'তুমি মায়ের সুসন্তান নয়, কুসন্তান'
 প্রকাশিত: 
 ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:০০
 আপডেট:
 ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:০৬
 
                                
প্রভাত ফেরী: নাম না করে ফের আক্রমণ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কালনার সভায় মমতা বলেন, 'কয়েকটি দুষ্টু গোরুর দুর্নীতি ঢাকতে হাম্বা হাম্বা ডাকতে ডাকতে এখানে ওখানে যাচ্ছে। তাঁরা গিয়েছেন ভালো হয়েছে। পাপ বিদায় নিয়েছে'। এরপরই শুভেন্দু-রাজীবদের নাম না করে মমতার নিশানা, 'মা ছেলেদের লালনপালন করবে। তারপর মা যখন অসুস্থ হবে, মায়ের যখন প্রয়োজন হবে, তখন তাঁকে বিশ্বাসঘাতকতা করে পালাবে। তুমি মায়ের সুসন্তান নয়, কুসন্তান'।
উল্লেখ্য, ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো তৃণমূলের একাধিক হেভিওয়েট নেতা। এরপরই দলত্যাগীদের উদ্দেশ্যে সোচ্চার হন মমতা। তবে, এই প্রথম মা-সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে যেভাবে দলত্যাগীদের আক্রমণ করলেন মমতা, তা উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ। প্রসঙ্গত, দল ছাড়ার পর সংবাদমাধ্যমে অশ্রুসজল চোখে প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার মায়ের মতো'।
অন্যদিকে, তৃণমূলত্যাগীদের বিঁধে মমতা এদিন আরও বলেছেন, 'যাঁরা তৃণমূলে থেকে তৃণমূলের খারাপ করেন, তাঁদের দলে থাকার প্রয়োজন নেই।তৃণমূল তাঁরাই করবেন, যাঁরা মানুষের কাজ করবেন। শান্তি, স্বস্তিতে থাকতে গেলে তৃণমূলই আপনাদের ভালো বন্ধু। তৃণমূলে কেউ অন্যায় করলে আমি গার্জেন হিসেবে রয়েছি। একদম কানমূলে দেব। দরকার হলে গালে থাপ্পড় দেব। অন্যায় আমি বরদাস্ত করব না। তাই দু-একজন ভয় পেয়ে পালিয়েছে। ভাবছে আমি টিকিট দেব না। কেন দেব?'
প্রসঙ্গত, এর আগেও দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছেন মমতা। কয়েকদিন আগে আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে দলত্যাগীদের নিশানা করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেছিলেন, 'যাঁরা লোভী-ভোগী, তাঁদের তাড়ানোর আগে তাঁরা নিজেরাই চলে গিয়েছেন। তাঁদের জন্য রাস্তা খোলা। তৃণমূলের টিকিট টাকা দিয়ে বিক্রি করা যায় না। আমি মনে করি, তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়করা টাকা দিয়ে বিক্রি হন না। আমাদের টিকিট পেতে লবি করতে হয় না। যাঁরা যত বেশি দুর্নীতি করেছেন, তাঁরা তো পালাবেনই। কেউ ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।' একইসঙ্গে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মমতার সাফ কথা, 'তৃণমূলে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে, এখানে লোভের জায়গা নেই। এটা মা-মাটি-মানুষের দল। যদি কেউ ভুল করে থাকেন, তাহলে সংশোধন করে নেবেন। নেতাদের বড় ছাতা হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা।'
তৃণমূলত্যাগীদের বার্তা দিয়ে কয়েকদিন আগে এক জনসভায় মমতা বলেছিলেন, 'এরপর আর তৃণমূলে আসার চেষ্টা করবেন না। আপনাদের নেব না। তোমাদের মতো চোরকে নেব না।’ দলত্যাগীদের উদ্দেশ্যে তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রশ্ন, 'তৃণমূল টিকিট দেবে না। তাই ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কেন টিকিট দেব?'
উল্লেখ্য, একুশের ভোটযুদ্ধের মুখে একের পর এক তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদরা দল বদলে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। গত বছরের শেষলগ্নে দীর্ঘ জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুল হাতে তুলে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর দলবদলের পরই সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া, উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল, ডায়মন্ডহারবারের বিধায়ক দীপক হালদাররা। নির্বাচনের মুখে তৃণমূল ছাড়ার যে হিড়িক পড়েছে, তাতে ঘর রক্ষা করে ভোটবাক্সের লড়াই এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষকদের একাংশ। এই প্রেক্ষিতে দলত্যাগীর যে ভাষায় টার্গেট করলেন মমতা, তা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বিশ্লেষকদের একাংশ।
বিষয়:

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: