বেসরকারী শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন : ওসমান গনি
 প্রকাশিত: 
 ৭ অক্টোবর ২০২০ ২১:২০
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ২১:২৯
মানুষের ৫টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে শিক্ষা একটি অন্যতম চাহিদা। সরকারের শিক্ষাখাতকে শতভাগ উন্নীত করার জন্য সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছিল বেসরকারী শিক্ষাব্যবস্থা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, এমন কি অনেক বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারীভাবে। তারা কোন সরকারী সাহায্য সহযোগীতা পেত না। এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীদের বেতন/ ভাতা দিয়ে চলত। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনার আক্রমনে আজ আমাদের বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা একবারেই হযবরল অবস্থা।
করোনার ছোবলে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে শিক্ষা খাতের সবচেয়ে বড় অংশের যোগান দেয়া বেসরকারী শিক্ষাব্যবস্থা। টানা সাত/ আট মাসের বন্ধে অর্থ সঙ্কটে চিরতরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিশুদের কিন্ডারগার্টেন, বেসরকারী স্কুল, কলেজসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিজের প্রিয় প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিচ্ছেন উদ্যোক্তা ও শিক্ষকরাই। ‘ফার্নিচারসহ স্কুল, ‘কলেজ বিক্রি হইবে’ ‘স্কুল ভবন ভাড়া হবে’ কিংবা ‘টু-লেট’ রাজধানীসহ দেশের অনেক জেলা,উপজেলা ও বিভাগীয় শহরের বহু অলিগলি সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গায়ে এখন বিজ্ঞাপন চোখে পড়ছে। শত শত শিক্ষক ও উদ্যোক্তা নিজের প্রতিষ্ঠান বিক্রি ও বন্ধ করে দিয়ে পেটের তাগিদে খুঁজছেন অন্য পেশা। সারাদেশেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিক্রি ও বন্ধের খবর মিলছে বিভিন্ন মিডিয়ায়। বহু শিক্ষক চাকরি হারিয়ে বিকল্প পেশা বেছে নিয়েছেন। অনেকেই চলে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে।
‘ভালো নেই বেসরকারী শিক্ষাখাতের লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার। রাজধানীতেই দুই শতাধিক ছোট বড় কেজি স্কুল ও কলেজ বিক্রির উদ্যোগ ও চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অর্ধাহারে-অনাহারে কাটছে লাখ লাখ শিক্ষক, কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের। করোনার ছোবলে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সব কিছু। অনেকে চাকরি হারিয়ে জীবন বাচানোর তাগিদে শহর ছেড়ে চলে গেছেন গ্রামে। লোকলজ্জার ভয়ে কিছু করতে না পেরে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
সরকারী বা এমপিও ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ সকলে সরকারী বেতন/ ভাতা নিয়মিত পেয়ে যাচ্ছেন যদিও তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু সরকারের শিক্ষাখাতের শিক্ষার মান ও হার বাড়াতে যারা নিজ উদ্যেগে এগিয়ে আসছিলেন আজ দেশের এই দুর্যোগসময় তাদের খবর কেউ নেয়নি। সত্যিই এটা একটা বেদনাদায়ক ঘটনা।
শিক্ষা খাতের ৮৫ ভাগেরও বেশি যোগান দেয়া বিশাল এ অংশের বর্তমান আর্থিক সঙ্কট ও ভবিষ্যতের আর্থিক দুরবস্থা বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে একটা বিহিত ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। নতুবা ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম ও বেসরকারী শিক্ষাব্যবস্থা।
বর্তমানে সারাদেশে ৬০ হাজারের মতো কিন্ডারগার্টেন এবং সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক কোটিরও বেশি শিশু শিক্ষালাভের সুযোগ পাচ্ছে। এ ছাড়াও ১০ লক্ষাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছিল। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে তাদের পরিবারবর্গ। এ বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যার আহার জোগানো এখন কষ্ট। কোন শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রাইভেট টিউশনও করতে পারছে না এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় না থাকায় বেতনও পাচ্ছেন না। অনেকেই জীবন বাঁচাতে শ্রমিকের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকে ফল বিক্রি করছেন। অনেকে ছোট খাটো মুদি দোকান দিয়ে কোনমতে জীবর রক্ষা করছেন। এ বিষয়ে সরকারের এগিয়ে আসা বড় বেশি প্রয়োজন।
শিক্ষার সবচেয়ে বড় অংশের যোগান দেয়া বেসরকারী খাতের অধিকাংশ উদ্যোক্তা, শিক্ষক ও কর্মচারী সমিতির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধার জন্য আবেদন করা হয়েছে। কেউ কেউ আবেদনের পর সংবাদ সম্মেলনেও দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন। শিশুদের কিন্ডারগার্টেনসহ বেসরকারী স্কুল, কলেজ, থেকে শুরু করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা সকলেই সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। সহায়তা চেয়েছে ইংলিশ মিডিয়াম ও কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরাও।
ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে
ওসমান গনি
সাংবাদিক ও কলামিস্ট 
বিষয়: ওসমান গনি

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: