কবজি ব্যথার আধুনিক চিকিৎসা
 প্রকাশিত: 
 ৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৩৮
 আপডেট:
 ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৩৭
                                প্রভাত ফেরী ডেস্ক: কবজি ব্যথা খুব সাধারণ একটি সমস্যা হলেও এর তীব্র ব্যথায় অনেকে কাতর হয়ে পড়েন। এ ব্যথাটি সাধারণত বৃদ্ধাঙুলের দিক থেকে শুরু হয়। ১৮৯৫ সালে সুইজারল্যান্ডের সার্জন ফ্রিটস ডি কোরভাইন প্রথম এই রোগটি শনাক্ত করেন বলে তার নামানুসারে এই রোগের নামকরণ করা হয় ‘ডি কোরভাইন ডিজিজ’।
যাদের হওয়ার ঝুঁকি বেশি
হঠাৎ করে যে কারোর কবজি ব্যথা শুরু হতে পারে। তবে ক্রীড়াবিদদের কবজিতে ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত বোলিং, গলফ, জিমন্যাস্টিকস, স্নোবোর্ডিং ও টেনিস খেলে থাকেন, তাদের এ ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার একনাগাড়ে হাত ও কবজির দ্বারা কাজ করার ফলে কবজিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে ও ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যেমনÑ চুল কাটা ও সেলাইয়ের কাজ। এ ছাড়া স্থূলতা, বাতজ্বর, গেঁটেবাত ও গর্ভধারণের কারণে কবজিতে ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
কবজি ব্যথার লক্ষণ
কবজিতে ব্যথা হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবে হাত নাড়াতে অসুবিধা হয়। বিশেষ করে অ্যাথলেট, খেলোয়াড় ও ওয়েট লিফটারদের কবজিতে অধিক চাপ পড়ে। যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তা হলোÑ
► হাতের কবজি ব্যথা করা
► বৃদ্ধাঙুলের দিকে কবজি কিছুটা ফুলে যেতে পারে
► চাপ দিলে বা ধরলে ব্যথা বাড়ে
► হাত মুঠি করলে ব্যথা বাড়ে
► পানির গ্যাস, চায়ের কাপ তোলাও কষ্টকর হয়।
কবজি ব্যাথার কারণ ও পরীক্ষা
নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই কবজিতে ব্যথা হতে পারে। অনেকে ধারণা করেন, কবজির হঠাৎ অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে ব্যথার শুরু হতে পারে। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। কর্মক্ষেত্রে এ ব্যথার উৎপত্তি অনেকে বলে থাকলেও এ কথাটি এখনও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। কবজি ব্যথা পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি হয়। গর্ভধারণের আগে ও পরে বেশি লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ ছাড়া হরমোনাল পরিবর্তন, শরীরের ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণেও কবজি ব্যথা হতে পারে। সাধারণত লক্ষণ দেখেই রোগটি নির্ণয় করা যায়। পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যায়। এই পরীক্ষায় রোগীর বৃদ্ধাঙুল ধরে পুরো হাতটি ভেতরের দিকে মোড়াতে বললে রোগী কবজিতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে। এ ছাড়া অন্য কোনো সমস্যার কারণে এ ব্যথা হয়েছে কি না তা জানতে কবজির এক্স-রের পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও থাইরয়েডের পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়।
যেভাবে চিকিৎসা নিবেন
► কবজি ব্যথার প্রথম দিকে ব্যথার ওষুধ দেওয়া হয়। এতে কিছুটা ব্যথা উপশম হয়।
► ব্যথার ওষুধের পাশাপাশি রোগীর আক্রান্ত কবজিতে কিছুদিন স্পিন্ট ব্যবহার করে হালকা কুসুম গরম পানির ছেক দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
► ব্যথা উপশম না হলে ফোলা জায়গায় স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ রোগী এই স্টেরয়েড ইনজেকশনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত হয়।
উপরিউক্ত সব চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগের পরও কবজির ব্যথার উপশম না হলে সর্বশেষ চিকিৎসা হিসেবে অপারেশন করা যেতে পারে। এতে সুস্থ হওয়ার হার শতভাগ। শুধু লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে এই অপারেশন করা যায় বলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না।
লেখক : অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন
চিফ কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান
অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, ল্যাবএইড হাসপাতাল
বিষয়:

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: