কর্মীদের ক্ষেত্রে ভিসা ফিসহ খরচ বহন করবেন সৌদি আরবের নিয়োগকারী


প্রকাশিত:
১৯ মে ২০২২ ১৯:২৬

আপডেট:
২০ মে ২০২২ ০০:৫৬

 

সৌদি দূতাবাস ভিসা আবেদনকারীর কাছ থেকে কোনো টাকা বা কোনো ধরনের ফি নেয় না। কর্মীদের ক্ষেত্রে ভিসা ফিসহ খরচ বহন করেন সৌদি আরবের নিয়োগকারী। এ ক্ষেত্রে ফি জমা নেওয়া হয় ইলেকট্রনিকভাবে। এখানেও সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে সরাসরি কোনো লেনদেনের সুযোগ নেই।

সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য ভিসা আবেদনকারীদের পাসপোর্টপ্রতি ২০০ ডলার করে নেওয়া হয় বলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সৌদি দূতাবাস এ তথ্য জানায়।

গতকাল বুধবার ঢাকায় সৌদি দূতাবাসে কালের কণ্ঠকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাত্কারে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান বলেন, কিছু ভিসা kalerkanthoএজেন্ট ও দালাল ভিসা আবেদনকারীদের কাছ থেকে দূতাবাসের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকতে পারে। বিষয়টি তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের অবহিত করেছেন এবং দালালদের তত্পরতার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সচেতন হওয়ার অনুরোধ করেছেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, একটি সময় ছিল যখন ভিসা এজেন্টদের জন্য কোটা নির্দিষ্ট ছিল। তারা একটি নির্দিষ্টসংখ্যক ভিসা আবেদনপত্র জমা দিতে পারত। এর ফলে এজেন্টরা ভিসা আবেদনকারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করত। বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রায় ছয় মাস আগে সেই কোটাব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। এখন এজেন্টরা যত খুশি আবেদনপত্র জমা দিতে পারে।

হজযাত্রীদের অভিবাসন সেবা ঢাকায়
আসন্ন হজ মৌসুমে সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের মতো নির্ঝঞ্ঝাট সেবা পাবেন বাংলাদেশি হজযাত্রীরা। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সেবা দিতে সৌদি আরবের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। তাঁদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া থেকে শুরু করে সব অভিবাসন সেবা হবে ঢাকাতেই। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রা হবে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের মতো। তাঁরা সৌদি আরবের বিমানবন্দরে নেমে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের মতো বেরিয়ে সোজা হোটেলে চলে যাবেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের মাত্র পাঁচটি দেশের হজযাত্রীরা এ সেবা পাবেন। সৌদি আরবের কাছে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার। পবিত্র দুই মসজিদের হেফাজতকারী সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চমত্কার সম্পর্ক। দুই দেশের সম্পর্ক দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে।

দিনে সাত হাজার ভিসা
সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, সৌদি দূতাবাস এখন প্রতিদিন প্রায় সাত হাজার ভিসা ইস্যু করছে। কভিড মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়া বন্ধ ছিল না। ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মীকে ভিসা দিয়েছে সৌদি আরব।

বাড়ছে দক্ষ কর্মীর চাহিদা
রাষ্ট্রদূত বলেন, সৌদিতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সৌদি আরবে সব খাতে কাজের সুযোগ আছে। বিদ্যমান সুযোগ কাজে লাগাতে হলে তাদের দক্ষ হতে হবে। একই সঙ্গে দালালদের তত্পরতার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, দালালরা অনেক ক্ষেত্রে কর্মীদের প্রলুব্ধ করতে বলে থাকে, সৌদি আরবে যাওয়ার পর তাঁরা প্রাসাদে থাকবেন। মাসে বেতন হবে দুই হাজার ডলারেরও বেশি। এরপর কর্মীরা সৌদি আরব গিয়ে দেখেন পরিস্থিতি ভিন্ন। এরপর তাঁরা হতাশ হয়ে নিয়োগের শর্ত ভেঙে নিয়োগকারীকে ছেড়ে যান। এতে তাঁরা সমস্যায় পড়েন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তিনি এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এই কর্মীদের দুঃখ-কষ্ট আমিও অনুভব করি। ওই কর্মীরা জমি, গরু, সহায়-সম্বল বিক্রি করে বা বন্ধক দিয়ে বিদেশে যান। তাঁরা যেন কোনোভাবেই প্রতারণার শিকার না হন সেটিই প্রত্যাশা করি। আমি চাই, বাংলাদেশি কর্মীরা জেনে-বুঝে সৌদি আরবে যান এবং সেখানের আইন মেনে চলুন। ’

সৌদি বিনিয়োগ আসছে
গত মার্চে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের ঢাকা সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ওই সফর ছিল অত্যন্ত সফল। ওই সফরের আগে, সফরের সময় ও পরে বাংলাদেশে সম্ভাব্য সৌদি বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সৌদি বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। সৌদি প্রতিষ্ঠান আকওয়া পাওয়ার সাড়ে তিন শ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চায়। এ ছাড়া কাগজকল, সার কারখানা, পেট্রোকেমিক্যাল, বে টার্মিনালসহ বিভিন্ন খাতে সৌদি আরবের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের বিনিয়োগে আগ্রহী।

শতভাগ সৌদি বিনিয়োগে রেস্টুরেন্ট হারফি ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামেও আউটলেট খুলতে চায়। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও সৌদিতে ব্যবসা সম্ভাবনা দেখতে পারেন।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তায় আকৃষ্ট হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা
বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সৌদি আরবের আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাই এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য বড় সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে দেখছেন।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top