করোনায় আতংক নয় চাই সচেতনতা : শাহানারা পারভীন শিখা
 প্রকাশিত: 
 ২ আগস্ট ২০২১ ২১:২২
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:১৯
করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারনে এবার ঈদ ঢাকাতেই করা হবে ঠিক হলো। কিন্তু বৃদ্ধ শ্বাশুড়ির অসুস্থতার কথা শুনে গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় শেষ পর্যন্ত। ভীড় হাট্রা এড়ানোর জন্য খুব সকালেই রওনা হই আমরা।পাঁচ ঘন্টার রাস্তা। আট ঘন্টা লাগলো যেতে। যাত্রা বিরতি বলতে একটা রেস্টুরেন্টে থেমেছি। সবাই চেষ্টা করছি সাবধানে থাকতে। সবার মাঝে সচেতনতা সেভাবে না আসলেও সতর্কতা আছে বেশ।
ফ্রেস হয়ে চা খেয়ে ফের যাত্রা শুরু। শহরের ভিতরে না ঢুকে বাইপাস হয়ে দীর্ঘ যাত্রা শেষে বাড়ি পৌঁছি।
গ্রামে সাধারণের মাঝে করোনার কোন আছর আছে বলে মনে হলো না।
সবার মধ্যে এমন একটা ধারণা করোনা কেবলই শহরের মানুষের মাঝে আছে। গ্রামে নেই। অথচ এবার শুনলাম ঘরে ঘরে জ্বর, ঠান্ডা কাঁশি লেগেই আছে। যাদের ঠান্ডা জ্বর সেরে গেছে তাদের শরীর ভীষণ দূর্বল। খাওয়ার রুচি নেই।
করোনা টেস্ট করেছে কিনা জিজ্ঞেস করলেই বলে, আরে কিসের করোনা! এটা সাধারণ সর্দী জ্বর। নাপা প্যারাসিটামল সাথে কাঁশির ঔষধ খাচ্ছে। কয়েকদিন ভুগে সেরে যাচ্ছে হয়তো। কিন্তু খাওয়ার অরুচি কিংবা শরীরে বল নেই।ভীষণ রকম দূর্বল হয়ে পড়া।এটা চলছে বেশ কিছুদিন। তবুও কেউ ভাবনায় আনে না টেস্টের কথা।
অনেকটা ভয় থেকে এটা হতে পারে। করোনা পজিটিভ আসলে প্রতিবেশী, আত্মীয় কুটুমরা বাঁকা চোখে দেখবে সবাই। এরকমই ধারণা গ্রামের মানুষের।
ঠান্ডা, জ্বর থেকে সদ্যই সেরে ওঠা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, নাকে ঘ্রাণ আছে কিনা।
সহজ সরল উক্তি,সর্দি লাগলে কি নাকে কোন গন্ধ পাওয়া যায় নাকি!
বুঝলাম সচেতনতার ঘাটতি এখনো আছে সর্বত্র। সাথে ভয়।
কেউ মারা গিয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলাম। বললো পাশের পাড়ার একজন মারা গেছে। যারা শহরেই থাকতো। মারাও গেছে শহরের হাসপাতালে।
সেখানেও গোপনীয়তা রাখা হয়।
স্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বললেও শেষ পর্যন্ত খবর হয়ে যায় করোনায় মৃত্যুর কথা। নিমিষেই বদলে যায় পাড়ার চিত্র। জানাজায় বা দাফনকাজে অংশ নেয়নি সেই বংশের প্রায় বিশ ঘরের কোন পুরুষ স্বজন। অথচ নিয়ম মেনে প্রিয় স্বজনের শেষ যাত্রায় অংশ নিতেই পারে।
আতংক আছে করোনায়। কিন্তু নিজেদেরকে আরও সচেতন হতে হবে। কিংবা করোনার উপসর্গ থাকলে পরীক্ষা করতে হবে। এটা মানতে নারাজ। বিনিময়ে শহর ছাড়িয়ে করোনা এখন গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে। কারো সমস্যা বেশি হলে অর্থাৎ কারো শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গ্যাস (গ্রামীন ভাষায় অক্সিজেনকে গ্যাস নেয়া বলে) নিয়ে আসে এক দুবার করে। আরও বেশি অবস্থা খারাপ হলে তখন ছুটে যায় হাসপাতালে। কিন্তু দেখা যায় রুগীর অবস্থা তখন শেষ পর্যায়ে। কিছুই করার থাকে না তখন। মাস্কের ব্যবহার এবং করোনা টেস্ট করার প্রতি গ্রামের মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া উচিত স্হানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে।
নির্মল প্রকৃতির সাথে ঠিক সেভাবে কাটাতে পারিনি এবার। ঈদের নামাজও বাড়ির আঙিনায় সারতে হয়েছে।
বাড়ির একদম কাছে যে বিশাল হাট আছে। প্রতিবার সেই হাটে ঘুরতে যাই সদলবলে। এবার আর ওমুখো হয়নি। তবে সচেতনতা যে একেবারে নেই। তা কিন্তু নয়। হাটের ভীড় হাট্টা এবার একটু কমই আছে শুনলাম। যেখানে ঈদের দু'চার আগে থেকে রাত দুটা তিনটা পর্যন্ত খোলা থাকতো।এবার দশটার পরেই সব মোটামুটি খালি হয়ে যায়। অনেকেই দেখলাম মাস্ক পরে আছে।
অন্যান্য সময়ে ঈদের পরদিন আত্মীয় কুটুমকে দাওয়াত করা হোত সবসময়। এবার আগেই জানিয়ে দেয়া ছিল, কোন রকম লোক সমাগমের কোন আয়োজন থাকবে না।
দু'চার জন বাইরের মানুষ আমাদের সাথে দেখা করতে আসে। সবারই মুখে না থাকলেও পকেটে মাস্ক রাখা আছে বললো।
আমাদের ব্যাগে বা পকেটের মাস্ক যখন মুখে থাকবে। তখনই আমরা বুঝবো আমাদের মাটির কাছাকাছি থাকা সহজ সরল মানুষগুলোর মাঝে করোনার সচেতনতা কিছুটা হলেও আসছে।
করোনাকে ভয় নয়। সচেতন হই। করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেয়ে করোনা টেস্ট করি। জনসমাগম এড়িয়ে চলি। খেয়াল রাখি অসুস্থ বা বয়স্ক স্বজনের প্রতি। উপসর্গ থাকলেই নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেয়ে করোনা পরীক্ষা করি এবং পরিবার সহ অন্যকে সুরক্ষিত রাখি।
শাহানারা পারভীন শিখা 
কবি ও লেখক
বিষয়: শাহানারা পারভীন শিখা

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: