বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু: জুমার নামাজে লাখো মুসল্লি
 প্রকাশিত: 
 ১৮ জানুয়ারী ২০২০ ১১:৩৮
 আপডেট:
 ১৮ জানুয়ারী ২০২০ ১১:৫৯
                                প্রভাত ফেরী ডেস্ক: ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে মুখরিত টঙ্গীর তুরাগ নদের পূর্ব তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই জুমার নামাজকে ঘিরে সকাল থেকেই তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির ঢল নামে।
ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজের ইমামতি করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোশারফ। নামাজ আদায় করার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে ছুটে আসেন নানা বয়সি মানুষ। দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এসেছেন অনেকেই। তিলধারণের ঠাঁই ছিল না প্রায় ১৬০ একর জমিতে তৈরি করা বিশাল ছাউনির নিচে। এর আগে ফজরের নামাজের পর বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
দ্বিতীয় পর্বে শুক্রবার বয়ানে বিশিষ্ট আলেমগণ বলেন, পরকালের চিরস্থায়ী সুখ শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজে কঠিন মেহনত করতে হবে। ঈমান আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না।
বয়ানে যা বলা হয় : বয়ানে বলা হয়, জুমার নামাজ আদায়ের লক্ষে গোসল-অজু করে মসজিদের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর থেকে তার নেকি লেখা হয়। আমরা যা করব আল্লাহকে রাজি করার জন্য করব। আল্লাহ পাকের হুকুম মতো আমরা যেন সারা জীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দ্বীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে।
বয়ানে আরও বলা হয়, জুম্মার দিন একটি পবিত্র দিন, সপ্তাহের সেরা দিন। সবচেয়ে উত্তম দিন হলো এদিন। এটি হলো সবচেয়ে বড় ও সম্মানি দিন। এটি দুই ঈদের চেয়েও ফজিলত পূর্ণ। এদিনে হজরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়। এদিনই দুনিয়া ধ্বংস হবে। এদিনে হারাম ছাড়া আল্লাহর কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে দেবেন।
মুসল্লিদের ঢল : ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের শুরুর দিন জুমার দিন হওয়ায় সকাল থেকেই গাজীপুর এবং রাজধানী ঢাকার উত্তরা ছাড়াও টঙ্গী-এর আশপাশের এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ইজতেমায় বৃহত্তর জুমার নামাজে অংশ নিতে পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন।
সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং : প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বেও বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য ৮টি কন্ট্রোল রুম, ১৫টি তোড়ন, পুলিশ বিভাগের জন্য ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার, র্যাবের জন্য ১০টি স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীর জন্য ৪০০টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। ওজু, গোসল, পয়ঃনিষ্কাশন, সুপেয় পানির জন্য ১৩টি গভীর নলক‚প ৩ কোটি ৫৪ লাখ গেলন পানি প্রতিদিন সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৬০০ ড্রাম বিলিচিং পাউটার, ২ হাজার লিটার কেরসিন, ৬০টি গার্বেস ট্রাক, বর্জ্য অপসারণ করবে। ৬০টি ফগার মেশিন মশক নিধন করবে। নদী ব্রিজের ৩টি নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করা হয়েছে।
তিন মসুল্লির মৃত্যু : টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিয়ে বার্ধক্যজনিত রোগে বৃহস্পতিবার রাতে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তার নাম কাজী আলাউদ্দিন (৬৬)। তিনি সুনামগঞ্জের লক্ষীপুর চাঁনপুর এলাকার হজরত আলীর ছেলে। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. মনজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে আলাউদ্দিন নিজ খিত্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে স্থানীয় শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে যোগ দিতে আসার পথে পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন, নরসিংদী জেলার বেলাব থানার সুরুজ মিয়া (৬০) ও গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানা এলাকার গোলজার (৪০)। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মো. মনজুর রহমান জানান, ইজতেমা ময়দানে আসার পথে রাত ১১টার দিকে টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে প্রথমে ধাক্কা ও পরে চাপা পড়ে মারা যান মুসল্লি সুরুজ মিয়া। এদিকে একই রাতে টঙ্গী জংশনে ট্রেন থেকে নেমে মালপত্র গুছিয়ে ময়দানে আসার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মারা যান মুসল্লি গোলজার হোসেন।
বিষয়:

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: