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে তিন সপ্তাহ আগে প্রতি লিটার পাম তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৫৪ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার সেই পাম তেল বেচাকেনা হয়েছে ১৪৩ টাকা লিটার দরে। খুচরা পর্যায়ে অবশ্য এখনো পুরোপুরি দাম কমার প্রভাব পড়েনি। পণ্য বিপণনকারী সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে খুচরায় বর্তমানে প্রতি লিটার পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৬ থেকে ১৫৭ টাকায়।
বাংলাদেশে প্রধান দুটি ভোজ্যতেল হচ্ছে সয়াবিন ও পাম। দুটি তেলের মোট আমদানির প্রায় ৭০ শতাংশই পাম তেল। মূলত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং প্রসাধন ও কাপড় ধোয়ার ডিটারজেন্ট শিল্প ও হোটেল-রেস্তোরাঁতেই পাম তেল বেশি ব্যবহৃত হয়। আবার সয়াবিনের চেয়ে কম দামের কারণেও এটি নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে প্রধান ভোজ্যতেল হয়ে উঠেছে।
* তিন সপ্তাহ আগে চট্টগ্রামে পাইকারিতে প্রতি লিটার পাম তেল ১৫৪ টাকায় বিক্রি হতো, যা কমে গতকাল ১৪৩ টাকা হয়।
* গত ৫ ডিসেম্বর বিশ্ববাজারে প্রতি টন পাম তেল বিক্রি হয় ১ হাজার ১৩০ ডলারে, যা ১৮ ডিসেম্বর ৯৭৪ ডলারে নেমেছে।
বাংলাদেশে পাম তেল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। বছরে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন পাম তেল আমদানি হয়। এ তেল আমদানিতে বছরে দেশের প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাম তেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ১৪৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে পণ্যটি আমদানিতে খরচ কমবে। তাতে ডলারের ওপরও কিছুটা চাপ কমতে পারে।
যে কারণে উত্থান থেকে পতন
মালয়েশিয়ায় উৎপাদন কম ও ইন্দোনেশিয়ায় আগামী জানুয়ারিতে বায়োডিজেলে পামবীজের ব্যবহার ৫ শতাংশ বাড়বে, এমন আভাসের কারণে তিন মাস ধরে পাম তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ পূর্বাভাস দিয়েছিল, ২০২৪-২৫ মৌসুমে দেশ দুটি, অর্থাৎ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে পাম তেল রপ্তানি ১৪ লাখ টন কমতে পারে। তাতে অবস্থা এমন হয় যে গত নভেম্বর মাসে সয়াবিন তেলকে ছাড়িয়ে যায় পাম তেলের দাম।
পণ্যবাজার বিশ্লেষক আসির হক প্রথম আলোকে বলেন, পাম তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি থেমেছে মূলত দুটি কারণে। এক. উৎপাদনশীল দেশগুলোতে সয়াবিন বীজের উচ্চ ফলন ও রপ্তানি বৃদ্ধি আভাস পাওয়া গেছে। দুই. দাম বেশি বাড়ায় চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোতে পাম তেলের আমদানি কমার আভাস রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ চলতি মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, শুধু ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০২৪-২৫ মৌসুমে সয়াবিন রপ্তানি প্রায় ছয় লাখ টন বাড়তে পারে। অন্যদিকে ভারত ও চীনে পাম তেলের আমদানি কমতে পারে সাড়ে ১২ লাখ টন।
পণ্য লেনদেনের কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বুশরা মালয়েশিয়ান ডেরিভেটিভসে দেখা যায়, পাম তেলের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে ৫ ডিসেম্বর। সেদিন মালয়েশিয়ায় প্রতি টন পাম তেল বিক্রি হয় ৫ হাজার ১৩৫ রিঙ্গিত বা ১ হাজার ১৩০ ডলারে, যা ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। এরপর দুই সপ্তাহ ধরে কমছে পাম তেলের দাম। সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বর প্রতি টন পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৪২৯ রিঙ্গিত বা ৯৭৪ ডলারে। সে হিসাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাম তেলের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বাংলাদেশে সরাসরি অপরিশোধিত পাম তেলের পরিবর্তে আরবিডি (পরিশোধিত, হালকা ও গন্ধযুক্ত) আকারে আমদানি হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল বুকিং দেওয়া পাম তেল আগামী জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আরবিডি আকারে আনতে প্রতি টন খরচ পড়বে ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ ডলার। আগে বুকিং দেওয়া যে তেল এখন চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে, সেটির প্রতি টন দাম পড়ছে ১ হাজার ২৬০ থেকে ২৭০ ডলার। সে হিসাবে বর্তমানে যে তেল আসছে, তার তুলনায় আগামী জানুয়ারিতে আসা তেলের টনপ্রতি দাম ৮০ থেকে ১০০ ডলার কম।
ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ
বিশ্ববাজারে পাম তেলের দাম কমতে থাকায় দৃশ্যত ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কারণ, বাজারজাত হওয়ার আগে পাইপলাইনে থাকা পাম তেলে এখনই লোকসানের হিসাব কষতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে জানুয়ারি পর্যন্ত যেসব পাম তেল আমদানি হবে, তার দাম পরিবহন খরচসহ পড়ছে ১ হাজার ২৬০ থেকে ২৭০ ডলার, যা বর্তমান বিশ্ববাজারের তুলনায় টনপ্রতি ৮০ ডলার কম। এর অর্থ বিশ্ববাজারে বর্তমান দরের তুলনায় আমদানিকারকদের বিপুল অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে।
ভোজ্যতেল আমদানিকারকেরা জানান, ভোগ্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে অস্থিতিশীল হচ্ছে ভোজ্যতেলের বাজার। বিশ্ববাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দামে উত্থান-পতন হয় সবচেয়ে বেশি। ফলে এই তেলের দামে কখন আবার উত্থান হয়, সেই হিসাব মেলানো কঠিন।
বিষয়:

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: